এ রাজ্যে নিঃশব্দে
আদিবাসীদের মধ্যে সংগঠন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা
আরএসএস। বর্তমান শাসককুল যতই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা বলুক, আদিবাসীদের ঘনবসতি
আছে রাজ্যের এমন জেলাগুলিতে এই আমলেই দ্রুত প্রভাব বিস্তার করছে আরএসএস পরিচালিত
নানা ধরনের সংগঠন।
জানা গিয়েছে, মূলত দু’
ধরনের কৌশল নিয়ে সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমত, কিছু বেসরকারি
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে আদিবাসী ছাত্রদের জন্য স্কুল ও হোস্টেল তৈরি করা
হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠনগুলিতে প্রায় নিখরচায় থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার ব্যবস্থা করা
হয়। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার জন্য অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলেও
হোস্টেলে কিন্তু থাকার কোনো অসুবিধা নেই। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের বহু জায়গায় আরএসএসেরই
শাখা সংগঠন বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের পরিচালনায় স্কুল খোলা হচ্ছে। ১৯৫২ সালে
ছত্তীসগড়ে বালাসাহেব দেশপাণ্ডে বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন। এই
সংগঠনটির মূল কাজ হল খ্রিস্টান মিশনারি প্রভাবিত আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে স্কুল,
সেবাকেন্দ্র তৈরির নামে গরিব আদিবাসীদের হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করা। দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলে চার্চের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে এই সংগঠন সক্রিয় ভাবে প্রচার চালিয়ে
যাচ্ছে।
প্রথম ধরনের সংগঠন অর্থাৎ
স্বেচ্ছাসেবী পরিচালিত স্কুলগুলি তৈরি করা হচ্ছে সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী
প্রভৃতি এলাকায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরেও এই স্কুল ও হোস্টেল তৈরি হয়েছে।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার ঝিলিমিল অঞ্চলেও স্কুল-হোস্টেল হয়েছে। এই ধরনেরই একটি
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হল পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রম। এই সংগঠনটির মোট ৬টি আবাসিক
আশ্রম চলছে। যেগুলির কাজ হল গরিব আদিবাসী বাচ্চাদের হিন্দুত্বের মতাদর্শে দীক্ষিত
করা, যদিও পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রমের সভাপতি সঞ্জয় রাস্তোগি সম্প্রতি জানিয়েছেন,
তাঁদের সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত নয়।
দ্বিতীয় ধরনের সংগঠন
অর্থাৎ বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের কাজকর্ম উত্তরবঙ্গে দ্রুত এগোচ্ছে। সংগঠনের সবচেয়ে
পুরোনো হোস্টেল ও স্কুলটি রয়েছে বীরভূমের মল্লারপুরে। নতুন করে স্কুল তৈরি হয়েছে
বেলপাহাড়ি, জামবনী, গোসাবা, ক্যানিং, মথুরাপুর, হাসনাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে। বনবাসী
আশ্রমের বক্তব্য, খ্রিস্টান মিশনারিরা দ্রুত আদিবাসী অঞ্চলে থাবা বসাচ্ছে। এই
অবস্থার প্রতিকার করতে পালটা প্রচারের প্রয়োজন আছে। আদিবাসী ভাইবোনেরা হিন্দু
সমাজের মূল ধারার বাইরেই বা থাকবেন কেন?
এই ধরনের যুক্তি সামনে
রেখে দ্রুত ছড়াচ্ছে বনবাসী কলাণ আশ্রমের স্কুলগুলি। সম্প্রতি আরএসএস আদিবাসী
এলাকায় ‘একল স্কুল’ নামে এক ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। ‘একল
স্কুল’-এ ১০ থেকে ২০ জন ছাত্র পড়ে, শিক্ষক থাকেন মাত্র এক জন। আলিপুরদুয়ার অঞ্চলে
চার বছর আগে এই ধরনের ‘একল’ বিদ্যালয় ছিল ১১টি। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৭২ ছাড়িয়েছে।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাট কেন্দ্র থেকে আদিবাসী কল্যাণ আশ্রমের কর্মী
মনোজ টিপ্পা বিজেপির টিকিটে জিতেছেন। ‘একল স্কুল’-এর পাশাপাশি বনবাসী কল্যাণ
আশ্রম এই জেলায় আরও ৬১টি স্কুল খুলেছে। অর্থাৎ আলিপুরদুয়ার জেলাতেই আরএসএস
পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ১১৩টি। আলিপুরদুয়ারের মতো দ্রুত হারে স্কুল বাড়ছে
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতেও। সব মিলিয়ে
রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ৬০০টি স্কুল পরিচালনা করছে আরএসএস বা
তাদের প্রভাবিত সংগঠন। আগে যেখানে মাওবাদীরা প্রভাব বিস্তার করেছিল এ বার সেখানে
নতুন করে সাম্প্রদায়িক বিপদ থাবা বসাচ্ছে।
সৌজন্য – খবর Online, January
13, 2017, শৈবাল বিশ্বাস।
No comments:
Post a Comment