সোমবার ভোর থেকে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি ও আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের মিলিত রেল
রোকো অভিযানে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাঁচ জেলার রেল যোগাযোগ
ব্যবস্থা৷ ঘন কুয়াশার জেরে এমনিতেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেকটাই দেরিতে চলছিল
দূরপাল্লার ট্রেনগুলো৷ এর উপর দুই আদিবাসী সংগঠনের প্রতিবাদে প্রভাবিত হয় একই
সঙ্গে পূর্ব,
দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল৷ বিভিন্ন জায়গায়
অবরুদ্ধ হয় সড়কও৷ আবার কুয়াশায় গোটা রাজ্যেই লোকাল-সহ কম-বেশি সব ধরনের ট্রেন
চলাচলই বিঘ্নিত হয়৷ অবরোধের ছোঁয়াচ লাগে পূর্ব বর্ধমানেও৷ এখানে হাওড়া-বর্ধমান কর্ডলাইনে
ঝাঁপানডাঙা স্টেশনে হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং দু’টি লোকাল ট্রেন৷ শিয়ালদহ ডিভিশনেও অন্য কারণে বারাসত-বনগাঁ শাখার দত্তপুকুরে
সকাল ৯টা ৪৩ মিনিট থেকে দু’ঘণ্টার জন্য ট্রেন অবরোধ করা হয়৷ এর প্রভাবে ছ’টি ইএমইউ লোকাল গড়ে ৪০ মিনিট করে দেরিতে চলে৷ কুয়াশার জন্যও বহু লোকাল ট্রেন
ধীরে চলে৷ যদিও রেল সরকারি ভাবে তা স্বীকার করেনি৷ কেন্দ্রীয় সরকার ও ঝাড়খণ্ড
রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ,
পুনর্বাসন ও পুনস্থাপন সম্পর্কিত ২০১৭ সালের আইনের যে
পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারই প্রতিবাদ জানাতে
সোমবার ভোর ৬টা থেকে রেল অবরোধ শুরু করেন আদিবাসীরা৷ পুরুলিয়া জেলার আদ্রা
ডিভিশনের কাঁটাডিহি,
মধুকোন্ডা ও ইন্দ্রবিল স্টেশন দিয়ে অবরোধ শুরু হয়৷ প্রায়
সঙ্গে সঙ্গেই অবরোধ শুরু হয় বাঁকুড়ার বিভিন্ন স্টেশনে৷ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া দিয়ে
মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও পূর্ব বর্ধমানও বিক্ষোভে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ অবরোধ সীমাবদ্ধ
থাকেনি রেলের ট্র্যাকেই৷ উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র হাতে পথ
অবরোধ করেন আদিবাসীরা৷ সপ্তাহের প্রথম দিন এমন অবরোধের মুখে পড়ে নাকাল হন হাজার
হাজার যাত্রী৷ রেল অবরোধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে৷ এ দিন সকাল
৬টা ২০ মিনিটে বাঁকুড়ার ঝাঁটিপাহাড়ি স্টেশনে ভুবনেশ্বর-দিল্লিগামী রাজধানী
এক্সপ্রেস প্রায় চার ঘণ্টা আটকে থাকার পর ওই ট্রেনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গপুর
স্টেশনে৷ সেখান থেকে ফের ঘুরপথে ট্রেনকে দিল্লির দিকে পাঠানো হয়৷ ঘন কুয়াশায়
এমনিতেই ১১ ঘণ্টা দেরিতে চলছিল এই ট্রেনটি৷ এর উপর অবরোধের জন্য যাত্রীদের হয়রানি
চরমে ওঠে৷ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেছেন, ‘আদ্রা ও চক্রধরপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বহু ট্রেন৷ দুপুর ১টা ২০
নাগাদ অবরোধ উঠে যায়৷ তবে ততক্ষণে বাতিল করতে হয় ১৮১৮৩ টাটানগর-ধানবাদ এক্সপ্রেস
এবং ৫৮০২৫ খড়গপুর-হাতিয়া প্যাসেঞ্জার৷ বাতিল করা হয় সাতটি এমইএমইউ৷’ এ ছাড়াও শালিমার-আদ্রা
রাজ্য রানি এক্সপ্রেস ও বোকারো স্টিল সিটি-আসানসোল এক্সপ্রেস গন্তব্যের আগেই
যাত্রা শেষ করে৷ বেশ কিছু ট্রেনকে নির্দিষ্ট গতিপথ বদল করে গন্তব্যের দিকে চালাতে
হয়৷ অবরোধের জেরে বিপর্যস্ত হয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ট্রেন চলাচলও৷ ভোর ৬টা
থেকেই কাটিহার ডিভিশনের আদিনা, আরারিয়া, ডালখোলা ও বুনিয়াদপুর স্টেশনে অবরোধ শুরু হয়৷ এর ফলে উত্তরবঙ্গের স্টেশনে
স্টেশনে আটকে পড়ে দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস,
এনজেপি-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন৷ ট্রেন অবরোধের
পাশাপাশি সড়কপথও অবরুদ্ধ হয় উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের বিভিন্ন অঞ্চলে৷ ইসলামপুর, ডালখোলা ও করণদিঘিতে তীর-ধনুক ও তলোয়ার হাতে ৩১ ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ
করেন বিক্ষোভকারীর দল৷ ফলে যে যাত্রীরা সড়কপথে যাতায়াতের পরিকল্পনা করেছিলেন, চরম অসুবিধার মুখে পড়েন তাঁরাও৷ মালদহেও হবিবপুর, বামনগোলা,
গাজোল ইত্যাদি অঞ্চলে পথ অবরোধ করা হয়৷ মালদহের পুলিশ সুপার
অর্ণব ঘোষ ও জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বনধের উপর
প্রশাসনের নজর ছিল৷ কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি৷ কোথাও সরকারি কাজে বাধা
দেওয়া হয়নি৷’
সৌজন্য - এই সময়, ০৯/০১/২০১৮।
No comments:
Post a Comment