Monday, January 15, 2018

শংসাপত্রে নেই জন্মতারিখ, ভর্তি থমকে।




লালগড়, ঝাড়গ্রাম। ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮।

জন্মের শংসাপত্র রয়েছে। অথচ তাতে জন্মতারিখটাই নেই। নেই ছেলে না মেয়ে, সেই উল্লেখও। ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের দেওয়া এই অসম্পূর্ণ জন্মের শংসাপত্র নিয়েই গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ফেলেছে লালগড়ের সাথী নায়েক। এখন পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়ে ধরা পড়েছে ভুল। আর সরকারি হাসপাতালের সেই ভুলের জন্য সাথীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লালগড়ের ধামরো গ্রামে বাড়ি সাথীর। বাবা বিদ্যুৎ নায়েক চাষবাস করেন। বেশিদূর লেখাপড়া করেননি তিনি। কোনওমতে নামটুকু সই করতে পারেন। সাথীর মা দোলাদেবীও মাঝপথেই হাইস্কুল ছেড়েছেন। সাথী কবে জন্মেছিল, তাও ঠিকমতো বলতে পারলেন না তাঁরা। সেই সঙ্গে জানালেন, হাসপাতাল থেকে নেওয়া সাথীর জন্ম শংসাপত্রে কী লেখা আছে কোনও দিন দেখেননি, ওটা জমা দিয়ে পঞ্চায়েতের শংসাপত্রও নেননি। তা ছাড়া বিদ্যুৎবাবু ও দোলাদেবী কেউই ইংরেজি পড়তে পারেন না।
ধামরো শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে বছর চারেক আগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সাথী। তখন কেন ভুলটা ধরা পড়ল না?
ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের মুখ্য শিক্ষিকা সুমিত্রা মণ্ডল জানালেন, হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশনের তারিখ (১৩ অগস্ট ২০০৭) দেখে সেটিকেই সাথীর জন্মতারিখ হিসেবে নথিভুক্ত করেছিলেন তিনি। চতুর্থ শ্রেণির পঠনপাঠন শেষে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র থেকে সাথীকে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানেও জন্ম তারিখের জায়গায় ১৩ অগস্ট, ২০০৭ লেখা রয়েছে। এই শংসাপত্র নিয়েই লালগড়ের সারদামণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়েছিল সাথী। স্কুল কর্তৃপক্ষ জন্মের শংসাপত্র চান। আর তখনই ধরা পড়ে ভুল।
সাথীর জ্যাঠামশাই বিধান নায়েক জানালেন, সাথীর জন্মের সময়কার ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল এখন জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হয়েছে। বিধানবাবুকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দশ বছর আগের মহকুমা হাসপাতালে জন্মের তথ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সুপার মলয় আদক বলেন, “তথ্য খুঁজে পাওয়া গেলে, নতুন শংসাপত্র দেওয়া যাবে।
আর খুঁজে না পাওয়া গেলে? ঝাড়গ্রাম আদালতের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলছেন, “বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এফিডেভিট করে জেলা জন্মপঞ্জিকরণ আধিকারিকের কাছে আবেদন জানাতে হবে। তবে শংসাপত্র পেতে সময় লাগতে পারে।
তাহলে কি এই জটে সাথীর পড়াশোনাটাই এগোবে না?
লালগড় সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার ইন-চার্জ অসীমা রায় বলেন, “কী করণীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, কিংশুক গুপ্ত, ১৩/০১/২০১৮।

No comments:

Post a Comment