বামফ্রন্ট আমলে উচ্ছেদ হয়েছিলেন তাঁরা। ভিটেমাটি সব হারিয়ে বছরের পর বছর ধরে
কার্যত ভবঘুরে হয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু, পুনর্বাসন মেলেনি। অবশেষে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের
মানবিক উদ্যোগে প্রায় ২৫ বছর পর পুনর্বাসন পেল মধ্যমগ্রামের দোলতলা এলাকার ছ’টি আদিবাসী পরিবার। প্রত্যেক পরিবারকে তিন শতক করে সরকারি জমি পাট্টা দেওয়া
হয়েছে। প্রায় দুই যুগ পর নিজেদের নামে জমি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ওই গরিব আদিবাসীরা।
তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কুর্নিশও জানিয়েছেন। পাট্টার
জমিতে তাঁরা এখন নিজেদের ঘর বাঁধতে ব্যস্ত।
জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যমগ্রাম দোলতলা এলাকায় থাকতেন ওই ছয়টি গরিব আদিবাসী পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে
তাঁরা ওই এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযোগ, সিপিএম সরকারের
আমলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের আগে তাঁদের পুনর্বাসের কথা বলা হলেও
পরবর্তীকালে তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর ভিটেমাটি ছেড়ে ওই পরিবারগুলি বিভিন্ন
জায়গায় ঘুরতে থাকেন। কেউ ভাড়াবাড়ি নেন, কেউ আবার পালাবদল
করে সাময়িকভাবে আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এভাবেই এতদিন তাঁরা নানা জায়গায় ঘুরে
ঘুরে জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু, নিজেদের ঘর তৈরির জন্য
জমি পাননি।
ওই গরিব আদিবাসীদের কথায়, মাস কয়েক আগে তাঁরা ঠিক
করেছিলেন,
নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরো
বিষয়টি জানাবেন। সেই মতো তৈরিও হয়েছিলেন। কিন্তু, নবান্ন যাওয়ার আগে তাঁরা এই বিষয়টি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অফিসের
দ্বারস্থ হন। সেখানে গিয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি জানান। জেলাশাসক পুরো বিষয়টি গুরুত্ব
দিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভূমি কর্মাধ্যক্ষ
আরশাদ-উদ-জামানকে বলেন। তিনি ওই ছয়টি পরিবারের সদস্যদের ডাকেন। তারপর তাঁদের কাছ থেকে
পুরো ইতিহাস শোনেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর দিন কয়েক আগে ভূমি কর্মাধ্যক্ষ
নিজের এলাকায় বারাসত-১ ব্লকের কদম্বগাছির সাড়াবেড়িয়া মৌজায় ওই ছ’টি পরিবারকে পাট্টার ব্যবস্থা করেছেন। সকলকেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে।
ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বলেন,
সিপিএম উচ্ছেদ করে পুনর্বাসন দেয়নি। ২৫ বছর ধরে এই গরিব
মানুষগুলো ঘুরে বেরিয়েছেন। আমাদের সরকার মানবিক উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের প্রত্যেককে তিন
শতক করে জমি পাট্টা দিয়েছি। জেলাশাসক বলার পরই আমি সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থা করেছি।
আমরা ওই মানুষগুলির পাশে আছি।
পাট্টা পাওয়া গীতা ওঁরাও নামে এক মহিলা বলেন, দোলতলায় আমরা সপরিবারে ছিলাম। সেখানেই আমাদের সবার ঘরবাড়ি ছিল। কিন্তু, সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলেও আমাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। খুব কষ্ট করে এতগুলো
বছর কাটিয়েছি। জমি পেয়ে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত। রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, পাট্টা পাওয়ার জমি গিয়ে দেখেও এসেছি। এখন সেখানে ছোট্ট ঘর তৈরির প্রস্তুতি
করছি। আর বাইরে বাইরে ঘুরতে হবে না। ২৫ বছর পর এবার একটা স্থায়ী ঠিকানা হল।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২৯/০১/২০১৮।
No comments:
Post a Comment