Wednesday, January 31, 2018

রাজ্যে আদিবাসীদের মধ্যে সংগঠন বাড়াচ্ছে আরএসএস।


এ রাজ্য‌ে নিঃশব্দে আদিবাসীদের মধ্য‌ে সংগঠন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস। বর্তমান শাসককুল যতই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা বলুক, আদিবাসীদের ঘনবসতি আছে রাজ্যের এমন জেলাগুলিতে এই আমলেই দ্রুত প্রভাব বিস্তার করছে আরএসএস পরিচালিত নানা ধরনের সংগঠন।
জানা গিয়েছে, মূলত দু’ ধরনের কৌশল নিয়ে সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমত, কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্য‌মে আদিবাসী ছাত্রদের জন্য‌ স্কুল ও হোস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠনগুলিতে প্রায় নিখরচায় থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার ব্য‌বস্থা করা হয়। মাধ্য‌মিক স্তরে পড়াশোনার জন্য‌ অন্য‌ কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলেও হোস্টেলে কিন্তু থাকার কোনো অসুবিধা নেই। দ্বিতীয়ত, রাজ্য‌ের বহু জায়গায় আরএসএসেরই শাখা সংগঠন বনবাসী কল্য‌াণ আশ্রমের পরিচালনায় স্কুল খোলা হচ্ছে। ১৯৫২ সালে ছত্তীসগড়ে বালাসাহেব দেশপাণ্ডে বনবাসী কল্য‌াণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটির মূল কাজ হল খ্রিস্টান মিশনারি প্রভাবিত আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে স্কুল, সেবাকেন্দ্র তৈরির নামে গরিব আদিবাসীদের হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চার্চের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে এই সংগঠন সক্রিয় ভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম ধরনের সংগঠন অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবী পরিচালিত স্কুলগুলি তৈরি করা হচ্ছে সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী প্রভৃতি এলাকায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরেও এই স্কুল ও হোস্টেল তৈরি হয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার ঝিলিমিল অঞ্চলেও স্কুল-হোস্টেল হয়েছে। এই ধরনেরই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হল পূর্বাঞ্চল কল্য‌াণ আশ্রম। এই সংগঠনটির মোট ৬টি আবাসিক আশ্রম চলছে। যেগুলির কাজ হল গরিব আদিবাসী বাচ্চাদের হিন্দুত্বের মতাদর্শে দীক্ষিত করা, যদিও পূর্বাঞ্চল কল্য‌াণ আশ্রমের সভাপতি সঞ্জয় রাস্তোগি সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত নয়।
দ্বিতীয় ধরনের সংগঠন অর্থাৎ বনবাসী কল্য‌াণ আশ্রমের কাজকর্ম উত্তরবঙ্গে দ্রুত এগোচ্ছে। সংগঠনের সবচেয়ে পুরোনো হোস্টেল ও স্কুলটি রয়েছে বীরভূমের মল্লারপুরে। নতুন করে স্কুল তৈরি হয়েছে বেলপাহাড়ি, জামবনী, গোসাবা, ক্য‌ানিং, মথুরাপুর, হাসনাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে। বনবাসী আশ্রমের বক্তব্য‌, খ্রিস্টান মিশনারিরা দ্রুত আদিবাসী অঞ্চলে থাবা বসাচ্ছে। এই অবস্থার প্রতিকার করতে পালটা প্রচারের প্রয়োজন আছে। আদিবাসী ভাইবোনেরা হিন্দু সমাজের মূল ধারার বাইরেই বা থাকবেন কেন?
এই ধরনের যুক্তি সামনে রেখে দ্রুত ছড়াচ্ছে বনবাসী কলাণ আশ্রমের স্কুলগুলি। সম্প্রতি আরএসএস আদিবাসী এলাকায় ‘একল স্কুল’ নামে এক ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। ‘একল স্কুল’-এ ১০ থেকে ২০ জন ছাত্র পড়ে, শিক্ষক থাকেন মাত্র এক জন। আলিপুরদুয়ার অঞ্চলে চার বছর আগে এই ধরনের ‘একল’ বিদ্য‌ালয় ছিল ১১টি। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৭২ ছাড়িয়েছে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাট কেন্দ্র থেকে আদিবাসী কল্য‌াণ আশ্রমের কর্মী মনোজ টিপ্পা বিজেপির টিকিটে জিতেছেন। ‘একল স্কুল’-এর পাশাপাশি বনবাসী কল্য‌াণ আশ্রম এই জেলায় আরও ৬১টি স্কুল খুলেছে। অর্থাৎ আলিপুরদুয়ার জেলাতেই আরএসএস পরিচালিত স্কুলের সংখ্য‌া ১১৩টি। আলিপুরদুয়ারের মতো দ্রুত হারে স্কুল বাড়ছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসী অধ্য‌ুষিত এলাকাতেও। সব মিলিয়ে রাজ্য‌ের আদিবাসী অধ্য‌ুষিত এলাকায় প্রায় ৬০০টি স্কুল পরিচালনা করছে আরএসএস বা তাদের প্রভাবিত সংগঠন। আগে যেখানে মাওবাদীরা প্রভাব বিস্তার করেছিল এ বার সেখানে নতুন করে সাম্প্রদায়িক বিপদ থাবা বসাচ্ছে।
সৌজন্য – খবর Online, January 13, 2017, শৈবাল বিশ্বাস

প্রশাসন সক্রিয় না হলে টুসু মন্দির নির্মাণ নিয়ে জঙ্গলমহল উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা।



খুব সম্প্রতি টুসু উৎসব পালিত হল সারা জঙ্গলমহল জুড়ে। টুসু প্রতি বছরেই আসে শীতকাল জুড়ে আনন্দের বার্তা নিয়ে। খাতায় কলমে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা হলেও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার জঙ্গলমহল এলাকায় অলিখিত বড় উৎসব অবশ্যই মকরসংক্রান্তির টুসু পরব।
কিন্তু এ বছর টুসু পরব আনন্দ নিয়ে আসার পাশাপাশি একটা বিতর্কও নিয়ে এসেছে জঙ্গলমহল জুড়ে। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার নাদনগেড়িয়া গ্রামের টুসু মন্দির নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহলের একাংশ ক্ষোভে ফুঁসছে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জুড়ে শুরু হয়ে যায় প্রতিবাদ। একের পর এক পোস্ট, কমেন্ট আছড়ে পড়তে থাকে টুসু মন্দির কমিটি ও সরকারের বিরুদ্ধে। তাদের প্রশ্ন, টুসুর আবার মন্দির হয় নাকি? টুসু সম্পূর্ণ ভাবেই লৌকিক দেবতা। যাকে কখনোই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করে পুজো করা যায় না।
জঙ্গলমহলের টুসু উৎসবের মূল পৃষ্ঠপোষক আদিবাসী কুড়মী সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল এটিকে প্রান্তিক এনিমিস্ট সংস্কৃতির উপর উচ্চবর্ণীয় আর্য-আগ্রাসন বলেও উল্লেখ করেছেন। এটি হাজার বছরের পুরোনো টুসু ঐতিহ্যকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুসু মন্দিরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তা কূড়মী সমাজের অন্য সাংস্কৃতিক উন্নয়নে খরচ করা হোক বা কুড়মালী ভাষা উন্নয়নের জন্য অ্যাকাডেমি গঠন করা হোক।
৬ নং জাতীয় সড়কের (মুম্বই রোড়) লোধাশুলি থেকে ভেঙে যে রাস্তাটা দক্ষিণে চলে যাচ্ছে রগড়ার দিকে, সেই রাস্তা ধরে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এগোলেই নাদনগেড়িয়া গ্রাম। যা বেলিয়াবেড়া থানার অধীনস্থ। ওই গ্রামই সম্প্রতি টুসু মন্দির নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে সংবাদের শিরোনামে এসেছে। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন, মহকুমা শাসক নকুল চন্দ্র মাহাত, গোপীবল্লভ পুর ২ ব্লক এর বিডিও টুসু মন্দির সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বরাদ্দ অর্থ দিয়ে পরিকাঠামো নির্মাণ করে এই জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। টুসু মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি লক্ষণ রায় জানান, টুসু মন্দির সংলগ্ন যে পাঁচ বিঘা জায়গা রয়েছে, সেখানে উদ্যান, জলাশয়, নির্মাণ করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। আদিবাসী সংস্কৃতিচর্চার জন্য নির্মাণ করা হবে একটি অডিটোরিয়ামও।
আদিবাসী কুড়মী সমাজের রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাত বলেন, যে সমস্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তা নিয়ে তাতে আমাদের বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই। আমাদের মূল আপত্তি টুসুর মন্দির নির্মাণ এবং মন্দিরের ভেতরে মূর্তি নির্মাণ করে সেখানে পূজোর্চনা করা নিয়ে। ওই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র, হাসপাতাল যা খুশি করা হোক। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিকে অপমান করে এত সব কিছু আমরা মেনে নেব না। কুড়মী তথা আদিবাসী সংস্কৃতি ধ্বংস করার এটা একটা গভীর চক্রান্ত। ওই এলাকার মানুষ যে ভাবে নীরব আছেন তা খুবই নিন্দনীয়। টুসু মন্দির কথাটাই সোনার পাথর বাটির মতো। তা ছাড়া টুসুর কোনো মূর্তি হয় না, এটি সম্পূর্ণ ভবে চাষবাস কেন্দ্রিক একটি আদিবাসী লোকউৎসব মাত্র। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে শুরু করে পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে টুসু ভাসানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যা পুজো করা টুসু সংস্কৃতির পরিপন্থী। আবেদন নিবেদনে কাজ না হলে বড়ো আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন রাজেশবাবু।
কী ভাবে এই টুসু মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু হল? টুসু মন্দির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা হরেন মাহাত বলেন, পরকল্পিত ভাবেই আমরা এই মন্দির নির্মাণ করেছি। ভারতবর্ষের কোথাও টুসু মন্দির নেই। আমরা চেয়েছিলাম নতুন কিছু করতে, যাতে আমাদের এলাকার সুনাম হয়। সেই মোতাবেকই আমরা মন্দির নির্মাণ করি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। হরেনবাবু বলেন, বছরদুয়েক হয়ে গেল মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আগে কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এখন মুখ্যমন্ত্রী এক কোটি টাকা বরাদ্দ করার পর কিছু লোক টাকার লোভে বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
যদিও এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করে আদিবাসী কুড়মী সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অনুপ মাহাত বলেন, “এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। টুসু সংস্কৃতি সম্বন্ধে এদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। নিজেদের নাম কামানোর জন্য, নিজেদের ফুর্তির জন্য হাজার বছরের একটা প্রাচীন সংস্কৃতিকে কলুষিত করতেও এদের বাধে না। এটা আদিবাসী মূলবাসী সংস্কৃতির উপর পরিকল্পিত ব্রাহ্মণ্য-আর্য আগ্রাসন। আগামীতে আমরা বড়ো আন্দোলনে নামতে চলেছি।”
টুসু কী? খবর অনলাইন-এর এই প্রশ্নের উত্তরে এলাকার তরুণ গবেষক মৃন্ময় বশরিয়ার বলেন, টুসু কোনো অলৌকিক দেবী নন, যাকে মূর্তি বানিয়ে পূজা করা যায়। টুসু হল শস্যকেন্দ্রিক একটি উপজাতি পার্বণ। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তিতে জমিতে রেখে আসা একটি ধানের আঁটিকে পূজো করে, সিঁদুর মাখিয়ে বাড়িতে আনা হয়। যা ডিনী মা নামে পরিচিত। এর পর পৌষের প্রথম দিন নতুন ধানের তুষ দিয়ে মাটির সরার মধ্যে রাখা হয়, যা টুসু স্থাপন নামে পরিচিত। এর পর প্রতি দিন একটি করে ফুল দিয়ে সন্ধ্যাবেলা টুসু গীত গাওয়া হয়। পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন যা আদিবাসীদের কাছে ‘বাউড়ি’ নামে পরিচিত, ওই রাতে সারা রাত টুসুর জাগরণ করেন মহিলারা, পর দিন দুপুর পর্যন্ত নাচগান করে ডিনীকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে। টুসুর কোনো মূর্তি হয় না। পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ডে টুসু মূর্তির কোনো প্রচলন নেই। ইদানীং নাচগানের সুবিধার জন্য বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের কিছু জায়গায় ছোটো ছোটো মূর্তি ব্যাবহার করা হয়। এই পার্বণে কোনো ব্রাহ্মণ ডাকা হয় না। মহিলারা গান গেয়ে গাঁদা বা আকন্দ ফুল দিয়ে আরাধনা করেন মাত্র। মন্দির নির্মাণ করে এত দিনের টুসুর সংজ্ঞাটাই বদলে দেওয়া হল।
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ টুসু মন্দির কমিটির সভাপতি লক্ষণ রায়। তাঁর কথায়, “না না, আমরা টুসু সংস্কৃতি ভাঙতে চাই না। আমরা সমৃদ্ধই করতে চাই এই সংস্কৃতি। আমরা চাই টুসুকে কেন্দ্র করে এই এলাকার সংস্কৃতির বিকাশ হোক। কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হোক। আর্য বা ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের তত্ত্ব মানতে তিনি নারাজ। তিনি বলেন, সে রকম সম্ভাবনা নেই। টুসু মন্দিরে কোনো ব্রাহ্মণ বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে পুজো করবেন না। পুজো করছেন কুড়মী মাহাত সমাজেরই লায়া শশধর মাহাত। তিনি টুসু গান করেই পুজো করেন।
ঘটনা যা-ই হোক, প্রশাসন দু’ পক্ষকে নিয়ে সমস্যা সমাধান না করলে অদূর ভবিষ্যতে জঙ্গলমহল উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা। বড়ো আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে কুড়মীসেনা।
সৌজন্য – খবর Online, January 29, 2018, মৃণালকান্তি মাহাত

আদিবাসী সমাজের আর্থিক বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে মোদী সরকার।


আমুলের মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি আদিবাসী মানুষের আর্থিক মানোন্নয়নের প্রকল্প হাতে নিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। আমুলের ক্ষেত্রে যেমন ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে দুগ্ধ বিক্রয় করতে স্বনির্ভর গোষ্ঠী সফল ভাবে কাজ করে চলেছে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে ভাবেই আদিবাসী মানুষের কাছ থেকে মাইনর ফরেস্ট প্রডিউস বা ক্ষুদ্র বনজ উদ্ভিদ এবং পণ্য কিনতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে চলেছে। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলিতে বসবসাকারী পরিবারগুলিকে সংগঠিত করা, তাদের নিয়ে মূল্য সংযোজন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং পণ্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে এই কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে স্থানীয় স্তরের জনপ্রতিনিধিদের এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
তবে মোদী সরকারের এই পরিকল্পনা নতুন নয়, পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের আমলেই এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। গত ২০১৩-১৪, অর্থাৎ মনমোহন সিংহ সরকারের শেষের দিকে এই জনমোহিনী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে  আদিবাসী জনজাতির মানুষের কাছ থেকে বনজ সম্পদ ক্রয় করার ওই কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘ দিন কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি। সেই কর্মসূচিকেই নতুন রূপে শুরু করতে চলেছে বর্তমান এনডিএ সরকার। তাদের লক্ষ্য-এই কর্মসূচির আওতায় দেশের প্রায় পাঁচ কোটি আদিবাসী মানুষকে নিয়ে আসা।
ইতিমধ্যেই দেশের নয়টি রাজ্যকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওই রাজ্যগুলি হল ওড়িশা, ছত্তীশগঢ়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা। পরবর্তীতে আর নয়টি রাজ্য সংযোজিত হতে চলেছে। সেগুলি হল কর্ণাটক, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অসম।
সৌজন্য – খবর Online, January 24, 2018

পুলিশের গুলিতে ২ আদিবাসী নিহতের পর উত্তপ্ত আসাম।


দিমাসা আদিবাসীদের বিক্ষোভ ও ধর্মঘটে আসামের একাংশ অচল হয়ে পড়েছিল। আসাম থেকে শিলচর ও গুয়াহাটিগামী ট্রেন অবরোধের কারণে মাঝপথে আটকে যাওয়ায় দুই হাজারের বেশি যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছিলেন। আসামের দক্ষিণাঞ্চল, মিজোরাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন নর্থওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ের রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব জ্যোতি শর্মা। তিনি বলেন, “২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যাত্রীরা স্টেশনে অপেক্ষা করছে। স্টেশনে ভাংচুর ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। পথে রেললাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা ট্রেন ছাড়বো না। ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীদের আমরা সড়ক পথে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি।”
এনডিটিভি জানায়, গত কয়েকদিন ধরে আসামের দিমা হাসাও জেলায় আদিবাসী দিমাসাদের বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মাইবাং রেলস্টেশনে বিক্ষোভকারীরা রেললাইন উপড়ে ফেলা এবং স্টেশনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হয়। এর জেরে দিমা হাসাও জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বিক্ষোভকারীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা মৃতদেহ নিয়ে মৌন মিছিল করেছে। তারা স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পুলিশে চাকরি ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি করছে।
কয়েক দিন আগে স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে ‘আরএসএস ফাংশনারি’র এক সদস্যের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রচার হয়। খবরে বলা হয়, ২০১৫ সালে ভারত সরকার ও সশস্ত্র এনএসসিএন(আইএম) দলের মধ্যে যে নাগা শান্তি চুক্তি সাক্ষর হয়েছে সেটা অনুযায়ী, ‘দিমা হাসাও জেলা গ্রেটার নাগাল্যান্ডের অংশ হবে’।
কিন্তু দিমাসা আদিবাসীরা সেটা চাইছে না। তাদের আশঙ্কা গ্রেটার নাগাল্যান্ডের অংশ হলে তাদের নিজেদের ভূমি হারাতে হবে। যদিও পরে আরএসএস নেতা সংবাদে তার বক্তব্য ভুল ভাবে উপস্থাপণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক মুকেশ সাহাই এনডিটিভিকে বলেন, “দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ওই মুহূর্তে গুলি চালানো ছাড়া পুলিশের হাতে অন্য উপায় ছিল না। সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এমনকি সেখানে ‘রিপাবলিক ডে’ উদযাপিত হয়েছে।”
সৌজন্য - বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

অবশেষে প্রকাশিত হচ্ছে Work Education ও Physical Education বিষয়ের WBCSSC ফলাফল।


Tuesday, January 30, 2018

ফিরে দেখা : ৩১ শে জানুয়ারি ১৯৮৯ কোলকাতায় ঝাড়খণ্ডীদের বিশাল জনসমাবেশ।







পশ্চিম বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ এর ২১ টি জেলা (পশ্চিমবাংলার তিন জেলা – মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া; বিহারের ১২ টি জেলা – সিংভুম, গিরিডি, রাঁচি, লোহারডাগা, গুমলা, পালাউমৌ, হাজারীবাগ, ধানবাদ, দুমকা, গোড্ডা, দেওঘর ও সাহেবগঞ্জ; উড়িষ্যার ৪ জেলা – সম্বলপুর, সুন্দরগড়, ময়ুরভঞ্জ ও কেওনঝড়; এবং মধ্যপ্রদেশ এর ২ জেলা – সরগুজা ও রাইগড়) নিয়ে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে পশ্চিমবাংলা সরকারের সহযোগিতা ও ঝাড়খণ্ডী সাংস্কৃতিক অঞ্চলের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে সাঁওতালী, মুন্ডারি, কুরুখ, নাগপুরি ও কুড়মালি ভাষায় পঠন পাঠনের দাবীতে ১৯৮৯ সালের ৩১ শে জানুয়ারি পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতা শহরের বিখ্যাত শহীদ মিনার ময়দানে ঝাড়খণ্ড সমন্বয় সমিতি (Jharkhnd Coordination Committee)-র ডাকে ৫০,০০০ হাজার ঝাড়খণ্ডী সমবেত হয়েছিলেন। এই ঝাড়খণ্ডী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ রামদয়াল মুন্ডা, এন ই হোরো, বিনোদ বিহারী মাহাতো, সন্তোষ রানা, সূর্য সিং বেসরা ও নরেন হাঁসদা সমেত তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ঝাড়খণ্ডী নেতৃবৃন্দ। ঝাড়খণ্ডীদের এই জনসমাবেশকে ভণ্ডুল করতে সবরকম পন্থা অবলম্বন করেছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএম ও বামফ্রন্ট সরকার। কোলকাতায় সমাবেশ করতে চরম অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেছিল। ঝাড়খণ্ডী সমাবেশ গুলোর অন্যতম অঙ্গসজ্জা তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। নিজেদের দাবীর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ বের করে এনেছিল বামফ্রন্ট সরকার। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মন্তব্য করেছিলেন যে ঝাড়খণ্ডীরা কেন কোলকাতায় সমাবেশ করছেন? তারা তো দিল্লী যেতে পারেন। কোনদিনেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিশেষ ক্যাবিনেট মিটিং ডাকেন ও তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মুখ্যসচিব টি সি দত্তের নেতৃত্বতে এক বিশেষ সেল গঠন করা হয়। কলকাতা শহরে ঢোকার সমস্ত রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড করা হয়, যারা তির ধনুক বাজেয়াপ্ত করার অছিলায় ঝাড়খণ্ডী সমর্থকদের কলকাতা শহরে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করেন। কিন্তু কোন কিছুই ঝাড়খণ্ডীদের দমাতে পারেনি। বিশাল ভাবে সফল হয়ে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের হৃদয়ে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছিল ঝাড়খণ্ডীদের এই ঐতিহাসিক জনসমাবেশ। ঝাড়খণ্ডীদের এই সমাবেশ কে সফল করতে বিশাল সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন ৩২ বছরের তরুন যুবক ঝাড়খণ্ড পার্টির জনপ্রিয় নেতা নরেন হাঁসদা।
৩১ শে জানুয়ারি ১৯৮৯ কলকাতার রাজপথ ছেয়ে গিয়েছিল তির ধনুক হাতে ঝাড়খণ্ডী সমর্থক, সবুজ পতাকায় ও সশস্ত্র পুলিস বাহিনীতে।
সমাবেশে সমস্ত বক্তা বামফ্রন্ট সরকারের অসহযোগিতা মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেন। মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠে নরেন হাঁসদা তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন ‘তির ধনুকের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা একটি জাতির বিশ্বাসের ওপর হামলার স্বরূপ। আমি শহীদ মিনার মঞ্চে উঠে এক হাতে তির, অন্য হাতে ধনুক তুলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিতে চায় যে মুসলিম ভাইদের টুপি, পাঞ্জাবী ভাইদের কৃপাণ ও ঝাড়খণ্ডীদের তির ধনুক কেড়ে নেবার চেষ্টা হলে কেবল পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা ভারতবর্ষেই আগুন জ্বলবে।’
সমাবেশে নরেন হাঁসদার পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ঝাড়খণ্ডী ছাত্র নেতা সূর্য সিং বেসরা (সভাপতি, অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন তথা আজসু), রাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাত্তন উপাচার্য রামদয়াল মুন্ডা সহ বাকি ঝাড়খণ্ডী নেতৃবৃন্দ। ঝাড়খণ্ড সমন্বয় সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয় তৎকালীন পশ্চিমবাংলার ভুমি ও ভুমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর হাতে। স্মারকলিপিতে সাক্ষর করেন ডাঃ রামদয়াল মুন্ডা, এন ই হোরো, বিনোদ বিহারী মাহাত, নরেন হাঁসদা ও সন্তোষ রানা।  
ঝাড়খণ্ডীদের দাবিদাওয়া সম্বন্ধে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু চরম তির্যক মন্তব্য করেন। জ্যোতি বসু জানান যে পশ্চিমবাংলায় আদিবাসীদের জনসংখ্যা অতি অল্প, মেদিনীপুর জেলায় ৪ %, বাঁকুড়া জেলায় ৮% আর পুরুলিয়া জেলায় ১৭% মাত্র, তাই পশ্চিমবাংলার প্রস্তাবিত জেলাগুলি নিয়ে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের কোন সম্ভবনায় নেই। আর ঝাড়খণ্ডীদের মাতৃভাষায় পঠন পাঠনের বিষয়ে জানান যে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে একজন বাঙালি ছাত্রেরও বাংলা ভাষা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ নেই তাই এই দাবীর কোন সারবত্ততা নেই। জ্যোতি বসু অলচিকিকে ভাষা হিসেবেও উল্লেখ করেন। জ্যোতি বসুর এই মন্তব্যগুলির চরম বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানান বিশিষ্ট নকশাল নেতা সন্তোষ রানা। ঝাড়খণ্ডীদের জনসংখ্যা প্রসঙ্গে সন্তোষ রানা জানান যে শুধুমাত্র আদিবাসীরাই ঝাড়খণ্ডী জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত নয়। আদিবাসীদের পাশাপাশি কুড়মি মাহাতো, বাগাল, রাওতিয়া, প্রভৃতি অর্ধ আদিবাসী জনগোষ্ঠী, আবার হিন্দু ধর্মের শূদ্র জনগোষ্ঠী তথা কামার, কুমোর, তাঁতি, বাগদি প্রভৃতি জনগোষ্ঠীরাও ঝাড়খণ্ডী জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত। এদের ধরে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় ঝাড় খণ্ডীদের জনসংখ্যা ৯০-১০০%। অলচিকি বিষয়ে জ্যোতি বসুর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সন্তোষ রানা জানান যে এই ব্যাপারে মন্তব্য করে জ্যোতি বসু নিজের অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। অলচিকি কোন ভাষা নয়, এটি একটি লিপি। পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু এর আবিস্কারক। এই অলচিকি লিপির বৈশিষ্ট্য হল যে এই লিপি দিয়ে সাবলীল ভাবে সাঁওতালী, মুন্ডারি, কুড়মালি সহ বিভিন্ন ভাষা লেখা ও পড়া যায়, যা বাংলা লিপি দিয়ে কখনই সম্ভব নয়। এও জানিয়ে দেন যে পশ্চিমবাংলায় কোন স্কুলে সাঁওতালী, মুন্ডারি বা কুড়মালি ভাষার মাধ্যম বা বিষয় হিসেবে পড়ানো হয় না। সিপিএমের একসময়ের ‘মাতৃভাষাই মাতৃ দুগ্ধ’ জনপ্রিয় শ্লোগান টি জ্যোতি বসুকে মনে করিয়ে তাদের দিচারিতাকে স্পষ্ট করেন। জ্যোতি বসু কে মনে করিয়ে দেন যে খোদ লেনিন রুশ ভাষা কে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর জাতীয় ভাষা করতে চাননি কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন এর অন্তর্গত বিভিন্ন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীগুলির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থাকায়।
(আদিবাসি-মুলবাসীদের অধিকার রক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় আন্দোলন হল ঝাড়খণ্ড আন্দোলন। এক সময় এই ঝাড়খণ্ড আন্দোলন আদিবাসী-মূলবাসী সমাজে এক অদ্ভুত উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এই আন্দোলন নিয়ে খুব বেশী লেখা, বই বা গবেষণা বাংলা ভাষায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সুত্র থেকে সংগ্রহ করে ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্য উৎসুক পাঠকদের সামনে তুলে ধরার এক সামান্য প্রচেষ্টা।)

Monday, January 29, 2018

দলিত নেতা ও ভীম সেনার প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদের মুক্তির দাবীতে সাক্ষর সংগ্রহ অভিযান।


৯ জুন, ২০১৭ তারিখ থেকে উত্তর প্রদেশ এর জেলে বন্দি আছেন যুব দলিত নেতা ও ভীম সেনার (Bhim Army) প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। সম্প্রতি জানা যাচ্ছে যে উত্তর প্রদেশ এর যোগী সরকার এই তরুণ তুরকি দলিত যুব নেতা কে জেলে আটকে রাখতে জাতীয় সুরক্ষা আইনের বলে আগামী মে, ২০১৮ অবধি আটকে রাখতে চাইছে। এই তরুণ তুরকি দলিত যুব নেতার মুক্তির দাবীতে সকল গণতান্ত্রিক মানুষেরা এক হউন।

জয় আদিবাসী যুবা শক্তি (Jai Adivasi Yuba Sakti - JAYS) এর মিশন ২০১৮।

জয় আদিবাসী যুবা শক্তি (Jai Adivasi Yuba Sakti - JAYS) এর মিশন ২০১৮ এর প্রধান ৬ টি দাবীগুলি -
১) "আদিবাসী" শব্দটিকে ভারতীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।,
২) ভারতীয় সংবিধানে পঞ্চম তপশীল (5th Schedule) ও ষষ্ঠ তপশীল (6th Schedule) এর কার্যকরী রুপায়ন করতে হবে।,
৩) বনাধিকার আইন (Forest Rights Act, 2006) এর কার্যকরী রুপায়ন করতে হবে।,
৪) ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস (9 August International Indigenous Peoples Day) উপলক্ষ্যে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে।,
৫) উচ্ছেদ হওয়া আনুমানিক ২ লক্ষ আদিবাসীদেরকে পুনর্বাসন দিতে হবে।,
৬) বিলুপ্তির পথে আদিম আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের সংরক্ষণের ব্যাবস্থা করতে হবে।, ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার (১৯৫২) প্রথম আদিবাসী সাঁওতাল বিধায়ক।


পৃথক গোর্খাল্যান্ডই প্রধান দাবি, জানিয়ে দিল হরকা বাহাদুর নেতৃত্বাধীন জন আন্দোলন পার্টি (JAP)



গোর্খাল্যান্ডের দাবিই প্রধান বলে প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় জানিয়ে দিলেন জন আন্দোলন পার্টির নেতৃত্ব। শনিবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের ওই সভায় দলের সভাপতি হরকা বাহাদুর ছেত্রী উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তাঁর বক্তব্যের রেকর্ড শোনানো হয়। তাতে তিনি জানান, ‘‘যতদিন জাপ থাকবে ততদিন গোর্খাল্যান্ডের দাবিও থাকবে। জাপের দাবিদাওয়ার মধ্যে প্রধান হল গোর্খাল্যান্ড।’’
কালিম্পঙে প্রতিষ্ঠাদিবস পালনের জন্য সভার অনুমতি পায়নি জাপ। বাঘা যতীন পার্ক শিলিগুড়ি পুরসভার অধীনে। এ দিন শিলিগুড়িতে সভা করতে পারার জন্য মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাপের সহসভাপতি অমর লামা এবং অন্যরা। অমর লামা বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক নেই। কে সামলাবে, আর কোন পথে তা যাবে বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নয়। দার্জিলিং সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চাই।’’ সহ-সভাপতির দাবি, তাঁরা কোনও সরকারি ভবনের ক্ষতি করেন না। পুলিশকে আক্রমণ করেন না। অথচ তাঁদেরই সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ সরকারি অর্থে জনসভা করছেন বলেও তোপ দাগেন অমর। দার্জিলিঙের পরিস্থিতি নিয়ে দুদফায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জাপ অংশ নিয়েছে। কিন্তু তাদের অন্ধকারে রেখে ভিতরে ভিতরে কথা বলে জিটিএর নতুন বোর্ড গড়া হয়েছে বলে জাপের অভিযোগ। এর প্রতিবাদেই তারা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যাচ্ছেন না বলে জানান অমর।
দুবার পাহাড় থেকে বিজেপির সাংসদ লোকসভায় গেলেও পাহাড়ের অসুবিধার সময় তারা আসছেন না কেন সেই প্রশ্ন তুলেছে জাপ। তাই পাহাড়ে বিজেপিকে আর সমর্থন না করার জন্য আহ্বান জানান অমর লামা। সভা থেকে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি দাবিও তুলেছে জাপ। অমর বলেন, ‘‘চা বাগান এবং সিঙ্কোনা চাষের শ্রমিকরা খাদ্য সুরক্ষা আইনবলে রেশন পাচ্ছেন না। তাঁদের সেই অধিকার দিতে হবে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮।

অধিনায়ক জিতেন মুরমুর গোলে সন্তোষ ট্রফির ম্যাচে ছত্তীসগঢ়ের বিরুদ্ধে জয় বাংলা ফুটবল দলের।


৭২ তম সন্তোষ ট্রফির যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বের ম্যাচে বিহারের বেগুসরাইয়ে ছত্তীসগঢ়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল রঞ্জন চৌধুরীর বাংলা দল। শুরুতেই অধিনায়ক জিতেন মূর্মূর জোড়া গোলে বাজিমাত বাংলার। সোমবার প্রথমার্ধে সমানে সমানে লড়াই দিয়ে যায় ছত্তীসগঢ়। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেয় বাংলা। বাংলার কোচ রঞ্জন চৌধুরী ফোনে বলেন, ‘‘প্রথমার্ধে ওরা ভালই খেলেছে। কিন্তু গোল পাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আমরা খেলাটা ধরেনি। কিন্তু আমরা আরও গোল পেতে পারতাম।’’
জিতেন মূর্মূর দুটো গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে। কোচের দাবি আরও দুটো নিশ্চিত পেনাল্টি পায়নি বাংলা দল। সঙ্গে একাধিক ওপেন নেটও মিস করেছে বাংলার স্ট্রাইকাররা। যদিও কোচ রঞ্জন চৌধুরীর কাছে এই জয় অনেকটাই। কারণ, টিম কম্বিনেশন তৈরি করার সুযোগই পাননি তিনি। অনুশীলনের তেমনভাবে সুযোগ পায়নি দল। তার মধ্যেই দলকে মোটিভেট করে গিয়েছেন কোচ রঞ্জন চৌধুরী। বলছিলেন, ‘‘আমরা অনুশীলনের সুযোগ পাইনি। চিন্তা ছিল দলের কম্বিনেশন নিয়ে। যেটা তৈরি হয়নি তেমনভাবে। তবে, ছেলেদের বলেছিলাম আমাদের জিততেই হবে।’’
২ ফেব্রুয়ারি ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলা। ছত্তীসগঢ়কে আগে মেপে নিতে না পারলেও ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে খেলার আগে তাদের গ্রুপের প্রথম ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবে বাংলা। কোচ বলছিলেন, ‘‘এই ছত্তীসগঢ়ের সঙ্গে আমরা গতবারও খেলেছি। ওদের মধ্যে একটা নাছোড়বান্দা ব্যাপার আছে। গতবারও আমরা শেষ মুহূর্তে ওদের বিরুদ্ধে জিতেছিলাম।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮।

সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মামলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে শেষ ৯ বছরের হিসেব দিতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।


পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মামলায় নয়া নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের শেষ ৯ বছরের মহার্ঘ ভাতার হিসেব চাইল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ফের মামলার শুনানি৷ বহুদিন ধরেই বকেয়া রাজ্য সরকারি কর্মচরীদের মহার্ঘ ভাতা৷ ডিএ আদায়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন৷ সেই ডিএ মামলার আইনি যুক্তি তৈরি করে দেয় হাইকোর্ট৷ এর আগে শুনানিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্যের কাছে চারটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিল হাইকোর্ট৷
এদিনের শুনানিতে হাইকোর্ট রাজ্যের কাছে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়েছে৷ মঙ্গলবার রাজ্যকে আদালতে বিস্তারিতভাবে যে প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে হবে তা হল,
- ৯বছরে কতবার ডিএ নির্দেশিকা জারি রাজ্যে?
- এর আগে কত শতাংশ হারে ডিএ দেওয়া হয়েছে?
-ডিএ ঘোষণা এবং প্রাপ্তির মধ্যে সময়ের ফারাক কত?
-কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ পার্থক্য কত?
- শেষ ৯ বছরের ডিএ-এর হিসেব চেয়েছে হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর তৃণমূল সরকারি কর্মী সংগঠনের সমাবেশে এসে ডিএ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারিতে ১৫ শতাংশ হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের৷ এরপর আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, আর কোনও বকেয়া ডিএ নেই৷ এই দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, এখনও ডিএ-সহ আরও অনেক সুযোগ সুবিধা বকেয়া রয়েছে৷ সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বকেয়া ডিএ মামলায় মূলত এই প্রশ্নগুলির উত্তর চায় আদালত৷
সৌজন্য – নিউজ ১৮ বাংলা, ২৯/০১/২০১৮।

উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় জমির পাট্টা ৬ আদিবাসী পরিবারকে।


বামফ্রন্ট আমলে উচ্ছেদ হয়েছিলেন তাঁরা। ভিটেমাটি সব হারিয়ে বছরের পর বছর ধরে কার্যত ভবঘুরে হয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু, পুনর্বাসন মেলেনি। অবশেষে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের মানবিক উদ্যোগে প্রায় ২৫ বছর পর পুনর্বাসন পেল মধ্যমগ্রামের দোলতলা এলাকার ছটি আদিবাসী পরিবার। প্রত্যেক পরিবারকে তিন শতক করে সরকারি জমি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই যুগ পর নিজেদের নামে জমি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ওই গরিব আদিবাসীরা। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কুর্নিশও জানিয়েছেন। পাট্টার জমিতে তাঁরা এখন নিজেদের ঘর বাঁধতে ব্যস্ত।
জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যমগ্রাম দোলতলা এলাকায় থাকতেন ওই ছয়টি গরিব আদিবাসী পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ওই এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযোগ, সিপিএম সরকারের আমলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের আগে তাঁদের পুনর্বাসের কথা বলা হলেও পরবর্তীকালে তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর ভিটেমাটি ছেড়ে ওই পরিবারগুলি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকেন। কেউ ভাড়াবাড়ি নেন, কেউ আবার পালাবদল করে সাময়িকভাবে আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এভাবেই এতদিন তাঁরা নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু, নিজেদের ঘর তৈরির জন্য জমি পাননি।
ওই গরিব আদিবাসীদের কথায়, মাস কয়েক আগে তাঁরা ঠিক করেছিলেন, নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরো বিষয়টি জানাবেন। সেই মতো তৈরিও হয়েছিলেন। কিন্তু, নবান্ন যাওয়ার আগে তাঁরা এই বিষয়টি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অফিসের দ্বারস্থ হন। সেখানে গিয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি জানান। জেলাশাসক পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আরশাদ-উদ-জামানকে বলেন। তিনি ওই ছয়টি পরিবারের সদস্যদের ডাকেন। তারপর তাঁদের কাছ থেকে পুরো ইতিহাস শোনেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর দিন কয়েক আগে ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিজের এলাকায় বারাসত-১ ব্লকের কদম্বগাছির সাড়াবেড়িয়া মৌজায় ওই ছটি পরিবারকে পাট্টার ব্যবস্থা করেছেন। সকলকেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে।
ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বলেন, সিপিএম উচ্ছেদ করে পুনর্বাসন দেয়নি। ২৫ বছর ধরে এই গরিব মানুষগুলো ঘুরে বেরিয়েছেন। আমাদের সরকার মানবিক উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের প্রত্যেককে তিন শতক করে জমি পাট্টা দিয়েছি। জেলাশাসক বলার পরই আমি সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থা করেছি। আমরা ওই মানুষগুলির পাশে আছি।
পাট্টা পাওয়া গীতা ওঁরাও নামে এক মহিলা বলেন, দোলতলায় আমরা সপরিবারে ছিলাম। সেখানেই আমাদের সবার ঘরবাড়ি ছিল। কিন্তু, সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলেও আমাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। খুব কষ্ট করে এতগুলো বছর কাটিয়েছি। জমি পেয়ে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত। রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, পাট্টা পাওয়ার জমি গিয়ে দেখেও এসেছি। এখন সেখানে ছোট্ট ঘর তৈরির প্রস্তুতি করছি। আর বাইরে বাইরে ঘুরতে হবে না। ২৫ বছর পর এবার একটা স্থায়ী ঠিকানা হল।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২৯/০১/২০১৮।

Sunday, January 28, 2018

সাঁওতাল জাতির সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার বিষয়ক বই।

সাঁওতাল জাতির সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার সম্বন্ধে জানতে একবার এই বইটি পড়ে দেখুন। সাঁওতালি ও বাংলা, দুটি ভাষাতেই এই বইটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলা ও অলচিকি, এই দুটি বর্ণমালা তেও পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতীয় সংবিধান নির্মাণে পাঁচজন আদিবাসী নেতা।

ভারতীয় সংবিধান নির্মাণে তৎকালীন আদিবাসী নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। আদিবাসী মহাসভার তৎকালীন সভাপতি মারাং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডা সহ পাঁচজন আদিবাসী নেতা ১৯৪৬ সালের ভারতীয় সংবিধান রচনা সভা তথা Constituent Assembly তে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য রেখেছিলেন। সন্মানিয় সেই পাঁচজন আদিবাসী নেতারা হলেন
১) মারাং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডা (ঝাড়খণ্ড),
২) বোনিফেস লাকড়া (ঝাড়খণ্ড),
৩) রামপ্রকাশ পটাই (ছত্তিসগড়),
৪) মাংরু উকে (মধ্যপ্রদেশ) ও
৫) ধরণীধর বসুমাতারি (আসাম)।
বর্তমানে আদিবাসীরা যে সমস্ত সাংবিধানিক সুযোগ সুবিধা তথা শিক্ষা, সরকারি চাকরি ও নির্বাচনে সংরক্ষণের অধিকার, স্বশাসনের অধিকার তথা সংবিধানের ৫ম ও ৬ ষ্ঠ তপশীল, PESA আইন, ইত্যাদি যে সমস্ত অধিকার ভোগ করছেন তাতে এই সমস্ত আদিবাসী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সমস্ত আত্মসচেতন আদিবাসীদের এই সমস্ত আদিবাসী নেতাদের বিনম্র, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা নিয়ে স্মরণ করা উচিত।

সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘের ঘোষণাপত্রের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ভারতের আদিবাসীরা।


ভারতীয় সংবিধানে "আদিবাসী" শব্দ অন্তর্ভুক্ত না হয়ে "Schedule Tribe" শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এইভাবে আদিবাসীরা তাদের পরিচিতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘ (United Nations Organization -UNO) বিশ্বের সমস্ত দেশে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা পত্র (United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples) প্রকাশ করেছে। ভারত সরকারও এই ঘোষণা পত্রে সাক্ষর করেছে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে আদিবাসীদের উল্লেখ্য না থাকায় সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘ (United Nations Organization -UNO) র ঘোষণা পত্র United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples অনুযায়ী ভারতের আদিবাসীরা তাদের হক, অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Saturday, January 27, 2018

সংগঠিত হবার প্রয়াস চালাচ্ছে আদিবাসীদের প্রথম রাজনৈতিক দল "ঝাড়খণ্ড পার্টি"।





পুনরায় সংগঠিত হবার প্রয়াস চালাচ্ছে স্বাধীন ভারতবর্ষে আদিবাসীদের প্রথম রাজনৈতিক দল ও আদিবাসীদের নিজস্ব ভুমি বা Homeland ঝাড়খণ্ড রাজ্য নির্মাণ আন্দোলনের সূচনাকারী "ঝাড়খণ্ড পার্টি"।
১৯৪৯ সালে মারাং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডার নেতৃত্বে তৎকালীন সময়ে আদিবাসীদের সবথেকে শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন "আদিবাসী মহাসভা "-কে "ঝাড়খণ্ড পার্টি" রুপে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড পার্টি ৪ টি লোকসভা আসন, বিহার বিধানসভায় ৩৪ টি বিধানসভা আসন জিতে প্রধান বিরোধী দল, উড়িষ্যা বিধানসভায় ৬ টি বিধানসভা আসন যেতে।
কিন্তু ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন না হওয়ার হতাশায় ও কংগ্রেস নেতাদের প্ররোচনায় পা দিয়ে জয়পাল সিং ঝাড়খণ্ড পার্টিকে ১৯৬৩ সালে কংগ্রেস দলের সাথে মিশিয়ে দেন।
কিন্তু ঝাড়খণ্ড আন্দোলন স্তব্ধ হয়নি। ১৯৬৭ সালে এন ই হোরোর নেতৃত্বে পুনরায় ঝাড়খণ্ড পার্টি গঠন করা হয়। এর পর ঝাড়খণ্ড পার্টি ভেঙ্গেই গিয়েছে। ঝাড়খণ্ড পার্টি ভেঙ্গে একে একে গঠন হয়েছে সারা ভারত ঝাড়খণ্ড পার্টি, হুল ঝাড়খণ্ড পার্টি, বিহার প্রান্ত হুল ঝাড়খণ্ড পার্টি, প্রোগ্রেসিভ হুল ঝাড়খণ্ড পার্টি, রাজ্য হুল ঝাড়খণ্ড পার্টি, ঝাড়খণ্ড পার্টি (হোরো), ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন), ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি, প্রমুখ।
তবে বর্তমানে মাত্র তিন থেকে চারটি গোষ্ঠী সক্রিয়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে প্যারা মুন্ডুর নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড পার্টি, এনোস এক্কার নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড পার্টি (এনোস এক্কা) সক্রিয়। পশ্চিমবাংলায় বর্তমানে আছে চুনিবালা হাঁসদার নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) ও আদিত্য কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি।

সাঁওতালি ছোট সিনেমা উৎসব (Santali Short Film Festival)।


Santali Film & Art Development Association, Orrissa এর উদ্যোগে আদিবাসী সাঁওতালি ভাষার ছোট সিনেমা উৎসব (Short Film Festival)।
তারিখ - ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, স্থান - শহীদ স্মৃতি ভবন, উড়িষ্যা।
যোগাযোগ - ৮৯০৮৬০৬০৩৬/ ৯০৩০৭৬৩০৪২/ ৮৮০১৮০০৬

অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকুতে আদিবাসী সংগ্রহশালা (Tribal Museum)।



ASSA-র প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান ও নবাগত আদিবাসী ছাত্র ছাত্রী সহ গুণীজনদের সম্বর্ধনা সভা।





গত ২০-২১ জানুয়ারি, ২০১৮ সাঁওতাল আদিবাসী ছাত্র সংগঠন All Santal Students Association (ASSA) এর উদ্যোগে সংগঠনের পুরনো সদস্যদের নিয়ে প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান আয়োজিত হল। পশ্চিমবাংলার জঙ্গল মহল অঞ্চলের রাজধানী তথা অরন্য শহর ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্র পার্কে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরনো সদস্যদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হল বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত আদিবাসী ছাত্র ছাত্রী ও গুণীজনদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য থাকে যে ১৯৯৭ সাল নাগাদ কলকাতা এক ছাত্রাবাসে All Santal Students Association (ASSA)-র প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম সভাপতি ছিলেন দেবদুলাল মুরমু, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মঙ্গল সরেন। সেই সময় সাঁওতালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্তি, অলচিকি লিপি কে সরকারি স্বীকৃতি, সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠনের দাবীতে জোরদার আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল Adibasi Socio-Educational & Cultural Association (ASECA), সাঁওতালি ভাষা মোর্চা প্রমুখ সংগঠন। আন্দোলনকে জোরদার করতেই ASECA অনুগামী ছাত্ররা ASSA গঠন করেন। প্রথম পর্যায়ে ASECA-র পূর্ণ মদতে ASSA সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তাঁরা শাখা স্থাপন করে। কিন্তু কলকাতায় এক বিক্ষোভ সমাবেশকে সংগঠিত করা নিয়ে ASECA নেতৃত্বের সাথে ASSA ছাত্র নেতাদের বিশাল মতপার্থক্য তৈরি হয়। ASECA নেতৃত্ব ASSA সংগঠনের পাস থেকে সরে দাড়ায়। আসতে আসতে ASSA ছাত্র সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
বর্তমানে প্রাত্তন ASSA সদস্যরা অনেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত। প্রাত্তন ASSA সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায় ASSA আবার নতুন করে সংগঠিত হবার চেষ্টা করছে।
শুভেচ্ছা জানাই ASSA-র সকল সদস্য ও সংগঠকদের। কামনা করি আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে ASSA পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেবে।