বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন - Adibasi Socio Educational
& Cultural Association (ASECA), All India Santali Writers Association,
Bharat Jakat Majhi Madowa (BJMM), All Santal Students Association (ASSA),
Bharat Jakat Santarh Pathua Gaunta (BJSPG), Jhargram Dama Soren Tirla Gaunta,
All Orissa Olciki Students Union, Raghunath Murmu Adibasi Students Association
(RASA), Santali Bhasa Morcha সহ সহযোগী সংগঠন
এর নেতৃত্বে সাধারণ সাঁওতাল আদিবাসীদের লাগাতার আন্দোলন, পথ অবরোধ, রেল অবরোধ, সমাবেশ ও সাংসদ সালখান মুরমুর সংসদে তীব্র সওয়াল এর জেরে ২০০৩
সালের ২২ শে ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদে সাঁওতালি ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে
সংবিধানের ৮ ম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত
হবার পর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাষা চালু হবার কথা। আজ ১৪ বছর পরেও সাঁওতালি ভাষা
শিক্ষার সঠিক পরিকাঠামো গড়ে উঠল না। আজও শিক্ষক এর জন্য, পাঠ্য বই এর জন্য, সাঁওতালি বিষয়
চালুর জন্য সাঁওতালি পড়ুয়াদের সাথে তাদের অভিভাবকদেরও আন্দলনে সামিল হতে হচ্ছে।
কেন?
সাঁওতালি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি পাবার পর সাধারণ সাঁওতালি পড়ুয়ারা
মাতৃ ভাষায় শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক দের কিন্তু পোয়া বারো
অবস্থা হয়েছে। ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করার পর দিল্লীতে
সাহিত্য একাডেমী থেকে প্রতি বছর সাঁওতালি লেখকদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। পুরস্কারের
আর্থিক মুল্য ১ লক্ষ টাকা। আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও গঠন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি
একাডেমী। এখান থেকেও প্রতি বছর সাঁওতালি লেখক, সাহিত্যিক দের নিয়মিত পুরস্কার প্রদান করা হয়।
তাহলে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের
৮ ম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত হবার পর সাধারণ সাঁওতালি ছাত্র ছাত্রীদের কোন লাভ হয়নি।
লাভ হয়েছে সাঁওতালি লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক দের। আমি জানতে চাই যে ASECA ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃত্বে ৩৮ বছর ধরে যে সাধারণ সাঁওতালরা রোদে, গরমে, বৃষ্টিতে, না খেয়ে, নিজের কাজ ফেলে, পুলিশের পিটুনি খেয়ে, মামালায় অভিযুক্ত হয়ে যে আন্দোলন করলেন তাঁরা কি ফল পেলেন?
এখন দেখা যাচ্ছে যে প্রাথমিক স্কুল গুলিতে সাঁওতালি ভাষা চালু
হয়েছে সেখানে শিক্ষক এর অভাব। অভাব তো হবেই, কারণ পশ্চিমবঙ্গে একটাও সাঁওতালি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষক
প্রশিক্ষণের সংস্থা নেই। আবার মাধ্যমিক - উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতেও শিক্ষক না
থাকার কারণ এটি। সারা রাজ্যের মধ্যে সম্প্রতি একমাত্র বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে B.Ed করার সুযোগ আছে। আজ পর্যন্ত West Bengal School
Service Commission সাঁওতালি বিষয় এর
জন্য বছর প্রতি ১০ টির বেশী সাঁওতালি শিক্ষক পদ বরাদ্দ করতে পারলেন না। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাঁওতালি সিলেবাসের বই না পাওয়া যাওয়া। এমন
সব সাঁওতালি বুদ্ধিজীবীরা সাঁওতালি বই নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন যে তাঁরা এমন সব
বই সিলেবাসের জন্য নির্বাচন করেন যা বাজারে পাওয়া যায় না বা প্রকাশিত হয় না।
২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিলেন বামফ্রন্ট সরকার। সাঁওতালি
ভাষা চালু করতে বাম ফ্রন্ট সরকারের তীব্র অনিহা ছিল, কিন্তু প্রবল জনমতের সামনে লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি নিতে বাধ্য হল
বামফ্রন্ট সরকার। বামফ্রন্ট সরকার ২০০১ সালে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারকে চেয়ারম্যান করে তৈরি করে
সাঁওতালি ভাষা কমিটি, যার রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দিনের আলো দেখল না (শোনা যায় যে
পবিত্র সরকার তাঁর রিপোর্ট এ সাঁওতালি ভাষা চালুর পক্ষেই মতামত দিয়েছিলেন, কিন্তু
তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সাঁওতালি ভাষা চালু করতে চায় নি আর তাই পবিত্র সরকার
কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দিনের আলো দেখল না। )। আবার ২০০৩ সালে সংবিধানের ৮ ম তপশীলে সাঁওতালি ভাষা অন্তর্ভুক্ত
হলে বাম ফ্রন্ট সরকার সাঁওতাল জনগণ কে বিভ্রান্ত করতে অদ্ভুত কৌশল গ্রহণ করেছিল।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষা চালু
না করে সাঁওতালি ভাষা চালু করা হল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার সাঁওতালি ভাষায় কোন
PTTI ও B.Ed কলেজও চালু করেনি
বাম ফ্রন্ট সরকার। এই দিকে West Bengal School Service Commission সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগের জন্য কোন বছরও ১০ টির বেশী শিক্ষক
পদ ঘোষণা করেনি, আবার তাঁর মধ্যে SC/OBC/PH দের জন্য সংরক্ষণ থাকায় সাঁওতালি শিক্ষক পদ পূরণ করা হয় নি। তেমনি District Primary
School Council গুলিও প্রাথমিক স্কুলগুলিতে
পর্যাপ্ত পরিমাণে সাঁওতালি শিক্ষক নিয়োগ করে নি। আর তাই প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক,
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে বর্তমানে সাঁওতালি শিক্ষকের এই হাহাকার।
কিন্তু UGC-NET ও West Bengal
College Service Commission কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে লেকচারার/ প্রফেসর নিয়োগ করতে থাকায় আজ প্রায় ১৫০ জন সাঁওতালি
ভাষার লেকচারার/প্রফেসর আছেন।
বর্তমান মা-মাটি-মানুষের সরকার ও বিগত বামফ্রন্ট সরকারের মতই
সাঁওতালি শিক্ষা নিয়ে সাধারণ সাঁওতালদের বঞ্চনা করছে। সাঁওতালি ভাষা শিক্ষা নিয়ে
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যনারজির সদিচ্ছা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। মমতা
ব্যনারজি আদিবাসী মানুষদের সত্যিই ভালবাসেন, জঙ্গল মহল কে ভালবাসেন, তাই বারে বারে
জঙ্গল মহলে ছুটে যান। ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের কথা ভেবে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন
করেছেন। খুব ভাল কথা, কিন্তু মমতা ব্যনারজি যে সমস্ত আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী,
জনপ্রতিনিধি দের আদিবাসী উন্নয়নের দেখভাল দিয়েছেন তাঁরা যে তাদের কাজ ঠিক মতন
করছেন না এটা একদম দিনের আলোর মতন পরিষ্কার। বর্তমান শাসক দলের আদিবাসী
নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি রা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজিকে আদিবাসী উন্নয়ন নিয়ে
ভুল ভাল তথ্য দিচ্ছেন বা অর্ধ সত্য তথ্য দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির
সভা, সমাবেশ বা প্রশাসনিক সভা গুলিতে আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিরা মমতা
ব্যনারজিকে ঘিরে রাখেন, কিন্তু কাজের কথাটি বলেন না, কেন কি জানি? মুখ্যমন্ত্রী
মমতা ব্যনারজিকে ‘ওঁরাও’ আদিবাসীদের ‘কারাম পুজো’ র কথা জানানো হলে মুখ্যমন্ত্রী
কারাম পুজো উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তাহলে আদিবাসীদের ৩ রা জানুয়ারী (মারাং
গমকে জয়পাল সিং এর জন্মদিন), ১১ ই ফেব্রুয়ারী (বাবা তিলকা মুরমুর জন্মদিন), ১৬ ই
বৈশাখ (সাধু রামচাঁদ মুরমুর জন্মদিন), ৫ ই মে (পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমুর জন্মদিন),
বুদ্ধ পূর্ণিমা (সাঁওতাল আদিবাসীদের সর্বচ্চো বাৎসরিক দরবার মহল এবং শিকার
অভিযান), ৩০ শে জুন (ঐতিহাসিক মহান সাঁওতাল হুল দিবস), ১৫ ই নভেম্বর (বীর বিরসা
মুণ্ডার জন্মদিন), ১৪ ই ডিসেম্বর (প্রতিবাদী নায়ক নরেন হাঁসদার জন্মদিন), ২২ শে
ডিসেম্বর (সাঁওতালী ভাষা বিজয় দিবস), ইত্যাদি আদিবাসী স্বরনীয় দিবস গুলিতে এবং
স্থানীয় স্তরে আদিবাসী ধর্মীয় পুজো অনুষ্ঠান যথা বাহা, মাহ মড়ে, সহরায়, সাকরাত,
মাঘ সিম, এরওঃ সিম, আষাড়িয়া, হাড়িয়ার, জানথাড়, দাঁসাই, কারাম, ইত্যাদি গুলিতে
সরকারী ছুটি ঘোষণা কি
করতেন না? নিশ্চয় করতেন। কিন্তু সেটা তো মুখ্যমন্ত্রীর নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে,
সেই কাজটি সাধারণ মানুষের দ্বারায় সম্ভব নয়, এই কাজটি আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিদের কেই করতে হবে। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয় তাদের কাজ সঠিক ভাবে করছেন
না, মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির নিকট আদিবাসীদের দাবী দাওয়া গুলি তুলে ধরছেন
না। সম্প্রতি ৪ এপ্রিল ২০১৭ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজি পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা
উদ্বোধন করলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির এই সভায় উপস্থিত ছিলেন এক ঝাঁক আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির
দরবারে সঠিক ভাবে দরবার করলে ঝাড়গ্রাম জেলার সাথে সাথে আদিবাসীরা আরও অনেক কিছুই
পেতেন, যেমন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে সাঁওতালি ভাষা চালু, বেতকুঁদরি তে সাঁওতালি
বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি। পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্য আদিবাসীদের রক্ষা কবচ হিসেবে
পরিচিত “সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি আইন, ১৯৪৯ বা Santal Pargana Tenancy Act, 1949” এবং “ছোট নাগপুর টেনান্সি আইন, ১৯০৮ বা Chotonagpur
Tenancy Act, 1908” এর বাতিলের বিরুদ্ধে গত ৩০ শে জুন, ২০১৭ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা
মহলের ডাকে আদিবাসী সাঁওতালরা সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে রেল ও রাস্তা অবরোধ এর ডাক
দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পরে পরেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কি বুঝল কে জানে ৩০ শে জুন এ
সরকারি ছুটি ঘোষণা করল।
২০০৪ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতাল অ্যাকাডেমি’। অভিযোগ সাঁওতালি ভাষা চর্চার বদলে বাম ফ্রন্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ
সাঁওতালি লেখক বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা ও পুরস্কার পাইয়ে দিতে
সাঁওতালি একাডেমীর সদস্য করা হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছু যে হয়নি সেটা বাংলা
একাডেমীর সাথে তুলনা করলেই বোঝা যায়। আবার বর্তমান সরকারও একেই পথের পথিক।
মা-মাটি-মানুষের সরকারের ঘনিষ্ঠ সাঁওতালি লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকদের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীর
সদস্য করা হয়েছে। এরাও ঠিক মতন কাজ করছেন না, আর তাই সাঁওতালি শিক্ষার সিলেবাসের
বই এর অভাবে সাঁওতালি ছাত্র ছাত্রীরা হাহাকার করছে।
এইমতাবস্তায় বর্তমান মা-মাটি- মানুষের সরকারের সাধারণ আদিবাসীদের দাবী
–
১) অবিলম্বে সাঁওতালি শিক্ষা ও সাঁওতাল শিশুদের নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ
হোক।
২) পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংস্থায় (PTTI/ D.Ed/ B.El.Ed) সাঁওতালি ভাষা
বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩) পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি B.Ed কলেজে সাঁওতালি ভাষা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪) প্রতি বছর প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে গুলিতে West Bengal Board
of Primary Education থেকে ১০,০০০
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৫) প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে West Bengal School
Service Commission থেকে ১,০০০
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৬) সাঁওতালি শিক্ষার সিলেবাসের বই তৈরি করতে নতুন করে কমিটি গঠন
করা হোক ও Open Tender বা e-Tender এর মাধ্যমে বই প্রকাশ করতে প্রকাশনা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হোক ও
সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হোক।
৭) পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীর বর্তমান কমিটিকে ভেঙ্গে দেওয়া হোক
ও নতুন কমিটি তৈরি করা হোক। পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীকেই সাঁওতালি শিক্ষার
সিলেবাস তৈরি ও বই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হোক, সাথে সেই বই প্রকাশনার দায়িত্বও
দেওয়া হোক।
৮) পশ্চিমবঙ্গ Tribal Advisory Council এ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সভাপতি দিশম পারগানা
নিত্যানন্দ হেমব্রম, Adibasi Socio-Educational & Cultural
Association এর প্রতিনিধি, All India Santal Writers Association
এর প্রতিনিধি এবং সাঁওতাল শিক্ষক ও ছাত্রদের
এক প্রতিনিধি সামিল করতে হবে।
No comments:
Post a Comment