পুজোর মুখে কুড়মি(মাহাত)-দের অবরোধ আন্দোলনের জেরে বুধবার ব্যাপক দুর্ভোগ
পোহাতে হল হাজার হাজার মানুষকে। বিশেষত, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় এই দুর্ভোগ চরমে ওঠে। বাজার করতে বেরিয়ে রাস্তায়
আটকে পড়েন বহু মানুষ। প্রসঙ্গত, কুড়মি(মাহাত) জাতিকে
পুনরায় তফসিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সহ একাধিক দাবিতে এদিন ‘ডহর ছেঁকা’
তথা রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।
কোথাও ঢোল,
ধামসা আবার কোথাও শালগাছের ডাল-পাতা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করা
হয়। রাস্তার ওপরেই ঝুমুরগান ও অন্যান্য নাচগানের মধ্য দিয়ে এদিন সকাল থেকে ১২
ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করেন কুড়মি(মাহাত)-রা। অবরোধের জেরে চরম ভোগান্তির
শিকার হন সাধারণ মানুষ।
এদিন ঝাড়গ্রামের ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের গুপ্তমণি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে
আন্দোলনকারী। আবার বেলপাহাড়ী এলাকার বাঁশপাহাড়ীতে পথ অবরোধ করা হয়। যার ফলে
পুরুলিয়াগামী রাস্তাটিতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পুজোর আগে এই কর্মসূচির জেরে এদিন
সকাল থেকে এলাকায় ব্যাপক যানজট হয়। পণ্যবাহী লরি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সাধারণ
মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। কুড়মি(মাহাত)-দের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জেরে এদিন
ঝাড়গ্রাম জেলায় খুবই কম বাস চলাচল করেছে। এদিন সকাল থেকে হাজার হাজার কুড়মি(মাহাত)
সম্প্রদায়ের মানুষ ধামসা-মাদল বাজিয়ে তির-ধনুক-টাঙি নিয়ে গুপ্তমণিতে
জমায়েত করেন। সেখান গরাম পুজো করার পর সকাল ১১টা থেকে অবরোধ শুরু করেন। যানজট
এড়াতে আগাম সর্তকতা হিসাবে খড়গপুরের কলাইকুণ্ডা ও ঝাড়গ্রামের বালিভাসা এলাকায়
দূরপাল্লার যানবাহনগুলিকে থামিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। আদিবাসী কুড়মি সমাজের পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাত বলেন, গুপ্তমণিতে ও
বাঁশপাহাড়ীতে এদিন অবরোধ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে,
এই আন্দোলনের জেরে পুরুলিয়া শহর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত
এদিন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। জেলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়ক মিলিয়ে প্রায় ৩৫টিরও বেশি
জায়গায় আন্দোলনকারীরা অবরোধ করে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থানীয়ভাবেও অবরোধ
করে কুড়মি(মাহাত)-রা। আন্দোলনের জেরে এদিন পুরুলিয়া জেলার প্রায় সবরুটেই যান চলাচল
ব্যাহত হয়। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাত বলেন, এদিন ডহর ছেঁকা কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। দাবি পূরণ না হলে আরও বৃহত্তর
আন্দোলন করা হবে।
পুরুলিয়ার পাশাপাশি জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা বাঁকুড়াতেও অবরোধ কর্মসূচি পালন
করা হয়। খাতড়া,
রাইপুরের সবুজ বাজার, সারেঙ্গা ব্লকের
পিড়লগাড়ি মোড়,
সিমলাপালের পুকুরিয়া, বিক্রমপুর
প্রভৃতি জায়গায় সকাল থেকে কুড়মি(মাহাত) জনজাতির তরফ থেকে অবরোধ শুরু হয়। ফলে
বাঁকুড়া-রানিবাঁধ,
বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম, সিমলাপাল-খাতড়া
প্রভৃতি রাস্তায় যানচলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। বাস, ট্রাক সহ বহু
যানবাহন দিনভর আটকে থাকে। আন্দোলনকারীরা ছোট গাড়ি এবং বাইকও আটকে দিচ্ছিলেন। ফলে
রাস্তায় বের হওয়া মানুষজনের চরম ভোগান্তি হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা
বলেন, এদিন পাঁচ জায়গায় রাস্তা অবরোধ করা হয়। পুলিশ এলাকায় মোতায়েন ছিল। কোনও
অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কুড়মি সেনার বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক পরিমল মাহাত বলেন, এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ চলে। আমাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত
আন্দোলন চলবে।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, দক্ষিণবঙ্গ পাতা, ২১/০৯/২০১৭।
No comments:
Post a Comment