Tuesday, September 5, 2017

বেঙ্গালুরুতে গুলিতে হত যুক্তিবাদী সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশ।



বেঙ্গালুরু: ভর সন্ধেবেলা নিজের বাড়ির মধ্যেই খুন হলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ৷ ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই কি কাল হল যুক্তিবাদী এই সাংবাদিকের ? এই প্রশ্নই এখন ঝড় তুলেছে গোটা দেশে৷ মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁর বেঙ্গালুরুর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে আততায়ীরা৷ পুলিশ যখন পৌঁছয় তখন দরজার সামনেই পড়ে ছিল প্রতিবাদী সাংবাদিকের দেহ৷ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মেঝে৷ দক্ষিণী রাজ্যের এই ঘটনায় স্তম্ভিত দেশবাসী৷ তাঁদের মনে পড়ে যাচ্ছে কালবার্গি-দাভোলকর-পানেসরদের কথা, যুক্তির পক্ষ নেওয়ায় এ ভাবেই প্রাণ দিতে হয়েছে যাঁদের৷ গৌরী লঙ্কেশের ভাই ইন্দ্রজিত্ এই হত্যার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে খবর ছাপতেন গৌরী, অনেকে তাঁর নামে মানহানির মামলাও করেছে৷ তাই এই হত্যার ভালো করে তদন্ত হওয়া উচিত৷গৌরী প্রথম থেকেই ঠোঁটকাটা সাংবাদিক৷ তিনি সানডে তেও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন৷ কট্টরপন্থা, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র দক্ষিণপন্থা - এ সবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নির্ভীক ভাবে কলম ধরতেন গৌরী৷ তাঁর এই নির্ভীক সত্তাই ২০০৮ সালে তাঁকে বিজেপির সঙ্গে সম্মুখ সমরে দাঁড় করিয়ে দেয়৷ দুই বিজেপি কর্মীর গয়না ‘প্রতারণা ’র খবর ছেপেছিলেন তিনি৷ যার প্রতিবাদে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন বিজেপি সাংসদ প্রহ্লাদ যোশী এবং দলের নেতা উমেশ দুশি৷ সেই মামলাতেই সম্প্রতি তাঁর ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের জেল হয়৷ যদিও, পরে জামিন পেয়ে যান তিনি৷ লড়াই উচ্চতর আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগেই খুন হয়ে গেলেন গৌরী৷ ২০০৫ সালে ‘গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকেনামে কন্নড় ভাষার এই পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু করেন গৌরী৷ কয়েক বছরের মধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কর্মীর সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়৷ সরকার কিংবা প্রশাসনের কাছ থেকে গৌরী কোনও বিজ্ঞাপন নিতেন না৷ মূলত তাঁর অন্য প্রকাশনার আয় থেকেই এই পত্রিকা চলত৷ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রাতে রাজরাজেশ্বরী নগরে গৌরীর বাড়িতে যায় চার হামলাকারী, গৌরী দরজা খুলতেই গুলি চালায় তারা৷ তিন রাউন্ড গুলি বিঁধেছে সাংবাদিকের দেহে৷ ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি৷ বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, এখনও আততায়ীদের শনাক্ত করা যায়নি, হামলার কারণও জানা যায়নি৷ গৌরীর পরিবারের বক্তব্য, তাঁর শত্রুর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, তাঁদের পক্ষে কাউকে বাছা খুব কঠিন৷ এ প্রসঙ্গে অনেকেই উল্লেখ করছেন সম্প্রতি গৌরীর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কথা৷ ‘নিউজলন্ড্রি’ নামে একটি খবরের পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘লঙ্কেশে’র সম্পাদিকা দাবি করেছিলেন, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ছাপা খবর ঘিরে বিতর্কের পর কী ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়৷ এক জায়গায় তো তিনি এমনও বলেন যে, ‘এ বার তো দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েই আমার উদ্বেগ হচ্ছে৷’ গৌরীর এই কাপুরুষোচিত হত্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ খুবই আশঙ্কার৷ এর বিচার চাই৷ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ কালবার্গিদের হত্যার সঙ্গে ভয়াবহ মিল৷’ কর্নাটক, কেরালার মুখ্যমন্ত্রীও এর নিন্দা করেছেন৷

No comments:

Post a Comment