বেঙ্গালুরু: ভর সন্ধেবেলা
নিজের বাড়ির মধ্যেই খুন হলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ৷ ধর্মীয়
উগ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই কি কাল হল যুক্তিবাদী এই সাংবাদিকের ? এই
প্রশ্নই এখন ঝড় তুলেছে গোটা দেশে৷ মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁর বেঙ্গালুরুর বাড়িতে
ঢুকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে আততায়ীরা৷ পুলিশ যখন পৌঁছয় তখন দরজার সামনেই পড়ে ছিল
প্রতিবাদী সাংবাদিকের দেহ৷ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মেঝে৷ দক্ষিণী রাজ্যের এই ঘটনায় স্তম্ভিত
দেশবাসী৷ তাঁদের মনে পড়ে যাচ্ছে কালবার্গি-দাভোলকর-পানেসরদের কথা, যুক্তির
পক্ষ নেওয়ায় এ ভাবেই প্রাণ দিতে হয়েছে যাঁদের৷ গৌরী লঙ্কেশের ভাই ইন্দ্রজিত্ এই হত্যার
সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘কারও চাপের মুখে নতি
স্বীকার না করে
খবর ছাপতেন গৌরী, অনেকে
তাঁর নামে মানহানির মামলাও করেছে৷ তাই এই হত্যার ভালো করে তদন্ত হওয়া উচিত৷’ গৌরী
প্রথম থেকেই ঠোঁটকাটা সাংবাদিক৷ তিনি সানডে তেও সুনামের সঙ্গে কাজ
করেছেন৷ কট্টরপন্থা, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র
দক্ষিণপন্থা - এ সবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নির্ভীক ভাবে কলম ধরতেন গৌরী৷ তাঁর এই নির্ভীক
সত্তাই ২০০৮ সালে তাঁকে বিজেপির সঙ্গে সম্মুখ সমরে দাঁড় করিয়ে দেয়৷ দুই বিজেপি কর্মীর
গয়না ‘প্রতারণা ’র খবর ছেপেছিলেন তিনি৷ যার প্রতিবাদে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
করেন বিজেপি সাংসদ প্রহ্লাদ যোশী এবং দলের নেতা উমেশ দুশি৷ সেই মামলাতেই সম্প্রতি তাঁর
১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের জেল হয়৷ যদিও, পরে
জামিন পেয়ে যান তিনি৷ লড়াই উচ্চতর আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগেই খুন হয়ে গেলেন গৌরী৷ ২০০৫
সালে ‘গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকে’ নামে কন্নড় ভাষার এই পত্রিকাটির
প্রকাশনা শুরু করেন গৌরী৷ কয়েক বছরের মধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কর্মীর
সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়৷ সরকার কিংবা প্রশাসনের কাছ থেকে গৌরী কোনও বিজ্ঞাপন নিতেন
না৷ মূলত তাঁর অন্য প্রকাশনার আয় থেকেই এই পত্রিকা চলত৷ পুলিশ জানিয়েছে, এ
দিন রাতে রাজরাজেশ্বরী নগরে গৌরীর বাড়িতে যায় চার হামলাকারী, গৌরী
দরজা খুলতেই গুলি চালায় তারা৷ তিন রাউন্ড গুলি বিঁধেছে সাংবাদিকের দেহে৷ ঘটনাস্থলেই
মারা যান তিনি৷ বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, এখনও
আততায়ীদের শনাক্ত করা যায়নি, হামলার কারণও জানা যায়নি৷
গৌরীর পরিবারের বক্তব্য, তাঁর শত্রুর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, তাঁদের
পক্ষে কাউকে বাছা খুব কঠিন৷ এ প্রসঙ্গে অনেকেই উল্লেখ করছেন সম্প্রতি গৌরীর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কথা৷
‘নিউজলন্ড্রি’ নামে একটি খবরের পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘লঙ্কেশে’র
সম্পাদিকা দাবি করেছিলেন, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ছাপা খবর ঘিরে বিতর্কের পর কী ভাবে
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়৷ এক জায়গায় তো তিনি এমনও বলেন যে, ‘এ
বার তো দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েই আমার উদ্বেগ হচ্ছে৷’ গৌরীর
এই কাপুরুষোচিত হত্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন, অত্যন্ত
দুর্ভাগ্যজনক৷ খুবই আশঙ্কার৷ এর বিচার চাই৷ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি
বলেন, ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ কালবার্গিদের হত্যার সঙ্গে ভয়াবহ মিল৷’ কর্নাটক, কেরালার
মুখ্যমন্ত্রীও এর নিন্দা করেছেন৷
No comments:
Post a Comment