উলিহাতু, ঝাড়খণ্ড| ১৮ সেপ্টেম্বর,
২০১৭।
অড়হর ডাল,
কাঁকরোলের তরকারি, বেসন-আলু দিয়ে
গুলগুলা চাটনি। রান্না বেশি নয়। বাকি সব খাবার আসবে অতিথিশালা থেকে। কিন্তু ‘ভগবানে’র ঘরে বসে যিনি খাবেন,
তিনি যে মস্ত কেউকেটা। তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই হেঁশেলে
ঢুকে পড়েছিলেন চম্পা মুন্ডা। উপজাতিদের ‘ভগবান’ বীরসা মুন্ডার নাতির মেয়ে। রান্না শেষে সদ্য টাইল্স বসানো মেঝেয় হাঁড়ি-কড়া
সাজিয়ে বসে রইলেন। অতিথি এলেনই না, খাওয়া তো
দূর! চম্পার তাই গোসা হয়েছে। ‘অতিথি’
তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য এসেছিলেন
খুটির উলিহাতু গ্রামে চম্পার বাড়ির উঠোনে। সেখানেই বিরসার ঘরে গিয়ে প্রণাম সারলেন, ওই গ্রামকে ‘মডেল’
হিসেবে গড়ার কথা বলে সেখানে ভূমিপুজোও করলেন। তার পর জনসভা
ঘুরে উড়ে গেলেন রাঁচী।
গোঁসায় ঠোঁট ফুলিয়ে তাই ঘরের দাওয়ায় বসে চম্পাদেবী। সামনে কেউ গেলেই বলছেন, ‘‘খাবার সব রান্নাঘরে পড়ে। বেকার খাটনি হল আমার!’’ অমিত খাবেন বলে ক’দিন আগেই মাটির বাড়ির মেঝে খুঁড়ে বসানো হয়েছে দামী টাইল্স। বানানো হয়েছে
শৌচালয়ও। যদিও গ্রামে খাওয়ার জলই মেলে না ভাল ভাবে! ক্ষুব্ধ চম্পা বলেন, ‘‘এত খরচ করে তা হলে মেঝেয় টালি বসানো হল কেন! আমরা গরিব মানুষ। এ সব কী আমাদের
পোষায়! বরং ওই টাকাগুলো হাতে পেলে কাজে দিত।’’
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় উপজাতিদের ‘ভগবান’ বিরসা মুন্ডার গ্রামকে মডেল হিসেবে গড়বে সরকার। সে জন্যই উলিহাতু গিয়েছিলেন
অমিত। চম্পা ভেবেছিলেন,
অমিতের পাতে দুপুরের খাবার বেড়ে দেওয়ার ফাঁকে দু’চারটে অভাব-অভিযোগের কথা জানাবেন। ভেবেছিলেন গারু মুন্ডা-ও। সকাল থেকে মাদলে
তাল ঠুকছিলেন। ভেবেছিলেন,
অমিতকে সামনে পেয়ে দু’চারটে সমস্যার কথা
বলবেন। তাঁর কথায়,
‘‘আগেও কত নেতা-মন্ত্রী এসেছেন। আমাদের দিকে কারও কখনও নজর
পড়েনি। এ বারও পড়ল না!’’
বিরসার গ্রামের স্যামুয়েল পুর্তি বলেন, ‘‘এখন এখানে সব কাজ তাড়াতাড়ি হচ্ছে। অমিত শাহ ফিরে গেলেই সব আবার ঢিমেতালে
চলবে!’’
মডেল গ্রামে সব বাড়ি হবে পাকা। বিরসার বংশধরদের বর্তমান বাড়ি বদল করেই
উলিহাতুতে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তারই ভিতপুজো হল এ দিন। কয়েক জন স্থানীয়
বাসিন্দার অভিযোগ,
নকশা অনুযায়ী মডেল গ্রামে পাকা বাড়ির ঘরের মাপ ৮-৯ ফুট
লম্বা। ‘‘অত ছোট ঘরে তো একটা খাটিয়াই ঠিক মতো ঢুকবে না! ওই ঘর নিয়ে কী লাভ?’’ বিজেপি সভাপতিকে সে কথা জানানোর ইচ্ছা ছিল তাঁদেরও।
শূন্য ঘরে বসে চম্পা বলেই চললেন, ‘‘ভিতপুজো হয়ে গেল।
তার মানে এই সব টাইল্সও ভাঙা হবে। এত খরচ, পরিশ্রম, সব তা হলে পণ্ডই হল!’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮/০৯/২০১৭, আর্যভট্ট খান।
No comments:
Post a Comment