লেখক – এদেল শঙ্খ হাঁসদা
দাঁশায় কথাটির মধ্যে দিয়ে সাঁওতালদের কাছে এক ইতিহাসের ছোঁয়া আসে। যেটা
অ-আদিবাসী রা পান না। দাঁশায় কিন্তু উৎসব নয়। দাঁশায় হল খোঁজ; দুঃখের খোঁজ। ইতিহাসের;
পূরানো ঐতিহ্যের অনুসন্ধান। বিশ্বাসঘাতকতার বদলা নেবার
বাসনায় আজও এই খোঁজ চলে। তাই একে সাঁওতালি ভাষায় “দাঁশায় দাঁড়ান” বলা হয়। সাঁওতালি
"দাঁড়ান" কথাটির অর্থ হল ভ্রমণ বা Travelling। "দাঁড়ান" কথাটি সাঁওতালি তে এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। “দাঁশায়”
সাঁওতালি তে একটি মাসের নাম (ইংরেজি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাস)। দাঁশায় মাসের
পূর্ণচন্দ্র ওঠার পাঁচদিনের পর থেকে এই “দাঁশায় দাঁড়ান” শুরু হয়। এই মাস টি বাংলায়
শরৎ কালের সমসাময়িক। দূর্গাপূজার সময়। দূর্গা পূজার সাথে দাঁশায়ের বহু পুরানো, গভীর শত্রুতা - ভালোবাসা- বিশ্বাসঘাতকতার সম্পর্ক। এই দূর্গাপূজা আসলে এক
অজানা ইতিহাস বহন করে। এই ইতিহাস হল বহিরাগত শত্রুর সাথে এ দেশের অধিবাসী দের লড়াই
এর ইতিহাস।
দাঁশায় দাঁড়ান নিয়ে যে সমস্ত সাঁওতাল আদিবাসী কথা, গল্প কথা,
উপকথা, মিথ, আছে সে গুলো
নিতান্তই মিথ বা গল্পগাথা নয়। এগুলো ইতিহাস। এই দেশের ইতিহাস। দাঁশায় সম্পর্কিত
গান গুলো তে এই ইতিহাসের আভাস পাওয়া যায় যে এই গুলো বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গির মিথ
কল্পনায় ঢাকা হয়ে আছে এবং সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে। এই দাঁশায় দাঁড়ান এক ধরনের
নাচের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে মূলত সাঁওতালদের মধ্যেই এই
সুপ্রাচীন ইতিহাস লালিত পালিত হয়।
সাঁওতালি দাঁশায় নাচের ইতিহাসে এ কথা বলা হয় যে - প্রাচীন কালে যখন ভারতবর্ষে
আর্য বা দিকু দের আগমন হয় নি তখন এই দেশে হুদূড়দূর্গা নামে এক মহান সাঁওতাল
আদিবাসী যোদ্ধা ছিলেন। যিনি রাজ্যের তথা দেশের প্রধান ছিলেন। "হুদূড়"
শব্দ টি সাঁওতালি শব্দ;
উদাহরন- 'হুদূড় হুদূড় হয় এদা (
জোরে বাতাস) 'হুদূড় হুদূড় এ উদুর এদা (জোরে নাক ডাকা) এবং "দূর্গা " শব্দ টিও
পুংলিঙ্গ। এই "দূর্গা" শব্দ টি সাঁওতাল শব্দ ভাণ্ডারে ও নামকরণ এ পাওয়া
যায়। তাই হুদূড় দূর্গা যে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ছিলেন এটা বলাই যায়। সাঁওতালি কথায় এর
প্রমান এটাই যে "রাজ" বা "শাসক" এর ধারনা কিস্কু গোষ্ঠীরা যে
রাজকার্য পরিচালনা করত তার গল্প গান থেকে আমরা পাই, সেই হেতু সাঁওতালদের ইতিহাসে
"রাজা" বা 'যোদ্ধা'
"বীর" "শাসক" "গুরু" ধারনা গুলি
বইরে থেকে আগত বা আহুত নয়। যাই হোক, এই হুদূড়দূর্গা কিন্তু
খুব সৎ, স্বাধীনচেতা, স্বদেশপ্রেমী, প্রজাবৎসল শাসক ছিলেন। তাঁর শাসনেই এই দেশ এবং
তার দেশবাসী সুখে শান্তিতে শস্যশ্যামলায় পরিপূর্ণ থাকতো। এর পরেই আসে বহিরাগত দের
আগমন ।বহিরাগত বলতে এখানে আর্য দের কথা বলা হয়েছে। আর্য দের সাথে এই দেশের মানুষ (যাদের
আর্য রা অনার্য বলে) দের সরাসরি সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ যুদ্ধ বিগ্রহ অনেক দিন ধরে
চলেছিল, কিন্তু আর্য রা পেরে ওঠেনি। বার বার প্রতিহত হয়ে তারা হত্যদম হয়ে পড়ে।
তাঁরা অনেক দিন ধরেই খন্ড যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যে হেতু তখন কার দিনে কেল্লা বা fort ; (সাঁওতালিতে "গাড়") নির্ভর যুদ্ধ ব্যবস্থা ছিল তাই বহিরাগত শত্রুরা
প্রবেশ করতে পারে নি। এই "গাড়" গুলির নাম এখনো সাঁওতাল ইতিহাসে আছে।
সাঁওতালদের 12 টি titles (বা পদবী)
এর জন্য বারো টি গাড় এর নাম আমরা পাই। সেগুলো হলো:
1.হাঁসদা- ফিরি হারদি গাড় কুটৌমপুরি/মায়নমতি/ গাড়।
2.মুরমু- চাম্পা গাড়
3.কিস্কু- কঁয়ডা গাড়
4.মান্ডি- বাদোলি গাড়
5.সরেন- চায়বাহের গাড়
6.হেমব্রম- খায়রি গাড়
7 টুডু- লুই বাড়ি লুকুই বাড়ি গাড়
8.বাস্কে- হারবালোয়োং গাড়
9.বেসরা- বাণসারিয়ৌ গাড়
10.পাওরিয়া- বামা গাড়
11.বেদেয়া/সোওয়ালি- হলং গাডা গাড়
12.চঁড়ে- জাগেকঁড়ে/ জাঁগেকোদো গাড় ।
(See:
Hor Hopnak Sedae katha by P.O Bodding)
ক্রমাগত আক্রমণ করেও যখন আর্যরা এই দেশের অধিবাসীদের রক্ষণ কে ভাঙতে পারে নি
তখন তারা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে। আর্যরা তাদের নারী দের কে লড়াই এ সামনে নিয়ে
আসে এবং তারা এদের খুবই নিপূণভাবে ব্যবহার করে।
হুদূড় দূর্গা একজন সৎ, স্বাধীনচেতা, বীর ও মহানুভব যোদ্ধা, তিনি নারী দের
সঙ্গে লড়াই করতেন না। এই মহান যোদ্ধা কে মারার জন্য বহিরাগত আর্যরা তাদের এক গণিকা
নারীকে সমর্পণ করে শান্তি প্রক্রিয়ার আছিলায়। ওই নারীর মূল উদ্দেশ্য ছিল যেন তেন
প্রকারে ছল চাতুরির মাধ্যমে হুদূড়দূর্গার গোপন শক্তির রহস্য ভেদ করা। তাই এই নারী
তার ছলনাময়-প্রেম-ভালোবাসার জালে হুদূড়দূর্গা কে আবদ্ধ করেন। হুদূড়দূর্গা এতই সরল
মহানুভব ছিলেন যে প্রতিপক্ষের এই চাল কে বুঝতে পারেন নি। তার এই মহানুভবতা, সরলতা,
প্রজাবাৎসল্য চরিত্র এবং নারীদের প্রতি সম্মান জানানো প্রভৃতি গূনের পরিচয় পাবার
পর ওই নারী সত্যি সত্যিই হুদূড়দূর্গার প্রতি অনুরক্ত হয়ে যায় এবং তারা বাপ্লা (বিবাহ)
বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এর ফলে ওই গণিকা নারী হুদূড়দূর্গার এবং তার জাতির সাথে মিশে যায়।
কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয় নি কারন যাদের দ্বারা প্রেরিত হয়েছিলেন
তারা কিন্তু তার মাধ্যমে হুদূড়দূর্গার গোপন খবর সংগ্রহ করে যেতেন। আজও আমরা দেখি
সাঁওতাল দের পূজার্চনা অনান্য দের থেকে আলাদা। গৃহের জন্য; কূলেরজন্য;
গ্রামের জন্য; এবং পুরো জনগোষ্ঠীর
জন্য পৃথক পৃথক ঠাকুর – দেবতা ( divine soul) এর পরিচয় পাওয়া যায় যা
সাঁওতাল আদিবাসী দের নৈতিক শক্তির আধার হিসাবে মানা হয় আজও। হুদূড়দূর্গার গোপন
শক্তির আধার;
তার গৃহের কূলের বিভিন্ন গোপনীয়তা ওই নারী হুদূড়দূর্গার
স্ত্রী হিসাবে জেনে যায় এবং আবশ্যিক ভাবে তার পৈতৃক বহিরাগত আর্য দের জানিয়ে দেয়।
এর ফলে বহিরাগত দের হুদূড়দূর্গা কে আক্রমণ করতে সুবিধা হয়। বহিরাগত আর্যরা রা ওই
গণিকা কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে এই শর্তে যে হুদূড়দূর্গা কে হত্যা করলে উনি পূজিত
হবেন যুগ যুগ ধরে এবং তা পরবর্তী কালে সত্যি হয়। হুদূড়দূর্গা ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা
করেন এই গণিকা নারী। কিন্তু হুদূড়দূর্গার প্রকৃত চরিত্রের পরিচয় জেনে, তার বিভিন্ন গূনের আদর্শের সংস্পর্শে এসে ওই নারী প্রকৃতই আসক্তি হয়ে ছিলেন
তাই তার স্বামীর নাম গ্রহণ করেন। সেই থেকে এই নারী "দূর্গা" নামে পরিচিত
হন। যেহেতু ইনি গণিকা ছিলেন; তাই আজও দূর্গা পূজার
জন্য গণিকালয়ের মাটি লাগে।
যাই হোক,
এই কাহিনী অবশ্যই হুদূড়দূর্গা ও তার খেরওয়াল/ খেরওয়াড়
জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। এর আনুষঙ্গিক আরো অনান্য অনেক গল্প পাওয়া যায়, কিন্তু
সে গুলো এতটা প্রামাণ্য না। এই মিথ টি এই কারণেই বেশি প্রামাণ্য কারন ভুয়ৌং নামের
যে বাদ্য যন্ত্র টি ব্যবহার করা হয় এই দাঁশায় দাঁড়ান এর সময় তার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য
করলে আমরা তা বুঝতে পারি।
ভূয়ৌং সাধারণত তৈরী হয় শুকনো লম্বা লাউ এর খোল দিয়ে। এই খোল এর ভিতরে তীর-ধনুক
সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র লুকানো থাকে। ভুয়ৌং ছাড়া কিন্তু "দাঁশায়
দাঁড়ান" হয় না। দাঁশায় দাঁড়ানে ভুয়ৌং একটি অপরিহার্য অঙ্গ। এছাড়া সাঁওতালি তে
বিভিন্ন যে দাঁশায় সেরেঞ (গান) গুলো আছে তার বিশ্লেষন করলে অনেক প্রামাণ্য মনে হয়
উপরিউক্ত কাহিনী টিকে।
সাঁওতাল সামাজিক প্রথায় একটি নিয়ম আছে, সেটা হল গৃহ দেবতার নাম, গ্রামের
দেবতার নাম, পূজা পদ্ধতি প্রভৃতির মূল জিনিস বা রীতিনীতি কিন্তু নারীদের (মা-মেয়ে-বউ)
বলা হয় না। কিন্তু তারা পূজা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক কাজ অবশ্যই করতে পারেন। এখানে
নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তে অনেক অভিযোগেই করতেই পারেন। কিন্তু একটু পেছনে তাকালে
আমরা বুঝতে পারবো,
হুদূড়দূর্গার এই দুঃখজনক পরিণতির কারন কি। যে বিশ্বাসে
হুদূড়দূর্গা তার স্ত্রী কে তার গৃহদেবতার নাম, গোপন শক্তির রহস্য বলে দেয় সেদিন
থেকেই তার পতন শুরু হয়। কারন এই ছলনাময়ী নারী তার বিশ্বাসভঙ্গ করে। বিশ্বাসঘাতকতা
করে শত্রুপক্ষ কে হুদূড়দূর্গার সমস্ত গোপন বিষয় জানিয়ে দেয়। সেই থেকে মনে হয় আজও
এই প্রথা সাঁওতাল সমাজে চলে আসছে। একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায় বিষয়টি কিন্তু খুব
একটা ভুল নয় বা ছিলোনা। এই প্রথা শুরুর ঘটনাটিও কাকতালীয়ও নয়।
ঐতিহাসিক ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে "দাঁশায় পরব" সম্পর্কে মনে করেন যে, এই দাঁশায় দাঁড়ান এর
রেওয়াজ আর্যদের সঙ্গে লড়াই এর আগে থেকেই ছিল। কিন্তু দাঁশায় এর গান গুলো তে
"হায়রে হায়" শব্দের ব্যবহার সাঁওতালি পুরাণের ঘটনাবলীর সাথে; গল্প কাহিনীর সাথে মিল খায় না। আর্য দের সঙ্গে লড়াই এর আগের থেকে এই দাঁশায়
গানের কলির মধ্যে "হায়রে হায়" কথা গুলো না থাকারেই কথা। তাই
ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কের এই দাবিও সঠিক প্রামাণ্য নয়। যদিও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে
অনেক গানের সংযুক্তি ঘটেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী
পাওয়া যায় তা হল দিবী_দূর্গা_আয়ন_কাজল এর কাহিনী ।"মঈশা/ময়সা" (যে থেকে "মহিষাসুর" কথাটি
এসেছে বলে মনে করা হয়) এই নাম গুলি সাঁওতালি মুন্ডারী সহ অন্যান্য আদিবাসী জাতির
মধ্যেও পাওয়া যায়। এই কাহিনী গুলোও আর্য দের সঙ্গে লড়াই এর প্রমাণ দেয়। এই লড়াই এর
সফলতা ব্যর্থতা নিয়েই এই দিবী-দূর্গা-আয়ন-কাজল এর কাহিনী গুলি এবং গান গুলির মধ্য
দিয়েও এর সামাঞ্জস্যতা বোঝা যায়। এই কাহিনী অনুসারে দিবী এবং দুর্গা দুই সাঁওতাল
বীর আর্য দ্বারা অপহৃত আয়ন-কাজল নামে দুই সাঁওতাল নারীর খোঁজে নারীর পোশাকে সেজে
দেশে দেশে খোঁজ করে। এই কাহিনী সম্পর্কিত একটি গান হলো –
হায়রে হায়__অত মা দিসমরে মা ভুয়াং সাডে কান
সের্মা দিসমরে মা কাঁসা রাঁওয়াঃ কান
হায়রে হায়__চেতে লাগিৎ দরে ভুয়াং সাডে কান
চেতে লাগিৎ দরে কাঁসা রাঁওয়াঃ কান?
হায়রে হায়__দিবীরে দুর্গা লাগিৎ ভুয়াং সাডেকান
আয়ন কাজল লাগিৎ কাঁসা রাঁওয়াঃ কান
হায়রে হায়___দেলাসে দিবী দুর্গা আঁড়গো হিজুঃ বিন
দেলাসে আয়ন কাজল উপেল গদঃবিন।
এছাড়া, দাঁশায় দাঁড়ান এর অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র ভুয়ৌং এর উৎপত্তি সম্পর্কে যে
গান টি আছে তা হল :-
তকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে?
তকারেদ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে?
খত মাদের রে ভুয়াং এম জানামলেনা রে
গড়া সাড়িমরে ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে
চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম জানামলেনা রে
চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম বুসাঁড়লেনা রে
দেশ দাড়ান লাগিৎ ভুয়াং এম জানাম লেনা রে
দিসম সাঙ্গার লাগিৎ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে।
দাঁশায় গান গুলির বিশ্লেষন করলে সাঁওতাল জাতির অনেক উহ্য ইতিহাসের সন্ধান
পাওয়া যায় ও বোঝা যায়। যেমন :-
হায়রে! হায়রে ! হায়রে!
তিমিন সাঁঙ্গিঞ গাতিঞ গিরু নৌয় দ
তেমিন সাঁঙ্গিজ বাহা নৌয় দ
হায়রে !হায়রে! হায়রে!
হানে গো ঞেলঃ কান গো
হানে ঞেলঃ কান
গিরু নৌয় রে দ জুয়া ক এনেচ কান
বাহা নৌয় রে দ ধুঢ়িক অটাংএন।
অর্থাত্:
কতো দূরে গো গিরু নদী
কতো দূরে গো বাহা নদী
হায়রে___হায়
ওই যে দেখা যায় গো
ওই দেখা যায়
গিরু নদী তে জুয়া খেলা হয়
বাহা নদী তে ধুলো উড়ে যায় ।
কাশী টাঁডিরে কাকী হড়ক তুপুঞকান
কাদাম বৌয়হড়রে কাকী হড়ক মাপাঃকান
চেতে লাগিৎ কাকী হড়ক তুপুঞকান?
চেতে লাগিৎ কাকী হড়ক মাপাঃকান?
সীমা লাগিৎ কাকী হড়ক তুপুঞকান
সাড়িম লাগিৎ কাকী হড়ক মাপাঃকান
এঙ্গাঞ বাড়ে তাহেনখান বিতা হাটিঞকে
আপুঞ বাড়ে তাহেনখান মকা হাটিঞকে।
অর্থাৎ ;
কাশ মাঠে কাকী মানুষে মানুষে তীরঃবিদ্ধ করে
কদমক্ষেতে কাকী মানুষে মানুষে কাটাকাটি করে
কি জন্য কাকী মানুষে মানুষে তীরঃবিদ্ধ করে?
কি জন্য কাকী মানুষে মানুষে কাটাকাটি করে?
দেশের সীমানার জন্য কাকী মানুষেমানুষে লড়াই করে
ঘরের জন্য কাকী মানুষে মানুষে কাটাকাটি করে
মা যদি আমার থাকত আমি চাক্ষর মেপে নিতাম
বাবা যদি থাকত আমার হাতে মেপে নিতাম।
এরকম অনেক গান আছে যা প্রবন্ধটি দীর্ঘায়িত হবার জন্য দেওয়া হলো না। দাঁশায়
দাঁড়ান এর রীতিনীতি হল - এই সাঁঘার (অনুসন্ধানী ভ্রমণ) মূলত পুরূষ রাই করে। এই সময়
ছেলেরা নারীর সজ্জায় সজ্জিত হয়। নারী সজ্জায় সজ্জিত হয়ে হাতে ভুয়ৌং ধরে তারা গ্রাম থেকে গ্রামান্তর বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সাঁঘার করে।
প্রতিটি দলে একটি করে গুরু থাকেন। তিনি তার চেলা দের পরিচালিত করেন। আগে এই সাঁঘার
সময়ে এই গুরু গণ তাদের চেলা দের বিভিন্ন গুপ্ত বিদ্যা, ভেষজ ওষুধের নাম ও তৈরীর প্রক্রিয়া শেখাতেন। এই গুরু গুলির নাম হলো - (1)ধরম
গুরু, (2)কামরু গুরু,
(3)লড়সিং গুরু, (4)বুয়ৌং গুরু,
(5)রহড়া গুরু, (6)সিদ গুরু, (7)গান্ডু গুরু, (8)চেমেঞ গুরু, (9)উড়ৌন গুরু, (10)রঁড়ে গুরু,
(11)কেরওয়া গুরু, (12) ভায়রো গুরু। সাঁওতালদের বারো টি titles এর সঙ্গে বরো জন গুরুর সামাঞ্জস্য কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। এই সময় প্রতিটি দাঁশায়
দল কে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতে হয়। দাঁশায় দাঁড়ানে সাঁওতাল যুবকেরা নারীর
ছদ্মবেশে এই বারো টি গুরুর তত্ত্বাবধানে তাদের অনুসরণ করে দেশে দেশে হুদূড়দূর্গার
খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। বিশ্বাসঘাতকতার বদলা নিতে তারা ভুয়ৌং এর খোলে অস্ত্র লুকিয়ে
রাখে। তাই দাঁশায় দাঁড়ানের নাচ হলো Symbolic, বহিরাগত আর্যদের সাথে এদেশের মানুষের লড়াইয়ের। এই বিশ্বাসঘাতকতার নতুন নতুন
আঙ্গিক আজও আমরা দেখি আদিবাসী সাঁওতাল দের প্রতি।
যদিও বর্তমানে দাঁশায়ের তীব্রতা আগের মতো নেই, তবুও কিছুটা হলেও এর রেওয়াজ টা
রয়ে গেছে। এই দাঁশায় সময়ে আদিবাসী এলাকায় চারদিকে ভুয়ৌং এর শব্দে মুখরিত হয়। এই
সম্পর্কে একটি গান আছে তা হল:-
কুলহি তেদ বিলিৎ-এ-বালাং
দৌয় না- দৌয়-
বাড়গে তেঁহ বিলিৎ-এ- বালাং
দৌয় না দৌয়
নিকু আনাং দাঁশায় দাঁড়ান কড়াক
দৌয় না দৌয়
নিকু আনাং দিসম সাঁঘার ক।
যাই হোক, শারদীয়া দূর্গা পূজা সম্পর্কে আমরা যে সমস্ত কাহিনী জানি তা বিদেশীয়
সাম্রাজ্যবাদের মতো কাহিনী। এবং এই কাহিনী কে অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয় এর
মোড়কে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না যে হুদূড়দূর্গা/ মঈশা/
দিবী দূর্গা/ নামে কোন এক মহান সাঁওতাল আদিবাসী যোদ্ধা এই দেশেরই এই মাটিরেই
ভূমিপুত্র ছিলেন। তাই তার উদ্দেশ্য তাকে নিবেদন করে এত গান
সাঁওতালি তে পাওয়া যায়। এছাড়া "অসুর" নামক পৃথক গোষ্ঠীর লোকেরা এখনো
ভারতবর্ষে বেঁচে আছেন এবং এই অসুর ভাষা ও সাঁওতালি ভাষা অনেকটা একরকম। তাই হয়তো এই
subalterrn
ইতিহাস, কাহিনী, মিথ, ভাবনা, জেনেই হয়তো Jawaharlal Nehru University (JNU) তে মহিষাসুর পূজো হয়। এই গুলোকে তাই "কাহিনী" বলা চলে না। সত্য
মিথ্যা এবং কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকার কারনে এগুলো কে "মিথ" বলাই
উপযুক্ত।
তবে অবশ্যই এই সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য কে "দলিত" সংস্কৃতির কোটোরে
ফেলা টা যুক্তিযুক্ত হবে না। কারন এই সংস্কৃতি হিন্দু ছত্রছায়ায় লালিত পালিত হয় নি
বরং তার বিপরীতে অবস্থান করেই এর বৈশিষ্ট্য জানান দিয়েছে। সঠিক ভাবে এই ইতিহাস, মিথ, কাহিনী পর্যালোচনা করলে আগামী দিনে হয়তো এদেশের ভূমিপুত্রদের এই ধামাচাপা
ইতিহাস সবচেয়ে বেশি আলোচিত, চর্চিত, পূজিত হবে না বলে কে বলতে পারে?
__এদেল
তথ্যসূত্র:
●
হড় হপন কওয়াঃ মারে কাহনি।
●
দাঁশায় দাঁড়ান রেনাঃ তেতেদ পাঁজা__ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে
●
সানতাল পরগণা, সানতাল আর
পাহাড়িয়া কওয়াঃ ইতিহাস _চৈতন্য কুমার হেমব্রম।
●পি ও বোডিং।
●
http://indianexpress.com/…/tribals-backwards-seek-own-voic…/
●
http://www.thehoot.org/…/how-the-media-twisted-irani-on-mah…
●
https://www.telegraphindia.com/…/…/saltlake/story_115939.jsp
No comments:
Post a Comment