ভারতের সুরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বলল বাংলাদেশও৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বললেন, সঙ্কট যেহেতু মায়ানমারের তৈরি, তাই তাদেরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের
বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া রাষ্ট্রপুঞ্জ ভারতের সমালোচনা করেছে৷ তার প্রতিবাদে নয়াদিল্লির
বক্তব্য, ভারত তার মানবাধিকার ও স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য গর্বিত৷
মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনে দেশ ছাড়ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা৷ বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে
তারা বিপুল সংখ্যায় ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলা কক্সবাজারে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের
শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা জানিয়েছেন, ২৫ অগস্ট সঙ্কট তৈরি হওয়ার পর
৩ লক্ষ ৭০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ এর আগেই অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে
আশ্রয় নিয়েছিল৷ সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশে শরণার্থীর স্রোত সামাল দিতে নাভিশ্বাস উঠেছে
ঢাকার৷ তাই রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে সহানুভূতি জানিয়েও তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা
বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
মঙ্গলবার হাসিনা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন৷
রোহিঙ্গাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন তিনি, কথা বলেন মায়ানমার সেনার হাতে আক্রান্ত
মানুষদের সঙ্গে৷ বিশেষত শিশু-কিশোর ও মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন
প্রধানমন্ত্রী৷ সাশ্রী হাসিনা বলেন, ‘দেশছাড়াদের বেদনা আমি বুঝি৷ ১৯৭৫ সালে বাবা-মাকে
হারিয়ে শরণার্থী হিসেবে আমাকে বিদেশে থাকতে হয়েছে৷ পাকিস্তানি হানাদাররা ১৯৭১-এ যে
নির্যাতন চালিয়েছিল, সে জন্য অনেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷’ শরণার্থীদের দুর্দশা, নাফ
নদীতে রোহিঙ্গাদের দেহ, হাসপাতালে বুলেটবিদ্ধ কিশোরের আর্তনাদে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেও
বাংলাদেশের নীতি আগেই স্পষ্ট করেছেন হসিনা৷ সোমবার জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত
আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশ থেকে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে হবে
মায়ানমারকে৷ ওই দেশে নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করে তাদের সুরক্ষিত রাখতে হবে৷ এই সঙ্কট মায়ানমারের
তৈরি, তাই তাদেরই সমাধান করতে হবে৷ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ সাহায্য করবে মায়ানমারকে৷’
রোহিঙ্গা মুসলিমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে বৌদ্ধ-প্রধান মায়ানমারে বাস করছে৷ তবু তাদের বাঙালি
তকমা দিয়ে নাগরিকত্ব দেয়নি মায়ানমার৷ এ ব্যাপারে হাসিনার বক্তব্য, ‘বাঙালিরা শুধু বাংলাদেশে
নেই, পশ্চিমবঙ্গেও আছে৷ তাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না৷ আমাদের
পক্ষে এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া কঠিন৷ তাদের ফেলে দিতেও পারি না৷’ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের
রোহিঙ্গা নীতি এ ক্ষেত্রে মিলে গিয়েছে৷ ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে৷ তাদের
দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ নয়াদিল্লির এই অবস্থানের সমালোচনা
করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ৷ সোমবার তারা বলে, যে সময় রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ চলছে, তখন শরণার্থীদের
বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান জাইদ রাদ
আল হুসেন এই মন্তব্য করতে গিয়ে গোরক্ষকদের তাণ্ডব ও সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের খুনের প্রসঙ্গও
টেনে আনেন৷ কঠোর ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় প্রতিনিধি৷ নয়াদিল্লির
বক্তব্য, ‘কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তুলে ধরে ভারতের সামাজিক অবস্থাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা
করা হয়েছে৷ ভারত তার স্বাধীন বিচার বিভাগ, মতপ্রকাশের অধিকার, সজাগ নাগরিক সমাজ, আইনের
শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে গর্বিত৷’ রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশায় আন্তর্জাতিক সমাজও বিচলিত৷
সব দেশই মায়ানমারের আগ্রাসনের নিন্দা করছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দন্তরের প্রেস সচিব
সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিচ্ছে
না৷ এই পরিস্থিতিতে চিনের প্রতিক্রিয়া বিস্ময় জাগানোর মতো৷ তারা মায়ানমার সরকারের অভিযানকে
সমর্থন করেছে৷ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াংয়ের মন্তব্য, ‘উন্নয়নের লক্ষ্যে
স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে মায়ানমার যে উদ্যোগ নিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলের তার পাশে দাঁড়ানো
উচিত৷’
সৌজন্য – এইসময়, ১৩/০৯/২০১৭।
No comments:
Post a Comment