Thursday, September 21, 2017

সংরক্ষণ ও আদিবাসী সমাজ।


আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীরা আদিবাসী সমাজের দাবী দাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়ের সামনে বলতে ভয় পান, দাবী আদায় তো দুরের কথা। এই সমস্ত আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীদের এবার ট্রেনিং নেওয়া উচিত কুড়মি (মাহাত) MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীদের কাছে। কুড়মি (মাহাত)-রা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছ থেকে আদায় করেছেন “কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ”, কিন্তু দক্ষিনবঙ্গের আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীরা কটা উন্নয়ন পর্ষদ আদায় করতে পেরেছেন?
কুড়মি (মাহাত)-দের মাথায় আর একটি পালক। কুড়মি (মাহাত)-দের আন্দোলনের চাপে এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়মি (মাহাত)-দের “Schedule Tribe বা তপশীলি উপজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে মতামত দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে দিল। এবার বল কেন্দ্রের কোর্টে।
আর আমাদের আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীরা কি করেন? আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া বা আন্দোলনে হয় মৌন ব্রত পালন করেন আর না হলে আন্দোলনকে ভাঙতে বিভ্রান্তিমূলক আচরন করেন। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয় (Ekalaby Residential Model School) এ আদিবাসী নাবালিকা ছাত্রীদের তাদের শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দ্বারা মানসিক, শারীরিক, এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। উত্তাল হয়েছিল আদিবাসী সমাজ। আদিবাসী সমাজের ক্ষোভ কে দমন করতে ঝাড়গ্রাম প্রশাসন কে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছিল। ৯ ই আগস্ট ২০১৭ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সভা করার অনুমতি বাতিল করেছিল ঝাড়গ্রাম প্রশাসন। ৬ ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ তে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ডাকে আদিবাসীদের বিরাট প্রতিবাদ সভা হলেও সেটা হয় বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরকে মুড়ে দেবার পর। এত বড় ঘটনা নিয়ে আদিবাসীদের হয়ে কোন সরকারি দলের জন প্রতিনিধি মুখ খোলেননি। ঝাড়গ্রামের বিধায়ক ও সাংসদ, দুজনেই আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত, কিন্তু আদিবাসীদের এই চরম বিপদের দিনে এনারা মৌন ব্রত ধারন করেছিলেন। এখন তো আবার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত জনপ্রিতিনিধি নিয়ম করে বিভিন্ন সভা সমিতিতে আদিবাসীদের সর্বচ্চো সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বিরুদ্ধে কুৎসা ও সমালোচনা করে বেড়াচ্ছে। Schedule Tribe বা তপশীলি উপজাতির সংরক্ষিত আসনে MLA, MP, নেতা, মন্ত্রী হয়ে আদিবাসী সমাজের সুখ দুখের সাথি না হয়ে শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখছেন। সবসময় ভাবছেন যে আদিবাসী সমাজ চুলোয় যাক, কিন্তু আমার সুখ সাছন্দ্য, সুযোগ, সুবিধা যেন না হারাই। ২০১৫ সালের লাভপুর ঘটনায় আদিবাসী সমাজের মাঝি বাবা সহ ১৩ জন আদিবাসীর জেল ঘোষণা ঘটনাটি আরেকটি সংযোজন মাত্র। লাভপুরের ঘটনায় তৎকালীন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী ডাঃ সুকুমার হাঁসদা, যিনি নিজে একজন আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত, তিনি গিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ আদিবাসী সমাজকে শান্ত করতে, কিন্তু সুবিচার দিতে নয়।  
সাময়িক চলার পথে সংরক্ষণ আদিবাসী সমাজকে অনেক সাহায্য করেছে, এটা খুব সত্যি কথা। কিন্তু সংরক্ষণের মাধ্যমে আদিবাসী সমাজ তার উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছতে কোনদিনও পারবে না, উল্টে সংরক্ষণের দৌলতে কিছু চামচা শ্রেণী তৈরি হবে। সংরক্ষণ দিয়ে তো আর আদিবাসী সমাজের “হাসা-ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-ধর্ম-রীতিনীতি” র উন্নতি সম্ভব নয়।
ভেবে দেখুন একবার সাধারণ আদিবাসীরা কি করবেন? ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল ও Adibasi Socio Educational & Cultural Association (ASECA) এর মতন সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিজেদের আত্মমর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ এর আন্দোলনকে শক্তিশালী করবেন না কি “সংরক্ষণ” নামক মোহজালে আবদ্ধ থাকবেন?

No comments:

Post a Comment