Tuesday, September 5, 2017

হাইকোর্ট এর বক্তব্যে ডি এ নিয়ে আশায় পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা।



মহার্ঘভাতা বা ডিএ ‘সরকারের দয়ার দান’ বলে মন্তব্য করে মামলা খারিজ করেছিল ট্রাইব্যুনাল৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল মঙ্গলবার মন্তব্য করেন, মহার্ঘভাতা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ আর কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘ডিএ পাওয়া কর্মীদের অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না তা পরের কথা৷ কিন্তু এটা এমন এক প্রাপ্য, যা দীঘদিন ধরে কর্মীরা পেয়ে আসছেন৷ বেতনভোগী কর্মীদের বেতন সেভাবে বাড়ে না, তাই নিম্ন আয়ের কর্মীদের বেতনের সঙ্গে চলতি বাজারদরের সঙ্গতি আনতেই ডিএ দেওয়া হয়৷’ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ৫৪ % ডিএ পেতে ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে এই প্রথম আদালতের বক্তব্যে সামান্য হলেও আলোর রেখা দেখছেন সরকারি কর্মীরা৷ মূল মামলার শুনানি হবে আগামী সোমবার৷ যদিও ডিএ নিয়ে রায় দিয়ে হাইকোর্টে এই মামলা কবে শেষ হবে তা নিয়ে এখন জল্পনা ও সংশয় তৈরি হয়েছে সরকারি কর্মীদের মধ্যেই৷ ইতিমধ্যে নবান্নের তরফে হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারের ঘাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণের বোঝা চেপে আছে৷ আর ডিএ দিতে সরকার বাধ্যও নয়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মলয় মুখোপাধ্যায়ের দায়ের করা মামলাটি লড়ছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী আমজাদ আলি৷ এ দিন অর্থ দফতরের কর্মী স্বপন দের হয়ে নতুন করে এই মামলায় যুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ যদিও তাতে আপত্তি জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত৷ এই সংযুক্তির আবেদনের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত বক্তব্য জানাবেন৷ এর আগে এ দিন রাজ্যের তরফে এজি-র বক্তব্য, ডিএ দেওয়া যেমন বাধ্যতামূলক নয়, তেমনই পে কমিশন এ ব্যাপারে কোনও সুপারিশ করলে তা মানতে বাধ্য নয় সরকার৷ তখনই হাইকোর্ট ডিএ প্রসঙ্গে তার মত দেয়৷ আদালতের বক্তব্য, ডিএ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়৷ ফলে একে অস্বীকার করা যায় না৷ ডিএ চেয়ে এককভাবেও এই কর্মচারী মামলা করেছেন৷ তাঁর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় থেকে সরকারি কর্মীরা ডিএ পেয়ে আসছেন৷ ফলে এখন তা না দেওয়াটা অন্যায়৷’ বকেয়া ডিএ দিয়ে দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিনই চিঠি লেখেন বিধানসভায় বামফ্রন্টের দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ তাঁর দাবি, গত ছবছর ডিএ বকেয়া রেখে সরকারি কর্মী-শিক্ষকদের প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়নি৷ আর এই সময়ের মধ্যে ডিএ বকেয়া এবং নিয়োগ বন্ধ রেখে এক লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার খরচ বাঁচিয়েছে সরকার৷ আদালত ডিএ পেতে কতটা সহায়ক হবে, তার থেকেও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হওয়া এই মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে তার জল্পনাতেই এখন মশগুল কর্মীরা৷ তাঁদের যুক্তি, এ মাসেই অবসর নিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে৷ বাইরে থেকে নতুন কাউকে ওই পদে সুপ্রিম কোর্ট এখনই না পাঠালে, বিচারপতি রাকেশ তেওয়ারি সেই দায়িত্ব নেবেন৷ পুজোর ছুটির আগে পরে মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে তিনি পাঁচদিন ওই পদে বসবেন৷ অক্টোবরের শেষে তাঁর অবসরের মধ্যেও যদি কাউকে স্থায়ীভাবে ওই পদে বসানো না হয় তা হলে বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য সেই দায়িত্ব নেবেন৷ তিনি প্রায় এক বছর পরে অবসর নেবেন৷ এই অবস্থায় তখন যিনি ওই পদে আসবেন তিনি নতুন করে মামলা শুনলে সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালত কবে রায় দেবে তা নিয়ে সন্দিহান সরকারি কর্মীরা৷ আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মীদের শাসকদলের সংগঠনের সভা হবে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে৷ সেই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সামান্য কিছু ডিএ ঘোষণা করতে পারেন বলেও জল্পনা রয়েছে৷ ফলে তখন আর এই মামলার কোনও গুরুত্বই থাকবে না৷

No comments:

Post a Comment