Sunday, September 24, 2017
পুজোয় মাঠ দাপাবে আদিবাসী মেয়েরা।
সিউড়ি, ২৪ সেপ্টেম্বর,
২০১৭।
মাঠের মধ্যে বলদখলের উপভোগ্য লড়াই। তা দেখতে উপচে পড়া ভিড়। আদিবাসী ভাষায়
ফুটবল ম্যাচের ধারা বিবরণী। ফি বছর দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন ফুটবলের আসর বসে সিউড়ির
কাটাবুনি আদিবাসী গ্রামে। দিন ভর টানটান উত্তেজনায় কাঁপে গোটা এলাকা। আয়োজক
গ্রামের পুরুষরা। এ বারও বসবে ফুটবলের আসর। তবে একটা মস্ত ব্যতিক্রম। পুরুষদের হাত
থেকে পুরো ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যাটন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে গ্রামের স্কুল
পড়ুয়া ছাত্রীরা। সহযোগিতায় মায়েরাও। প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী ৮টি দলও মহিলাদের।
সব মিলে জমজমাট কাটাবুনির ফুটবল ময়দান! হাতে আর বেশি দিন নেই, এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি।
নাওয়া খাওয়ার সময় নেই নগরী এসবি শিক্ষানিকেতনের ছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী
দেবী মুর্মু,
মুখদি হেমব্রম, দশম শ্রেণির
লক্ষ্মী মুর্মু,
দাতামণি মুর্মু কিংবা নবম শ্রেণির পাপিয়া মুর্মুদের। এত
ব্যস্ততা কিসের! দেবী,
দাতামণি, পাপিয়ারা বলছে, ‘‘চাঁদা তোলা থেকে সার্থক ভাবে পুরো ফুটবল টুর্মামেন্ট পরিচালনা করার পরিকল্পনা, দায়িত্ব,
সবই যে আমাদের কাঁধে। গ্রামে এতদিনের সুনাম ধরে রাখতে হবে
না। এখনও স্কুলে ছুটি না পড়লেও, বাতাসে পুজোর ছুটির গন্ধ। তাই যেদিন স্কুল যেতে হচ্ছে না সেদিন সকালের
পড়াশুনা সেরে এখন কেবল ফুটবল ভাবনা। ভরসা একটাই দাদা বাবারা তো উৎসাহ জোগাচ্ছেনই।
সক্রিয়ভাবে মেয়েদের পাশে রয়েছে মায়েরাও।
হঠাৎ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনে মেয়েরা কেন। আসল সত্যিটা লুকিয়ে রয়েছে এই
প্রশ্নের উত্তরেই। ঘটনা হল,
নগরী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই আদিবাসী গ্রামটি এবং সংলগ্ন
এলাকায় অনেক দিন থেকেই ফুটবলে আগ্রহী ছিল মেয়েরা। গত কয়েক বছর ধরে নিয়ম করে বিকালে
তাদের পায়ে ফুটবল উঠেছে। গত ১ বছর ধরে কাটাবুনি ঘেঁষা বাগানপাড়া মাঠে স্থানীয়
একটি ক্লাবের সৌজন্য নিয়ম করে ফটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এলাকার আট থেকে আঠারোর
মেয়েরা। পাল্লাভারি কাটাবুনির। প্রশিক্ষক তথা অজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া
শিক্ষক মৃণাল মাল। মৃণালবাবু বলছেন, ‘‘এত আগ্রহ এদের, যে স্কুল থেকে বা মাঠে কাজ করে ফেরার পথে বল খেলে বাড়ি ফেরে অনেকে। ওই
গ্রামেই দুটি মেয়েদের ফুটবল দল। যথেষ্ঠ সম্ভবনা রয়েছে ফুটবলে। শুধু মেয়েরা নয়, গেরস্থালী সামলে উৎসাহী মায়েরাও। মেয়েদের সঙ্গে মাঠে নামতে শুরু করেছেন
তাঁরাও।’’
দেবী,
পাপিয়ারা বলছে, ‘‘পাশের নগরী
গ্রামে দুর্গাপুজোয় খুব ধুম। প্রচুর মানুষ আসেন। আমাদের কাটাবুনি আদিবাসী গ্রামে
কোনও পুজো ছিল না। তাই বাবা দাদারা এতদিন ফুটবলের আসর বসিয়ে এসেছেন। মন ভরে যায়।
ভাবলাম এ বার আমরাই যদি সেই দায়িত্ব নিই কেমন হয়।’’
ফুটবল টুর্নামেন্টটা করতে চায় মেয়েরা, এ কথা শোনার পর
সন্দেহ না করে এক কথায় রাজি সকলে। মা বালিকা হেমব্রম, লক্ষী হেমব্রমরা বলছেন,
‘‘ফুটবলটা সত্যিই ওরা খুব ভলবাসে। ভালবাসি আমরাও। তাই পাশে
রয়েছি।’’
অভিভাবক শিবলাল মুর্মু, গ্রিল বেমব্রম
কানাই টুডুরা বলছেন,
‘‘আমরা নিশ্চিত ওরা ভাল ভাবেই পুরো বিষয়টা আয়োজন করেবে।’’
গ্রামের ৬০টি পরিবারের কাছে এবং এদিক ওদিক থেকে চাঁদা তুলে হাজার ১০-১২ জোগাড় করে আয়োজন ঠিক মতো হবে তা
নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দেবী মুর্মু, পাপিয়া মুর্মু, মুখদি হেমব্রমরা। তবে একটাই আক্ষেপ। সেটা আযোজক হিসাবে নয় খেলোয়ার হিসাবে।
যাদের এত আগ্রহ,
সেই ফুটবলারদের পায়ে এখনও ফুটবলের বুট উঠেনি। টাকাপয়সার
আভাবের জন্য ৮০০ টাকা দামের ফুটবলের বুট কেনা সম্ভব হয়নি তাঁদের। প্রশিক্ষক
মৃণালবাবু বলছেন,
‘‘ফুলবল নিয়ে যাদের এত ভাললাগা তাদের পায়ে বুট উঠলে মেয়েগুলো
ইন্টার স্কুল বা জেলাস্তরে প্রতিযোগিতায় আরও আনেক এগিয়ে যেতে পারত।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, দয়াল সেনগুপ্ত, ২৪/০৯/২০১৭।
জঙ্গলমহলে পাল্টা অস্ত্র ধরার হুমকি বিজেপির।
ঝাড়গ্রাম। বেলিয়াবেড়ায় দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ
তুলে অস্ত্র ধরার ডাক দিল বিজেপি৷ দোষীদের গ্রেফতার না করলে পুজোর পর জঙ্গলমহল অচল
করার হুমকি দিয়েছেন দলের তারকা নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ শনিবার দলের সক্রিয়
কর্মী মাতাল দিগারের স্মরণে ঝাড়গ্রামের প্রতিবাদ সভা থেকে নানা হুমকি দিয়েছেন
বিজেপির অন্য নেতারাও৷ গত শনিবার বেলিয়াবেড়ার ভোল গ্রামে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে
মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন মাতাল৷ পাঁচ দিন পর কলকাতার এসএসকেএমে মৃত্যু
হয় তাঁর৷ এ দিন প্রতিবাদ সভায় লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মাতাল দিগারের খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দেবীপক্ষের মধ্যেই
গ্রেফতার না করলে,
পুজোর পর থানা ঘেরাও, অবরোধ করে
ঝাড়গ্রাম অচল করে দেওয়া হবে৷’ পুলিশের উদ্দেশে তিনি
বলেন, ‘কত আর দোষীদের আড়াল করে রাখবেন৷ সবাই এ বার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে৷ মানুষের
ক্ষোভ সামলাতে পারবেন তো ?
হাজার হাজার মানুষ তৃণমূলের লোকজনকে বাড়ি থেকে বাইরে বের
করে এনে মারবে৷ কত জনের নামে কেস দেবেন ?’ বিজেপির রাজ্য
নেতা সায়ন্তন বসুও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তৃণমূল যদি
অস্ত্র ধরতে পারে,
তাহলে আপনাদের নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীরাও
অস্ত্র ধরতে পিছপা হবে না৷ পাশের ঝাড়খণ্ড থেকে ৩০ হাজার লোক ঢুকিয়ে দেব৷ কেউ বাঁচাতে
পারবেন না ?’
শুক্রবার রাতেও ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতা হুমকি
দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ৷ নাম না করে ওই তৃণমূল নেতাকে হুমকি দেন বিজেপির
দক্ষিণবঙ্গের পর্যবেক্ষক তুষার মুখোপাধ্যায়৷ দলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি
সুশীলকুমার ঘোষ বলেন,
‘শুক্রবার মাতালের ছেলে রেঙ্গুন দিগার বেলিয়াবেড়া থানায়
তৃণমূলের ১১ জন নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ থানা তার প্রাপ্তি স্বীকার করেনি৷’৷
সৌজন্য – এই সময়, ২৪/০৯/২০১৭।
Saturday, September 23, 2017
Friday, September 22, 2017
ঝাড়গ্রামকে আন্তর্জাতিক করছে জয়দীপ ষড়ঙ্গীর লেখা।
ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবার বাসিন্দা জয়দীপ ষড়ঙ্গীর ইংরেজিতে লেখা ৫৬ কবিতার
সংকলন প্রকাশিত হবে অস্ট্রেলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বছর চুয়াল্লিশের জয়দীপ
বাবু কলকাতার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। কর্ম জীবন শুরু
করেছিলেন ঝাড়গ্রাম মহকুমার কাপগাড়ী সেবা ভারতী কলেজের ইংরেজি অধ্যাপক হিসেবে।
দীর্ঘদিন ধরে জয়দীপ বাবু জঙ্গল মহলের গাছ, নদী, জঙ্গল,
আদিবাসী, দলিত ও প্রান্তিক
মানুষদের জীবন,
সংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখি করছেন। জয়দীপ বাবুর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ,
অনুবাদ লেখা নিয়ে প্রায় ৩০ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা
ভাষায় লেখা সাঁওতালী ও বাংলা কবিতা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন জয়দীপ বাবু।
সৌজন্য – সুনীপা চক্রবর্তী, সংবাদ প্রতিদিন, ২৩/০৯/২০১৭।
Adibasi Development Fund গঠনের উদ্যোগ ফেসবুকের মাধ্যমে।
আদিবাসী মানুষদের কাছে আমার আবেদন যে Schedule Tribe হিসেবে যত রকম সুযোগ সুবিধা সরকারি-বেসরকারি স্তরে আছে আপনারা তার
সুযোগ গ্রহণ করুন,
সম্পূর্ণ ভাবে তার ফায়দা নিন। কিন্তু তার
সাথে সাথে নিজের সমাজটাকে ভুলে যাবেন না। ইতিহাস বলে সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা
গ্রহণকারী শিক্ষিত আদিবাসী সম্প্রদায় তার সমাজের প্রতি যথাযথ প্রতিদান দেননি।
কথাটি কটা সতি-মিথ্যে সেটা নিজের বিবেককেই জিগেসা করুন।
আসুন আমরা যারা Schedule Tribe হিসেবে
সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছি, তাঁরা
আদিবাসী সমাজ কে উন্নয়ন ও ঐক্যের পথে নিয়ে যেতে অঙ্গিকারবদ্ধা হই। আসুন গড়ে তোলা
যাক Adibasi
Development Fund। সংরক্ষণের দৌলতে আমরা যারা চাকরি পেয়েছি
বা রোজগার করছি,
আমরা আমাদের মাসিক রোজগারের মাত্র ১%
প্রতি মাসে এই Adibasi
Development Fund এ জমা করার অঙ্গিকারবদ্ধ হই। এই Adibasi Development Fund
এর টাকা চার ভাগে ভাগ করা হোক-
১) এক ভাগ দরিদ্র আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সাহায্য করার জন্য,
২) দ্বিতীয় ভাগ আদিবাসী সমাজের মাঝি বাবা দের সাহায্য করার জন্য ও
আদিবাসীদের জাহের থান বা পুজো স্থল সংস্কার করার জন্য,
৩) তৃতীয় ভাগ আদিবাসী সমাজের নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করার জন্য, এবং
৪) চতুর্থ ভাগ আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন আন্দোলন ও মামলা-মকর্দমায়
সাহায্য করার জন্য।
কি বলছেন আদিবাসী ভাই ও বন্ধুরা? রাজি আছেন
কি? ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, না থাকলে
হাজারটা বাহানা তৈরি হয়। দেখতে হ্যায় কিসমে কিতনা হ্যায় দম।
যোগাযোগ – প্রদীপ কুমার হাঁসদা (৭২৭৮৫৮৭০২৮)
Thursday, September 21, 2017
সংরক্ষণ ও আদিবাসী সমাজ।
আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীরা
আদিবাসী সমাজের দাবী দাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়ের সামনে
বলতে ভয় পান, দাবী আদায় তো দুরের কথা। এই সমস্ত আদিবাসী Schedule Tribe
MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীদের এবার ট্রেনিং নেওয়া উচিত কুড়মি (মাহাত) MLA,
MP, নেতা, মন্ত্রীদের কাছে। কুড়মি (মাহাত)-রা মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছ থেকে আদায় করেছেন “কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ”, কিন্তু
দক্ষিনবঙ্গের আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা,
মন্ত্রীরা কটা উন্নয়ন পর্ষদ আদায় করতে পেরেছেন?
কুড়মি (মাহাত)-দের মাথায় আর একটি পালক। কুড়মি (মাহাত)-দের আন্দোলনের চাপে এবার
পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়মি (মাহাত)-দের “Schedule Tribe বা তপশীলি উপজাতি” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার
প্রস্তাবে মতামত দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে দিল। এবার বল
কেন্দ্রের কোর্টে।
আর আমাদের আদিবাসী Schedule Tribe MLA, MP, নেতা, মন্ত্রীরা কি
করেন? আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া বা আন্দোলনে হয় মৌন ব্রত পালন করেন আর না হলে
আন্দোলনকে ভাঙতে বিভ্রান্তিমূলক আচরন করেন। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরের একলব্য আবাসিক
আদর্শ বিদ্যালয় (Ekalaby Residential Model School) এ
আদিবাসী নাবালিকা ছাত্রীদের তাদের শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দ্বারা
মানসিক, শারীরিক, এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। উত্তাল হয়েছিল আদিবাসী
সমাজ। আদিবাসী সমাজের ক্ষোভ কে দমন করতে ঝাড়গ্রাম প্রশাসন কে ১৪৪ ধারা জারি করতে
হয়েছিল। ৯ ই আগস্ট ২০১৭ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের
সভা করার অনুমতি বাতিল করেছিল ঝাড়গ্রাম প্রশাসন। ৬ ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ তে ভারত
জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ডাকে আদিবাসীদের বিরাট প্রতিবাদ সভা হলেও সেটা হয় বিশাল
নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরকে মুড়ে দেবার পর। এত বড় ঘটনা নিয়ে আদিবাসীদের
হয়ে কোন সরকারি দলের জন প্রতিনিধি মুখ খোলেননি। ঝাড়গ্রামের বিধায়ক ও সাংসদ, দুজনেই
আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত, কিন্তু আদিবাসীদের এই চরম বিপদের দিনে এনারা মৌন ব্রত
ধারন করেছিলেন। এখন তো আবার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত জনপ্রিতিনিধি নিয়ম করে বিভিন্ন
সভা সমিতিতে আদিবাসীদের সর্বচ্চো সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের
বিরুদ্ধে কুৎসা ও সমালোচনা করে বেড়াচ্ছে। Schedule Tribe বা
তপশীলি উপজাতির সংরক্ষিত আসনে MLA, MP, নেতা, মন্ত্রী হয়ে
আদিবাসী সমাজের সুখ দুখের সাথি না হয়ে শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখছেন।
সবসময় ভাবছেন যে আদিবাসী সমাজ চুলোয় যাক, কিন্তু আমার সুখ সাছন্দ্য, সুযোগ, সুবিধা
যেন না হারাই। ২০১৫ সালের লাভপুর ঘটনায় আদিবাসী সমাজের মাঝি বাবা সহ ১৩ জন
আদিবাসীর জেল ঘোষণা ঘটনাটি আরেকটি সংযোজন মাত্র। লাভপুরের ঘটনায় তৎকালীন
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী ডাঃ সুকুমার হাঁসদা, যিনি নিজে একজন আদিবাসী সম্প্রদায়
ভুক্ত, তিনি গিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ আদিবাসী সমাজকে শান্ত করতে, কিন্তু সুবিচার দিতে
নয়।
সাময়িক চলার পথে সংরক্ষণ আদিবাসী সমাজকে অনেক সাহায্য করেছে, এটা খুব সত্যি
কথা। কিন্তু সংরক্ষণের মাধ্যমে আদিবাসী সমাজ তার উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছতে
কোনদিনও পারবে না, উল্টে সংরক্ষণের দৌলতে কিছু চামচা শ্রেণী তৈরি হবে। সংরক্ষণ
দিয়ে তো আর আদিবাসী সমাজের “হাসা-ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-ধর্ম-রীতিনীতি” র উন্নতি
সম্ভব নয়।
ভেবে
দেখুন একবার সাধারণ আদিবাসীরা কি করবেন? ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল ও Adibasi
Socio Educational & Cultural Association (ASECA) এর মতন সামাজিক
সংগঠনের নেতৃত্ব নিজেদের আত্মমর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ এর আন্দোলনকে শক্তিশালী
করবেন না কি “সংরক্ষণ” নামক মোহজালে আবদ্ধ থাকবেন?লোকশিল্পীদের তিন দিনের কর্মশালা শুরু হল ঝাড়গ্রামে।
ঝাড়গ্রাম পৌরসভার টাউন
হলে কর্মশালাটির উদ্বোধন করেন অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাত, উপস্থিত
ছিলেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন, ঝাড়গ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান দুর্গেশ মল্লদেব,
ঝাড়গ্রাম তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের জেলা আধিকারিক বরুন মণ্ডল। প্রায় ৫০০ জন
লোকশিল্পী এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারে
লোকশিল্পীরা কিভাবে কাজ করবেন সেই নিয়েই এই কর্মশালা বলে জানা যায়।
সৌজন্য - সংবাদ প্রতিদিন, ২২/০৯/২০১৭।
সাঁওতালী ভাষা আজ কথায় দাড়িয়ে আছে ?
বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন - Adibasi Socio Educational
& Cultural Association (ASECA), All India Santali Writers Association,
Bharat Jakat Majhi Madowa (BJMM), All Santal Students Association (ASSA),
Bharat Jakat Santarh Pathua Gaunta (BJSPG), Jhargram Dama Soren Tirla Gaunta,
All Orissa Olciki Students Union, Raghunath Murmu Adibasi Students Association
(RASA), Santali Bhasa Morcha সহ সহযোগী সংগঠন
এর নেতৃত্বে সাধারণ সাঁওতাল আদিবাসীদের লাগাতার আন্দোলন, পথ অবরোধ, রেল অবরোধ, সমাবেশ ও সাংসদ সালখান মুরমুর সংসদে তীব্র সওয়াল এর জেরে ২০০৩
সালের ২২ শে ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদে সাঁওতালি ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে
সংবিধানের ৮ ম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত
হবার পর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাষা চালু হবার কথা। আজ ১৪ বছর পরেও সাঁওতালি ভাষা
শিক্ষার সঠিক পরিকাঠামো গড়ে উঠল না। আজও শিক্ষক এর জন্য, পাঠ্য বই এর জন্য, সাঁওতালি বিষয়
চালুর জন্য সাঁওতালি পড়ুয়াদের সাথে তাদের অভিভাবকদেরও আন্দলনে সামিল হতে হচ্ছে।
কেন?
সাঁওতালি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি পাবার পর সাধারণ সাঁওতালি পড়ুয়ারা
মাতৃ ভাষায় শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক দের কিন্তু পোয়া বারো
অবস্থা হয়েছে। ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করার পর দিল্লীতে
সাহিত্য একাডেমী থেকে প্রতি বছর সাঁওতালি লেখকদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। পুরস্কারের
আর্থিক মুল্য ১ লক্ষ টাকা। আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও গঠন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি
একাডেমী। এখান থেকেও প্রতি বছর সাঁওতালি লেখক, সাহিত্যিক দের নিয়মিত পুরস্কার প্রদান করা হয়।
তাহলে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের
৮ ম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত হবার পর সাধারণ সাঁওতালি ছাত্র ছাত্রীদের কোন লাভ হয়নি।
লাভ হয়েছে সাঁওতালি লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক দের। আমি জানতে চাই যে ASECA ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃত্বে ৩৮ বছর ধরে যে সাধারণ সাঁওতালরা রোদে, গরমে, বৃষ্টিতে, না খেয়ে, নিজের কাজ ফেলে, পুলিশের পিটুনি খেয়ে, মামালায় অভিযুক্ত হয়ে যে আন্দোলন করলেন তাঁরা কি ফল পেলেন?
এখন দেখা যাচ্ছে যে প্রাথমিক স্কুল গুলিতে সাঁওতালি ভাষা চালু
হয়েছে সেখানে শিক্ষক এর অভাব। অভাব তো হবেই, কারণ পশ্চিমবঙ্গে একটাও সাঁওতালি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষক
প্রশিক্ষণের সংস্থা নেই। আবার মাধ্যমিক - উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতেও শিক্ষক না
থাকার কারণ এটি। সারা রাজ্যের মধ্যে সম্প্রতি একমাত্র বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে B.Ed করার সুযোগ আছে। আজ পর্যন্ত West Bengal School
Service Commission সাঁওতালি বিষয় এর
জন্য বছর প্রতি ১০ টির বেশী সাঁওতালি শিক্ষক পদ বরাদ্দ করতে পারলেন না। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাঁওতালি সিলেবাসের বই না পাওয়া যাওয়া। এমন
সব সাঁওতালি বুদ্ধিজীবীরা সাঁওতালি বই নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন যে তাঁরা এমন সব
বই সিলেবাসের জন্য নির্বাচন করেন যা বাজারে পাওয়া যায় না বা প্রকাশিত হয় না।
২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিলেন বামফ্রন্ট সরকার। সাঁওতালি
ভাষা চালু করতে বাম ফ্রন্ট সরকারের তীব্র অনিহা ছিল, কিন্তু প্রবল জনমতের সামনে লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি নিতে বাধ্য হল
বামফ্রন্ট সরকার। বামফ্রন্ট সরকার ২০০১ সালে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারকে চেয়ারম্যান করে তৈরি করে
সাঁওতালি ভাষা কমিটি, যার রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দিনের আলো দেখল না (শোনা যায় যে
পবিত্র সরকার তাঁর রিপোর্ট এ সাঁওতালি ভাষা চালুর পক্ষেই মতামত দিয়েছিলেন, কিন্তু
তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সাঁওতালি ভাষা চালু করতে চায় নি আর তাই পবিত্র সরকার
কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দিনের আলো দেখল না। )। আবার ২০০৩ সালে সংবিধানের ৮ ম তপশীলে সাঁওতালি ভাষা অন্তর্ভুক্ত
হলে বাম ফ্রন্ট সরকার সাঁওতাল জনগণ কে বিভ্রান্ত করতে অদ্ভুত কৌশল গ্রহণ করেছিল।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষা চালু
না করে সাঁওতালি ভাষা চালু করা হল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার সাঁওতালি ভাষায় কোন
PTTI ও B.Ed কলেজও চালু করেনি
বাম ফ্রন্ট সরকার। এই দিকে West Bengal School Service Commission সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগের জন্য কোন বছরও ১০ টির বেশী শিক্ষক
পদ ঘোষণা করেনি, আবার তাঁর মধ্যে SC/OBC/PH দের জন্য সংরক্ষণ থাকায় সাঁওতালি শিক্ষক পদ পূরণ করা হয় নি। তেমনি District Primary
School Council গুলিও প্রাথমিক স্কুলগুলিতে
পর্যাপ্ত পরিমাণে সাঁওতালি শিক্ষক নিয়োগ করে নি। আর তাই প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক,
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে বর্তমানে সাঁওতালি শিক্ষকের এই হাহাকার।
কিন্তু UGC-NET ও West Bengal
College Service Commission কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে লেকচারার/ প্রফেসর নিয়োগ করতে থাকায় আজ প্রায় ১৫০ জন সাঁওতালি
ভাষার লেকচারার/প্রফেসর আছেন।
বর্তমান মা-মাটি-মানুষের সরকার ও বিগত বামফ্রন্ট সরকারের মতই
সাঁওতালি শিক্ষা নিয়ে সাধারণ সাঁওতালদের বঞ্চনা করছে। সাঁওতালি ভাষা শিক্ষা নিয়ে
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যনারজির সদিচ্ছা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। মমতা
ব্যনারজি আদিবাসী মানুষদের সত্যিই ভালবাসেন, জঙ্গল মহল কে ভালবাসেন, তাই বারে বারে
জঙ্গল মহলে ছুটে যান। ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের কথা ভেবে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন
করেছেন। খুব ভাল কথা, কিন্তু মমতা ব্যনারজি যে সমস্ত আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী,
জনপ্রতিনিধি দের আদিবাসী উন্নয়নের দেখভাল দিয়েছেন তাঁরা যে তাদের কাজ ঠিক মতন
করছেন না এটা একদম দিনের আলোর মতন পরিষ্কার। বর্তমান শাসক দলের আদিবাসী
নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি রা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজিকে আদিবাসী উন্নয়ন নিয়ে
ভুল ভাল তথ্য দিচ্ছেন বা অর্ধ সত্য তথ্য দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির
সভা, সমাবেশ বা প্রশাসনিক সভা গুলিতে আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিরা মমতা
ব্যনারজিকে ঘিরে রাখেন, কিন্তু কাজের কথাটি বলেন না, কেন কি জানি? মুখ্যমন্ত্রী
মমতা ব্যনারজিকে ‘ওঁরাও’ আদিবাসীদের ‘কারাম পুজো’ র কথা জানানো হলে মুখ্যমন্ত্রী
কারাম পুজো উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তাহলে আদিবাসীদের ৩ রা জানুয়ারী (মারাং
গমকে জয়পাল সিং এর জন্মদিন), ১১ ই ফেব্রুয়ারী (বাবা তিলকা মুরমুর জন্মদিন), ১৬ ই
বৈশাখ (সাধু রামচাঁদ মুরমুর জন্মদিন), ৫ ই মে (পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমুর জন্মদিন),
বুদ্ধ পূর্ণিমা (সাঁওতাল আদিবাসীদের সর্বচ্চো বাৎসরিক দরবার মহল এবং শিকার
অভিযান), ৩০ শে জুন (ঐতিহাসিক মহান সাঁওতাল হুল দিবস), ১৫ ই নভেম্বর (বীর বিরসা
মুণ্ডার জন্মদিন), ১৪ ই ডিসেম্বর (প্রতিবাদী নায়ক নরেন হাঁসদার জন্মদিন), ২২ শে
ডিসেম্বর (সাঁওতালী ভাষা বিজয় দিবস), ইত্যাদি আদিবাসী স্বরনীয় দিবস গুলিতে এবং
স্থানীয় স্তরে আদিবাসী ধর্মীয় পুজো অনুষ্ঠান যথা বাহা, মাহ মড়ে, সহরায়, সাকরাত,
মাঘ সিম, এরওঃ সিম, আষাড়িয়া, হাড়িয়ার, জানথাড়, দাঁসাই, কারাম, ইত্যাদি গুলিতে
সরকারী ছুটি ঘোষণা কি
করতেন না? নিশ্চয় করতেন। কিন্তু সেটা তো মুখ্যমন্ত্রীর নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে,
সেই কাজটি সাধারণ মানুষের দ্বারায় সম্ভব নয়, এই কাজটি আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিদের কেই করতে হবে। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয় তাদের কাজ সঠিক ভাবে করছেন
না, মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির নিকট আদিবাসীদের দাবী দাওয়া গুলি তুলে ধরছেন
না। সম্প্রতি ৪ এপ্রিল ২০১৭ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজি পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা
উদ্বোধন করলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির এই সভায় উপস্থিত ছিলেন এক ঝাঁক আদিবাসী নেতা-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজির
দরবারে সঠিক ভাবে দরবার করলে ঝাড়গ্রাম জেলার সাথে সাথে আদিবাসীরা আরও অনেক কিছুই
পেতেন, যেমন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে সাঁওতালি ভাষা চালু, বেতকুঁদরি তে সাঁওতালি
বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি। পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্য আদিবাসীদের রক্ষা কবচ হিসেবে
পরিচিত “সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি আইন, ১৯৪৯ বা Santal Pargana Tenancy Act, 1949” এবং “ছোট নাগপুর টেনান্সি আইন, ১৯০৮ বা Chotonagpur
Tenancy Act, 1908” এর বাতিলের বিরুদ্ধে গত ৩০ শে জুন, ২০১৭ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা
মহলের ডাকে আদিবাসী সাঁওতালরা সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে রেল ও রাস্তা অবরোধ এর ডাক
দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পরে পরেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কি বুঝল কে জানে ৩০ শে জুন এ
সরকারি ছুটি ঘোষণা করল।
২০০৪ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতাল অ্যাকাডেমি’। অভিযোগ সাঁওতালি ভাষা চর্চার বদলে বাম ফ্রন্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ
সাঁওতালি লেখক বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা ও পুরস্কার পাইয়ে দিতে
সাঁওতালি একাডেমীর সদস্য করা হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছু যে হয়নি সেটা বাংলা
একাডেমীর সাথে তুলনা করলেই বোঝা যায়। আবার বর্তমান সরকারও একেই পথের পথিক।
মা-মাটি-মানুষের সরকারের ঘনিষ্ঠ সাঁওতালি লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকদের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীর
সদস্য করা হয়েছে। এরাও ঠিক মতন কাজ করছেন না, আর তাই সাঁওতালি শিক্ষার সিলেবাসের
বই এর অভাবে সাঁওতালি ছাত্র ছাত্রীরা হাহাকার করছে।
এইমতাবস্তায় বর্তমান মা-মাটি- মানুষের সরকারের সাধারণ আদিবাসীদের দাবী
–
১) অবিলম্বে সাঁওতালি শিক্ষা ও সাঁওতাল শিশুদের নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ
হোক।
২) পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংস্থায় (PTTI/ D.Ed/ B.El.Ed) সাঁওতালি ভাষা
বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩) পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি B.Ed কলেজে সাঁওতালি ভাষা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪) প্রতি বছর প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে গুলিতে West Bengal Board
of Primary Education থেকে ১০,০০০
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৫) প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে West Bengal School
Service Commission থেকে ১,০০০
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৬) সাঁওতালি শিক্ষার সিলেবাসের বই তৈরি করতে নতুন করে কমিটি গঠন
করা হোক ও Open Tender বা e-Tender এর মাধ্যমে বই প্রকাশ করতে প্রকাশনা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হোক ও
সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হোক।
৭) পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীর বর্তমান কমিটিকে ভেঙ্গে দেওয়া হোক
ও নতুন কমিটি তৈরি করা হোক। পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমীকেই সাঁওতালি শিক্ষার
সিলেবাস তৈরি ও বই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হোক, সাথে সেই বই প্রকাশনার দায়িত্বও
দেওয়া হোক।
৮) পশ্চিমবঙ্গ Tribal Advisory Council এ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সভাপতি দিশম পারগানা
নিত্যানন্দ হেমব্রম, Adibasi Socio-Educational & Cultural
Association এর প্রতিনিধি, All India Santal Writers Association
এর প্রতিনিধি এবং সাঁওতাল শিক্ষক ও ছাত্রদের
এক প্রতিনিধি সামিল করতে হবে।ফিরে দেখা : ৩১ শে জানুয়ারি ১৯৮৯ কোলকাতায় ঝাড়খণ্ডীদের বিশাল জনসমাবেশ।
পশ্চিম বাংলা, বিহার,
উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ এর ২১ টি জেলা (পশ্চিমবাংলার তিন জেলা – মেদিনীপুর, পুরুলিয়া
ও বাঁকুড়া; বিহারের ১২ টি জেলা – সিংভুম, গিরিডি, রাঁচি, লোহারডাগা, গুমলা,
পালাউমৌ, হাজারীবাগ, ধানবাদ, দুমকা, গোড্ডা, দেওঘর ও সাহেবগঞ্জ; উড়িষ্যার ৪ জেলা –
সম্বলপুর, সুন্দরগড়, ময়ুরভঞ্জ ও কেওনঝড়; এবং মধ্যপ্রদেশ এর ২ জেলা – সরগুজা ও
রাইগড়) নিয়ে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে পশ্চিমবাংলা সরকারের সহযোগিতা ও ঝাড়খণ্ডী সাংস্কৃতিক
অঞ্চলের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে সাঁওতালী, মুন্ডারি, কুরুখ, নাগপুরি ও
কুড়মালি ভাষায় পঠন পাঠনের দাবীতে ১৯৮৯ সালের ৩১ শে জানুয়ারি পশ্চিমবাংলার রাজধানী
কলকাতা শহরের বিখ্যাত শহীদ মিনার ময়দানে ঝাড়খণ্ড সমন্বয় সমিতি (Jharkhnd Coordination Committee)-র ডাকে ৫০,০০০ হাজার ঝাড়খণ্ডী সমবেত হয়েছিলেন।
এই ঝাড়খণ্ডী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ রামদয়াল মুন্ডা, এন ই হোরো, বিনোদ বিহারী
মাহাতো, সন্তোষ রানা, সূর্য সিং বেসরা ও নরেন হাঁসদা সমেত তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয়
ঝাড়খণ্ডী নেতৃবৃন্দ। ঝাড়খণ্ডীদের এই জনসমাবেশকে ভণ্ডুল করতে সবরকম পন্থা অবলম্বন
করেছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএম ও বামফ্রন্ট সরকার। কোলকাতায় সমাবেশ করতে চরম
অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেছিল। ঝাড়খণ্ডী সমাবেশ গুলোর অন্যতম অঙ্গসজ্জা
তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার।
নিজেদের দাবীর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ বের
করে এনেছিল বামফ্রন্ট সরকার। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মন্তব্য করেছিলেন যে
ঝাড়খণ্ডীরা কেন কোলকাতায় সমাবেশ করছেন? তারা তো দিল্লী যেতে পারেন। কোনদিনেই
ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিশেষ ক্যাবিনেট মিটিং
ডাকেন ও তির ধনুকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মুখ্যসচিব টি সি দত্তের নেতৃত্বতে
এক বিশেষ সেল গঠন করা হয়। কলকাতা শহরে ঢোকার সমস্ত রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড করা
হয়, যারা তির ধনুক বাজেয়াপ্ত করার অছিলায় ঝাড়খণ্ডী সমর্থকদের কলকাতা শহরে ঢুকতে
বাধা সৃষ্টি করেন। কিন্তু কোন কিছুই ঝাড়খণ্ডীদের দমাতে পারেনি। বিশাল ভাবে সফল হয়ে
সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের হৃদয়ে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছিল ঝাড়খণ্ডীদের এই ঐতিহাসিক
জনসমাবেশ। ঝাড়খণ্ডীদের এই সমাবেশ কে সফল করতে বিশাল সাংগঠনিক শক্তির পরিচয়
দিয়েছিলেন ৩২ বছরের তরুন যুবক ঝাড়খণ্ড পার্টির জনপ্রিয় নেতা নরেন হাঁসদা।
৩১ শে জানুয়ারি
১৯৮৯ কলকাতার রাজপথ ছেয়ে গিয়েছিল তির ধনুক হাতে ঝাড়খণ্ডী সমর্থক, সবুজ পতাকায় ও
সশস্ত্র পুলিস বাহিনীতে।
সমাবেশে সমস্ত
বক্তা বামফ্রন্ট সরকারের অসহযোগিতা মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেন। মঞ্চে ভাষণ দিতে
উঠে নরেন হাঁসদা তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন ‘তির ধনুকের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা
একটি জাতির বিশ্বাসের ওপর হামলার স্বরূপ। আমি শহীদ মিনার মঞ্চে উঠে এক হাতে তির,
অন্য হাতে ধনুক তুলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিতে চায় যে মুসলিম ভাইদের টুপি,
পাঞ্জাবী ভাইদের কৃপাণ ও ঝাড়খণ্ডীদের তির ধনুক কেড়ে নেবার চেষ্টা হলে কেবল
পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা ভারতবর্ষেই আগুন জ্বলবে।’
সমাবেশে নরেন
হাঁসদার পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ঝাড়খণ্ডী ছাত্র নেতা সূর্য
সিং বেসরা (সভাপতি, অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন তথা আজসু), রাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রাত্তন উপাচার্য রামদয়াল মুন্ডা সহ বাকি ঝাড়খণ্ডী নেতৃবৃন্দ। ঝাড়খণ্ড সমন্বয়
সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয় তৎকালীন পশ্চিমবাংলার ভুমি ও
ভুমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর হাতে। স্মারকলিপিতে সাক্ষর করেন ডাঃ
রামদয়াল মুন্ডা, এন ই হোরো, বিনোদ বিহারী মাহাত, নরেন হাঁসদা ও সন্তোষ রানা।
ঝাড়খণ্ডীদের
দাবিদাওয়া সম্বন্ধে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু চরম তির্যক মন্তব্য করেন।
জ্যোতি বসু জানান যে পশ্চিমবাংলায় আদিবাসীদের জনসংখ্যা অতি অল্প, মেদিনীপুর জেলায়
৪ %, বাঁকুড়া জেলায় ৮% আর পুরুলিয়া জেলায় ১৭% মাত্র, তাই পশ্চিমবাংলার প্রস্তাবিত
জেলাগুলি নিয়ে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের কোন সম্ভবনায় নেই। আর ঝাড়খণ্ডীদের
মাতৃভাষায় পঠন পাঠনের বিষয়ে জানান যে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে একজন বাঙালি ছাত্রেরও
বাংলা ভাষা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ নেই তাই এই দাবীর কোন
সারবত্ততা নেই। জ্যোতি বসু অলচিকিকে ভাষা হিসেবেও উল্লেখ করেন। জ্যোতি বসুর এই
মন্তব্যগুলির চরম বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানান বিশিষ্ট নকশাল নেতা সন্তোষ রানা।
ঝাড়খণ্ডীদের জনসংখ্যা প্রসঙ্গে সন্তোষ রানা জানান যে শুধুমাত্র আদিবাসীরাই
ঝাড়খণ্ডী জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত নয়। আদিবাসীদের পাশাপাশি কুড়মি মাহাতো, বাগাল,
রাওতিয়া, প্রভৃতি অর্ধ আদিবাসী জনগোষ্ঠী, আবার হিন্দু ধর্মের শূদ্র জনগোষ্ঠী তথা
কামার, কুমোর, তাঁতি, বাগদি প্রভৃতি জনগোষ্ঠীরাও ঝাড়খণ্ডী জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত।
এদের ধরে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় ঝাড় খণ্ডীদের জনসংখ্যা ৯০-১০০%। অলচিকি
বিষয়ে জ্যোতি বসুর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সন্তোষ রানা জানান যে এই ব্যাপারে
মন্তব্য করে জ্যোতি বসু নিজের অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। অলচিকি কোন ভাষা নয়, এটি
একটি লিপি। পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু এর আবিস্কারক। এই অলচিকি লিপির বৈশিষ্ট্য হল যে এই
লিপি দিয়ে সাবলীল ভাবে সাঁওতালী, মুন্ডারি, কুড়মালি সহ বিভিন্ন ভাষা লেখা ও পড়া
যায়, যা বাংলা লিপি দিয়ে কখনই সম্ভব নয়। এও জানিয়ে দেন যে পশ্চিমবাংলায় কোন স্কুলে
সাঁওতালী, মুন্ডারি বা কুড়মালি ভাষার মাধ্যম বা বিষয় হিসেবে পড়ানো হয় না। সিপিএমের
একসময়ের ‘মাতৃভাষাই মাতৃ দুগ্ধ’ জনপ্রিয় শ্লোগান টি জ্যোতি বসুকে মনে করিয়ে তাদের
দিচারিতাকে স্পষ্ট করেন। জ্যোতি বসু কে মনে করিয়ে দেন যে খোদ লেনিন রুশ ভাষা কে
সোভিয়েত ইউনিয়ন এর জাতীয় ভাষা করতে চাননি কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন এর অন্তর্গত বিভিন্ন
অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীগুলির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থাকায়।
(আদিবাসি-মুলবাসীদের
অধিকার রক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় আন্দোলন হল ঝাড়খণ্ড আন্দোলন। এক সময় এই ঝাড়খণ্ড
আন্দোলন আদিবাসী-মূলবাসী সমাজে এক অদ্ভুত উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এই
আন্দোলন নিয়ে খুব বেশী লেখা, বই বা গবেষণা বাংলা ভাষায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন
সুত্র থেকে সংগ্রহ করে ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্য উৎসুক পাঠকদের
সামনে তুলে ধরার এক সামান্য প্রচেষ্টা।)
Subscribe to:
Posts (Atom)