পুরুলিয়া : ডাইনি সাজিয়ে হেনস্থা যে শুধু
সমাজ করে না, নিজের পরিবারও
করে, তার আরও একটি
হাতেগরম ঘটনা জানা গেল পুরুলিয়ার আদ্রায়৷ শিশুর মৃত্যুর জন্য তার বাবা-মা ই
পরিবারের দুই বয়স্কাকে ডাইনি অপবাদ দেয় বলে অভিযোগ৷ অপবাদ সাজাতে রাতারাতি গল্পও
তৈরি করে শিশুর বাবা-মা৷ তারা প্রচার করে, আড়াই বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুর পর সন্ধ্যায়
বাড়ি লাগোয়া বাগানে প্রদীপ হাতে নাচছিলেন তাদের মা ও পিসি৷ সঙ্গে সঙ্গে তারা চাউর
করে দেয় যে ওই দু’জন
ডাইনিবিদ্যা জানে৷ এর পর শুরু হয় একের পর এক কুসংস্কারের আড়ালে নানা নাটক৷ অভিযুক্ত
বুধু মাল ও তার স্ত্রী মালা মাল রটিয়ে দেয় যে তাদের মা ও পিসি স্বীকার করে নিয়েছেন
যে তাদের মা ও পিসি ডাইনিবিদ্যায় পারদর্শী৷
ওঁরা শিশুটিকে মারেননি বললেও বুধু ও সন্ধ্যা
প্রচার করে যে তাদের মা সুলোচনা মাল দাবি করেছেন যে শিশুটিকে তারা বাঁচিয়ে তুলতে
পারবেন৷ সেই অনুযায়ী মাটিতে পুঁতে রাখা শিশুর দেহ তুলে রাখা হয় দুই প্রবীণার
সামনে৷ তাঁরাও ঝাড়ফুঁক করার ভান শুরু করলে সেই খবর ছড়িয়ে যেতে মঙ্গলবার লোকে
লোকারণ্য হয়ে যায় আদ্রা থানার গোঁসাইগাঁও গ্রামে মাল পরিবারের বাড়ি৷ খবর শুনে ওই
বাড়ি ছুটে যান আড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাস৷ তিনি সবাইকে বোঝানোর
চেষ্টা করেন যে ডাইনিবিদ্যা বলে কিছু হয় না৷ মৃতকে জীবিত করা কোনও মতেই সম্ভব নয়৷
কিন্তু কে শোনে কার কথা ? জনতা তখন
উন্মত্ত৷ আর শিশুর দেহ ঘিরে উদ্দাম নেচে চলেছেন তার ঠাকুরমা ও পিসি –ঠাকুরমা৷
পঞ্চায়েত প্রধান পরে বলেন, ‘আমার কথা কেউ শুনতেই চায়নি৷ পরিস্থিতি বেগতিক
বুঝে আমি আদ্রা থানায় খবর দিই৷’ এর পর পুলিশ গেলেও পাত্তা দেয়নি অন্ধ বিশ্বাসে উন্মত্ত জনতা৷ তিন ঘণ্টা পর
বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস গিয়ে ফের
বোঝানোর চেষ্টা করেন৷ তাঁকেও ফিরিয়ে দেয় জনতা৷ শেষপর্যন্ত লাঠি চালিয়ে ভিড়
ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ দেহ নিয়ে চলে যায়৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাকেও ওরা বোঝানোর চেষ্টা করে যে ঝাড়ফুঁকের
ফলে শিশুটি নড়তে শুরু করেছে৷ তখন বুঝে যাই, শিশুটিকে বাঁচাতে না-পারার অভিযোগে এর পর
উত্তেজিত জনতার রোষের মুখে পড়বে প্রবীণা দু’জন৷ তাঁদের উদ্ধার করাই ছিল তখন প্রথম কাজ৷’ পুলিশ উদ্ধার করার পর মুখ খোলেন অভিযুক্তারা৷
শিশুটির ঠাকুরমা সুলোচনা মাল বলেন, ‘প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির পাশে আলো হাতে
জঙ্গলে গিয়েছিলাম৷ তাই দেখে আমার ছেলের বৌ জোর চাপ দিয়ে আমাদের ডাইনি সাজিয়েছে৷ এর
পর যা করেছি, তা সবই চাপের
ফলে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে৷’ ওই দুই প্রবীণার নিরাপত্তাই এখন প্রশাসনের
কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস বলেন, ‘দুই প্রবীণার যাতে কেউ ক্ষতি না-করতে পারে, সেজন্য গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷’ ডাইনি অপবাদ নিয়ে কিন্তু শিশুর বাবা-মা এর
পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড়৷ শিশুটির বাবা বুধু মাল বলে, ‘আমার স্ত্রী দেখতে পায় যে আমার মা ও পিসি
প্রদীপ হাতে নাচছে৷ স্ত্রী আমাকে জানালে আমরা দু’জন মা ও পিসিকে চেপে ধরলে তারা স্বীকার করে
যে ওরা ডাইনিবিদ্যা জানে৷’ ভারতীয়
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন দাস বলেন, ‘আমরা গোঁসাইগাঁওয়ে গিয়ে শিগগিরই মানুষকে
বোঝাব৷
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=31963&boxid=152618729
No comments:
Post a Comment