May 5, 2017
রায়পুর: নকশাল দমনে আদিবাসীদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সেই অভিযোগ যে সত্যি সে ব্যাপারে মুখ খুললেন স্বয়ং এক জেল আধিকারিক। জানিয়ে দিলেন, তিনি নিজের চোখে দেখেছেন জেলের মধ্যে কী ভাবে মানবাধিকারের বিভিন্ন সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
২৪ এপ্রিল সুকমায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর হামলার কিছু দিন পরেই নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রায়পুর জেলের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট বর্ষা ডোঙ্গরে। সেই পোস্টটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই অবশ্য তা মুছে দেন তিনি। কিন্তু তিনি যা লিখেছিলেন তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়।
শুধু জেলের মধ্যে নয়, নকশাল দমনের নামে যে ভাবে আদিবাসীদের তাদের জমি থেকে বিতাড়িত করে রাজ্য সরকার তা দখল নিচ্ছে, সে ব্যাপারেও বিস্ফোরক এই আধিকারিক।
তাঁর কথায়, “আমার মনে হয় আমাদের আত্মসমীক্ষা করার প্রয়োজন হয়েছে। দু’পক্ষেই যারা মারা যাচ্ছে তারা আমাদের নিজেদেরই লোক। তারা সবাই ভারতীয়। তাই সব মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু আদিবাসীদের ওপর পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মহিলাদের রেপ করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে যাতে তারা নিজেদের জমি, জঙ্গল ছেড়ে চলে যায় এবং সেই জমি রাষ্ট্রের হাতে দিয়ে যায়। আদিবাসী মহিলাদের নকশাল হিসেবে সন্দেহ করে তাঁদের স্তন এমন ভাবে মোচড়ানো হয় যাতে দেখা হয় তাতে দুধ আসছে কিনা। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য তাদের নিজেদের জমি থেকে বিতাড়িত করে জোর করে জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এটা কি শুধুমাত্র নকশাল শেষ করার জন্য করা হচ্ছে! আমার তো মনে হয় না। আসল কথা হল, এখানকার জঙ্গলগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, এবং সেগুলি পুঁজিবাদীদের বিক্রি করার জন্য জঙ্গল ফাঁকা করতেই হবে।”
জেল আধিকারিক আরও লিখেছেন, “কিন্তু আদিবাসীরা সেই জমি ছাড়বে না, কেনই বা ছাড়বে! তারা চায় নকশালবাদ শেষ হোক, কিন্তু রাষ্ট্রের রক্ষক যদি তাদের মেয়েদের রেপ করে, গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং মিথ্যে মামলায় জেলে পুরে দেয়, তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কার কাছে যাবে? যদি কোনো মানবাধিকার কর্মী বা সাংবাদিক সত্য যাচাই করতে আসেন, তা হলে তাদেরও মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এটাই বাস্তব। আমি নিজে দেখেছি কী ভাবে একজন ১৪ বছর বয়সি এবং একজন ১৬ বছর বয়সি কিশোরীকে থানায় এনে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের গায়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে। আমি ওদের গায়ে সেই অত্যাচারের দাগ দেখেছি । নাবালিকাদের ওপর এ রকম অত্যাচারের কারণ কী! আমি ওদের শুশ্রূষার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম।”
“আমাদের সংবিধান কাউকে কারও ওপর অত্যাচারের কোনো অধিকার দেয়নি। আমাদের জাগার সময় হয়েছে। আদিবাসীদের ওপর কোনো বিশেষ ধরনের উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আদিবাসীরা প্রকৃতির রক্ষক। আমাদেরও রক্ষক হওয়া উচিত, ভক্ষক নয়। চাষি এবং জওয়ান একে অপরের ভাই। একে অপরকে মারলে শান্তিও স্থাপন হবে না এবং তা উন্নয়নও নিয়ে আসবে না। সংবিধান সবার এবং সবাইকে ন্যায় পেতে হবে।”
শেষ করার আগে তিনি লেখেন, “আমাদের হাতে এখনও সময় আছে। আমরা যদি এখনও রুখে না দাঁড়াই তা হলে পুঁজিবাদীরা আমাদের দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করে মানবতাকেই এই দেশ থেকে মুছে দিতে চাইবে। অন্যায় যেমন করব না, তেমন অন্যায় সহ্যও করব না, এই পণ আমরা করি। সংবিধান দীর্ঘজীবী হোক, ভারত দীর্ঘজীবী হোক।”
পোস্টটির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনালের কেকে গুপ্তা অবশ্য পুরো দোষটাই চাপিয়ে দেন বর্ষাদেবীর ওপরে। তিনি বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি যে নকশাল সমস্যার ব্যাপারে আপত্তিকর কিছু মন্তব্য নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ওই ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট। প্রাথমিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে একটা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ষাদেবী নিজে এই মন্তব্য করেছেন, না কি কোনো চাপে পড়ে করেছেন, সব খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এর আগেও সরব হয়েছিলেন বর্ষা। ২০০৩-এ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৬-তে ছত্তীসগঢ় আদালতে একটি মামলা করেছিলেন তিনি। সেই মামলায় জেতার পর তাঁকে ডেপুটি জেল সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাঁর পোস্টটির ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “পোস্টের ব্যাপারে আমি এখন কিছুই বলব না। উপযুক্ত জায়গায় আমি যা বলার বলব।”
http://khaboronline.com/news/national/adivasi-women-are-stripped-naked-and-tortured-says-deputy-jail-supperintendent-of-raipur-in-her-fb-post/
No comments:
Post a Comment