নয়াদিল্লি : গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে ’ পিটিয়ে হত্যা, গোরুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য চেন দিয়ে বেঁধে মারধর করা, রাজস্থানের এক খামার মালিককে গণপ্রহারের তাণ্ডবের মধ্যেই এ বার হত্যার উদ্দেশ্যে পশুবাজারে গোরু -মোষ, এমনকী উট কেনাবেচা বন্ধ করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ বৃহস্পতিবার একটি গেজেট বিজ্ঞন্তিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, চাষাবাদ বাদে অন্য কোনও কাজের জন্য গোরু-মোষ-বলদ-বাছুর-উট বাজার থেকে কেনাবেচা যাবে না৷ পশুগুলিকে যে চাষের উদ্দেশ্যেই কেনা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে মুচলেকা দিতে হবে৷ কিন্তু পাঁঠা, ছাগল বিক্রি নিয়ে এই নিয়মে কিছু লেখা নেই৷ উত্তর -পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র৷ গোটা দেশে তিন মাসের মধ্যে এটিকে কার্যকর করে ফেলতে হবে৷
গবাদি পশু ও তার মাংস, চামড়া ইত্যাদি সম্পর্কিত ব্যবসার কাঁচামালের ৯০ ভাগই আসে পশুবাজার থেকে৷ আর সেই বাজারে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা চলে৷ স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের এই নতুন ফরমান সেই বাজারকে কার্যত পঙ্গু করে দেবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা৷ গোমাংসেও যথেষ্ট টান পড়বে৷ যদিও এ সব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী হর্ষবর্ধন৷ তাঁর কথায়, ‘যা করা হয়েছে সবই পশুদের প্রতি হিংসা বন্ধে৷ তাই আলাদা কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই৷’ মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রবিন্দু গোরু৷ কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও সিকিম বাদে দেশের সব রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ৷ উত্তরপ্রদেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ হলেও মোষের মাংস রন্তানির অন্যতম বড় বাজার ওই রাজ্যে৷ মোষের মাংস রন্তানিতে ভারত অন্যতম বড় দেশ৷ ২০১৫ -১৬ অর্থবর্ষে ৪০০ কোটি ডলার মূল্যের মাংস বিক্রি হয়৷ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চামড়ার বাজারও৷ ওই অর্থবর্ষে ভারত থেকে ৫৯২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রন্তানি করা হয়৷ আশঙ্কা প্রকাশ করে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ফেসবুকে লেখেন, ‘যখন একের পর এক মানুষকে মারা হচ্ছে, তখন গোহত্যা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে৷’ সর্বভারতীয় মাংস রন্তানি সংগঠনের অধিকর্তা এস এন সব্বরওয়ালও বলেন, ‘আমরা শক্ড৷ হাতে গোনা কয়েকটা কসাইখানা গোপালকদের থেকে পশু পায়৷’ কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, ‘গোহত্যা নিষেধ করার তীব্র নিন্দা করছি৷ স্বাধীনতা ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে৷’ গোরু নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের আবহে এই নিয়ম মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ‘প্রক্সি ওয়ার’ বলে মনে করছেন বহু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক৷ তা ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিষয়টি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত৷ তা হলে কেন্দ্র এমন একটি নিয়ম কী ভাবে চালু করে, সে প্রশ্ন উঠছে৷ দেশ জুড়ে গো -হত্যা বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টও জানিয়েছিল, রাজ্য -আইন সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে নাক গলানো হবে না৷ কেরালার কৃষিমন্ত্রী ভি এস সুনীল কুমার বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে আইনি পরামর্শ নেব৷’ গবাদি পশু হত্যায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ১৯৬০ -এর ‘প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট’ মেনে৷ এই আইনের ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার এ সংক্রান্ত নিয়ম জারি করতে পারে৷ ওই আইনে রেগুলেশন অফ লাইভস্টক মার্কেটস-এ নতুন নিয়ম যোগ করেছে কেন্দ্র৷ তবে গবাদি ব্যবসা ও হত্যার উপরে বা লাইসেন্স থাকলে পশুপালনে সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে না৷ এ সব উপেক্ষা করেই কেন্দ্র যে নতুন নিয়ম আনতে চলেছে, সে ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল জানুয়ারিতে৷ গোহত্যা, গোমাংস ও গোমাংসজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রকের মতামত চেয়েছিল পরিবেশ মন্ত্রক৷ সদ্যপ্রয়াত কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী অনিল মাধব দাভেই নয়া নিয়ম অনুমোদন করেছিলেন৷ বাজারে বিকিকিনির জন্য আনা পশুগুলির পরিস্থিতি উন্নত করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই নিয়ম তৈরি হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর৷ নয়া নিয়মে পশুবাজারে কী ভাবে কেনাবেচা চলবে ? ব্যবসায়ীকে গোরু কিনে প্রথমেই তা বিক্রির পাঁচটি প্রমাণ তৈরি করতে হবে৷ প্রমাণগুলি দিতে হবে স্থানীয় রেভিনিউ অফিস, ক্রেতার জেলার স্থানীয় পশু চিকিত্সক, পশু বাজার কমিটি এবং ক্রেতাকে৷ ক্রেতা যে কৃষক ও কৃষিকাজের উদ্দেশ্যেই তিনি গবাদি পশু কিনছেন, তার প্রমাণও খুঁটিয়ে দেখতে হবে পশু বাজারের দায়িত্বপ্রান্ত আধিকারিকদের৷ কোনও ধর্মীয় আচার উপলক্ষে পশু কেনা যাবে না৷ রাজ্যের সীমানার ২৫ কিলোমিটার ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৫০ কিমির মধ্যে পশু বাজার থাকতে পারবে না৷ বিনা অনুমতিতে এক রাজ্যের বাসিন্দা অন্য রাজ্য থেকে পশু কিনতেও পারবেন না৷
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32026&boxid=152158441
No comments:
Post a Comment