দরিদ্র এবং অনগ্রসর জেলা ও
সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা সম্প্রসারণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সাফল্য তুলে ধরছে
এ বারের মাধ্যমিকের ফলাফল৷ মেধা তালিকার প্রথম দশে ৬৮ জন পড়ুয়া রয়েছে৷ এটা যেমন
মেধাবীদের মধ্যে ফারাকটাকে ঘুচিয়ে দেওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনই মেধাতালিকার ৬৮ জনের
মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ পড়ুয়া সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়া৷ যা আগের
তুলনায় অনেক বেশি আশাব্যাঞ্জক বলেই মনে করছে শিক্ষামহল৷ তা ছাড়া পিছিয়ে পড়া জেলা
হিসেবে চিহ্নিত বাঁকুড়ার জয়জয়কার বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়ার মতো
জেলা পাশের হারে এগিয়ে থাকায় স্বস্তি তৈরি হয়েছে৷ শিক্ষার অধিকার আইন, মিড ডে মিল,
স্কলারশিপ, হস্টেল, বিনামূল্যে বই দেওয়া, কন্যাশ্রী, সাইকেল বিলির সাফল্যকে সূচিত
করছে বলেই শিক্ষাবিদদের একটা বড় অংশ মনে করছেন৷ এবার মেধাতালিকাতে থাকা ৫ জন
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত৷ এমনকি বাঁকুড়া জিলা স্কুলের মোজাম্মেল হকের মতো মেধাবী
পড়ুয়ার দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে৷ তা ছাড়ও অন্তত ১৪ জন পড়ুয়া অনগ্রসর
শ্রেণিভুক্ত৷ স্বাভাবিক ভাবেই এত জন পড়ুয়ার এক সঙ্গে আলোকবৃত্তে উঠে আসা নিয়ে
সরকারি মহলেও খুশির আবহাওয়া৷ এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘোর বিরোধীরাও এ
সাফল্যকে উপেক্ষা করতে চাইছেন না৷ যেমন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে ’র কথায়,
‘পশ্চিমবঙ্গে ভালো পরিবর্তন হয়েছে৷ বামপন্থীদের সময় থেকেই অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া
সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে অনেক রকম নীতি ও প্রকল্প হাতে নেওয়া
হয়েছিল৷ বর্তমান সরকারেরও নানা প্রকল্প তাদের আলোকবৃত্তে তুলে আনার ক্ষেত্রে
সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে৷’ দলিত বিষয়ক সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর বক্তব্য,
‘অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে৷ মানুষ শিক্ষিত ও সচেতন
হলে এই অগ্রগতি হবেই৷’ মুসলিমদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সমাজ কর্মী সাবির আহমেদ মনে
করেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও উদার দৃষ্টিভঙ্গিই এই সাফল্যের
নেপথ্যে কাজ করেছে৷
কৃতীদের পরিবারেও এ নিয়ে
প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, শিক্ষা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হওয়ার
কারণেই কোনও রকম বিভেদ কাজ করেনি৷ আবার অনেকের মতামত, সামাজিক-রাজনৈতিক সুরক্ষা
আসাতে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক সামর্থও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ফলে বহুদিনের যৌথ
প্রচেষ্টার ফল পাওয়া গেল৷ যেমন মোজাম্মেলের বাবা অব্দুল মামুদ একজন মাদ্রাসা
শিক্ষক৷ ছেলের এই ফল নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘আমার তিন মেয়েও উচ্চশিক্ষিত৷ এ বার
ছেলের পালা৷ যেহেতু আমাদের পরিবারটাই শিক্ষিত তাই আমরা প্রথম থেকেই চেয়েছি ওঁরা
শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক৷ পাশাপাশি আর্থিক সামর্থটাও অনেকটা উপকার করেছে৷’ তবে
শিক্ষাব্রতী হওয়ার কারণে পড়ুয়াদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মাকেও যে নানা ধরনের
কটাক্ষ উপহাসকে প্রতিনিয়ত জয় করতে হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ যেমন অষ্টম
স্থানাধিকারী হাওড়ার মহম্মদ সায়ন সফিকের বাবা শেখ মহম্মদ সফিকের বক্তব্য, ‘যে
মানুষগুলো এতদিন কটাক্ষ করেছে৷ ছেলেকে এত পড়াচ্ছি বলে হাসিঠাট্টা করেছে, তারাই
আজকে ছেলের সঙ্গে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে মিষ্টি খাচ্ছে দেখে ভালো লাগল৷’
বাঁকুড়ার অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত ছাত্রী সঙ্গীতা মণ্ডল নবম হয়েছে৷ সঙ্গীতার মা মীরা
মণ্ডলের বক্তব্য, ‘এটা জীবনের প্রথম ধাপ৷ সবেতেই লড়াই থাকবে৷ সামাজিক লড়াইগুলো
বুঝে নিতে আমি আর ওর বাবা তো আছিই৷ মেয়ে কেবল পড়াশোনা করে আগে একজন ভালো মানুষ হোক
সেটাই চাইব৷’
এই সময়
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32062&boxid=153339904
No comments:
Post a Comment