দেশের জনজাতি ও আদিবাসী
গোষ্ঠীদের উন্নয়নে মানচিত্রকে হাতিয়ার করতে চায় ভারত সরকার৷ ইতিমধ্যেই ওই বিশেষ
মানচিত্র তৈরি করা শুরু করেছে কলকাতার ন্যাশনাল অ্যাটলাস ও থিম্যাটিক ম্যাপিং
অর্গানাইজেশন৷ মানচিত্রে চোখ বোলালেই জানা যাবে কোন জায়গায় কত সংখ্যায় নির্দিষ্ট
কোন জনজাতি রয়েছে৷ জানা যাবে বিভিন্ন আদিবাসী ও জনজাতিদের ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যের
হাল৷ যাতে জনজাতিদের কল্যাণে কোনও পরিকল্পনা করার আগে সমস্ত তথ্যই হাতের নাগালে
পাওয়া যায়৷ বৃহস্পতিবার কলকাতায় এ কথা জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী
হর্ষবর্ধন৷ সল্টলেকে ন্যাশনাল অ্যাটলাস ও থিম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশনের নতুন
ভবন উদ্বোধনের পর তিনি বলেন,
‘স্বাধীনতার
পর এই প্রথম এমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল৷ এই মানচিত্র জানজাতিদের বাঁচাতে ও সুরক্ষিত
জীবন দিতে সাহায্য করবে৷ থাকবে এই মুহূর্তে বর্তমান সমস্ত জনজাতির খুঁটিনাটি তথ্য৷’ কেন্দ্রের এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু
করেছে৷ একাংশের আশঙ্কা, মানচিত্র প্রকাশ হলে আরও
বিপদের মুখে পড়বে বিলুপ্তপ্রায় জনজাতি৷ ব্যবসায়ী ও চোরাশিকারিদের হাতে প্রাণ
হারাতে পারে ওই বিপন্ন সমস্ত জনজাতি গোষ্ঠীর লোকজন৷ কারণ, ইতিমধ্যেই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে জারোয়াদের
সঙ্গে পর্যটকদের মেলামেশা ফল খারাপ হয়েছে৷ যদিও, এই
বিশেষ মানচিত্র তৈরির উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন শহরের একাধিক বিশেষজ্ঞ৷ ভারতে কত
জনজাতি ও আদিবাসী রয়েছে ? জনসংখ্যা কত ওই
জনগোষ্ঠীগুলোর ? কোন রাজ্যের কোন প্রান্তে
জনগোষ্ঠীর বসবাস ? এত দিন এর জন্য নির্ভর
করতে হত এক দশকেরও বেশি পুরোনো মানববিজ্ঞান বিভাগের কিছু বইয়ের উপর৷ তবে, সেই অভাব ঘোচাতে কাজে নেমেছে কেন্দ্রীয়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক৷ সূত্রের খবর, ২০১৬
সালে এই বিশেষ মানচিত্র তৈরি প্রস্তাব দেন সল্টলেকের ন্যাশনাল অ্যাটলাস ও
থিম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশনের মৌসুমি রায়চৌধুরী৷ হর্ষ বর্ধন বলেন, ‘এই মানচিত্র সমস্ত প্রশাসক ও সরকারের কাজে
লাগবে৷ বিপন্ন জনজাতিদের কতটা উন্নতি হল বা কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে, তা নির্ণয় করতে সুবিধে হবে৷’ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মৌসুমি রায়চৌধুরী
জানান, ‘এই মানচিত্রে সব তথ্য
দেওয়া হবে৷ কোন কোন অঞ্চলে কোন কোন বিশেষ জনজাতি থাকে, তাদের সংস্কৃতি, কাজকর্ম, স্বাস্থ্য, ভাষা, ধর্ম
সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করা হবে৷ মানচিত্রে তা উল্লেখও করা হবে৷’ তিনি বলেন, মানচিত্রে
জনজাতিদের উপর হওয়া আক্রমণ ও হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত থাকবে৷ তাঁর ব্যাখ্যা, এ নিয়ে অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটির অফ
ইন্ডিয়ার বই থাকলেও, তা ২০০২ সালের সংস্করণ৷
সেখানে জনজাতিদের নিয়ে তৈরি মানচিত্রে থাকবে সমস্ত টাটকা এবং আপডেটেড তথ্য৷ এদিকে
এই প্রকল্পকে শহরের গবেষকদের অনেকে স্বাগত জানালেও, একাংশের
মতে এই মানচিত্র ওই বিপন্ন জনজাতি ও আদিবাসীদের আরও বিপদে ফেলবে৷ কারণ, সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে ওই গোষ্ঠীদের৷
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্র বিশেষজ্ঞ সুনন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আদিম জনজাতি নিয়ে তেমন কোনও মানচিত্র নেই৷ বই
রয়েছে৷ তবে, এই মানচিত্র সাধারণ
মানুষের হাতে পড়লে কিছু বিপন্ন জনজাতির ভবিষ্যতে বিপদের একটা আশঙ্কা রয়েছে৷
মানচিত্রের প্রয়াস করলে ওদের ঠিকানা ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়৷’
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=31522&boxid=154113652
No comments:
Post a Comment