নয়াদিল্লি ২৭ মে, ২০১৭
শাসক শিবিরের তিন বছরের বর্ষপূর্তি
উদ্যাপনে অনেকটাই জল ঢেলে দিয়েছে সহরানপুরের দলিত বিক্ষোভ। সরকারের এই জন্মদিনের আবহে
গোষ্ঠী সংঘর্ষে দীর্ণ সহারনপুরে গিয়ে বিজেপির ‘দলিত’ অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন কংগ্রেস
নেতা রাহুল গাঁধী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে খুঁচিয়ে তুললেন দলিত ছাত্র
রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার প্রসঙ্গ। গুজরাত বা হরিয়ানায় দলিতদের উপর স্বঘোষিত গোরক্ষকদের
হামলা নিয়ে আজ সরাসরি মুখ না খুললেও, দলিতরা যে মোদী শাসনে ধারাবাহিক ভাবে অত্যাচারের
শিকার হচ্ছেন এই অভিযোগে সরব হন রাহুল। লক্ষ্য একটাই, দলিতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে
মোদী সরকারকে ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে যাওয়া।
গোষ্ঠী সংঘর্ষের আঁতুড়ঘর সহারনপুরের
শাব্বিরপুর গ্রামে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি অখিলেশ যাদবকে। তিনিও যে পাবেন না তা বিলক্ষণ
জানতেন রাহুলও। তবুও আজ হরিয়ানার পথ ধরে সহারনপুর প্রবেশের চেষ্টা করে ঠাকুর-দলিতদের
মধ্যে চলা সংঘর্ষকে জাতীয় রাজনীতিতে ফের উস্কে দিয়েছেন রাহুল। বিজেপি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশ
সরকারের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা যতই রাহুলকে ‘ট্র্যাজেডি টুরিস্ট’ বলে কটাক্ষ করুক
না কেন, যোগী প্রশাসন যে সংঘর্ষ থামাতে কার্যত ব্যর্থ তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে কেন্দ্রের
কাছেও।
এই আবহে আজ হরিয়ানার রাস্তা
ধরে সহারনপুর পৌঁছানোর চেষ্টা করেন রাহুল। সঙ্গে ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি অজাদ
ও রাজ বব্বর। কিন্তু সহারনপুর পৌঁছানোর আগেই তাঁদের আটকে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কেন
তাঁদের যেতে দেওয়া হবে না এই নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে
পড়েন কংগ্রেস নেতারা। পরে রাহুল টুইট করে জানান, ‘‘প্রশাসন আমায় আটকানোর চেষ্টা করলে
আমি পায়ে হেঁটে সহারনপুরের শাহজাহাপুরে পৌঁছে পীড়িত পরিবারের সঙ্গে কথা বলি।’’ রাহুলকে
বাদল নামে এক দলিত বালকের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায়। এরপর পুলিশের আপত্তিতে সেখান থেকে
ফিরে আসেন তিনি। রাহুল বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কারণে আমি এখন ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতি
একটু স্বাভাবিক হলেই আমি এখানে আসতে পারব বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশকর্তারা।।’’
রাহুলের কথা থেকেই স্পষ্ট দলিত
প্রশ্নে সরকারকে ঘেরার কোনও সুযোগ ছাড়তে নারাজ তিনি। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, গত
তিন বছরে দেশের নানা প্রান্তে ধারাবাহিক ভাবে দলিত অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। সহারনপুর
কোনও ব্যতিক্রম নয়। এই অত্যাচার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েই দলিত, আদিবাসীদের মতো
চিরাচরিত দলীয় ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পেতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। আগামী দিনে এ নিয়ে দেশ জুড়ে
আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি ইউপিএ সরকার দলিতদের স্বার্থরক্ষায় যে পদক্ষেপগুলি করেছে
সেগুলিও নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল।
উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার ক্ষমতায়
আসার পর থেকেই রাজপুত ও দলিতদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। দলিতদের অভিযোগ, মহারাণা
প্রতাপের জন্মদিবস অনুষ্ঠানের দিন থেকেই পরিকল্পিত ভাবে দলিতদের উপর হামলা চালাতে শুরু
করে ঠাকুর সম্প্রদায়। ইতিমধ্যে ঠাকুর বাহিনীর হাতে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন দলিত। বেসরকারি
মতে সংখ্যাটি আরও বেশি। চরম অস্বস্তিতে পড়া আদিত্যনাথের সরকার দু’দিন আগেই পরিস্থিতি
সামলাতে না পারার অভিযোগে সরিয়ে দেয় জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ দুই আমলাকে। কিন্তু
তাতেও পরিস্থিতি বিশেষ উন্নতি হয়নি।
http://www.anandabazar.com/national/rahul-gandhi-meets-riot-hit-people-at-saharanpur-and-blames-bjp-dgtl-1.619320?ref=hm-new-stry
No comments:
Post a Comment