বীরভূম জেলায় পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান পদে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম
পছন্দের তালিকায় ‘আদিবাসী’ জনপ্রতিনিধিরা।
বীরভূম জেলায় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের সামনের সারিতে আনছে
তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর,
প্রধান ও উপপ্রধান পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন আদিবাসী
প্রার্থীরাই। কোনও ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রধানদের পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য
হিসেবেই রাখা হচ্ছে। প্রধান বা উপপ্রধান পদে নির্বাচিত করা হচ্ছে আদিবাসী
জনপ্রতিনিধিদের। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, আদিবাসী
ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়েই এমন পদক্ষেপ করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহম্মদবাজার ব্লকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বিজেপির মিছিলে
বেশির ভাগ ছিলেন আদিবাসী পুরুষ, মহিলা। তাঁদের হাতে থাকা
তির, ধনুকের ‘মোকাবিলা’
করতে বেগ পেতে হয় শাসক দলকেও। ভোটের ফলাফলে রাজ্যের আদিবাসী
জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও।
ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই তা-ই আদিবাসীদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে তৎপর হয়েছে
তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় সূত্রে খবর, সেই কারণেই মহম্মদবাজারে আদিবাসী সম্মেলন করা হয়েছে। সাঁইথিয়া, বোলপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
শুক্রবার ১৪ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ রামপুরহাট ১ ব্লকের ৯টি অঞ্চলে প্রধান ও
উপপ্রধান নির্বাচিত করা হবে। গত বৃহস্পতিবার ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকালে রামপুরহাট
১ ব্লক নেতৃত্ব ৯টি অঞ্চলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক
তথা রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে রামপুরহাট ১ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কারা প্রধান ও উপপ্রধান হবেন, সেই তালিকা নির্বাচিত সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় প্রধান ও
উপপ্রধানদের নামের প্রস্তাবক, সমর্থনকারীদের নামও।
তালিকা অনুযায়ী রামপুরহাট ১ ব্লকের মাসড়া পঞ্চায়েতে প্রধান এবং উপপ্রধান পদে
বসতে চলেছেন আদিবাসী জনজাতির প্রতিনিধিই। মাসড়া পঞ্চায়েতে ৩৬টি গ্রামের মধ্যে ৩৩টি
আদিবাসী অধ্যুষিত। সেখানে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত ১০ সদস্যর মধ্যে ৭ জন আদিবাসী, ২ জন তফসিলি এবং এক জন সাধারণ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েতে প্রধান হওয়ার কথা ছিল প্রাক্তন প্রধান রেজাউল করিমের। উপপ্রধান
পদে নাম এসেছিল আদিবাসী এক পঞ্চায়েত সদস্যের। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে
মাসড়া অঞ্চলে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে দিলীপ কিস্কুকে। উপপ্রধান হবেন
পার্বতী হেমব্রম। নারায়ণপুর, কুশুম্বা পঞ্চায়েতে
উপপ্রধান হতে চলেছেন আদিবাসী জনপ্রতিনিধিই। বুধবার নলহাটি ১ ব্লকে ৯টি গ্রাম
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করা হয়। বানিওড় ও হরিদাসপুরে উপপ্রধান হয়েছেন আদিবাসী
প্রতিনিধিই।
এ নিয়ে বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, আদিবাসী মানুষ
এখন তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁদের ফের নিজেদের দিকে টানতেই এমন পদক্ষেপ
করছে তৃণমূল। জেলার আদিবাসী নেতা রবীন সরেন বলেন, ‘‘আদিবাসী প্রতিনিধিদের প্রধান, উপপ্রধান করা হচ্ছে। এটা
ভালো দিক। আদিবাসী জনজাতির উন্নয়নের দিকে সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা
রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য এ নিয়ে বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান পদ সংরক্ষিত। সংরক্ষণ নীতি মেনেই
কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান এবং উপপ্রধান করা হয়েছে আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের। যেখানে
সবাই তৃণমূলের সেখানে মন পাওয়া বা না পাওয়ার কী রয়েছে?’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। ছবি – প্রতীকী (সংগৃহীত)
No comments:
Post a Comment