তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of
Attrocity Act, 1989) সংশোধন করে কঠোর করায় মধ্যপ্রদেশে উচ্চবর্ণদের বিক্ষোভ।
দলিত-আদিবাসীদের খুশি করতে গিয়ে মধ্যপ্রদেশে উচ্চবর্ণকে ব্যাপক চটিয়ে দিয়েছে বিজেপি৷
সুপ্রিম কোর্ট যে আইনকে লঘু করে দিয়েছিল, সেই এসসি-এসটি আইন তথা তফসিলি জাতি ও তফসিলি
উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of Attrocity Act, 1989)-কে আবার
আগের মতো কঠোর করে সংসদে পাশ করিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ আর তারপরেই উচ্চবর্ণের তরুণরা
মধ্যপ্রদেশে রাস্তায় নেমেছেন৷ তাঁরা নিয়মিত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ ইতিমধ্যেই তাঁদের কালো
পতাকা বা বিক্ষোভের শিকার হয়েছেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা৷ এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে
মন্ত্রী যশোধরারাজে, নারায়ণ সিং, ললিতা যাদব তাঁদের সব কর্মসূচি বাতিল করেছেন৷
এই আন্দোলন সবথেকে তীব্র হয়েছে গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকায়৷ বাকি জায়গাতেও কম বেশি শুরু
হয়েছে৷ এই বিক্ষোভের তীব্রতা দেখে শিবপুরীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ গোয়ালিয়রে নেতাদের
বাড়িতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ উচ্চবর্ণের বিক্ষোভকারীদের দাবি, সুপ্রিম
কোর্টের রায়ের পর যে অবস্থা ছিল তা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে৷
এই যে আন্দোলন হচ্ছে তার সে রকম ভাবে কোনও নেতা নেই৷ মূলত সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার
করে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হচ্ছে৷ উচ্চবর্ণের কিছু সংগঠন এই ডাক দিচ্ছে৷ তারপর পাঁচ থেকে
সাত হাজারের মতো তরুণ জড়ো হয়ে যাচ্ছে৷ বিক্ষোভ শুরু হচ্ছে৷ মন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতাদের
কোনও অনুষ্ঠান থাকলেই সেখানে কালো পতাকা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ সবথেকে
বড় বিক্ষোভ হয়েছে গোয়ালিয়রে৷
মধ্যপ্রদেশে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি ও কংগ্রেস এ ব্যাপারে একেবারে চুপ৷ আর
কয়েক মাস পরে যেখানে বিধানসভা ভোট, সেখানে কোনও দলই ঝুঁকি নিতে পারছে না৷ বিক্ষোভকারী
উচ্চবর্ণ সংগঠনের মনোভাব হল, বিজেপি ও কংগ্রেস দুই দলই এসসি-এসটি আইন তথা তফসিলি জাতি
ও তফসিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of Attrocity Act,
1989)-কে কড়া করতে চেয়েছে৷ প্রায় ৩০ শতাংশ উচ্চবর্ণের কথা তাঁরা ভাবেনি৷ ফলে দুই দলের
ওপরেই খাপ্পা উচ্চবর্ণের যুবকরা৷ সে জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তোমর থেকে শুরু করে জ্যোতিরাদিত
সিন্ধিয়াও বিক্ষোভের শিকার হয়েছেন৷ গোয়ালিয়ারে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মানে কম
কথা নয়৷ রাজত্ব না থাকলে কী হবে, এখনও গোয়ালিয়র, গুণা, শিবপুরীতে প্রায় রাজার মর্যাদা
পান জ্যোতিরাদিত্য৷
ঘটনা হল, এই গোয়ালিয়র-চম্বলে অতীতেও এই ধরনের চরম জাতি বিক্ষোভ হয়েছে৷ উচ্চবর্ণ
ও দলিত দু’পক্ষই এখানে সমান শক্তিশালী৷ কিন্তু তার
থেকেও বড় কথা হল, যতই জাতির ভিত্তিতে বাটোয়ারা হবে, ততই অশান্তি বাড়বে৷ ফলে মধ্যপ্রদেশের
একটা বড় অংশে সাবর্ণদের বিক্ষোভের ফলে অশান্তি বাড়ছে৷ সুপ্রিম কোর্ট এসসি-এসটি আইন
তথা তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of
Attrocity Act, 1989)-কে লঘু করে দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে দু’টি বিকল্প ছিল৷ হয় সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নেওয়া অথবা আগের
কড়া আইন বলবৎ করা৷ প্রথম বিকল্প নিলে দলিত-আদিবাসী ভোট হারাতে হত বিজেপিকে৷ দ্বিতীয়
বিকল্প নেওয়ায় বিজেপি-র চিরাচরিত উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কে আঘাত লেগেছে৷ বিজেপি নেতারা
অবশ্য বলছেন, এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ একবার বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পর অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে
যাবে৷ আর যেহেতু উচ্চবর্ণের ভোটদাতারা বরাবর বিজেপিকেই ভোট দেন, তাই ক্ষোভ-বিক্ষোভ
সত্ত্বেও তাঁরা এ বারও সেটাই করবেন৷ কিন্তু যেভাবে বিক্ষোভ বাড়ছে, তাতে বিজেপি নেতাদের
চিন্তাও গভীর হচ্ছে৷
সৌজন্য – এই সময়, ০৫/০৯/২০১৮।
No comments:
Post a Comment