মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফের জনক
পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশের উদ্যোগ পশ্চিমবাংলা সরকার ও পশ্চিমবাংলা
সাঁওতালি একাডেমীর।
সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফের জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশ করার উদ্যোগ
নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আদিবাসী দপ্তরের
অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমি এই কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ
সাঁওতালি আকাদেমিতে এবিষয়ে একটি বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর বইগুলি নতুন করে অলচিকি হরফে ছাপিয়ে প্রকাশ করা হবে।
১৯০৫ সালের ৫ মে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন
সাঁওতালি সাহিত্যিক ও দার্শনিক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। সাঁওতাল সমাজে তিনি ‘গুরু গমকে’
নামে পরিচিত। পেশায় শিক্ষক রঘুনাথবাবু মাত্র কুড়ি বছর বয়সে
অলচিকি লিপির সৃষ্টি করেন। অলচিকি লিপির প্রচারে তিনি ১৯৬০ সালে ‘আদিবাসী সোসিও এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ (অ্যাসেকা) বা আদিবাসী সমাজ শিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরি করেন। ওড়িশা, বিহার,
পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে এই সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কেবলমাত্র ‘অলচিকি’
হরফের স্রষ্টা ছিলেন না। কবি, ঔপন্যাসিক,
নাট্যকার, যাত্রাপালা রচয়িতা ও
বিদগ্ধ দার্শনিক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সাঁওতালি ভাষায় অলচিকিতে কবিতা, নাটক,
উপন্যাস প্রভৃতি মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি গ্রন্থ তিনি রচনা
করেছিলেন। তাঁর লেখা উল্লেখ্যযোগ্য কাব্যগুলি হল- ‘হড় সেরেঞ্জ’,
‘হিতল’, ‘বাহা সেরেঞ্জ’। নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম ‘বিন্দু চাদান’, ‘দাড়েগে ধন’,
‘খেরওয়াল বির’। ১৯৮২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি
তিনি মারা যান।
গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়ের উদ্যোগে সাঁওতালি ভাষা থেকে বাংলা ও
ইংরেজিতে অভিধান বের করেছে রাজ্য সরকার। গত আগস্ট মাসে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঝাড়গ্রামে, বাঁকুড়ার খাতড়ায় এবং পুরুলিয়ায় দু’টি করে সাঁওতালি মিডিয়াম
স্কুল করা হবে। তিনি ২০০ জন সাঁওতালি শিক্ষক নিয়োগ করার কথা বলেন। যাতে অলচিকি
হরফে স্কুলগুলিতে আরও ভালো পঠনপাঠন হয়। তিনি বলেন, আদিবাসীদের জন্য এর আগে কেউ কিছু করেনি। আমরাই স্কুল তৈরি করেছি। এখন নবম-দশম
শ্রেণী পর্যন্ত হয়েছে। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় হবে। অনুষ্ঠানে সাঁওতালি
সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেনকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই অলচিকি হরফের
জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশ করার উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ট্রাস্টকে চিঠি দিয়ে
তাঁর রচনাবলী বের করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। তারপরই পশ্চিমবঙ্গ
সাঁওতালি আকাদেমির চেয়ারম্যান তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু সহ সংস্থার
সদস্যরা গত ৮ সেপ্টেম্বর ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে যান। সেখানে
রঘুনাথবাবুর নাতি চুনিয়ন রঘু মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁর
নাতিকে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর লেখা বিভিন্ন রচনা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন
তাঁরা। আকাদেমির চেয়ারম্যান দুলাল মুর্মু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত রচনা রাজ্য সরকার
প্রকাশ করবে। তাঁর রচনাবলী অলচিকি হরফে ছাপানো হবে। এতে আদিবাসী মানুষজন ও পড়ুয়ারা
পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর বিভিন্ন নাটক, উপন্যাস, কবিতা পড়তে পারবেন।
সৌজন্য – বর্তমান, ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment