তেলেঙ্গানা রাজ্যের নালগোন্ডা জেলার অনার কিলিংয়ে সুপারি দেওয়া হয়েছিল এক কোটি
টাকা! আগাম দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ। ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের জামাইকে হত্যার ছক কষেছিল
অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা টি মারুথি রাও। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ভাড়াটে খুনি সুভাষ
শর্মাকে বিহার থেকে গ্রেফতারের পর এই বিস্ফোরক দাবি করেছে তেলঙ্গানা পুলিশ। সুপারি
দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ আবদুল বারির মাধ্যমে। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এই খুনে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ করিমও পুলিশের জালে। পুলিশের দাবি,
গোটা বিষয়টিতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন এই কংগ্রেস নেতা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তেলঙ্গানার মিরিয়ালগুড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অম্রুতাবর্ষিণীর
রুটিন চেক আপ সেরে ফিরছিলেন প্রণয় পেরুমাল্লা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা-ও। হাসপাতাল থেকে
বেরোতেই পিছন থেকে একটি মুগুর জাতীয় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে এক দুষ্কৃতী। পড়ে যাওয়ার
পর ফের আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রণয়। গোটা ঘটনা ধরা
পড়ে হাসপাতালের বাইরে লাগানো সিসিটিভিতে।
ঘটনার পরই অম্রুতাবর্ষিণী অভিযোগ করেন, নিচু জাতের ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে মেনে নিতে
পারেনি তাঁর পরিবার। পাশাপাশি তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিল। তাঁর বাবা
এবং কাকা মিলেই তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। এই অভিযোগের পরই অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা এবং
কাকাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং দুই ধৃতের বয়ান
শুনে সোমবারই বিহার থেকে ওই ভাড়াটে খুনি শর্মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, এই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতারের পরই উঠে আসে চক্রান্তের
ব্লু-প্রিন্ট। তেলেঙ্গানা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের মেয়ে অম্রুতাবর্ষিণী
নিচু জাতে বিয়ে করায় জামাই প্রণয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি
রাও। তাঁরই বন্ধু কংগ্রেস নেতা করিমের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আব্দুল বারির সঙ্গে। এই
বারি সন্দেহভাজন আইএসআই জঙ্গি আজগর আলির ঘনিষ্ঠ। দু’জনই গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী
হরেন পাণ্ড্য খুনে অভিযুক্ত ছিল। যদিও তথ্য প্রমাণের অভাবে সেই মামলায় বেকসুর খালাস
হয়ে যায় দু’জন।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, আবদুল বারি এবং শর্মাকে জেরায় জানা গিয়েছে, প্রণয়কে পৃথিবী
থেকে সরিয়ে দিতে রফা হয় এক কোটি টাকায়। অগ্রিম হিসাবে ৫০ লক্ষ টাকাও দিয়ে দেন অম্রুতাবর্ষিণীর
বাবা মারুথি রাও। বারির নির্দেশে সমস্তিপুরের একটি গ্যাং অপারেশন চালায়। হাসপাতালের
বাইরেই নৃশংস ভাবে খুন করে প্রণয়কে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, খুনের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই
ছিল বারি। বারি-ই বাইকে করে শর্মাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। খুনের পর ওই বাইকেই পলিয়ে
যায় দু’জন।
মারিয়ালগুড়ির ধনীতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও।
জমি-বাড়ি কেনা-বেচার কারবার। কিন্তু গ্রেফতারির পরই এই মারুথি রাওয়ের নানা কুকীর্তি
সামনে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জমি-বাড়ির কারবারে দুষ্কৃতীদের সাহায্য
নিতেন মারুথি। কেউ জমি দিতে রাজি না হলে ভয় দেখানো, মারধর করে রাজি করাতেন তিনি। এমনকি,
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জমি নিজের নামে লিখে নিতে ভুয়ো দলিল তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ
রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেসবের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে নালগোন্ডা পুলিশ।
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment