এবার এই রাজ্য থেকে ৫ সেপ্টেম্বর
শিক্ষক দিবসে জাতীয় শিক্ষকের সম্মানের জন্য নির্বাচিত হলেন পুরুলিয়ার
আদিবাসী অধ্যুষিত মানবাজার এক নম্বর ব্লকের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক
অমিতাভ মিশ্র। এই রাজ্যে তিনিই একমাত্র শিক্ষক, যাকে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এই সম্মানের জন্য বেছে নিয়েছেন। গোটা দেশ
থেকে এবার এই সন্মান পাচ্ছেন ৪৫ জন শিক্ষক–শিক্ষিকা। সেই তালিকায়
পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার এই শিক্ষকের নাম নির্বাচিত হতেই খুশি জেলার শিক্ষক মহল
থেকে শিক্ষা অনুরাগীরা। মানবাজারের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুল গোটা দেশের কাছে
পরিচিত। স্কুলকে নির্মল বিদ্যালয়, শিশু মিত্র, যামিনী রায়,
রাজ্য সেরা বিদ্যালয় ও দেশের সেরা সম্মান স্বচ্ছ বিদ্যালয়ের
পুরস্কার এনে দেওয়া ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র এবার নিজে পাচ্ছেন
শিক্ষকতার সেরা সম্মান রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। গত রবিবার ০২/০৯/২০১৮ পুরস্কার নিতে
দিল্লি রওনা হয়েছিলেন তিনি। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘স্কুলের জন্য প্রায় সব পুরস্কার এনেছি। এবার নিজে শিক্ষকতার সেরা সন্মান নিতে
যাচ্ছি। খুব ভাল লাগছে। যে কোনও শিক্ষকের কাছে এই সম্মান জীবনের সেরা সম্মান।’ তিনি আরও বলেন,
‘রাজ্য থেকে আমি একা এই পুরস্কার পাচ্ছি। সত্যি ভাল লাগছে।
কারণ আমি না পেলে খুব খারাপ লাগত, কারণ রাজ্য থেকে আর কেউ
পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে নেই।’ দেশে এমন রাজ্য অনেক আছে, যে সব রাজ্য থেকে একজনও এবার এই পুরস্কার পাচ্ছেন না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক
অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেছেন,
‘এটা আমাদের কাছে আনন্দের বিষয়। রাজ্য থেকে একমাত্র
অমিতাভবাবুই এই সম্মান পাচ্ছেন। তাঁর এই কৃতিত্বে আমরা গর্বিত।’
অমিতাভবাবু পুরুলিয়ার গোবিন্দপুর স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ২০০৬ সালে। তখন
কয়েকজন পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল। আজ স্কুল দেখলে মনে হবে বিদেশের
কোনও অত্যাধুনিক একটি স্কুল। বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১৮ জন।
আদিবাসী অধ্যুসিত গ্রামে স্কুলের পড়ুয়াদের দেখলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন। স্কুলের
চেহারা বদলে দেওয়া শিক্ষককেই এবার দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকতার সেরা সম্মান। স্থানীয়
বাসিন্দা সমাজসেবী মনোজ মুখার্জি বলেন, ‘অমিতাভবাবুর জন্য
ওই এলাকায় শিক্ষায় একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে। তাঁর স্কুল দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হয়ে
যাবেন।’
গত বুধবার ০৫ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ জাতীয় শিক্ষক দিবসে নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে
উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। ছিলেন মানব
সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর প্রমুখ। এ দিন সম্মানিত হওয়া শিক্ষক
শিক্ষিকাদের হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা, রৌপ্য পদক ও
শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
আগের দিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার জাতীয় শিক্ষক হিসেবে
নির্বাচিত দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রী অমিতাভ
মিশ্রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে তোলা ছবি টুইট করেন। তিনি টুইটে লেখেন —‘‘বাসিন্দাদের উৎসাহীত করে তিনি স্কুলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছেন। তিনি
প্রান্তিক এলাকার পড়ুয়াদের ক্লাসের পরে, এমনকী ছুটির
দিনেও পড়ান শুনে খুশি হয়েছি।’’
বস্তুত,
মানবাজার ১ ব্লকের এই স্কুল ইতিপূর্বেই নির্মল বিদ্যালয়, যামিনী রায় পুরস্কার,
শিশুমিত্র পুরস্কার প্রভৃতি স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বার তাই
মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভবাবুকে জাতীয়
শিক্ষকের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা শোনার পর থেকেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে এলাকায়। এ দিন
সম্মানপ্রাপ্তির পরে নয়াদিল্লি থেকে তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমরা
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক চা চক্রে মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে অন্যান্য শিক্ষক
শিক্ষিকাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন।
আমাদের স্কুলে আদিবাসী পড়ুয়া কত জন, তাদের কী ভাবে
পাঠ দেওয়া হয়,
এই সব বিষয়ে জানতে চান তিনি। পরে পিছিয়ে থাকা জনজাতির
পড়ুয়াদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’’
মানবাজার শহর থেকে তিন কিমি দূরে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্কুলটি অবস্থিত।
পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৮। প্রধান শিক্ষক ও দুই শিক্ষিকা রয়েছেন স্কুলে। পড়ুয়াদের ৯৫
শতাংশ আদিবাসী। মন্দির ও আশ্রমের মিশেলে স্কুলটি গড়া হয়েছে। স্কুলে মহাকাশ
পর্যবেক্ষণের জন্যে দূরবীন থেকে সৌর শক্তির বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পরিশোধিত পানীয় জলের ব্যবস্থা থেকে পাখিরালয় পর্যন্ত রয়েছে। স্কুল-পত্রিকা
রয়েছে। সেখানে নিয়মিত কচিকাঁচাদের লেখা প্রকাশিত হয়। পড়ুয়ারাই বাড়িতে শৌচালয়
গড়া, খাবার আগে হাত ধোয়ার কথা বলে গ্রামেও পরিবর্তন এনেছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে
অমিতাভবাবু বলেন,
‘‘এই স্বীকৃতি শুধু আমার নয়, স্কুলের সব শিক্ষক,
পড়ুয়াদেরও। সবাই মিলে আমরা স্কুলের সঙ্গে এলাকার
পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছি।’’
সৌজন্য – আজকাল ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
No comments:
Post a Comment