আন্দামানের প্রাচীন আদিবাসীদের সম্পর্কে রীতিমতো চিন্তার কথা শোনাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য
মন্ত্রকের রিপোর্ট৷ “বো” জনজাতি আদিবাসীদের শেষ মহিলার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে “বো” ভাষাও
বিলুপ্ত হয়েছে৷ সেই সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে ৬৫ হাজার বছরের একটা সংযোগ৷ আর বাইরের লোকের
সংস্পর্শে এসে “জারোয়া”-দের মিস্লস এবং ম্যালেরিয়া হচ্ছে৷ এর ফলে তাঁরাও একদিন নিশ্চিহ্ন
হয়ে যেতে পারেন৷ আন্দামানে এখনও আড়াইশো থেকে তিনশো মতো জারোয়া আছেন৷ “সেন্টিনাল” আদিবাসী
আছেন মাত্র ৩৮ জন৷ ২১ জন ছেলে ও ১৮ জন মেয়ে৷ “গ্রেট আন্দামানি” আছেন মাত্র ৫৩ জন৷
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, দেশের আদিবাসীদের
স্বাস্থ্যের হাল ভালো নয়৷ প্রায় ৭৭ শতাংশ আদিবাসী বাচ্চা রক্তাল্পতায় ভুগছে৷ ১২ থেকে
৩৫ মাসের মধ্যে আদিবাসী বাচ্চাদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট পায়৷
আর ৬৮ শতাংশ আদিবাসী মহিলা ও চল্লিশ শতাংশ আদিবাসী পুরুষ রক্তাল্পতার শিকার৷ এক হাজার
জনের মধ্যে ২.৯ জন এইডসের শিকার৷ এর ওপর রয়েছে অসুখ-বিসুখের প্রকোপ৷ আদিবাসীদের মধ্যে
যতজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন, তাদের ৩০ শতাংশই মধ্যপ্রদেশে৷ ম্যালেরিয়ায় ৫০ শতাংশ
মৃত্যুও মধ্যপ্রদেশে হয়৷ সেখানে বিপুল পরিমাণ জঙ্গল আছে এটা ঠিক, কিন্তু তার সঙ্গে
চিকিৎসা ব্যবস্থারও অমিল৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে আরও বেরিয়ে এসেছে, আদিবাসী
এলাকায় ডাক্তাররা, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একেবারেই যেতে চান না৷ ছত্তিসগড়ে বিশেষজ্ঞদের
এক লাখ টাকা করে মাসে দেওয়া হয়৷ মধ্যপ্রদেশে প্রত্যন্ত এলাকায় ডাক্তারদের বেতন দ্বিগুণ
দেওয়া হয়৷ গুজরাটে শিশুরোগ ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিটি ভিজিটে আড়াই ও তিন হাজার
টাকা করে দিতে হয়৷
অধিকাংশ রাজ্যেই আদিবাসী এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের
তুলনায় কম৷ গুজরাটে যেমন ৩৫২ জন চিকিৎসক দরকার, আছেন ১১২ জন৷ ছত্তিসগড়ে ৪০৩ জন দরকার,
আছেন ২৩৩ জন, ঝাড়খণ্ডে দরকার ৩৩৭ জন, সেখানে আছেন মাত্র ১২ জন৷ পশ্চিমবঙ্গে দরকার ২৮৪
জন, আছেন ১৬৭ জন৷ এই হিসাব ২০১২-র৷ আর পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসক কম থাকলেও অবস্থাটা অন্য
রাজ্যের মতো অতটা খারাপ নয়৷ পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৫৮ শতাংশ সরকারি, ১৯
শতাংশ বেসরকারি এবং ২৩ শতাংশ এনজিও পরিচালিত হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা
করান৷ আর আদিবাসী নন লোকের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ সরকারি, ২৭.৫ শতাংশ বেসরকারি ও বাকিটা
এনজিও চালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে চিকিৎসা করান৷ ফলে রাজ্যে আদিবাসী ও আদিবাসী
নন, তাঁদের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও-দের কাছে চিকিৎসা করানোর হারে খুব বেশি
প্রভেদ নেই৷ অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে এই প্রভেদটা মারাত্মক রকমের হেরফের করছে৷
অনেক রাজ্যেই আদিবাসীদের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রই সম্বল৷ বেসরকারি
জায়গায় তারা চিকিৎসা করাতে পারে না৷ আর অ-আদিবাসীদের মধ্য বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসা
করানোর প্রবণতা অনেক বেশি৷ এ ছাড়া অনাদিবাসীদের তুলনায় আদিবাসীদের মধ্যে শিশুমৃত্যুর
হার অনেক বেশি৷ মাত্র ২৬ শতাংশ লোকের কাছে স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে৷ পুরো ভ্যাকসিন দেওয়া
হয় মাত্র ৩১ শতাংশ আদিবাসী বাচ্চাদের৷ প্রাপ্তবয়ষ্ক আদিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার
ছেলের মধ্যে ৯৯০ জন মেয়ে, এই হার আগের থেকে বেড়েছে৷ কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আগে
এক হাজার ছেলের অনুপাতে ৯৫১ জন মেয়ে ছিল৷ এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৪০-এ৷ এই সংখ্যাটা
নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক৷
আদিবাসীদের সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সেটা হল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়
কোনও আদিবাসী নেই৷ আদিবাসীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই মধ্য ভারতে আছে৷ ভারতে মোট ৭৫০টি আদিবাসী
সম্প্রদায় আছে৷ আদিম আদিবাসী সম্প্রদায় আছে ৭৫টি৷
সৌজন্য – এই সময়, ০৫/০৯/২০১৮। ছবি প্রতীকী (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)।
No comments:
Post a Comment