Friday, September 28, 2018

পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে চিকিৎসক সেজে আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা।


পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে চিকিৎসক সেজে আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ওষুধ দোকানের মালিক। রাতভর বিক্ষোভ আদিবাসীদের, অবরোধ, পোড়ানো হল ওষুধ।

পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে ওষুধ দোকানে চিকিৎসক সেজে এক আদিবাসী যুবতীকে তাঁর মায়ের সামনেই ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল ওই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় আদিবাসীরা ওই দোকানে ভাঙুচর চালানোর পাশাপাশি ওষুধ বের করে আগুন লাগিয়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ গভীর রাত পর্যন্ত বান্দোয়ান বাজারে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আদিবাসীরা। গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বরও দুপুর থেকে বান্দোয়ানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি মিছিলও করেন আদিবাসীরা। ঘটনায় অভিযুক্ত ওষুধ দোকানের মালিক অনুপম হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে বান্দোয়ান থানার পুলিস। ধৃতকে শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা বান্দোয়ান এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ানের আসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর উনিশের এক আদিবাসী যুবতী গত বৃহস্পতিবার ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের সঙ্গে বান্দোয়ান চকবাজার এলাকায় একটি ওষুধ দোকানে যান। সেখানে সেই সময় কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। ওই যুবতী চিকিৎসকের খোঁজ করলে তাঁকে চিকিৎসকের চেম্বারে যেতে বলে ওষুধ দোকানের মালিক অনুপম বলে অভিযোগ। পুলিস জানিয়েছে, ওই যুবতী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, এরপর অনুপম হালদার চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসকের মতোই ওই যুবতীর শারীরিক পরীক্ষার অজুহাতে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেই সময় ওই চেম্বারে যুবতীর মাও ছিলেন। তবে যুবতীকে পর্দার আড়ালে নিয়ে গিয়েছিল অনুপম হালদার। এরপর ওই যুবতী বাইরে বেরিয়ে গোটা ঘটনার কথা তাঁর মাকে জানান।
তখন ওই যুবতী ও তাঁর মা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, চিকিৎসক সেজে ওই ওষুধ দোকানের মালিকই তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই আদিবাসী যুবতী ও তাঁর মা। ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় আদিবাসীরা ওষুধ দোকানের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। দোকানের ভিতরেও ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর দাদা সঞ্জয় হালদারকে দোকান থেকে বের করে ব্যাপক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিস তাঁকে উদ্ধার করে। পরে সমস্ত ওষুধ বের করে আগুন লাগিয়ে দেয় আদিবাসীরা। পুলিসের সঙ্গেও বচসা শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন স্থানীয় এক সাংবাদিকও। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলতে থাকে। শুক্রবার ভোরে ওই যুবতী এবিষয়ে বান্দোয়ান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ভোরে অনুপমকে পুলিস ধর্ষণের চেষ্টা ও প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটি অ্যাক্ট (এসসি-এসটি) ধারায় গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে, শুক্রবার সকাল থেকে ওই ওষুধ দোকানের সামনেই রাস্তা অবরোধ শুরু করে আদিবাসীরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব লোচন সোরেন। আদিবাসীরা তিনদিকের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বিক্ষোভে শুরুতে বিক্ষোভকারীরা অনুপমকে নিজেদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানাতে থাকে। থানার গেটেও চলে বিক্ষোভ। পরে আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে বান্দোয়ান বাজারে মিছিলও করে আন্দোলনকারীরা। তারা অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি, ওই ওষুধ দোকানের লাইসেন্স বাতিল, আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ সহ একাধিক দাবি জানাতে থাকে। বিক্ষোভে উপস্থিত আদিবাসী সংগঠনের নেতা কলেন্দ্র মাণ্ডি, বিপিন বিহারী বেসরা, চিত্তরঞ্জন টুডু, মনীন্দ্র সরেনরা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তের দ্রুত শাস্তির দাবি করেন। এবিষয়ে বারহা মুলুক ও কুইলাপাল মুলুক মাঝি পারগানা মহলের যৌথ উদ্যোগে এদিনের ধিক্কার মিছিল হয়। চারদফা দাবি জানানো হয়েছে। এদিন চকবাজারে পথসভাও হয়।
সৌজন্য - বর্তমান পত্রিকা, ২৯/০৯/২০১৮

No comments:

Post a Comment