আদিবাসী কল্যান বিভাগ ও অনগ্রসর কল্যান বিভাগের উদ্যোগে পুরুলিয়ায় আদিবাসী খাদ্য
ও পুষ্টি মেলা।
আদিবাসী কল্যান বিভাগের উদ্যোগে ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের পরিচালনায় গত
শুক্রবার ১৪ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের ‘অনন্যা’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
চত্বরে বসেছিল আদিবাসী খাদ্য ও পুষ্টি মেলা। বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক
বলেন, ‘‘জেলা স্তরের মেলাটি হয়েছে বোরোতে। আদিবাসী মহিলারা নিজস্ব ঘরানার বিভিন্ন খাবারের
প্রদর্শনী করেছিলেন।’’ স্টলে মাংস পিঠে, মাছের পিঠে, ছাতু পিঠে নিয়ে বসেছিলেন হরিডি
গ্রামের ঝর্না টুডু এবং সরস্বতী টুডু। তাঁরা বলেন, ‘‘শহরে কত রকম খাবার। কিন্তু এখানে
আমাদের তৈরি খাবার চেখে দফতরের কর্তারা তারিফ করেছেন।’’ তাঁরা জানান, এই সমস্ত পদ পালা-পার্বনে
হয়। তৈরি করতে সময় বেশি লাগে। তবে পদ্ধতি আর উপকরণ দুই-ই স্বাস্থ্যকর। তেল মশলার বালাই
নেই। খেলে শরীর খারাপ হবে না।
বাংলার বিখ্যাত লেখক লীলা মজুমদারের গল্পে পদিপিসি একবার শুধু ঘাস দিয়ে এইসা চচ্চড়ি
রেঁধেছিলেন, খেয়ে বড়লাট একেবারে থ! এ-ও প্রায় তেমনই। মাছের পিঠে। কী আছে? স্রেফ চালের
গুঁড়ো, কুচো মাছ সেদ্ধ, নুন আর হলুদ। ব্যস! সব এক সঙ্গে মেখে শালপাতায় মুড়ে ঢিমে
আঁচে ঘণ্টাখানেক রাখলেই হল। এমন নানা পদ রেঁধে-বেড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঝর্না টুডু,
সরস্বতী টুডুরা।
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের জেলা প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ তাহেরুজ্জুমানও বলছিলেন,
‘‘আজকাল ফাস্ট ফুডের চল বাড়ছে, আর বাড়ছে রোগবালাই। সুষম খাবার বলতে যেটা বোঝায়, সেটা
আদিবাসীরা নিজস্ব ঐতিহ্যের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বহন করে চলেছেন।’’ এ দিন স্টল থেকে বিভিন্ন
পদের রেসিপি খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছেন তিনি।
পাশেই একটি স্টলে যেমন পাতার ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছিল ভুট্টা পোড়া। ভুট্টাকে স্থানীয়
ভাবে বলা হয় জনড়। স্টলের দায়িত্বে থাকা পার্বতী টুডু, ময়না মুর্মুরা বলেন, ‘‘একটু লবন
আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ জনড় জমে ভাল।’’ স্বাদ পরিবর্তনের জন্যে পাশেই রাখা ছিল গোটা
মুসুর আর কলাই সেদ্ধ। মানবাজার মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমাণির আবার
মন মজেছে তালের পিঠে আর খাপরা পিঠেতে। মুখে দিয়েই বললেন, ‘‘আহা, কী স্বাদ!’’ তালের
পিঠের কারিগরদের নাম ঠিকানাও জেনে নিয়েছেন তিনি।
শুধু স্বাদ না, সজ্জাও রকমারি। বড়রাঙা গ্রামের প্রতিমা বাস্কে শালপাতা দিয়ে বিভিন্ন
জিনিস বানিয়েছিলেন। জঙ্গলের সরু কাঠি দিয়ে সেলাই করে পাতা থেকে তৈরি হয়েছিল খাবারের
প্লেট, বাটি, গ্লাস, তরকারি রাখার পাত্র। পাতার বাটির বুনোন এত মজবুত, যে প্রতিমারা
দাবি করলেন, ঝোল বা জল কিছুতেই গড়াতে পারবে না।
মেলায় এসেছিলেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি প্রতিমা
সোরেন, জেলা পরিষদের সদস্য নিয়তি মাহাতো, সুমিতা সিংহ মল্ল, গুরুপদ টুডু, মানবাজার
২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দ্রশেখর দাস প্রমুখ। মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি
টুডু। তিনি বলেন, ‘‘আমিও আদিবাসী। ছোটবেলায় এই ধরনের কত খাবার চেটেপুটে খেয়েছি। সেই
স্মৃতিই ফিরে এল।’’ মেলায় আদিবাসী শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। সুস্বাস্থ্যের
জন্য ছিল পুরস্কারও।
সৌজন্য
– আনন্দবাজার পত্রিকা, সমীর দত্ত, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment