মারাঠা জাতির একজনের জমিতে ছাগল ঢুকে যাওয়ায় মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় এক আদিবাসী
মহিলাকে স্বামী ও সন্তানের সামনেই বিবস্ত্র করে মারধর করার ঘটনা সামনে এসেছে সোশ্যাল
মিডিয়ার মাধ্যমে। তাঁর স্বামীকেও মারধর করে চার ব্যক্তি। তারা ওই আদিবাসী মহিলার শ্লীলতাহানিও
করে। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে ঘটে যাওয়া এই বর্বরোচিত ঘটনায় গত বুধবার ২৬/০৯/২০১৮ পর্যন্ত
কারোকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অত্যাচারের এই ঘটনা কেউ মোবাইলে রেকর্ডিং করে এবং সোশ্যাল
মিডিয়ায় আপলোড করে দেয়। সেই থেকেই বিষয়টি সামনে এসেছে।
এক পুলিশ আধিকারিক গত বুধবার জানিয়েছেন, নির্যাতিতা মহিলা এবং তাঁর স্বামী দুইজনেই
আদিবাসী পারধি সম্প্রদায়ের। এই আদিবাসী দম্পতি সন্তানকে নিয়ে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন।
সেই সময় জয়সিং ওয়াগাসকার নামে একজনের জমিতে ঢুকে পড়ে তাদের ছাগল। সেই ব্যক্তি মারাঠা।
তথাকথিত উঁচুজাতের। ছাগল ঢুকে যাওয়ার অপরাধে ওই ব্যক্তি তার দুই আত্মীয় এবং এক সহযোগীকে
নিয়ে ওই আদিবাসী দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানকে আটক করে। স্বামী এবং সন্তানের সামনেই মহিলাকে
বিবস্ত্র করে। লাঠি দিয়ে চারজন ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামীকে মারতে থাকে। নির্যাতিতা
আদিবাসী মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা মহিলার শ্লীলতাহানিও
করেছে। আদিবাসী দম্পতির জাত তুলেও কুৎসিত গালিগালাজ করে অভিযুক্তরা। কোনও অজ্ঞাতপরিচয়
ব্যক্তি গোটা ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় বলে পুলিশের
ওই আধিকারিক জানিয়েছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ শ্লীলতাহানি সহ বিভিন্ন ধারায় চারজনের
বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনেও অভিযোগ
দায়ের হয়েছে। যদিও ঘটনার পর প্রায় এক পক্ষকাল কেটে গেলেও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার
করেনি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকার পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ন্ত্রণের
জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য রাজ্যগুলিকে বলেছে। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে রাজ্যগুলিকে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের
বিভিন্ন প্রান্তে পিটিয়ে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রতিষেধকমূলক
ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। পিটিয়ে হত্যা রোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার ব্যাপক প্রচার
করতে হবে। গত সোমবার ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এক নির্দেশে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে
ফের বলে সুপ্রিম কোর্ট। গোরক্ষার নামে পিটিয়ে হত্যায় বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না বলে আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং।
গোরক্ষার নামে আইন হাতে তুলে উন্মত্ত হিংসায় শাস্তির বিষয়েও সচেতন করতে নির্দেশ দিয়েছিল
আদালত। বলা হয়েছিল যে টিভি, রেডিও এবং সংবাদপত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারগুলিকে
ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা জানাতে হবে মানুষকে। নির্দেশিকায়
বলা হয়, এস পি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিককে প্রতি জেলায় বিশেষ দায়িত্ব দিতে হবে রাজ্যগুলিকে।
এমন ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য রাখার বিশেষ ব্যবস্থার জন্যও বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত সোমবার বলে, আইন হাতে তুলে দলবেঁধে
হিংসা ঘটালে বিচারের মুখে পড়তে হবে। একথা বোঝাতে হবে মানুষকে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে হবে।
সৌজন্য – গণশক্তি পত্রিকা, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment