Friday, September 28, 2018

বীরভূম জেলার সিউড়িতে SC/ST/OBC/Minority যৌথ মঞ্চের ডেপুটেশনে উপস্থিত জিগনেস মেওয়ানি।


বীরভূম জেলার সিউড়িতে তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত গুজরাটের তরুণ দলিত নেতা জিগনেস মেওয়ানি।

গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বীরভূম জেলার সিউড়িতে তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের আহ্বানে ২৭ দফা দাবী নিয়ে জেলা শাসকের নিকট ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন গুজরাটের তরুণ দলিত নেতা জিগনেস মেওয়ানি। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানালেন গুজরাটের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেওয়ানি। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি বলে সমাবেশে জানালেন।
গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুরে বীরভূম জেলার নানা প্রান্ত থেকে একাধিক তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু সংগঠন জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে একত্রিত হয়। মোট ২৭ দফা দাবি নিয়ে বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে দেখা করেন জিগনেশ ও তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের নেতারা। জিগনেশ পরে বলেন, ‘এখানে যারই সরকার হোক, মোদীর থেকে বেশি খতরনাক আর কেউ নেই। দিল্লিতে দলিত আদিবাসী বিরোধী সংখ্যালঘু বিরোধী যে ফ্যাসিস্ট লোকতন্ত্র বিরোধী মোদী সরকার চলছে, তাকে হঠাতে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস সকলকে একজোট হতে হবে। দিল্লির এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠাতে হবে। ভগৎ সিং ক্রান্তির (লড়াই) কথা বলেছেন।
মোদী সরকারকে সরাতে জিগনেস মেওয়ানি বলেন, ‘আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আজই কলকাতা গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করব। যাতে আগামী ২ অক্টোবর, ২০১৮ তাঁর সঙ্গে দেখা করে একজোট হওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে পারি। সব বিরোধী ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলেই মোদী হাওয়া বেরিয়ে যাবে। আমরা লড়াই করে জিতে মোদীকে তাড়াবই। কেন্দ্রে বিজেপি শাসিত এক ফ্যাসিস্ট সরকার চলছে। যেখানে গোরু রক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে। আদিবাসী এবং দলিতদের জমি অন্যায় ভাবে দখল করে নেওয়া হচ্ছে।’
তাঁর এ রাজ্যে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে জিগনেস মেওয়ানি পরিষ্কার জানিয়েছেন, এ রাজ্যের সরকারের চেয়েও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাঁর টার্গেট। তাঁর আশ্বাস, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত আমি লাগাতার পশ্চিমবঙ্গ সফর করব। এবং তার পরও করব। আপনারা যখন অসুবিধায় পড়বেন, ডাকবেন। আমি আসব।’
প্রতিবাদ সভায় আগত আদিবাসীদের সাবধান করে তিনি বলেন, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচনের এ রাজ্যে থাবা বসাতে চাইছে সঙ্ঘ আর বিজেপি। ওদের কোনও ভাবেই এ রাজ্যে জায়গা দেওয়া হবে না। আমরা একজোট হয়ে ওদের এখান থেকে ভাগাবই। ওরা এখানে থাবা বসালে লোকসান হয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরকেও কটাক্ষ করেছেন দলিত নেতা। তিনি বলেন, ‘মোদীজির বিদেশে যাওয়া দেশের ভালোর জন্য নয়। বিদেশে যাওয়া মুকেশ আম্বানির সঙ্গে সেটিং করার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে আদিবাসী ১০০ দিনের কাজের ইস্যুকে হাতিয়ার করে এ দিন জিগনেস মেওয়ানি বলেন, ‘দেশের গরিব মানুষ কাজ পায় না। তারা চায় কাজ। মোদীজি আপনার ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? রোজগারের প্রতিশ্রুতির নাম করে মোদীজি দেশের বেকারদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছেন। জালিয়াতি করেছেন। সাড়ে চার বছরে ৯ কোটির জায়গায় ৯ লাখ লোকেরও চাকরি হয়নি।
গুজরাটের দলিত নেতার পশ্চিমবঙ্গ সফরে রাজনৈতিক সমীকরণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। যেহেতু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম বীরভূমে আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপির বিস্তার ঘটেছে। তাই সেই ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে জিগনেশ এই রাজ্যে বীরভূম জেলাকেই প্রথম টার্গেট করলেন বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। তবে তফসিলি জাতি জনজাতি অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চ যে শুধু বীরভূমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা পরিষ্কার জানিয়ে দিযেছে সংগঠনের সম্পাদক সুনীল সোরেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা আগামী দিনে বাঁকুড়া-মুর্শিদাবাদ-বর্ধমানের মতো রাজ্য জুড়ে সংগঠন বিস্তার করব। সারা রাজ্যকে চারটে জোনে ভাগ করে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর কলকাতায় ২ লক্ষ মানুষের জমায়েত করে আমাদের দাবি পেশ করব।’
সৌজন্য – এই সময়, ২৯/০৯/২০১৮।

এবার পুরুষরাও তৈরি করতে পারবেন স্বনির্ভর দল, সরকারি সাহায্যও পাবেন।


শুধু মহিলারা নন, স্বনির্ভর দল গড়লে সরকারি সহায়তা পাবেন পুরুষেরাও। গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ থেকে পুরুলিয়া তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মাঠে শুরু হওয়া দশম সবলা ও ক্রেতাসুরক্ষা মেলার মঞ্চ থেকে এ কথা জানান মেলার উদ্যোক্তারা।
গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ মেলার সূচনা করেন দফতরের মন্ত্রী সাধন পান্ডে। ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। মঞ্চ থেকে সাধনবাবু জানান, মাত্র দু’শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে স্বনির্ভর দল গড়ে তোলা যাবে। পাশাপাশি, মানুষজনকে ক্রেতাসুরক্ষার বিষয়েও সচেতন করেন তিনি। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘স্বনির্ভর দলের সদস্যদের মেলা মানেই মহিলাদের ক্ষমতায়ন। তবে সেই স্বনির্ভর দলই স্বাস্থ্যকর দল, যাঁরা ঋণ নিয়ে ঠিক সময়ে পরিশোধ করে নতুন করে ফের কাজ শুরু করে।’’ এ দিন মেলায় উপস্থিত স্বনির্ভর দলের সদস্যদের সেই মতো এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি, স্বনির্ভর দল গড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা, যেমন দু’শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া, বিনা প্রিমিয়ামে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুবিধার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
জেলা স্বনির্ভর দলের আধিকারিক বুলবুল বসু জানান, মহিলাদের পাশাপাশি এ বার থেকে পুরুষেরাও স্বনির্ভর দল গড়ে কাজ করতে পারবেন। এ বার মেলায় মোট ৪২টি স্টল বসেছে। স্বনির্ভর দলের সদস্যাদের তৈরি জিনিসপত্র মেলায় পাওয়া যাবে। ছৌ, করম, ঝুমুর, সহরাই, নাটুয়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকছে। স্বনির্ভর দলের সদস্যারাও অনুষ্ঠানগুলিতে যোগ দেবেন। মেলা চলবে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯/০৯/২০১৮।

পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে চিকিৎসক সেজে আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা।


পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে চিকিৎসক সেজে আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ওষুধ দোকানের মালিক। রাতভর বিক্ষোভ আদিবাসীদের, অবরোধ, পোড়ানো হল ওষুধ।

পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানে ওষুধ দোকানে চিকিৎসক সেজে এক আদিবাসী যুবতীকে তাঁর মায়ের সামনেই ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল ওই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় আদিবাসীরা ওই দোকানে ভাঙুচর চালানোর পাশাপাশি ওষুধ বের করে আগুন লাগিয়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ গভীর রাত পর্যন্ত বান্দোয়ান বাজারে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আদিবাসীরা। গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বরও দুপুর থেকে বান্দোয়ানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি মিছিলও করেন আদিবাসীরা। ঘটনায় অভিযুক্ত ওষুধ দোকানের মালিক অনুপম হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে বান্দোয়ান থানার পুলিস। ধৃতকে শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা বান্দোয়ান এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ানের আসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর উনিশের এক আদিবাসী যুবতী গত বৃহস্পতিবার ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের সঙ্গে বান্দোয়ান চকবাজার এলাকায় একটি ওষুধ দোকানে যান। সেখানে সেই সময় কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। ওই যুবতী চিকিৎসকের খোঁজ করলে তাঁকে চিকিৎসকের চেম্বারে যেতে বলে ওষুধ দোকানের মালিক অনুপম বলে অভিযোগ। পুলিস জানিয়েছে, ওই যুবতী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, এরপর অনুপম হালদার চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসকের মতোই ওই যুবতীর শারীরিক পরীক্ষার অজুহাতে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেই সময় ওই চেম্বারে যুবতীর মাও ছিলেন। তবে যুবতীকে পর্দার আড়ালে নিয়ে গিয়েছিল অনুপম হালদার। এরপর ওই যুবতী বাইরে বেরিয়ে গোটা ঘটনার কথা তাঁর মাকে জানান।
তখন ওই যুবতী ও তাঁর মা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, চিকিৎসক সেজে ওই ওষুধ দোকানের মালিকই তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই আদিবাসী যুবতী ও তাঁর মা। ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় আদিবাসীরা ওষুধ দোকানের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। দোকানের ভিতরেও ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর দাদা সঞ্জয় হালদারকে দোকান থেকে বের করে ব্যাপক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিস তাঁকে উদ্ধার করে। পরে সমস্ত ওষুধ বের করে আগুন লাগিয়ে দেয় আদিবাসীরা। পুলিসের সঙ্গেও বচসা শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন স্থানীয় এক সাংবাদিকও। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলতে থাকে। শুক্রবার ভোরে ওই যুবতী এবিষয়ে বান্দোয়ান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ভোরে অনুপমকে পুলিস ধর্ষণের চেষ্টা ও প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটি অ্যাক্ট (এসসি-এসটি) ধারায় গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে, শুক্রবার সকাল থেকে ওই ওষুধ দোকানের সামনেই রাস্তা অবরোধ শুরু করে আদিবাসীরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব লোচন সোরেন। আদিবাসীরা তিনদিকের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বিক্ষোভে শুরুতে বিক্ষোভকারীরা অনুপমকে নিজেদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানাতে থাকে। থানার গেটেও চলে বিক্ষোভ। পরে আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে বান্দোয়ান বাজারে মিছিলও করে আন্দোলনকারীরা। তারা অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি, ওই ওষুধ দোকানের লাইসেন্স বাতিল, আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ সহ একাধিক দাবি জানাতে থাকে। বিক্ষোভে উপস্থিত আদিবাসী সংগঠনের নেতা কলেন্দ্র মাণ্ডি, বিপিন বিহারী বেসরা, চিত্তরঞ্জন টুডু, মনীন্দ্র সরেনরা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তের দ্রুত শাস্তির দাবি করেন। এবিষয়ে বারহা মুলুক ও কুইলাপাল মুলুক মাঝি পারগানা মহলের যৌথ উদ্যোগে এদিনের ধিক্কার মিছিল হয়। চারদফা দাবি জানানো হয়েছে। এদিন চকবাজারে পথসভাও হয়।
সৌজন্য - বর্তমান পত্রিকা, ২৯/০৯/২০১৮

Thursday, September 27, 2018

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে শপথ নিলেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী নেতা মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু।


বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে শপথ নিলেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী নেতা মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, সহ সভাধিপতি পদে শপথ নিলেন শুভাশিস বটব্যাল।

গত বৃহস্পতিবার ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে শপথ নিলেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী নেতা মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু ও সহ সভাধিপতি পদে শপথ নিলেন শুভাশিস বটব্যাল। নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্যরাও এদিন শপথ নেন। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, সংসদ সদস্য সৌমিত্র খাঁ, ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁ, বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস, পুলিস সুপার কোটেশ্বর রাও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এবার বাঁকুড়া জেলা পরিষদে তৃণমূল বিরোধীশূন্য বোর্ড গড়েছে। মোট ৪৬টি আসনের মধ্যে ৩১টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ১৫টি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসক দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তবে সভাধিপতি ও সহ সভাধিপতির পদে কারা বসবেন তা নিয়ে এদিন সকাল পর্যন্ত তৃণমূলের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মৃত্যুঞ্জয়বাবু ও শুভাশিসবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রচুর ভিড় হয়। আদিবাসী শিল্পীদের নাচ ও গানের সঙ্গে ঢাক, ঢোল প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এবং প্রশাসনের পাশাপাশি এদিন আদিবাসীরাও তাঁদের রীতি অনুসারে সভাধিপতি সহ অন্যান্যনের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।
বিদায়ী জেলা পরিষদ সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন। অথচ বাঁকুড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত একজনকে তিনি বসিয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবু সভাধিপতি হওয়ার পর বিরোধীদের মুখে ঝামা ঘষা গিয়েছে।
জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, বাঁকুড়া জেলা পরিষদে বিগত পাঁচবছরে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। আগামী দিনে নতুন বোর্ড আরও ভালো কাজ করবে বলে আশা রাখি। মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজের গতি আমরা ত্বরান্বিত করব।
জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, উন্নয়নের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য জেলা পুলিস নিরন্তর কাজ করবে। আমরা বাঁকুড়াবাসীর পাশে রয়েছি।
বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে আমরা এবার থেকে দলের তরফে তিন মাস অন্তর পর্যালোচনামূলক বৈঠক করব। ব্লকে ব্লকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। প্রশাসনের পাশাপাশি দলও প্রত্যেকের কাজের উপর নজর রাখবে।
নবনির্বাচিত সভাধিপতি তথা রাইপুরের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, আমি গত পাঁচ বছর জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে জেলার উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাব।
নবনির্বাচিত সহ সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভাশিসবাবু বলেন, বাঁকুড়ার গা থেকে পিছিয়ে পড়া তকমা দূর করতে আমরা চেষ্টা করব।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২৮/০৯/২০১৯। ছবি সৌজন্য – সংবাদ প্রতিদিন, ২৮/০৯/২০১৯।

মহারাষ্ট্রে স্বামী-সন্তানের সামনেই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে মার।


মারাঠা জাতির একজনের জমিতে ছাগল ঢুকে যাওয়ায় মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় এক আদিবাসী মহিলাকে স্বামী ও সন্তানের সামনেই বিবস্ত্র করে মারধর করার ঘটনা সামনে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তাঁর স্বামীকেও মারধর করে চার ব্যক্তি। তারা ওই আদিবাসী মহিলার শ্লীলতাহানিও করে। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে ঘটে যাওয়া এই বর্বরোচিত ঘটনায় গত বুধবার ২৬/০৯/২০১৮ পর্যন্ত কারোকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অত্যাচারের এই ঘটনা কেউ মোবাইলে রেকর্ডিং করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয়। সেই থেকেই বিষয়টি সামনে এসেছে।
এক পুলিশ আধিকারিক গত বুধবার জানিয়েছেন, নির্যাতিতা মহিলা এবং তাঁর স্বামী দুইজনেই আদিবাসী পারধি সম্প্রদায়ের। এই আদিবাসী দম্পতি সন্তানকে নিয়ে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় জয়সিং ওয়াগাসকার নামে একজনের জমিতে ঢুকে পড়ে তাদের ছাগল। সেই ব্যক্তি মারাঠা। তথাকথিত উঁচুজাতের। ছাগল ঢুকে যাওয়ার অপরাধে ওই ব্যক্তি তার দুই আত্মীয় এবং এক সহযোগীকে নিয়ে ওই আদিবাসী দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানকে আটক করে। স্বামী এবং সন্তানের সামনেই মহিলাকে বিবস্ত্র করে। লাঠি দিয়ে চারজন ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামীকে মারতে থাকে। নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা মহিলার শ্লীলতাহানিও করেছে। আদিবাসী দম্পতির জাত তুলেও কুৎসিত গালিগালাজ করে অভিযুক্তরা। কোনও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি গোটা ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় বলে পুলিশের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ শ্লীলতাহানি সহ বিভিন্ন ধারায় চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও ঘটনার পর প্রায় এক পক্ষকাল কেটে গেলেও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেনি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকার পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য রাজ্যগুলিকে বলেছে। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে রাজ্যগুলিকে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পিটিয়ে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। পিটিয়ে হত্যা রোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। গত সোমবার ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এক নির্দেশে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে ফের বলে সুপ্রিম কোর্ট। গোরক্ষার নামে পিটিয়ে হত্যায় বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না বলে আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। গোরক্ষার নামে আইন হাতে তুলে উন্মত্ত হিংসায় শাস্তির বিষয়েও সচেতন করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বলা হয়েছিল যে টিভি, রেডিও এবং সংবাদপত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারগুলিকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা জানাতে হবে মানুষকে। নির্দেশিকায় বলা হয়, এস পি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিককে প্রতি জেলায় বিশেষ দায়িত্ব দিতে হবে রাজ্যগুলিকে। এমন ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য রাখার বিশেষ ব্যবস্থার জন্যও বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত সোমবার বলে, আইন হাতে তুলে দলবেঁধে হিংসা ঘটালে বিচারের মুখে পড়তে হবে। একথা বোঝাতে হবে মানুষকে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সৌজন্য – গণশক্তি পত্রিকা, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Wednesday, September 26, 2018

সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে SC/STদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ, রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।


সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ, রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও রকম শর্ত আরোপ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আরও ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতী।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ চালু রাখা উচিত কিনা, মামলা ছিল তাই নিয়েই। ২০০৬ সালের একটি মামলার রায়ে ভারতের শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, প্রতিটি পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা আদৌ প্রয়োজন কিনা, সেই তথ্য জোগাড় করতে হবে। তার পরই তফশিলি জাতি ও উপজাতি প্রার্থীরা পদোন্নতিতে সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে ওই প্রার্থী আদৌ কতটা পিছিয়ে পড়া, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত পদের কোনও অভাব আছে কিনা, এবং সামগ্রিক প্রশাসনিক দক্ষতার বিষয়গুলি মাথায় রাখার কথা জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। নতুন রায়ে এই তথ্য জোগাড় করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলেই জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০০৬ সালের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। তাদের যুক্তি ছিল সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়টি সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অহেতুক শর্ত আরোপ করছে। সরকারি চাকরি পেলেও তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির মানুষেরা সামাজিক সম্মান পাওয়ার দিক থেকে পিছিয়েই থাকেন। তাই পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কোনও শর্ত রাখা উচিত নয়। অন্যদিকে সংরক্ষণ বিরোধীদের সওয়াল ছিল, একবার সরকারি চাকরি পেলেই একজন তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সামাজিক উত্তরণ ঘটে। তাই পদোন্নতিতে আর তাঁর সেই সুবিধে পাওয়ার কথা নয়। যদিও এই যুক্তিকে আমল দেয়নি শীর্ষ আদালত। তাই সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ চালু থাকার পথ আরও মসৃণ হলো শীর্ষ আদালতের এই রায়ে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Tuesday, September 25, 2018

সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ করলেন পূর্ব বর্ধমানের সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়।


সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদে গত মঙ্গলবার ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে শপথ নিলেন শম্পা ধাড়া। সহকারী সভাধিপতি হিসেবে শপথ নেন দেবু টুডু। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, দুই সংসদ সদস্য মমতাজ সংঘমিতা ও সুনীল মণ্ডল, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন বিধানসভার বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং জেলা পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বাসে চেপে বর্ধমানে আসেন। সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়।
এদিন দেবু টুডু সাঁওতালি ভাষায় শপথ নেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী শিল্পীরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন। নিউ কালেক্টরেট বিল্ডিং লাগোয়া গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় বিশাল ম্যারাপ বেঁধে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভালোই ভিড় হয়। সেজন্য জেলাশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেস দখল করায় তারা বিরোধীশূন্য বোর্ড গঠন করেছে। এদিন প্রত্যেক জেলা পরিষদ সদস্য শপথ নেন। সভাধিপতি হিসেবে শম্পা ধাড়া ও সহকারী সভাধিপতি হিসেবে দেবু টুডু শপথ নিয়েছেন। পুজোর পর নটি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। আগের বোর্ডের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির মধ্যে চেয়ার বদল হয়েছে। এবার পুরনো কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে কারা থাকবেন এবং কারা বাদ পড়বেন সেটাই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এবার বেশ কয়েকজন ওজনদার নেতা জেলা পরিষদে জয়ী হয়েছেন।
এদিন সভাধিপতি শম্পা ধাড়া শপথ নেওয়ার পর জেলা পরিষদে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, এই জয়ের কারিগর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাই এই জয় তাঁকেই উৎসর্গ করছি।
এদিন সহকারী সভাধিপতির শপথ নেওয়ার পর দেবু টুডু বলেন, আমরা পাঁচ বছর জেলা পরিষদ বোর্ড পরিচালনা করেছি। সেখানে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে। তবে কথা দিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছর নিজেদের ভুল, ত্রুটি সংশোধন করে নেব। সেইসঙ্গে এই পথ চলার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাইছি।
সংবাদ সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২৬/০৯/২০১৮, ছবি সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬/০৯/২০১৮।

Tuesday, September 18, 2018

বীরভূমের আদিবাসী অধ্যুষিত পাথর বলয়ে বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা।

বীরভূম জেলার পাঁচামি এলাকা পাথর খাদানের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকার রাস্তায় সবসময় ভারি গাড়ি পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। সবসময় ভারি গাড়ি চলার ফলে রাস্তা আর রাস্তা নেই, পাথরের ঢিপে পরিণত হয়েছে। উচু-নীচু পাথর আর খানাখন্দ। সেই পথেই অহরহ ট্রাকের যাতায়াত। খালি গাড়ি নয়, পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক।
বীরভূমের পাথর বলয় বলে পরিচিত ওই এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অগস্টিন সোরেন, মার্সিন হেমব্রমরা ‘ফাস্ট জেনারেশন’ স্কুলপড়ুয়া। তেঁতুলবান্দি গ্রামে পাথরের ওই পথে ওরা স্কুলে যেত প্রাণ হাত করে। কখন গাড়ির ধাক্কা লাগে। ট্রাক, ডাম্পার যে গা ঘেঁষে চলে যায়। কখনও আবার ট্রাকের চাকায় লেগে পাথর ছিটকে আসার ঝুঁকি থাকে। ভয়ে ওদের স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দিয়েছেন অভিভাবকরা। ঢোলকাটা গ্রামের গোপাল টুডু বলেন, ‘ভোর থেকে একনাগারে ট্রাক চলে। যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। ভয়ে তাই আর ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাই না।’ ভাঁড়কাটা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ৩৪১ জন ছাত্রের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিছু আদিবাসীও আছে। স্কুলে উপস্থিতির হারে মেরেকেটে ৫০ শতাংশ। সাগরবান্দি প্রাইমারি স্কুলে সেই হার বড়জোড় ৩০-৩৫ শতাংশ।
বেসরকারি তথ্য নয়, শিক্ষা দপ্তর ও সর্বশিক্ষা মিশনের সমীক্ষায় বীরভূমের পাথর খাদান এলাকায় শিক্ষার বিপর্যস্ত চেহারা সামনে এসেছে। যা সামাল দিতে তড়িঘড়ি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন সর্বশিক্ষা কর্তৃপক্ষ। অথচ ওই এলাকার শিশুদের পড়াশোনা শেখাতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্টই। প্রায় গ্রামে গ্রামে প্রচুর স্কুল গড়ে উঠেছে, যাতে স্কুলে পড়তে দুরে যেতে না হয। কিন্তু বাস্তবে যে শিশুরা স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছে, সেই তথ্য সামনে আসায় উদ্বিগ্ন শিক্ষা দপ্তর ও প্রশাসন। সরকারি সমীক্ষা বলছে, অনুপস্থিতির গড় হার ৩০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তব বলছে পরিসংখ্যান কোথাও ৫০, কোথাও ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতির বদল আনতে রিমেডিয়াল টিচিং, হেলথ ক্যাম্প, অভিভাবক-শিক্ষক সভা, পাঠক্রম বহির্ভূত আনন্দদায়ক শিক্ষা, খেলাধূলা, গান-বাজনার, এমনকি ডিজিটাল লার্নিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সেই নির্দিষ্ট স্কুলগুলির শিক্ষকদের স্পেশাল ট্রেনিং কোর্স চালু করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিতে পাঠানো হবে বিশেষজ্ঞদের।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘আমরা পাথর বলয়ে স্কুলছুট ফেরানোর একাধিক পরিকল্পনা করেছি। আগামী ৩ অক্টোবর নতুন প্রকল্পের সূচনা করছি।’ সর্বশিক্ষা মিশনের বীরভূম জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী বলেন, ‘আমরা পাঁচামি এলাকার যে প্রাইমারি স্কুলতে অনূপস্থিতি বেশি, সেগুলিকে চিহ্নিত করেছি। ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষিত করতে যে পরিকল্পনা নিয়েছি, তাতে তাদের স্কুলে উপস্থিতি নিয়মিত হবে আশা করছি।’
প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত স্কুলগুলি সবই মহম্মদবাজার ব্লকের। কিন্তু শিক্ষা মহলের দাবি, একই সমস্যা আছে মুরারই-১ ও নলহাটি-১ ব্লকে। শুধু পাথর ভর্তি পথ আর পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক যাতায়াত নয়, শিশুদের আর এক সমস্যা যেখানে সেখানে পাথর ভাঙার ক্র্যাশার ও খাদান। সাগরবান্দি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ধনা মুর্মু বলেন, ‘দিনভর ক্র্যাশারের কানফাটা শব্দে কি কেউ পড়াশোনা করতে পারে? বিশেষ করে শিশুদের পক্ষে তো এক জায়গায় বসে থাকাই অসম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকেও স্কুলে আনতে পারি না বাচ্চাদের। স্কুলের খাতায় শুধু নামই থাকে ওদের।’
প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল শালবাদরা সাঁওতাল প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী সুন্দরী হেমব্রম। পরিণাম সুখকর হয়নি। মাস খানেক আগে ওই প্রতিবাদের পর তাকে শুনতে হয়েছে কটূক্তি। সুন্দরীর বাবা-মা আর তাকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন। এলাকার বাসিন্দা বুধন হেমব্রম বলেন, ‘মেয়েটা বড় হচ্ছে। ডাম্পার ড্রাইভাররা মেয়েদের বাজে কথা বলে। গায়ে হাত দেয়। এখন আর মেয়েকে স্কুলে পাঠাই না।’ গ্রামের বাসিন্দারা দাবি করেছিল, স্কুল শুরু ও ছুটির সময় ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হোক। কেউ শোনেনি। উল্টে পাথরের কারবারিদের মদতে কিছু লোক গ্রামবাসীদের উপর চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সমস্যা স্বীকার করে এলাকার শিক্ষক বলেন, ‘অগত্যা ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাওয়াতেই কোপ পড়ছে।’ ঝাড়খন্ড লাগোয়া বেড়েপাড়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নলিন সোরেন বলেন, ‘খাতায়-কলমে আমার স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৫। গরহাজিরা ২০-২৫।’
সুত্র – এই সময়, হেমাভ সেনগুপ্ত, ১৯/০৯/২০১৮।

নিচু জাতের জামাই খুনে সুপারি ১ কোটি! মিলল আইএসআই যোগও।


তেলেঙ্গানা রাজ্যের নালগোন্ডা জেলার অনার কিলিংয়ে সুপারি দেওয়া হয়েছিল এক কোটি টাকা! আগাম দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ। ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের জামাইকে হত্যার ছক কষেছিল অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা টি মারুথি রাও। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ভাড়াটে খুনি সুভাষ শর্মাকে বিহার থেকে গ্রেফতারের পর এই বিস্ফোরক দাবি করেছে তেলঙ্গানা পুলিশ। সুপারি দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ আবদুল বারির মাধ্যমে। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই খুনে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ করিমও পুলিশের জালে। পুলিশের দাবি, গোটা বিষয়টিতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন এই কংগ্রেস নেতা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তেলঙ্গানার মিরিয়ালগুড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অম্রুতাবর্ষিণীর রুটিন চেক আপ সেরে ফিরছিলেন প্রণয় পেরুমাল্লা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা-ও। হাসপাতাল থেকে বেরোতেই পিছন থেকে একটি মুগুর জাতীয় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে এক দুষ্কৃতী। পড়ে যাওয়ার পর ফের আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রণয়। গোটা ঘটনা ধরা পড়ে হাসপাতালের বাইরে লাগানো সিসিটিভিতে।
ঘটনার পরই অম্রুতাবর্ষিণী অভিযোগ করেন, নিচু জাতের ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। পাশাপাশি তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিল। তাঁর বাবা এবং কাকা মিলেই তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। এই অভিযোগের পরই অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা এবং কাকাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং দুই ধৃতের বয়ান শুনে সোমবারই বিহার থেকে ওই ভাড়াটে খুনি শর্মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, এই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতারের পরই উঠে আসে চক্রান্তের ব্লু-প্রিন্ট। তেলেঙ্গানা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের মেয়ে অম্রুতাবর্ষিণী নিচু জাতে বিয়ে করায় জামাই প্রণয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। তাঁরই বন্ধু কংগ্রেস নেতা করিমের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আব্দুল বারির সঙ্গে। এই বারি সন্দেহভাজন আইএসআই জঙ্গি আজগর আলির ঘনিষ্ঠ। দু’জনই গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী হরেন পাণ্ড্য খুনে অভিযুক্ত ছিল। যদিও তথ্য প্রমাণের অভাবে সেই মামলায় বেকসুর খালাস হয়ে যায় দু’জন।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, আবদুল বারি এবং শর্মাকে জেরায় জানা গিয়েছে, প্রণয়কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে রফা হয় এক কোটি টাকায়। অগ্রিম হিসাবে ৫০ লক্ষ টাকাও দিয়ে দেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। বারির নির্দেশে সমস্তিপুরের একটি গ্যাং অপারেশন চালায়। হাসপাতালের বাইরেই নৃশংস ভাবে খুন করে প্রণয়কে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, খুনের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিল বারি। বারি-ই বাইকে করে শর্মাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। খুনের পর ওই বাইকেই পলিয়ে যায় দু’জন।
মারিয়ালগুড়ির ধনীতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। জমি-বাড়ি কেনা-বেচার কারবার। কিন্তু গ্রেফতারির পরই এই মারুথি রাওয়ের নানা কুকীর্তি সামনে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জমি-বাড়ির কারবারে দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিতেন মারুথি। কেউ জমি দিতে রাজি না হলে ভয় দেখানো, মারধর করে রাজি করাতেন তিনি। এমনকি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জমি নিজের নামে লিখে নিতে ভুয়ো দলিল তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেসবের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে নালগোন্ডা পুলিশ।
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Sunday, September 16, 2018

আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো করার ইচ্ছে প্রকাশ সঙ্গীতশিল্পী জোজোর।


অনেক দিন পর পুজোয় একটি সিঙ্গল নিয়ে ফিরে আসছেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মিস জোজো। সম্প্রতি শেষ করলেন গানটির রেকর্ডিং। গানের নাম মরেছি ভালন্ত বাসিয়া। জোজোর কথায়, ‘‘গানটা কিন্তু পুরোটা বাংলা ভাষায় নয়। এটা একটা মডার্ন ফোক সং। মানুষ যেহেতু এখন একটু মাটির গানের দিকে ঝুঁকেছেন, সেই কারণেই এই গানটা করলাম আমরা। তার সঙ্গে মানুষ আমার কাছ থেকে একটু চটকদারি গান পছন্দ করেন, তাই সেই এসেন্সও রয়েছে এই গানে।’’ জানালেন, এই গানের সঙ্গে আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো করার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁদের। গানটি লিখেছেন দীপঙ্কর ঘোষ। গানের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ধামসা মাদল, ম্যান্ডোলিন ও বাঁশি। পুজোর আগেই ইউটিউবে মুক্তি পাবে জোজোর এই গান।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

বীরভূমে ফের আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ।

বীরভূম জেলায় ফের ধর্ষণের শিকার হলেন এক আদিবাসী যুবতী৷ তবে রাতারাতি গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত ধর্ষককে৷ সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ওই নির্যাতিতা৷ এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে সিউড়ি থানা এলাকার কামারডাঙা গ্রামে৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে কামারডাঙা গ্রামে বছর তেইশের ওই ছাত্রী একটি জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়েছিল। অভিযোগ, সেই সময় পাশের গ্রামের মহিত খান নামের এক যুবক ওই ছাত্রীকে জোর করে জঙ্গলের ভিতর টেনে নিয়ে যায়৷ তখনই ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়৷ কাউকে জানালেই খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভয় না পেয়ে ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে পুরো ঘটনাটি খুলে বলে। এরপরই বাড়ির লোক ও গ্রামবাসীরা সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে৷
কিন্তু এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আদিবাসী সমাজ। এই বিষয়ে আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সরেন বলেন, ‘‘এই ভাবে বারবার আদিবাসী মহিলারা ধর্ষিত হচ্ছে। বাংলায় আদিবাসী মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যদিও পুলিশ কাল রাতের মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে৷”
বেশ কিছুদিন আগে বীরভূমের পাড়ুইয়ে এক আদিবাসী মহিলা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন৷ সেই ঘটনার সাত দিন পেরোতে না পেরোতেই মহম্মদ বাজারের জঙ্গলে পাতা কুড়োতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল এক মাঝ বয়সী মহিলা৷ দুটি ঘটনায় আদিবাসী সমাজ তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছিল৷ তবে শনিবার ফের আদিবাসী যুবতী ধর্ষণের ঘটনায় আরও একবার আদিবাসী মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
সৌজন্য – Kolkata 24*7, Rajit Das, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Saturday, September 15, 2018

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রশাসনের সামনের সারিতে উঠে আসছেন আদিবাসী কন্যারা।


মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে প্রশাসনের সামনের সারিতে উঠে আসছেন আদিবাসী কন্যারা।

সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ গঠিত হল। শপথ নিলেন নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা। তবে সবার মধ্যে নজর কাড়ছিলেন সদ্য তরুণী আদিবাসী কন্যরা। জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য আদিবাসী তরুণী মমতা মুর্মু উঠে দাড়াতেই মঞ্চে উপস্থিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী, জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া-সহ জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের সকলের মুখেই চওড়া হাসি। সদ্য একুশের চৌকাঠ পেরোনো এক মেয়েকে জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নিতে তো এর আগে দেখেননি কেউ। তাও আবার পিছিয়ে থাকা আদিবাসী সমাজের মধ্যে থেকে। এর পর একে একে শপথ নিলেন রিঙ্কু রুইদাস, কণিকা মান্ডি। এই বার পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের সদস্যদের সিংহভাগই মহিলা। কেউ কেউ আবার ‘কন্যাশ্রীও’।
নতুন মুখেরা আসার ফলে জেলা পরিষদে কাজের গতি আসবে, মনে করছেন অনেকে। নতুনদের কাজ করার তাগিদ থাকবে। এরফলে এলাকার মানুষও উপকৃত হবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের কথায়, “নতুনদের শুভেচ্ছা থাকল।” জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতির কথায়, “এ বার নতুন মুখের অনেকে জিতেছেন। কন্যাশ্রীরাও জিতেছেন। এতে নিশ্চিত ভাবেই জেলা পরিষদের কাজে গতি আসবে। সকলের প্রতি শুভেচ্ছা থাকছে।”
জেলা পরিষদে এ বার এমন তিন জন মেয়ে জিতেছেন, যাঁদের বয়স পঁচিশের আশেপাশে। মমতা মুর্মু, রিঙ্কু রুইদাস, কণিকা মান্ডি। মেদিনীপুর সদর ব্লক থেকে নির্বাচিত মমতা মুর্মু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। চন্দ্রকোনা-২ থেকে নির্বাচিত রিঙ্কু ঘাটাল কলেজের ছাত্রী। অন্য দিকে, ডেবরা থেকে নির্বাচিত কণিকা মান্ডি বছর তিনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছেন।
কণিকা মান্ডি বলেন, “১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে আমার বাবা প্রার্থী হয়েছিলেন। মাত্র এক ভোটে হেরেছিলেন। পরে শুনেছি, হারেননি, হারানো হয়েছিল। বাবাকে হারানোর জন্য ছাপ্পা মারা হয়েছিল।” ঘাটাল কলেজের ছাত্রী রিঙ্কু রুইদাসের কথায়, “মানুষের পাশে থাকতে চাই। দলকে ভালবাসি। তাই প্রার্থী হয়েছিলাম।” অন্য দিকে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মমতা মুর্মু বলেন, “কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেছি। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। তাই ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার মতো মেয়েকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি দলের কাছে কৃতজ্ঞ। এলাকার মানুষের কাছেও কৃতজ্ঞ।”
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Friday, September 14, 2018

পুরুলিয়ায় আদিবাসী খাদ্য ও পুষ্টি মেলা।

আদিবাসী কল্যান বিভাগ ও অনগ্রসর কল্যান বিভাগের উদ্যোগে পুরুলিয়ায় আদিবাসী খাদ্য ও পুষ্টি মেলা।

আদিবাসী কল্যান বিভাগের উদ্যোগে ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের পরিচালনায় গত শুক্রবার ১৪ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের ‘অনন্যা’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চত্বরে বসেছিল আদিবাসী খাদ্য ও পুষ্টি মেলা। বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, ‘‘জেলা স্তরের মেলাটি হয়েছে বোরোতে। আদিবাসী মহিলারা নিজস্ব ঘরানার বিভিন্ন খাবারের প্রদর্শনী করেছিলেন।’’ স্টলে মাংস পিঠে, মাছের পিঠে, ছাতু পিঠে নিয়ে বসেছিলেন হরিডি গ্রামের ঝর্না টুডু এবং সরস্বতী টুডু। তাঁরা বলেন, ‘‘শহরে কত রকম খাবার। কিন্তু এখানে আমাদের তৈরি খাবার চেখে দফতরের কর্তারা তারিফ করেছেন।’’ তাঁরা জানান, এই সমস্ত পদ পালা-পার্বনে হয়। তৈরি করতে সময় বেশি লাগে। তবে পদ্ধতি আর উপকরণ দুই-ই স্বাস্থ্যকর। তেল মশলার বালাই নেই। খেলে শরীর খারাপ হবে না।
বাংলার বিখ্যাত লেখক লীলা মজুমদারের গল্পে পদিপিসি একবার শুধু ঘাস দিয়ে এইসা চচ্চড়ি রেঁধেছিলেন, খেয়ে বড়লাট একেবারে থ! এ-ও প্রায় তেমনই। মাছের পিঠে। কী আছে? স্রেফ চালের গুঁড়ো, কুচো মাছ সেদ্ধ, নুন আর হলুদ। ব্যস! সব এক সঙ্গে মেখে শালপাতায় মুড়ে ঢিমে আঁচে ঘণ্টাখানেক রাখলেই হল। এমন নানা পদ রেঁধে-বেড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঝর্না টুডু, সরস্বতী টুডুরা।
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের জেলা প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ তাহেরুজ্জুমানও বলছিলেন, ‘‘আজকাল ফাস্ট ফুডের চল বাড়ছে, আর বাড়ছে রোগবালাই। সুষম খাবার বলতে যেটা বোঝায়, সেটা আদিবাসীরা নিজস্ব ঐতিহ্যের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বহন করে চলেছেন।’’ এ দিন স্টল থেকে বিভিন্ন পদের রেসিপি খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছেন তিনি।
পাশেই একটি স্টলে যেমন পাতার ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছিল ভুট্টা পোড়া। ভুট্টাকে স্থানীয় ভাবে বলা হয় জনড়। স্টলের দায়িত্বে থাকা পার্বতী টুডু, ময়না মুর্মুরা বলেন, ‘‘একটু লবন আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ জনড় জমে ভাল।’’ স্বাদ পরিবর্তনের জন্যে পাশেই রাখা ছিল গোটা মুসুর আর কলাই সেদ্ধ। মানবাজার মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমাণির আবার মন মজেছে তালের পিঠে আর খাপরা পিঠেতে। মুখে দিয়েই বললেন, ‘‘আহা, কী স্বাদ!’’ তালের পিঠের কারিগরদের নাম ঠিকানাও জেনে নিয়েছেন তিনি।
শুধু স্বাদ না, সজ্জাও রকমারি। বড়রাঙা গ্রামের প্রতিমা বাস্কে শালপাতা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানিয়েছিলেন। জঙ্গলের সরু কাঠি দিয়ে সেলাই করে পাতা থেকে তৈরি হয়েছিল খাবারের প্লেট, বাটি, গ্লাস, তরকারি রাখার পাত্র। পাতার বাটির বুনোন এত মজবুত, যে প্রতিমারা দাবি করলেন, ঝোল বা জল কিছুতেই গড়াতে পারবে না।
মেলায় এসেছিলেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি প্রতিমা সোরেন, জেলা পরিষদের সদস্য নিয়তি মাহাতো, সুমিতা সিংহ মল্ল, গুরুপদ টুডু, মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দ্রশেখর দাস প্রমুখ। মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। তিনি বলেন, ‘‘আমিও আদিবাসী। ছোটবেলায় এই ধরনের কত খাবার চেটেপুটে খেয়েছি। সেই স্মৃতিই ফিরে এল।’’ মেলায় আদিবাসী শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য ছিল পুরস্কারও।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, সমীর দত্ত, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

মদের নেশার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে স্বামীর ঘর ছাড়ছেন আদিবাসী মহিলারা।

বীরভূম জেলার সিউড়ির কাঁটাবুনি গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসী যুবক সুভাষ টুডুর স্ত্রী সুন্দরী টুডু মাস তিনেক আগে স্বামীর মদের নেশার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে রেগে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন। বলে গিয়েছিলেন হয় মদ ছাড়ো, না হলে আমাকে। তাঁর মান ভাঙাতে চার কিলোমিটার দূরের ভালকোয় শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন আদিবাসী যুবক সুভাষ টুডু। তবে লাভ হয়নি। নেশা ছাড়ার আঙ্গীকার না করতে পারায়, স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি ফেরেননি সুন্দরী। তিনি বলেছেন, ‘‘আগে বর নেশা ছাড়ুক। তার পরে ওর সঙ্গে যাব।’’ সুন্দরীর জেঠিমা বাহামনি মু্র্মূ বলেন, ‘‘কেন ও বাড়ি যাবে মেয়ে? জামাই নেশা করে সব টাকা উড়িয়ে দেয়। মেয়েটা না খেয়ে পশুর মতো খাটে। এমন চলতে পারে না।’’
সিউড়ির কাঁটাবুনি গ্রামের এমন ছবি শুধু সুভাষের পরিবার নয়, স্বামীর মদের নেশায় বিরক্ত হয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছেন আরও চার তরুণী। যাঁরা সব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর ঘর করছেন, তাঁরা এ বার নিজেদের স্বামীর মদের নেশার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে নেমেছেন লড়াইয়ে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায় যে, নগরী পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের বেশির ভাগ আদিবাসী জনজাতির। আদিবাসী সমাজে মদ খাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু মদের প্রকোপ কয়েক গুণ বেড়েছে বেআইনি মদ বিক্রির জেরে। সব চেয়ে বেশি সমস্যা পাথরায়। নগরী গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় রয়েছে পাথরা গ্রামেই। অভিযোগ, আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে চোলাই মদ বিক্রি ও তৈরিতে কার্যত ওই গ্রামটিই রয়েছে প্রথম সারিতে। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও চোলাই মদ এনে বিক্রি করা হয়। প্রশাসনিক নজরদারির ফাঁক গলে সে সব দেদার বিক্রিও চলে। শখানেক পরিবারের কাঁটাবুনি গ্রামে পড়েছে তার প্রভাব।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বেআইনি মদের কারবারীদের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমেছেন পাড়ার মহিলারা। একজোট হয়ে গ্রামের দুটি ও নগরী গ্রামের একটি বেআইনি চোলাইয়ের ঠেক ভেঙেছেন তাঁরা। মহিলাদের সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে কী ভাবে বেআইনি মদের কারবার ও নেশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সকলে। নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন, খবর দিচ্ছেন পুলিশকেও।
ওই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা প্রতিমা হেমব্রম. দাতামণি হেমব্রম, কমলী সরেন, ঊষা সরেনের কথায় ‘‘এ ছাড়া আর উপায় কী? পুরুষদের মদের নেশার জন্য প্রতি দিন অশান্তি লেগে থাকে। যা আয় হয় তার সবটাই মদের পিছনে উড়িয়ে দেয়। কী ভাবে সংসার চালাব! তাই গ্রামে মদ ঢোকাই বন্ধ করতে চাই। সঙ্গে চাই প্রশাসনকেও।’’
গ্রামের পুরুষ অধিবাসীদের একাংশও মানছেন সে কথা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আদিবাসী সমাজে মদ খাওয়ার চল রয়েছে। কিন্তু পরিবার না দেখে নেশার জন্য সব টাকা ওড়ানো অন্যায়। কিন্তু তা জেনেও হাতের নাগালে মদ পেয়ে নিজেকে সামলানো যাচ্ছে না। পরিণতি বুঝেও ওই পথে এগোচ্ছে অনেকে।’’
মদ না ছাড়লে পরিণাম কী হতে পারে, তা টের পাচ্ছেন লাড্ডু  মুর্মূও। নেশা ছাড়লে তবেই বাড়ি ফিরববলে বছরখানেক আগে পাড়ুইয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুড্ডু। চেষ্টা করেও তাঁকে ফেরানো যায়নি। জেলা আবগারি দফতর ও পুলিশের কর্তারা মানছেন এ ঘটনার সত্যতা। তাঁদের দাবি, নগরীর গ্রামগুলিতে অনেক বার মদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। বেআইনি মদের কারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চোলাই মদ তৈরির থেকেও ঝাড়খণ্ড থেকে মদ এনে  গ্রামে গ্রামে বিক্রি করার চল রয়েছে। তাতেই বেড়েছে সমস্যা। মহিলারা তা রুখতে এগিয়ে এলে প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে থাকবে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮। 

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ঝাড়গ্রামে আদিবাসী খাদ্য মেলা।


গত বৃহস্পতিবার ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঝাড়গ্রামে জেলাশাসকের অফিস প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে আদিবাসী খাদ্যমেলা। অনগ্রসর শ্রেণীকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে এই খাদ্যমেলা তিনদিন ধরে চলবে। মেলা উপলক্ষে জেলাশাসকের সভাকক্ষে আদিবাসীদের সুষম খাবার এবং খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি আলোচনা সভা হয়। এবিষয়ে আলোচনা করেন জেলাশাসক আয়েশা রানি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) অমিতাভ দত্ত প্রমুখ। খাদ্যমেলায় আদিবাসীদের বিভিন্ন খাবারের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
জেলাশাসক আয়েশা রানী বলেন, কম বয়সে অপুষ্টির জন্য মহিলাদের গর্ভাবস্থায় নানা রোগ দেখা দেয়। কী কী জিনিস খেলে আমাদের শরীর ভালো থাকবে, তা বিশেষ করে মহিলাদের জানতে হবে। আইসিডিএস সেন্টারে গর্ভবতী মহিলাদের এবিষয়ে বোঝানো হচ্ছে। আদিবাসী এলাকায় সচেতনতার অভাবে নানা রোগ হচ্ছে। জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ও সেখানকার স্কুলগুলিতে সুষম খাবারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে এধরনের কর্মসূচি হবে।
সৌজন্য - বর্তমান, ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশের উদ্যোগ পশ্চিমবাংলা সরকার ও পশ্চিমবাংলা সাঁওতালি একাডেমীর।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফের জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশের উদ্যোগ পশ্চিমবাংলা সরকার ও পশ্চিমবাংলা সাঁওতালি একাডেমীর।

সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফের জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আদিবাসী দপ্তরের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমি এই কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমিতে এবিষয়ে একটি বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর বইগুলি নতুন করে অলচিকি হরফে ছাপিয়ে প্রকাশ করা হবে।
১৯০৫ সালের ৫ মে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাঁওতালি সাহিত্যিক ও দার্শনিক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। সাঁওতাল সমাজে তিনি গুরু গমকেনামে পরিচিত। পেশায় শিক্ষক রঘুনাথবাবু মাত্র কুড়ি বছর বয়সে অলচিকি লিপির সৃষ্টি করেন। অলচিকি লিপির প্রচারে তিনি ১৯৬০ সালে আদিবাসী সোসিও এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ (অ্যাসেকা) বা আদিবাসী সমাজ শিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরি করেন। ওড়িশা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে এই সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কেবলমাত্র অলচিকিহরফের স্রষ্টা ছিলেন না। কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, যাত্রাপালা রচয়িতা ও বিদগ্ধ দার্শনিক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সাঁওতালি ভাষায় অলচিকিতে কবিতা, নাটক, উপন্যাস প্রভৃতি মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা উল্লেখ্যযোগ্য কাব্যগুলি হল- হড় সেরেঞ্জ’, ‘হিতল’, ‘বাহা সেরেঞ্জনাটকগুলির মধ্যে অন্যতম বিন্দু চাদান’, ‘দাড়েগে ধন’, ‘খেরওয়াল বির১৯৮২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়ের উদ্যোগে সাঁওতালি ভাষা থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে অভিধান বের করেছে রাজ্য সরকার। গত আগস্ট মাসে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঝাড়গ্রামে, বাঁকুড়ার খাতড়ায় এবং পুরুলিয়ায় দুটি করে সাঁওতালি মিডিয়াম স্কুল করা হবে। তিনি ২০০ জন সাঁওতালি শিক্ষক নিয়োগ করার কথা বলেন। যাতে অলচিকি হরফে স্কুলগুলিতে আরও ভালো পঠনপাঠন হয়। তিনি বলেন, আদিবাসীদের জন্য এর আগে কেউ কিছু করেনি। আমরাই স্কুল তৈরি করেছি। এখন নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত হয়েছে। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় হবে। অনুষ্ঠানে সাঁওতালি সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেনকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই অলচিকি হরফের জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত বই প্রকাশ করার উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ট্রাস্টকে চিঠি দিয়ে তাঁর রচনাবলী বের করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। তারপরই পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমির চেয়ারম্যান তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু সহ সংস্থার সদস্যরা গত ৮ সেপ্টেম্বর ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে যান। সেখানে রঘুনাথবাবুর নাতি চুনিয়ন রঘু মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁর নাতিকে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর লেখা বিভিন্ন রচনা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। আকাদেমির চেয়ারম্যান দুলাল মুর্মু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমস্ত রচনা রাজ্য সরকার প্রকাশ করবে। তাঁর রচনাবলী অলচিকি হরফে ছাপানো হবে। এতে আদিবাসী মানুষজন ও পড়ুয়ারা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর বিভিন্ন নাটক, উপন্যাস, কবিতা পড়তে পারবেন।
সৌজন্য – বর্তমান, ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Thursday, September 13, 2018

বীরভূমে পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান পদে তৃণমূলের প্রথম পছন্দ ‘আদিবাসী’ জনপ্রতিনিধিরা।


বীরভূম জেলায় পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান পদে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম পছন্দের তালিকায় ‘আদিবাসী’ জনপ্রতিনিধিরা।

বীরভূম জেলায় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের সামনের সারিতে আনছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, প্রধান ও উপপ্রধান পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন আদিবাসী প্রার্থীরাই। কোনও ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রধানদের পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য হিসেবেই রাখা হচ্ছে। প্রধান বা উপপ্রধান পদে নির্বাচিত করা হচ্ছে আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়েই এমন পদক্ষেপ করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহম্মদবাজার ব্লকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বিজেপির মিছিলে বেশির ভাগ ছিলেন আদিবাসী পুরুষ, মহিলা। তাঁদের হাতে থাকা তির, ধনুকের মোকাবিলাকরতে বেগ পেতে হয় শাসক দলকেও। ভোটের ফলাফলে রাজ্যের আদিবাসী জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও।
ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই তা-ই আদিবাসীদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় সূত্রে খবর, সেই কারণেই মহম্মদবাজারে আদিবাসী সম্মেলন করা হয়েছে। সাঁইথিয়া, বোলপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
শুক্রবার ১৪ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ রামপুরহাট ১ ব্লকের ৯টি অঞ্চলে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত করা হবে। গত বৃহস্পতিবার ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকালে রামপুরহাট ১ ব্লক নেতৃত্ব ৯টি অঞ্চলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে রামপুরহাট ১ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কারা প্রধান ও উপপ্রধান হবেন, সেই তালিকা নির্বাচিত সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় প্রধান ও উপপ্রধানদের নামের প্রস্তাবক, সমর্থনকারীদের নামও।
তালিকা অনুযায়ী রামপুরহাট ১ ব্লকের মাসড়া পঞ্চায়েতে প্রধান এবং উপপ্রধান পদে বসতে চলেছেন আদিবাসী জনজাতির প্রতিনিধিই। মাসড়া পঞ্চায়েতে ৩৬টি গ্রামের মধ্যে ৩৩টি আদিবাসী অধ্যুষিত। সেখানে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত ১০ সদস্যর মধ্যে ৭ জন আদিবাসী, ২ জন তফসিলি এবং এক জন সাধারণ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েতে প্রধান হওয়ার কথা ছিল প্রাক্তন প্রধান রেজাউল করিমের। উপপ্রধান পদে নাম এসেছিল আদিবাসী এক পঞ্চায়েত সদস্যের। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে মাসড়া অঞ্চলে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে দিলীপ কিস্কুকে। উপপ্রধান হবেন পার্বতী হেমব্রম। নারায়ণপুর, কুশুম্বা পঞ্চায়েতে উপপ্রধান হতে চলেছেন আদিবাসী জনপ্রতিনিধিই। বুধবার নলহাটি ১ ব্লকে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করা হয়। বানিওড় ও হরিদাসপুরে উপপ্রধান হয়েছেন আদিবাসী প্রতিনিধিই।
এ নিয়ে বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, আদিবাসী মানুষ এখন তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁদের ফের নিজেদের দিকে টানতেই এমন পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। জেলার আদিবাসী নেতা রবীন সরেন বলেন, ‘‘আদিবাসী প্রতিনিধিদের প্রধান, উপপ্রধান করা হচ্ছে। এটা ভালো দিক। আদিবাসী জনজাতির উন্নয়নের দিকে সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক  তথা রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য এ নিয়ে বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান পদ সংরক্ষিত। সংরক্ষণ নীতি মেনেই কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান এবং উপপ্রধান করা হয়েছে আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের। যেখানে সবাই তৃণমূলের সেখানে মন পাওয়া বা না পাওয়ার কী রয়েছে?’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। ছবি – প্রতীকী (সংগৃহীত)