বীরভূম জেলার সিউড়িতে তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের আহ্বানে
উপস্থিত গুজরাটের তরুণ দলিত নেতা জিগনেস মেওয়ানি।
গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বীরভূম জেলার সিউড়িতে তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর
ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের আহ্বানে ২৭ দফা দাবী নিয়ে জেলা শাসকের নিকট ডেপুটেশনে উপস্থিত
ছিলেন গুজরাটের তরুণ দলিত নেতা জিগনেস মেওয়ানি। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে
তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানালেন গুজরাটের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ
মেওয়ানি। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করবেন
তিনি বলে সমাবেশে জানালেন।
গত শুক্রবার ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুরে বীরভূম জেলার নানা প্রান্ত থেকে একাধিক
তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু সংগঠন জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে একত্রিত হয়।
মোট ২৭ দফা দাবি নিয়ে বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে দেখা করেন জিগনেশ
ও তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের নেতারা। জিগনেশ পরে বলেন, ‘এখানে
যারই সরকার হোক, মোদীর থেকে বেশি খতরনাক আর কেউ নেই। দিল্লিতে দলিত আদিবাসী বিরোধী
সংখ্যালঘু বিরোধী যে ফ্যাসিস্ট লোকতন্ত্র বিরোধী মোদী সরকার চলছে, তাকে হঠাতে তৃণমূল,
সিপিএম, কংগ্রেস সকলকে একজোট হতে হবে। দিল্লির এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠাতে হবে। ভগৎ
সিং ক্রান্তির (লড়াই) কথা বলেছেন।
মোদী সরকারকে সরাতে জিগনেস মেওয়ানি বলেন, ‘আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া
নিয়ে আজই কলকাতা গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করব। যাতে আগামী ২
অক্টোবর, ২০১৮ তাঁর সঙ্গে দেখা করে একজোট হওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে পারি। সব বিরোধী
ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলেই মোদী হাওয়া বেরিয়ে যাবে। আমরা লড়াই করে জিতে মোদীকে তাড়াবই।
কেন্দ্রে বিজেপি শাসিত এক ফ্যাসিস্ট সরকার চলছে। যেখানে গোরু রক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের
পিটিয়ে মারা হচ্ছে। আদিবাসী এবং দলিতদের জমি অন্যায় ভাবে দখল করে নেওয়া হচ্ছে।’
তাঁর এ রাজ্যে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে জিগনেস মেওয়ানি পরিষ্কার জানিয়েছেন, এ রাজ্যের
সরকারের চেয়েও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাঁর টার্গেট। তাঁর আশ্বাস, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচন
পর্যন্ত আমি লাগাতার পশ্চিমবঙ্গ সফর করব। এবং তার পরও করব। আপনারা যখন অসুবিধায় পড়বেন,
ডাকবেন। আমি আসব।’
প্রতিবাদ সভায় আগত আদিবাসীদের সাবধান করে তিনি বলেন, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচনের
এ রাজ্যে থাবা বসাতে চাইছে সঙ্ঘ আর বিজেপি। ওদের কোনও ভাবেই এ রাজ্যে জায়গা দেওয়া
হবে না। আমরা একজোট হয়ে ওদের এখান থেকে ভাগাবই। ওরা এখানে থাবা বসালে লোকসান হয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরকেও কটাক্ষ করেছেন দলিত নেতা। তিনি বলেন, ‘মোদীজির বিদেশে
যাওয়া দেশের ভালোর জন্য নয়। বিদেশে যাওয়া মুকেশ আম্বানির সঙ্গে সেটিং করার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে আদিবাসী ১০০ দিনের কাজের ইস্যুকে হাতিয়ার করে এ দিন
জিগনেস মেওয়ানি বলেন, ‘দেশের গরিব মানুষ কাজ পায় না। তারা চায় কাজ। মোদীজি আপনার ২
কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? রোজগারের প্রতিশ্রুতির নাম করে
মোদীজি দেশের বেকারদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছেন। জালিয়াতি করেছেন। সাড়ে চার বছরে ৯
কোটির জায়গায় ৯ লাখ লোকেরও চাকরি হয়নি।
গুজরাটের দলিত নেতার পশ্চিমবঙ্গ সফরে রাজনৈতিক সমীকরণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। যেহেতু
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম বীরভূমে আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপির বিস্তার ঘটেছে।
তাই সেই ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে জিগনেশ এই রাজ্যে বীরভূম জেলাকেই প্রথম টার্গেট করলেন
বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। তবে তফসিলি জাতি জনজাতি অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চ যে
শুধু বীরভূমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা পরিষ্কার জানিয়ে দিযেছে সংগঠনের সম্পাদক
সুনীল সোরেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা আগামী দিনে বাঁকুড়া-মুর্শিদাবাদ-বর্ধমানের মতো রাজ্য
জুড়ে সংগঠন বিস্তার করব। সারা রাজ্যকে চারটে জোনে ভাগ করে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৬
ডিসেম্বর কলকাতায় ২ লক্ষ মানুষের জমায়েত করে আমাদের দাবি পেশ করব।’
সৌজন্য – এই সময়, ২৯/০৯/২০১৮।