Friday, April 6, 2018

পশ্চিমবঙ্গে SC/ST দের ওপর অত্যাচারের নথিভুক্ত ঘটনা কম, পরিসংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন।


তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত পরিবর্তনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুঘণ্টা এ রাজ্যে রেল রোকো কর্মসূচি নিয়েছিল সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ৷ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন৷ দলিতদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সরব তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেরাও৷ দলিতদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতিও (এপিডিআর)৷ যদিও তফসিলি জাতি-উপজাতি ভুক্তদের উপর সংগঠিত অপরাধের নথিভুক্ত পরিসংখ্যানে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে রাজ্য৷ তবে ইতিপূর্বে অন্য ক্ষেত্রে অপরাধ নথিভুক্তিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘কম করে দেখানো’-র অভিযোগও রয়েছে৷ ফলে পরিসংখ্যান নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ এ রাজ্যে তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগের দৃষ্টান্তও নগণ্য৷ ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, তফসিলি জাতি-উপজাতি ভুক্তদের উপর অন্য কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ অপরাধ সংগঠিত করলে তবেই ১৯৮৯ সালের আইনটি প্রযোজ্য৷ স্বসম্প্রদায়ভুক্ত অপরাধে এই আইনে বিচারের সংস্থান নেই৷ সে ক্ষেত্রে বিচার হয়ে থাকে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ীই৷ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তফসিলি জাতিভুক্তদের বিরুদ্ধে ২০১৬-য় যেখানে সারা দেশে অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল ৪০ হাজার ৮০১টি, সেখানে এ রাজ্যে সংখ্যাটি মাত্র ১১৯৷ তার মধ্যে ২৬টি ঘটনায় শুধু বিশেষ আইনের ধারায় চার্জশিট দাখিল হয়েছে৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী (তথ্য জোগায় রাজ্যগুলিই), ওই বছর উত্তর প্রদেশে ১০ হাজার ৪২৬টি, রাজস্থানে ৫ হাজার ১৩৪টি, মধ্যপ্রদেশে ৪ হাজার ৯২২টি, বিহারে ৫ হাজার ৭০১টি, ওডিশায় ১ হাজার ৭৯৬টি অপরাধের ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল তফসিলি জাতিভুক্তদের বিরুদ্ধে৷ ২০১৬-য় এ রাজ্যে তফসিলি উপজাতি ভুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল ৮৩টি অপরাধ, সে সময় রাজস্থানে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৯৫টি, মধ্যপ্রদেশে ১ হাজার ৮২৩টি৷ দেখা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের ২০ মার্চের নির্দেশিকার বিরুদ্ধে জোরদার দলিত আন্দোলনও গড়ে উঠেছে উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলিতেই৷ এ রাজ্যে অপরাধ-পরিসংখ্যান তুলনামূলক কম হলেও, সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী কিংবা সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের নেতা মহম্মদ কামরুজ্জামান বিশেষ আইনের রক্ষাকবচ রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ এপিডিআর-র সাধারণ সম্পাদক ধীরাজ সেনগুন্তর বক্তব্য, এই আইনের অপপ্রয়োগ তো পরের কথা, আইনটি এখনও দলিতদের উপর নিগ্রহ রোধ এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই ব্যর্থ৷
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় আইনটির প্রয়োগ আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউলড কাস্টস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে আগে এফআইআর নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল৷ ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও অফিসার তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এই আইনে চার্জশিট দাখিল করতে পারেন৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার পর প্রাথমিক ভাবে এফআইআর দায়ের করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে৷ নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের হলেও, এর জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম দলগুলি এবং দলিত ও সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি৷ যদিও ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ১৯৮৯ সালের আইনটিকে সংশোধন করার উদ্যোগ কিন্তু নেওয়া হয়েছিল মোদী সরকারের আমলেই৷ ২০১৫-য় ওই আইনের সংশোধন করে গলায় জুতোর মালা পরানো, জাত তুলে গালিগালাজ করা, মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার মতো আরও কিছু ঘটনাকে অপরাধের তালিকাভুক্ত করা হয়৷ অনেকটাই বাড়ানো হয় আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণও৷
সৌজন্য – এই সময়, শুভ্রদীপ রায়, ০৫/০৪/২০১৮।

No comments:

Post a Comment