দেশজুড়ে দলিতরা যখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ
করছেন, তখন প্রবল চাপের
মুখে পড়া মোদী সরকার এসসি-এসটি আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনা করার
আবেদন পেশ করল৷ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে বিস্তারিত আবেদন
পেশ করেছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পক্ষ ছিল না৷ কিন্তু
সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে যে যুক্তি দিয়েছে, তার সঙ্গে ভারত সরকার একেবারেই সহমত নয়৷ ততক্ষণে অবশ্য
কংগ্রেস এবং মায়াবতী প্রধানমন্ত্রী মোদী-সহ বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে
মাঠে নেমে পড়েছেন৷ তীব্র হয়েছে দলিত-রাজনীতি৷ যে রাজনীতিতে এ দিন বিজেপিকে বেশ
বিপাকে ফেলে দিয়েছে, যার জেরে অমিত শাহও
তাঁর কর্নাটক সফর পিছিয়ে দেন৷ দলিতদের নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সবথেকে সরব কংগ্রেস ও
মায়াবতী৷ কারণ, এই দু’টি দলই দলিতদের ভোটের প্রধান দাবিদার৷ মায়াবতী মূলত
উত্তরপ্রদেশে, আর কংগ্রেস সারা
ভারতে৷ তবে এটাও সত্যি, গত নির্বাচনে
সবথেকে বেশি দলিত ও আদিবাসী সংরক্ষিত আসনে বিজেপি জিতেছিল৷ দলিত ও আদিবাসী
সাংসদদের সংখ্যার নিরিখে তাঁদের ধারেকাছে কেউ নেই৷ কিন্তু তার পর জল অনেকদূর
গড়িয়েছে৷ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাটে বিধানসভা ভোটে দলিতদের রোষের মুখে
পড়েছিল বিজেপি৷ এ দিন উত্তর ভারত জুড়ে যে ভাবে দলিতরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ
দেখিয়েছেন, তাতে মোদী-শাহর
চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক৷ রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ‘দলিতদের সমাজের সবথেকে নীচের স্তরে রাখাটা আরএসএস-বিজেপির
ডিএনএ-র মধ্যে ঢুকে গিয়েছে৷ যাঁরা এই চিন্তার বিরোধিতা করেন, তাঁদের ওরা হিংসা দিয়ে থামাতে চায়৷ হাজারো দলিত
ভাইবোন আজ রাস্তায় নেমে মোদী সরকারের বিরোধিতা করে নিজেদের অধিকার রক্ষার দাবি
করেছেন৷ আমি ওঁদের সেলাম করি৷’ উত্তরপ্রদেশের দলিত নেত্রী মায়াবতী হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘দলিতদের উপর অত্যাচার নিয়ে আমরা এমন আন্দোলন করব যাতে
মোদী সরকারকে হাঁটু মুড়ে বসতে হবে৷ আমরা হিংসাকে সমর্থন করি না৷ কিন্তু ভারত
বন্ধকে সমর্থন করেছি৷’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা মর্মাহত যে
আমার এত দলিত ভাইবোনের জীবনহানি হয়েছে৷ আহত হয়েছেন৷ আমরা ওঁদের দাবির পাশে আছি৷
শান্তি ফিরুক৷’ কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এই হিংসার জন্য কেন্দ্রকে
দায়ী করেছে৷ এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহ তাঁর প্রস্তাবিত কর্নাটক সফর বাতিল করেছিলেন৷
আজ যাচ্ছেন৷ বিজেপি সভাপতি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে, হরিয়ানার মনোহরলাল খাট্টার এবং উত্তরাখণ্ডের
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷ দলীয় সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, তিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপি সভাপতির কথা হয়েছে
মূলত রাজ্য সভাপতি হিসাবে কাকে নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে৷ এর মধ্যে রবিশঙ্কর প্রসাদ
বলেছেন, ‘সরকার দলিত ও
আদিবাসী আইন নিয়ে মামলায় কোনও পক্ষ ছিল না৷’ কংগ্রেস বলছে, ঠিক কথা৷ এই মামলাটি করেছিলেন মহারাষ্ট্রের একজন৷ কিন্তু সেই
সূত্র ধরে সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রকে নোটিস দেয়৷ যার জেরে অতিরিক্ত সলিসিটর সুপ্রিম
কোর্টে গিয়েছিলেন৷ গুলাম নবি আজাদ ও মল্লিকার্জুন খাড়গের প্রশ্ন, সরকার কি এই মামলার গুরুত্ব বোঝেনি ? কেন অ্যাটর্নি জেনারেল যাননি ? আর রায় আসার পর এত দিন ধরে চুপ করে বসেছিল৷
সৌজন্য – এই সময়, গৌতম হোড়, ০৩/০৪/২০১৮।
No comments:
Post a Comment