সুপ্রিম কোর্টের রায়ে SC/ST Attrocity
Act, 1989 সংশোধনের প্রতিবাদে ভারত বনধে বিপর্যস্ত ন’টি রাজ্য, নিহত অন্তত
৭।
কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। তো কোথাও অবরোধ।
দলিত সংগঠনগুলোর ডাকা ভারত বন্ধ নিয়ে সোমবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়ল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ,
বিহার, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে, হরিয়ানা ও দিল্লির মতো দেশের নয় রাজ্যে।
সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। সবচেয়ে খারাপ
পরিস্থিতি মধ্যপ্রদেশে। দলিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে পুলিশে খণ্ডযুদ্ধে সেখানে পাঁচ জনের
মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা কম করে ছ’জন। সোমবার সকালের দিকে প্রথম বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছিল
পঞ্জাব ও ওডিশা থেকে। এর পর তা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়র এবং মোরেনায় আন্দোলনকারী
দলিতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ছাত্র
নেতা। মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ, সাগর এবং সাতনা জেলা থেকেও সংঘর্ষের খবর এসেছে। ভাঙচুর করা
হয়েছে যানবাহন। দলিত বিক্ষোভ ঠেকানোর জন্য গ্বালিয়রে আপাতত বড় জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করা হয়েছে। কাল সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি দলিতদের ডাকা ধর্মঘট
নিয়ে অশান্ত হয়ে উঠেছে বিজেপি শাসিত রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ড। রাজস্থানের জয়পুর ও আলওয়ারে
অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কম করে ৩০ জন আন্দোলনকারীকে। ঝাড়খণ্ডে
বন্ধ ভাঙার জন্য পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছে। রাজস্থানে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। অন্য
দিকে উত্তরপ্রদেশেও এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
দলিতদের দাবিকে সমর্থন করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
নীতীশ কুমার। তবুও তাঁর রাজ্যও থেকেও কিন্তু অশান্তির খবর এসেছে। ভীম আর্মির কর্মীরা
পটনায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। আটকে দেওয়া হয় ট্রেন।
ওডিশার সম্বলপুরে দলিতদের একটি সংগঠনের রেল অবরোধে নাস্তানাবুদ হতে হয় যাত্রীদের।
সড়ক অবরোধের জেরে থমকে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটা জায়গার যান চলাচল। সেখানে
বেশ কয়েকটা গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে।
দলিতদের ডাকা ভারত বনধ নিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে,
এই রায়ের বিরোধিতা করে তারা নতুন করে আদালতে আবেদন জানিয়েছে। পঞ্জাবে তফশিলি জাতি ও
উপজাতিভূক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। সেখানকার কংগ্রেস সরকার জানিয়ে দিয়েছে,
‘‘দলিতদের দাবি ন্যায্য।” কিন্তু শুধুমাত্র পঞ্জাবে পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে বিতর্কের
মুখে পড়ে গিয়েছে সিবিএসই। শুধু তো পঞ্জাব নয়, বনধের প্রভাব পড়েছে অন্য রাজ্যের উপরেও।
তা হলে শুধুমাত্র পঞ্জাবেই কেন পরীক্ষা বাতিল? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
থমকে গিয়েছে পঞ্জাবের স্বাভাবিক জনজীবন। অপ্রীতিকর
ঘটনা এড়াতে সোমবার পঞ্জাবের সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থগিত করে দেওয়া হয়
সেই রাজ্যে সিবিএসই-র দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত পরীক্ষা।
গত ২০ মার্চের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তফশিলি
জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচার বন্ধের যে আইন রয়েছে, তা সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে
ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনও সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার
করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোনও সাধারণ নাগরিকের
বিরুদ্ধেও যদি একই অভিযোগ ওঠে, তবে তাঁকে গ্রেফতারের আগে ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও পুলিশ
আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। এরই প্রতিবাদে এ দিন ভারত বনধের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রীয়
সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট পর জাস্টিস, সিআইটিইউ, ভারিপ বহুজন মাহাসঙ্ঘের মতো
বেশ কয়েকটা সংগঠন। তাদের দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ দলিতদের স্বার্থের পরিপন্থী।”
দলিতদের ক্ষোভ সামাল দিতে চেষ্টার অন্ত নেই
কেন্দ্রের। আগেকার রায়কে নতুন করে বিবেচনা
করার জন্য তারা ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০২/০৪/২০১৮।
No comments:
Post a Comment