পদাতিক বাহিনী ব্যর্থ৷ তাই আদিবাসী তিরন্দাজ
বাহিনী নামিয়ে ইটাহার ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গেল বিজেপি৷ তাঁদের রণমূর্তি দেখে
পুলিশ পালাল৷ তৃণমূলও পগার পার৷ ইটের আঘাতে এক এএসআই সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম
হলেন৷ জানলা-দরজা বন্ধ করে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচান আতঙ্কিত বিডিও ও তাঁর সহকর্মীরা৷
গত দু’দিন ধরেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিলেন, তৃণমূলের ঠ্যাঙারে বাহিনীর
দাপটে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না৷ গত মঙ্গলবার বিজেপির এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী
সহ তাঁর প্রস্তাবক ও সমর্থকদের তৃণমূলের মস্তান বাহিনী মারধর দিয়ে মনোনয়নপত্র কেড়ে
নিয়ে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ৷ সেদিনই বিজেপি নেতৃত্ব ইটাহারের বিডিও এবং ওসিকে হুমকি
দিয়ে যান, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে এর পর থেকে সশস্ত্র আদিবাসী মিছিল নিয়ে মনোনয়ন
জমা দিতে আসবেন তাঁরা৷ বৃহস্পতিবার সেই হুমকিরই বাস্তব রূপ দেখাল বিজেপি৷ এ দিন সকাল
থেকেই ইটাহার উত্তরপাড়াতে পার্টি অফিসে ভিড় করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা৷ তাঁদের মধ্যে
ছিলেন তির-ধনুক ও রামদা হাতে আদিবাসীরাও৷ বিজেপি প্রার্থীদের আগে বেলা ১ টা নাগাদ সিপিএমের
এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূলের বাহিনীর হাতে মার খেয়ে ফিরে
আসেন বলে অভিযোগ৷ এর পর আদিবাসী মহাসভার জেলা সম্পাদক তথা সিপিআই নেতা রবিন কিস্কু,
সিপিআই লোকাল কমিটির সম্পাদক অজয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন ও পঞ্চায়েত সমিতির
এক বাম প্রার্থী মনোনয়ন দিতে এলে তাঁদেরকেও মারধর দিয়ে ও মনোনয়নের কাগজপত্র কেড়ে তাড়িয়ে
দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই সশস্ত্র আদিবাসী তিরন্দাজ বাহিনীকে সামনে
রেখে কয়েকশো বিজেপিকর্মী মিছিল করে তাঁদের প্রার্থীদের নিয়ে বিডিও অফিসের দিকে রওনা
দেন৷ এই খবর কানে পৌঁছতেই তৃণমূলের কর্মীরা আড়ালে সরে যান৷ অশান্তি আঁচ করে পুলিশ বাহিনী
তৎপর হয়ে ওঠে৷ ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিকের নেতৃত্বে ইটাহার থানার ওসি বিশাল র্যাফ
ও কমব্যাট ফোর্স নিয়ে বিডিও অফিসের পশ্চিম দিকের ব্যারিকেডে পজিশন নিয়ে দাঁড়ান৷ বেলা
দু’টো নাগাদ ব্যারিকেডের কাছে মিছিল এসে পৌঁছতেই এক এক করে সমস্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন
জমা দিতে ঢোকানো হয়৷ প্রায় জনা চল্লিশেক বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ঢুকে পড়েন কয়েকজন বাম
প্রার্থীও| গত দু’দিন ইটাহার ব্লক চত্বর যেখানে ছিল বিরোধী শূন্য, সেখানে এ দিনের চিত্রটা ছিল পুরোপুরি
উল্টো৷ প্রায় ৪০-৪৫ জন প্রার্থী ডিসিআর কাউন্টারের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ কিন্তু
কিছুক্ষণ পরই নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় বিডিও মাইকে ঘোষণা করে জানিয়ে দেন,
আজকের মতো ডিসিআর কাটা ও মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ বন্ধ৷ ইতিমধ্যে তৃণমূলের এক অঞ্চল নেতা
একদল যুবককে নিয়ে এসে ডিসিআর রুমে ঢুকে হাঙ্গামা শুরু করে৷ ওই নেতার অভিযোগ, সময় শেষ
হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বিরোধী প্রার্থীদের ডিসিআর কাটার সুযোগ
করে দিচ্ছে৷ এ নিয়ে বিডিও এবং ওসির সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ এ খবর পৌঁছতেই
ব্যারিকেড ভেঙে বিডিও অফিস চত্বরে সশস্ত্র আদিবাসী বাহিনীর নেতৃত্বে ঢুকে পড়েন বিজেপি
কর্মীরা৷ শুরু হয় তাণ্ডব৷ সেই রণমূর্তি দেখে পিছু হটে পুলিশ৷ পুলিশকে লক্ষ করে শুরু
হয় ইটবৃষ্টি৷ ভয়ে পরিচয় লুকোতে উর্দি খুলে ফেলেন কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার৷ গেঞ্জি
গায়ে পালাতে দেখা যায় তাঁদের৷ আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন পুলিশ আধিকারিকরা৷ বিডিও অফিসের
কর্মীরাও গেট বন্ধ করে দেন৷ প্রায় আধ ঘন্টা তাণ্ডব চালানোর পর চৌরাস্তা মোড়ের কাছে
গিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী সমেত বিজেপি
কর্মীরা৷ সেখানে একটি গাড়িও ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ৷ ঘণ্টা খানেক পর পুলিশের অনুনয়-বিনয়ে
অবরোধ ওঠে৷ ইটাহারের বিডিও রাজু লামা বলেন, ‘একটা গোলমাল হয়েছে৷ তবে ভেতরে কিছু হয়নি৷
যা হয়েছে বাইরে আছে৷ ’তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘বিজেপির
কোনও জনসমর্থন নেই৷ তাই এ ভাবে একটা অরাজক পরিস্থিতি ও অশান্তির সৃষ্টি করে পঞ্চায়েত
নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করছে৷ ওরা কিছু আদিবাসী ভাইকে ভুল বুঝিয়ে খেপিয়ে
তুলে এ সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে৷ আমরা চাই, পুলিশ আরও কড়া হাতে বিজেপির এই গুন্ডাগিরি দমন
করুক৷’বিজেপির জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নিমাই সিং বলেন, ‘টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কিছু
প্রার্থী ডিসিআর কাটা সত্ত্বেও আজ মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন৷ সেই সময়
তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বে একদল যুবক আমাদের ওই প্রার্থীদের ডিসিআর রসিদ ও
মনোনয়ন পত্র ছিড়ে দেয়৷ এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আমাদের কর্মীরা৷’
সৌজন্য – এই সময়, রণবীর দেব অধিকারী, ০৬/০৪/২০১৮।
No comments:
Post a Comment