এক সপ্তাহ আগেই দলিতদের ডাকা ভারত বন্ধ
ঘিরে মৃত্যু এবং অশান্তি নিয়ে এখনও হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি। তার মধ্যেই গত মঙ্গলবার
১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ ফের ভারত বন্ধ। তবে এই বন্ধের হাওয়া উঠেছে মূলত সোশ্যাল
মিডিয়ায়। এবং এ বারে বন্ধের ডাক দিয়েছে উচ্চবর্ণদের একটি সংগঠন, দলিতদের সংরক্ষণের বিরোধিতা করে। আর এতেই নড়েচড়ে
বসেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আগেভাগেই সব রাজ্যকে সতর্কতার নির্দেশ দিল স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রক।
দলিতদের বন্ধের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ১০
এপ্রিল পাল্টা বন্ধ নিয়ে প্রচার ছড়ায় ‘অমিত শাহ ফ্যান ক্লাব’-এর নামে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক খোঁজ নিয়ে দেখে, পুরোটাই ভুল প্রচার। যে কারণে খোদ অমিত শাহ একাধিক
টুইট করে জানান, বিজেপি কোনও ভাবে
দলিতদের সংরক্ষণ তুলতে চাইছে না। এর মধ্যেই রাজস্থানের উচ্চবর্ণের সংরক্ষণের
দাবিতে বড় সভা ডাকে করণি সেনা। পাশাপাশি ব্রাহ্মণ, রাজপুত, জাঠ ও গুজ্জরদের নিয়ে ‘সর্ব সমাজ’ নামে একটি সংগঠনও ভারত-বন্ধের ডাক দিয়েছে।
বিজেপি সূত্রে বক্তব্য, দলিতদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে দলের উচ্চবর্ণের
ভোটব্যাঙ্কে আঁচ আসবে, এটা জানাই ছিল।
কিন্তু এখন দলিত-কাঁটা দূর করাই গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য। ফলে কোনও ভাবেই বিজেপি বা
সঙ্ঘ এ ধরনের পাল্টা বন্ধ ডেকে নিজের পায়ে কুড়ুল মারবে না। এই অবস্থায় ভারত বন্ধের
ডাক ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যকে
আগাম সতর্কতা হিসেবে সব রকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু গোষ্ঠী বন্ধ ডেকেছে। আইনশৃঙ্খলা
রক্ষার দায়িত্ব থাকবে জেলাশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারদের উপরে। দরকার হলে স্পর্শকাতর
এলাকায় টহলদারি বাড়াতে হবে।
তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর নির্যাতন প্রতিরোধী
আইন লঘু করার অভিযোগ তুলে গত ২ এপ্রিল, ২০১৮ সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন দলিত সংগঠনের ডাকা ভারত বন্ধে হিংসা
ছড়িয়েছিল দেশে। সংরক্ষণ-বিরোধীদের ডাকা বন্ধেও এড়ানো গেল না রক্তপাত। বনধের দিনে
বিহারে গোলমালে জখম হয়েছেন ১২ জন। দলিত এবং সংরক্ষণ-বিরোধীরা এ ভাবে পর পর মাঠে
নামায় উভয় সঙ্কটে পড়েছে বিজেপি।
গত সপ্তাহে দলিত সংগঠনগুলির ডাকা বন্ধে
গোলমালের প্রেক্ষিতে আগেই সমস্ত রাজ্যগুলিকে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রক। বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারণ, গত সপ্তাহের বন্ধে ওই রাজ্যগুলিতে হিংসা ছড়িয়েছিল। দলিত
সংগঠনগুলির ডাকা বন্ধে হিংসায় অভিযুক্ত ১২ জনের জামিনের আর্জিও খারিজ করেছে
উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত।
অন্য রাজ্যগুলিতে তেমন গোলমাল না হলেও
বিহারে হিংসা এড়ানো যায়নি। গয়া, লখিসরাই, আরা, মুজফ্ফরপুর, নওয়াদা, পটনা, বেগুসরাইয়ে রাস্তা আটকে মিছিল, বিক্ষোভ এবং ভাঙচুর চালায় বন্ধ সমর্থকেরা। আরাতে
গোলমাল রুখতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। বেগুসরাইয়ের লাখো থানার ওসিকে গুলি করে
বন্ধ সমর্থকেরা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছাপরাতে পোড়ানো হয়েছে
পুলিশের গাড়ি। এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ হাজিপুরের সুভইয়ের লোভা গ্রামের কাছে
মহুয়া রোডে বন্ধ সমর্থকদের বিক্ষোভের জেরে পড়েন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ
প্রতিমন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মোতিহারি
যাচ্ছিলেন। বিক্ষোভের জেরে আটকে পড়ায় যেতে পারেননি। লোকসমতা পার্টির কোষাধ্যক্ষ
রাজেশ যাদবের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
গাড়ি আটকে ধাক্কাধাক্কি ও গালিগালাজ করা হয়। ‘জাতিবাদী’ বলে অপমান করা হয় উপেন্দ্রকে।
এই ঘটনায় হিন্দি বলয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে
বিজেপি। আরএসএস নেতা মোহন ভাগবত গত চার বছরে বহু বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সংবিধানে সংরক্ষণেরই বিরুদ্ধে সঙ্ঘ। এ দিকে ২ এপ্রিল
দলিতদের স্বার্থ আঘাত পেয়েছে বলে ভারত বন্ধ পালিত হয়েছে। রাহুল গাঁধী গত কাল
রাজঘাটের অনশনে ঘোষণা করেছেন, মোদী দলিত বিরোধী।
আবার উচ্চবর্ণের হিন্দু সংগঠনগুলি দলিত
সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ভারত বন্ধের ডাক দেয়। আকস্মিক ভাবে রাজস্থানের করণী সেনাও এই বন্ধ
সমর্থন করে। বিহারে রণবীর সেনা উচ্চবর্ণের পক্ষে এবং উত্তরপ্রদেশের ভীম সেনা
উচ্চবর্ণের রাজনীতির বিরোধিতায় নামে। বিজেপির নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক বরাবর উচ্চবর্ণের
হিন্দু ভোট। তবে ক্রমশ বিজেপি দলিত সমাজকেও কাছে টেনে নিয়ে হিন্দু ভোটকেও সুসংহত
করার চেষ্টা করছে। ফলে জাতপাতের এই লড়াইয়ে বিপাকে প়ড়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ ও ১১ এপ্রিল, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment