Thursday, April 12, 2018

কাশ্মীরের মন্দিরে কেয়ারটেকার আর পুলিস মিলে ছোট্ট শিশুকে ধর্ষণ ও খুন।


সবে তো আট। জীবনে এখনও অনেকটা রাস্তা পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল শিশুটির। কিন্তু তার আগেই নিষ্ঠুরভাবে তার ছোট্ট শরীরকে গিলে খেল ৬ জন মিলে। যাদের মধ্যে আবার ২ জন পুলিসও ছিল। রেয়াত করল না মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। আট বছরের শিশুকে খুন করার আগেও ধর্ষণ করা হয়েছিল। জম্মুকাশ্মীরের কাঠুয়ার একটি গ্রামের মন্দিরের ভেতর নির্মমভাবে ৬ জন মিলে ওই শিশুকে ক্রমাগত গণধর্ষণ করে চলে। ৬ জনের মধ্যে একজন শুধুমাত্র নিজের লালসার পরিতৃপ্তির জন্য মিরাট থেকে কাঠুয়াতে আসে। পুলিস এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য চার্জশিটের মাধ্যমে আদালতকে জানিয়েছে।
চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই শিশুকে অপহরণ করে একসপ্তাহ ধরে তার ওপর চলে এই যৌন নির্যাতন। এরপর তাকে গলা টিপে খুন করা হয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার মুখের ওপর বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে অভিযুক্তরা। ধর্ষণ এবং খুনের এরকম হাড়হিম করা বর্ণনা শুনে অবাক হয়ে যায় আদালতে উপস্থিত সকলে। এই ঘটনার চারমাস পর সোমবার জম্মুকাশ্মীর পুলিস আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৫ পাতার চার্জশিট গঠন করে তা পেশ করে আদালতে। পুলিস জানায়, অভিযুক্তরা পরিকল্পনা করে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার কৌশল করেছিল আট বছরের শিশুকে। কিন্তু তার আগে চলে শিশুটির ওপর অকথ্য অত্যাচার।
চার্জশিটে মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে কাঠুয়ার ‘‌দেবীস্থান’‌ (‌ছোট মন্দির)এর কেয়ারটেকার সাঞ্জি রামের নাম রয়েছে। সাঞ্জি রামকে জেরা করেই বাকি ৫ জনের নাম সামনে আসে। অভিযুক্তরা হল বিশেষ পুলিস আধিকারিক দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দর বর্মা, তাদের বন্ধু প্রবেশ কুমার ওরফে মন্নু, সাঞ্জু রামের ছেলে বিশাল জানগোত্রা এবং তার  ভাইপো। চার্জশিট অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি সাঞ্জি রামের ভাইপো বিশালকে ফোন করে মিরাট থেকে কাঠুয়াতে ফিরে আসতে বলে। বিশাল মিরাটে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। তাকে মিরাট থেকে নিজের যৌন লালসাকে সন্তষ্ট করার জন্য এখানে আসতে বলা হয়। জঙ্গলের মধ্যে যখন শিশুটিকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিস আধিকারিক দীপক খাজুরিয়ার আবার শিশুটিকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা জেগে ওঠে। খুন করার আগে পর্যন্ত তাকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর শিশুটির মাথায় দু’‌বার পাথর দিয়ে আঘাত করে এবং পরে মৃতদেহটিকে জঙ্গলের মধ্যে পুঁতে দেওয়া হয়। যদিও অভিযুক্তদের পরিকল্পনা ছিল দেহটিকে খালের জলে ফেলে দেওয়ার। কিন্তু গাড়ি না থাকায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেওয়া হয়। চার্জশিটে আরও দুই পুলিস কর্মীর নাম রয়েছে। যারা সাঞ্জি রামের থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে এই ঘটনার প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছিল।
১৭ জানুয়ারি জঙ্গল থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ জানুয়ারি জঙ্গলে ঘোড়া চরাতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আট বছরের শিশু। তদন্তকারীদের অনুমান, জঙ্গলে ঘোড়া হারিয়ে যাওয়ায় বেশ ঘাবড়ে পরে ওই শিশুটি। তখন অভিযুক্তরা তার ঘোড়া খুঁজে দেওয়ার অছিলায় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার একদিন পরই শিশুটির পরিবার মন্দিরে গিয়ে অভিযুক্ত সাঞ্জি রামকে তাঁদের নিখোঁজ মেয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু সাঞ্জি রাম জানায়, শিশুটি হয়ত তার কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে। যদিও শিশুটিকে অচৈতন্য করে মন্দিরের ভেতরেই রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরই অপহরণ ও খুন করে শিশুটিকে। সঙ্গে ছিল সাঞ্জি রামের ছেলে ও দীপক খাজুরিয়া। পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কাজ করানো হয় সাঞ্জি রামের ভাইপোকে দিয়ে। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে যে সাঞ্জি রামই ছিল তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে।
কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে কাঠগড়ায় বিজেপি নেতারা। ভিকে সিং একদিকে অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির কথা যেমন বলেছেন। তেমনই জম্মুকাশ্মীরের দুই বিজেপি নেতা অভিযুক্তদের পাশে আছেন। এমনকি অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে তারা মিছিলেও অংশ নিয়েছেন। মুফতির মন্ত্রিসভার বিদেশ মন্ত্রী চৌধুরী লাল সিং ও শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী চন্দরপ্রকাশ গঙ্গা হিন্দু একতা মঞ্চ আয়োজিত এই মিছিলে বুধবার পুরোদমে ছিলেন। দোষীদের নির্দোষ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন দুই মন্ত্রী। যা একেবারেই মানতে পারছেন না মেহবুবা মুফতি। নিজের মন্ত্রিসভার দুই দায়িত্ববান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাই রাজনাথের কাছে নালিশ ঠুকে এসেছেন। তাতে আবার বেজায় চটেছে বিজেপি নেতৃত্ব। চার্জশিট পেশের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং বৃহস্পতিবার এই নারকীয় কাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন! তাঁর বক্তব্য, ‘আসিফার কাছে মানুষ হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু ও সুবিচার পাবে।যদিও আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং একমাস আগেই অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কাঠুয়া পড়ে। জীতেন্দ্র বলেছিলেন, ‘এই ঘটনায় যারা নির্দোষ। তারা সুবিচার পাবেই।এমনকী জীতেন্দ্র সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন মেহবুবা মুফতি। যার জেরে জম্মুকাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে বিজেপির। বুধবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন মেহবুবা। যেখানে কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন মুফতি। মেহবুবা বিরক্ত বিজেপি নেতারা অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ানোয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই রাজঘাটে অনশনে বসার কথা জানিয়েছেন দিল্লি মহিলা কমিশমের প্রধান স্বাতী মালিয়াল।
সৌজন্য – আজকাল পত্রিকা, বৃহস্পতিবার ১২ এপ্রিল, ২০১৮।

No comments:

Post a Comment