Tuesday, April 3, 2018

আদিবাসী-দলিতদের ন্যায়বিচার পাবার আশা আকাশকুসুম, স্পষ্ট সরকারি রিপোর্টেই।


দেশ জুড়ে আদিবাসী-দলিত বিক্ষোভ এবং তার মোকাবিলায় রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগে ৯ জনের মৃত্যুর দিনেই তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনে শীর্ষ আদালতের ২০ মার্চের নির্দেশের পুনর্বিচার চাইল কেন্দ্র৷ ওই নির্দেশের পর থেকেই তফসিলি জাতি-উপজাতি ভুক্তদের ক্ষোভ বাড়ছিল৷ সেই ক্ষোভই সোমবার ফেটে পড়ে দেশের নানা জায়গায়৷ ওই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে, এমন পর্যবেক্ষণের সূত্রে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে বিরোধীরা নিশানা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারকেই৷ তাদের বক্তব্য ছিল, কেন্দ্র আদালতে আদিবাসী-দলিতদের স্বার্থরক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি৷ এর পিছনে কেন্দ্রের শাসকদলের উচ্চবর্ণবাদী রাজনীতি কাজ করেছে বলে শুধু বিরোধী দলগুলিই নয়, দলিত সমাজেও সন্দেহ তৈরি হয়৷
বস্তুত, সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ১৯৮৯-র তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের অপপ্রয়োগ তো পরের কথা, আইনটি এখনও আদিবাসী-দলিতদের উপর নিগ্রহ রোধ ও তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই ব্যর্থ৷
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাজ্যসভায় লিখিত প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির যে তথ্য পেশ করেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩-য় এই আইনে মামলা হয়েছে ৪৬,১১৪টি, সাজা হয়েছে মাত্রই ৯,৭৭৮ জনের, বিচার বকেয়া ১,১৭,২১৯টি মামলায় (পুরোনো ধরে)৷ ২০১৪-য় এই সংখ্যাগুলি যথাক্রমে ৪৭,১২৬ ও ১১,৫৬৬ এবং ১,১৯,৪৭৬৷ ২০১৫-য় ৪৪,৮৩৯ ও ৯,৮৫৫ এবং ১,১৩,৫১৭৷ অর্থাৎ মামলা রুজু হলেও তদন্ত বা বিচার চলছে শম্বুক গতিতে বা চলছেই না৷ আর কে না জানে, ক্ষমতাশালীদের নিগ্রহের মুখে সমাজের দুর্বলতম অংশের অভিযোগ জানানোরই সাহস-সামর্থ্য হয় না বেশির ভাগ সময়ে৷ ২০১৬ সালে তফসিলি জাতিভুক্তদের নিগ্রহ নিয়ে মামলা হয়েছিল ৪০,৭৭৪টি, উপজাতিভুক্তদের নিগ্রহে মোটে ৬,৫৬৪টি৷ সাজার হার ছিল মাত্রই ২৪.৯ শতাংশ৷ প্রায় ৮০ শতাংশ মামলার বিচারই শেষ হয়নি৷ অথচ দ্রুত বিচার এই আইনের অন্যতম তো দূর অস্ত্! নানা দিক থেকে প্রবল চাপে শীর্ষ আদালতের ২০ মার্চের নির্দেশের পুনর্বিচার চেয়ে সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আবেদন করে কেন্দ্র৷ যদিও আদালত দ্রুত শুনানি হবে না বলে জানিয়েছে৷ এতে বিক্ষোভ প্রশমন নিয়ে বিড়ম্বনা বেড়েছে কেন্দ্রের৷ তবে বিরোধীদের কথা অনেকাংশেই যে মানতে হচ্ছে কেন্দ্রকে, তা আদালতে সরকারের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে৷ কেন্দ্রকে বলতে হয়েছে, তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের অপপ্রয়োগের চেয়ে বরং আইনটির দুর্বলতার বেশি সুযোগ নিচ্ছে নিগ্রহকারীরা৷ ২০ মার্চ বিচারপতি এ কে গোয়েল ও বিচাপতি ইউ ইউ ললিতের বেঞ্চ এই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে এমন পর্যবেক্ষণের সূত্রে আইনের ১৮ নম্বর ধারাটি কার্যত রদের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ ওই ধারায় অভিযুক্তের আগাম জামিন চাওয়ার অধিকার ছিল না৷ অভিযোগ হলে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতারের সুযোগ ছিল৷ বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার আগে অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখবেন (সরকারি কর্মীর ক্ষেত্রে তার বিভাগীয় প্রধান)৷ অভিযোগ ঠিক মনে হলে তবে এফআইআর রুজু করা যেতে পারে৷ বিরোধী ও তফসিলি জাতি-উপজাতি সংগঠনগুলির বক্তব্য, ঐতিহাসিক-সামাজিক কারণেই নিরাপত্তাহীনতা নিত্যসঙ্গী আদিবাসী-দলিতদের৷ তার উপর শীর্ষ আদালত নির্দেশিত আইনের পরিবর্তন তাদের আরও অরক্ষিত করবে৷ উচ্চবর্ণের নিগ্রহকারীদের পোয়াবারো হবে৷ কেন্দ্র সেই যুক্তি মেনেই পুনির্বচারের আবেদন জানিয়েছে৷ বিচারে বিলম্ব, তদন্তে ঢিলেমি ইত্যাদি নানা কারণে তফসিলি জাতি-উপজাতি ভুক্তরা যে বরং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কবুল করতে হয়েছে৷
সৌজন্য – এই সময়, ০৩/০৪/২০১৮।

No comments:

Post a Comment