Monday, April 2, 2018

আদিবাসী-দলিতদের ক্ষোভের কারণটা কোথায়?




তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন রোধ আইনের (SC/ST – Prevention of Attrocity Act, 1989) অপব্যবহার রুখতে সম্প্রতি রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের উপর নিগ্রহ রুখতে ১৯৮৯ সালে ওই আইন তৈরি করেছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। ২০১৫-য় সেই আইনে সংশোধনী আনা হয়। সেখানে এই আইনকে আরও বেশি সক্রিয় করা হয়েছিল। উচ্চবর্ণের কেউ তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের কারও মাথা বা গোঁফ কামিয়ে দেন, কাউকে যদি দলিত বলে অপমান করেন, সেই ঘটনাকেও জামিন অযোগ্য অপরাধের আওতায় আনা হয় ওই সংশোধনীতে।
কিন্তু, সম্প্রতি ওই তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন রোধ আইন নিয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দিয়েছে, এই সংক্রান্ত কোনও মামলা রুজু করার আগেই প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। এমনকী, অভিযুক্তকে আগাম জামিনও দেওয়া যেতে পারে। আর এই রায়েই কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপি-র দলিত নেতারাও ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, দলিতদের হাতে আগে যে অধিকার ছিল শীর্ষ আদালতের রায়ে তা খর্ব হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, মোদী সরকার এই প্রসঙ্গে আদালতে কোনও বিরোধিতা করেনি। এমনিতেই অন্ধ্রপ্রদেশে দলিত ছাত্র নেতা রোহিত ভেমুলার অস্বাভাবিক মৃত্যু থেকে গুজরাতের উনা বা সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও একের পর এক দলিত নিগ্রহের ঘটনায় এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বিজেপি ও মোদী সরকার। সোমবার সেই পরিস্থিতিতে দেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ দলিত বিক্ষোভ এবং বন্‌ধে আরও বেসামাল হয়ে পড়ল তারা।
ওই আইনের অপপ্রয়োগের অভিযোগ জানিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব ছিল উচ্চবর্ণদের কয়েকটি সংগঠন। সাম্প্রতিক সময়ে ওই আইনের ধারায় অভিযোগ দায়ের হওয়া কতগুলি মামলা শেষ পর্যন্ত ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যসভায় তা জানতে চেয়েছিলেন অমর সিংহ। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির জানিয়েছিলেন, গোটা দেশে তফসিলি জাতির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫ শতাংশ অভিযোগ ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য দিকে, তফসিলি জনজাতির ক্ষেত্রে প্রায় ১৭ শতাংশ অভিযোগ সঠিক নয়। ওই আইনে কিছু রক্ষাকবচের দাবিতে বিজেপির উচ্চবর্ণীয় নেতাদের একাংশ সরব ছিলেন। তাঁদের যুক্তি মেনে নেয় মোদী সরকার।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা উঠলে সরকার আদালতে জানায়, রাজীব গাঁধীর আমলে তৈরি এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত। এর পরে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে, তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের উপর নিগ্রহ সংক্রান্ত মামলা দায়েরের আগে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। অভিযুক্তের আগাম জামিনের বিষয়টিতেও সায় দেয় আদালত। কিন্তু, ওই রায় প্রকাশ্যে আসতেই তা দলিত বিরোধী বলে প্রচার শুরু হয়। সমালোচিত হয় আদালতে মোদী সরকারের ভূমিকাও। বিজেপি-র দলিত সাংসদ বা রামবিলাস পাসোয়ানের মতো শরিক দলের নেতারাও দাবি তোলেন, মোদী সরকার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আর্জি জানাক।
ইতিমধ্যেই সপা-বসপা, সিপিএম, ডিএমকে, সিপিএমের নেতাদের নিয়ে রাহুল গাঁধী রাষ্ট্রপতির কাছে দলিত আইন লঘু করার অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। গোটা দেশে দলিত নিগ্রহ যখন বাড়ছে, তখন সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূমিকাতেই আইন লঘু হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। বিজেপি ও শরিক দলের নেতাদের মধ্যেই এ নিয়ে অসন্তোষ বাড়ায় নরেন্দ্র মোদীর চাপ আরও বেড়েছে। এমনকী, উত্তরপ্রদেশে দলের এক সাংসদ সাবিত্রী ফুলে তো রীতিমতো বিদ্রোহ করতে শুরু করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, দলের মধ্যে থেকেই দলিতদের সংরক্ষণ তুলে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে।
আদালতে সরকারের ভূমিকা দলিত সমাজের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ জানান শাসক ও শরিক দলের দলিত নেতারা। পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন শরিক দলের নেতা রামবিলাস পাসোয়ান ও রামদাস অটওয়াল। সূত্রের খবর প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দেন। এর পরেই জানা যায়, ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দলিত আইন সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে কেন্দ্র।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০২/০৪/২০১৮।

No comments:

Post a Comment