Monday, April 2, 2018

মুখ ফেরালেন দলিতরাও, চাপে বিজেপি।


গোয়েন্দা সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খবর আসে, ভারত বন্‌ধে নানা প্রান্তে ছড়াবে দলিত ক্ষোভ। রবিবার রাতেই তাই তড়িঘড়ি আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ-সহ আধা ডজন মন্ত্রী নেমে পড়েন আসরে। জানান, দলিত আইন লঘু করতে চায় না সরকার, সে কথা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবে কেন্দ্র। সেই মতো সোমবার সকালেই তা দায়ের হয়েছে দলিত আইনের রিভিউ পিটিশন। তবু শেষরক্ষা হল না। রাজ্যে রাজ্যে দলিত ক্ষোভ আছড়ে পড়ল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। প্রাণও হারালেন অনেকে।
‘‘নরেন্দ্র মোদীর সময়টা ভাল যাচ্ছে না, বুঝলেন’’ সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে বললেন বিজেপিরই এক সাংসদ। ‘‘উচ্চবর্ণকে আগেই চটিয়েছেন। যে দলিত-ওবিসি তাস ছিল, তাঁরাও হাতছাড়া হতে বসেছে।’’ রাজ্যে-রাজ্যে দলিত বিক্ষোভ হল, বিরোধী দলের কোনও বড় নেতা পথে নামলেন না। অথচ কংগ্রেস, বিএসপি-এসপি-র মতো দলের পাশাপাশি আরও কিছু সংগঠন নেপথ্যে থেকে আন্দোলনকে আম-দলিতের স্বতঃস্ফূর্তচেহারা দিল সুকৌশলে।
দলিত আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যের ১৩ দিন পরে আদালতে যাওয়ার জন্য মোদীকে দুষলেন মায়াবতী। রাহুল গাঁধী বন্‌ধের সমর্থনকারী দলিতদের সেলামজানালেন। বললেন, ‘‘আরএসএস-বিজেপির ডিএনএতেই রয়েছে দলিতকে নীচের সারিতে রাখা। আর যাঁরা এই মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেন, ওঁরা তাঁদের হিংসা দিয়ে দমন করে।’’ দিন আগেও সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত দলিত-কাঁটা দূর করতে সব হিন্দুকে একজোট হতে বলেছিলেন। আজ সেই আরএসএসেরই নম্বর টুসুরেশ ভাইয়াজি জোশীকে বিবৃতি দিয়ে বলতে হল, সরকারের রিভিউ পিটিশন যথার্থ। অত্যাচার রুখতে আইনের কঠোর পালন হওয়া উচিত।
গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের উপর অত্যাচার আটকাতে যে আইন রয়েছে, অনেক সময়েই তার অপব্যবহার হয়। সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ এলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানায় কোর্ট। আর কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাঁকে গ্রেফতারের আগে ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও পুলিশ আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করানোর কথাও বলা হয়। ফলে এসসি এসটি নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন লঘু করা হচ্ছে বলে মনে করছে কিছু দলিত সংগঠন ও রাজনৈতিক বিরোধীরা। দলিত বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে কেন্দ্র জানায়, আইন লঘু করার পক্ষে নয় তারা। সোমবারই শীর্ষ আদালতে গিয়েছে কেন্দ্র। বিক্ষোভ যদিও থামেনি।
বিজেপির এক নেতা বললেন, এ সবই বল হাতের বাইরে যাওয়ার লক্ষ্মণ। জাতি ভেদের বিরোধিতা করেও সঙ্ঘকে এখন দলিতদের পৃথক ভাবে চিহ্নিত করতে হচ্ছে। মোহন ভাগবত সংরক্ষণ তোলার কথা বলেছিলেন। সেই বার্তা পৌঁছেছে দলিতদের মধ্যে। সাবিত্রী ফুলে, উদিত রাজের মতো বিজেপি সাংসদরাই সে আশঙ্কা ছড়াচ্ছেন। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে পুলিশের গুলি চলছে, মাঝপথে রাজনাথ সিংহকে বিরোধীদের উদ্দেশে ঐকমত্যের আর্জি জানাতে হচ্ছে। রামবিলাস পাসোয়ানের মতো দলিত শরিক নেতার আবেদনেও কাজ হচ্ছে না। সব দেখেশুনেও চুপ প্রধানমন্ত্রী।
রিভিউ পিটিশন দায়ের করে আইনমন্ত্রী আজ আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করেন, এর আগে সরকার মামলার শরিক ছিল না। এ বারে খোলা এজলাসে শুনানির আর্জি করা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস বলছে, এটিও মিথ্যা। সরকার শরিক ছিল। আর রিভিউ পিটিশনে লাভ নেই। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে যাক কেন্দ্র। তার থেকেও ভাল, সংসদের বাকি চার দিনে সরকার সংশোধনী বিল আনুক। কিন্তু সেটি আনবে না, কারণ বিজেপি আসলে দলিত-বিরোধী। লড়াই আরও কঠিন হতে চলেছে, আশঙ্কায় গেরুয়া শিবির। সুপ্রিম কোর্টে দলিত সংগঠনগুলির বিক্ষোভে হিংসা নিয়ে অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব এসসি/এসটি অর্গানাইজেশনস-এর পেশ করা আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানায়, সময়মতো আবেদন শোনা হবে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০৩/০৪/২০১৮।

No comments:

Post a Comment