Monday, April 16, 2018

পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামে মেলা থেকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে আদিবাসী ছাত্রীকে গণধর্ষণ।


নববর্ষের রাতে আদিবাসী এক ছাত্রীকে মেলা থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে৷ ধর্ষকদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় কোনও রকমে জঙ্গল লাগোয়া একটি বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চায় ওই কিশোরী৷ সেখানে সম্ভ্রম রক্ষার জন্য একটি গামছা নিয়ে হাঁটা দেয় সে৷
এরই মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় সকলের সামনেই অভিযুক্তরা বাইকে চেপে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়৷ পুলিশ অবশ্য পুরো বিষয়টি প্রথমে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ৷ এমনকী নির্যাতিতার শরীরে লেগে থাকা রক্ত পুলিশ ধুয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান৷ পরে অবশ্য মেডিক্যাল টেস্টের জন্য নির্যাতিতাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ নির্যাতিতার বয়ানের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা রুজু করে করেছে পুলিশ৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘ওই ছাত্রী অত্যাচারের বিবরণ দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে৷ আমরা পকসো আইনে মামলা রুজু করেছি৷ মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে৷ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷’
চড়ক উপলক্ষে আউশগ্রাম থানার যাদবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেলা বসেছিল৷ রবিবার প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে মেলা দেখতে যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী৷ সেখান থেকে স্থানীয় ঝাড়গড়িয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তার৷ যদিও মেলার ভিড়ে দলছুট হয়ে পড়ে সে৷ বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর কাউকে দেখতে না পেয়ে সে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ সেই সময় চার যুবক তার কাছে গিয়ে কী হয়েছে জানতে চায়৷ সব শোনার পর ওই যুবকরা তাকে ঝাড়গড়িয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেয়৷ এর পর একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে তাকে খাবার কিনে দেয় ওই যুবকরা৷ এতে ভরসা পেয়ে ওই যুবকদের কথা মতো তাদের বাইকে ওঠে সে৷ অভিযোগ, ঝাড়গড়িয়ার পরিবর্তে ঘোষপাড়ার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়৷ কোনও রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘোষপাড়ায় পৌঁছে এক মহিলার কাছে পোশাক চায় ওই কিশোরী৷ এর পর হেঁটে আউশগ্রাম-মোড়বাঁধ রাস্তার বননবগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছয়৷ সেখানে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে কয়েক জন যুবক৷ ইতিমধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে নির্যাতিতাকে গাড়ি তুলে নিয়ে যায়৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে শেখ জাহিউদ্দিন, সাইদুল শেখ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কিছু জানতেই দিল না৷ আমাদের সামনে মেয়েটি বারবার বলছিল চার জন তাকে ধর্ষণ করেছে৷ তখনও শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল৷ অথচ পুলিশ ওকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে না গিয়ে ওয়ারিশপুর জঙ্গলের দিকে চলে যায়৷ পিছনে আমরা বাইক নিয়ে গিয়ে দেখি, আলেখনগর মোড়র কাছে রাস্তার পাশে একটি নলকূপের জল দিয়ে মেয়েটির রক্ত পরিষ্কার করানো হচ্ছে৷’ আউশগ্রাম থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাতেই নির্যাতিতাকে বননবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ এমনকী তার বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়৷ বননবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডল বলেন, ‘এক কিশোরীর মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আউশগ্রাম থানা থেকে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন৷ সেই মতো পুলিশই তাকে নিয়ে যায়৷’
সৌজন্য - এই সময়, প্রত্যুষ চক্রবর্তী, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮।

No comments:

Post a Comment