নববর্ষের রাতে আদিবাসী এক ছাত্রীকে মেলা থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের
অভিযোগ উঠল কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে৷ ধর্ষকদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায়
কোনও রকমে জঙ্গল লাগোয়া একটি বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চায় ওই কিশোরী৷ সেখানে সম্ভ্রম রক্ষার
জন্য একটি গামছা নিয়ে হাঁটা দেয় সে৷
এরই মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় সকলের সামনেই অভিযুক্তরা বাইকে চেপে দ্রুতগতিতে
পালিয়ে যায়৷ পুলিশ অবশ্য পুরো বিষয়টি প্রথমে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ৷ এমনকী
নির্যাতিতার শরীরে লেগে থাকা রক্ত পুলিশ ধুয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান৷ পরে
অবশ্য মেডিক্যাল টেস্টের জন্য নির্যাতিতাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়া হয়৷ নির্যাতিতার বয়ানের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা রুজু করে করেছে পুলিশ৷ অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘ওই ছাত্রী অত্যাচারের বিবরণ দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে৷
আমরা পকসো আইনে মামলা রুজু করেছি৷ মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে৷ অভিযুক্তদের
খোঁজে তল্লাশি চলছে৷’
চড়ক উপলক্ষে আউশগ্রাম থানার যাদবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেলা বসেছিল৷ রবিবার
প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে মেলা দেখতে যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী৷ সেখান থেকে স্থানীয়
ঝাড়গড়িয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তার৷ যদিও মেলার ভিড়ে দলছুট হয়ে
পড়ে সে৷ বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর কাউকে দেখতে না পেয়ে সে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে
পড়ে৷ সেই সময় চার যুবক তার কাছে গিয়ে কী হয়েছে জানতে চায়৷ সব শোনার পর ওই যুবকরা তাকে
ঝাড়গড়িয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেয়৷ এর পর একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে তাকে
খাবার কিনে দেয় ওই যুবকরা৷ এতে ভরসা পেয়ে ওই যুবকদের কথা মতো তাদের বাইকে ওঠে সে৷ অভিযোগ,
ঝাড়গড়িয়ার পরিবর্তে ঘোষপাড়ার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়৷ কোনও রকমে
নিজেকে ছাড়িয়ে ঘোষপাড়ায় পৌঁছে এক মহিলার কাছে পোশাক চায় ওই কিশোরী৷ এর পর হেঁটে আউশগ্রাম-মোড়বাঁধ
রাস্তার বননবগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছয়৷ সেখানে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে কয়েক
জন যুবক৷ ইতিমধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে নির্যাতিতাকে গাড়ি তুলে নিয়ে যায়৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের
মধ্যে শেখ জাহিউদ্দিন, সাইদুল শেখ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কিছু জানতেই দিল না৷ আমাদের
সামনে মেয়েটি বারবার বলছিল চার জন তাকে ধর্ষণ করেছে৷ তখনও শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল৷
অথচ পুলিশ ওকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে না গিয়ে ওয়ারিশপুর জঙ্গলের দিকে চলে যায়৷ পিছনে
আমরা বাইক নিয়ে গিয়ে দেখি, আলেখনগর মোড়র কাছে রাস্তার পাশে একটি নলকূপের জল দিয়ে মেয়েটির
রক্ত পরিষ্কার করানো হচ্ছে৷’ আউশগ্রাম থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাতেই নির্যাতিতাকে
বননবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ এমনকী তার বাড়িতেও খবর
দেওয়া হয়৷ বননবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডল বলেন, ‘এক কিশোরীর
মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আউশগ্রাম থানা থেকে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো
না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন৷ সেই মতো
পুলিশই তাকে নিয়ে যায়৷’
সৌজন্য - এই সময়, প্রত্যুষ চক্রবর্তী, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment