Monday, April 30, 2018

বিদ্যুৎ আনতে অসম থেকে রাজস্থানে পাড়ি সুপ্রভা সাঁওতাল ও সীমা দাসের।


গত রবিবার ২৯/০৪/২০১৮ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। তার পর দিনই ওএনজিসি জানাল, সন্ধ্যা হলেই অসমের কাছাড় জেলার নারায়ণপুর বস্তি ডুবে যায় অন্ধকারে। রাস্তাঘাটের চিহ্নমাত্র নেই। এই গ্রামে সৌরবাতি জ্বালানোর চেষ্টায় তাই ওএনজিসিই রাজস্থানের বেয়ারফুট কলেজের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বেয়ারফুট (খালি পা)! কলেজের নামটি যেমন অদ্ভুত, তেমনি কাজের ধরনও আলাদা। শুধু ঘরে ঘরে সোলার প্যানেল ও বাল্‌ব দিয়ে দায় সারার পক্ষপাতী নন এর ডিরেক্টর রবীন্দ্র নাথ। প্রকল্পের স্থায়িত্বের কথা ভেবে এলাকায় খালি পায়ে চলতে বাধ্য হন, এমন মহিলাদের আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তাঁদের তত্ত্বাবধানেই চলে প্রকল্পের কাজ।
আজই নারায়ণপুর বস্তি থেকে রাজস্থানের তিলোনিয়ার উদ্দেশে রওনা দিলেন সুপ্রভা সাঁওতাল ও সীমা দাস। দুজনেরই পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু রবীন্দ্রর দাবি, এই দুজনই টেকনিশিয়ান হয়ে ফিরবেন ছমাসে। তাঁদের সামনে রেখেই বস্তির ১০০ ঘরে একটি করে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি, চার্জ কন্ট্রোল, চার্জার, সৌর-লণ্ঠন ও ৪টি করে বাল্‌ব দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে সৌরবাতি জ্বালাতে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সুপ্রভা-সীমাই সমাধান বাতলে দেবেন।
এই প্রকল্পের পুরো অর্থ জোগাচ্ছে ওএনজিসি। কাছাড় প্রকল্পের তিন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ডিএইচ জংলি, পি অরুমুগম ও রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন, নারায়ণপুর বস্তির কাছেই তাদের ড্রিলিং চলছে। আসতে-যেতে গ্রামটির দুরবস্থা দেখে সৌরবাতির এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তাঁদের আশা, আগামী নয় মাসে ওই গ্রামে আলো জ্বলবে। এই ‘পাইলট প্রোজেক্ট’-এ সাফল্য মিললে কাছাড়ের বিদ্যুৎহীন অন্য গ্রামেও আলো জ্বালানোর চেষ্টা করবে ওএনজিসি।
প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাতযা-ই হোক, বেয়ারফুট কলেজের ডিরেক্টর রবীন্দ্র তাঁদের প্রাথমিক সমীক্ষার উল্লেখ করে জানাচ্ছেন, অসমের এই জেলায় অন্তত ৫০টি গ্রামে আজও বিদ্যুৎ নেই।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ মে, ২০১৮

কর্মবিরতি উঠে যাওয়ায় হাইকোর্টে ডিএ মামলার শুনানি দ্রুত করার উদ্যোগ


সোমবার (৩০/০৪/২০১৮) থেকে হাইকোর্টের আইনজীবীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি ফের শুরু করার তৎপরতা আরম্ভ হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত ও বিচারপতি শেখর বি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শেষ শুনানি হয়েছিল। পরবর্তী শুনানির দিন ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। ওইদিন থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের কর্মবিরতি শুরু হয়। এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুনানি শুরু করার জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন। ডিভিশন বেঞ্চে ‘মেনশন’ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুনানির দিন চাওয়া হবে।
গত ডিসেম্বর মাস থেকে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ডিএ মামলার নিয়মিত শুনানি হচ্ছিল। আইনজীবীদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর কিছুদিন প্রতিদিনের মামলার তালিকায় (কজ লিস্টে) ডিএ মামলাটির উল্লেখ থাকত। পরে অবশ্য শুনানি বন্ধ থাকায় তালিকায় কোনও মামলারই উল্লেখ থাকত না। নতুন করে মামলাটি শুরু করার জন্য ‘মেনশন’ করার আগে বিপক্ষের আইনজীবীকে নোটিস দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নোটিস আজ, সোমবার রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে দেওয়া হবে। এরপর মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চের কাছে ‘মেনশন’ করে শুনানির দিন চাইবেন মামলাকারীরা।
ডিএ মামলার শুনানি হাইকোর্টে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। মামলাকারী সরকারি কর্মী সংগঠনের তরফে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। শেষ শুনানির দিন রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর ঘোষ সওয়াল করছিলেন। কী আইনি ভিত্তিতে ‘স্যাট’ সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে বলে রায় দিয়েছিল, তা আদালতের কাছে ব্যাখা করার জন্য ওইদিন নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। দু’দিন পর অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করতে চেয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু সরকারের তরফে ১৯ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন চাওয়া হয়। কিন্তু ওইদিন থেকে আইনজীবীদের কর্মবিরতি শুরু হয়ে যাওয়ায় শুনানি আর হয়নি।
রাজ্য সরকারি কর্মীমহল হাইকোর্টে ডিএ মামলাটির কী হয়, সেদিকে তাকিয়ে আছে। সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের থেকে ৪৫ শতাংশ কম হারে ডিএ পাচ্ছেন তাঁরা। অন্য রাজ্য সরকারগুলিও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমান বা কাছকাছি হারে ডিএ দিচ্ছে।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ৩০/০৪/২০১৮।

ডাইন সন্দেহে আদিবাসী দিদি ও ভাইকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ পূর্ব বর্ধমান জেলায়।


ডাইনি অপবাদে একই পরিবারের দুজনকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহি থানার নেওড় গ্রামে। পুলিশের দাবি, সম্পর্কে দিদি ও ভাইকে খুন করে তাঁদের দেহ প্রথমে ঘটনাস্থলের কাছেই পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশকর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে বাসিন্দাদের একাংশের বাধার মুখে পড়ে। পরে বিডিও এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললেও দেহ দুটির সন্ধান মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, নেওড়ের পাশের গ্রামের এক বাসিন্দা থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মাকু বাস্কে (৬৫) ও তাঁর ভাই মঙ্গল মান্ডিকে (৬০) মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে দামোদরের চরে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতদের বাড়ি আরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেওড় গ্রামের দিঘিরপাড়ে। স্থানীয় সূত্রে ডাইন অপবাদের কথা উঠে এলেও তা সরাসরি মানতে চায়নি জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘ওই দুজনের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) এলাকায় তদন্ত করছেন।
অভিযোগ, মাকু ও মঙ্গলকে সোমবার রাত আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান গ্রামেরই কিছু লোক। তারপর ফাঁকা মাঠে ৪০-৫০ জন মিলে তাঁদের পিটিয়ে মারে। তার পর ওই মাঠেরই একটি জায়গাতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেই খবর পেয়ে মাধবডিহি থানার পুলিশ দফায় দফায় গ্রামে গেলেও ভিতরে ঢুকতে পারেনি। বিডিও (রায়না ২) দীপ্যময় মজুমদার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। সে জন্য পুলিশকে তদন্ত করতে বলেছি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ৮০ ঘর আদিবাসী পরিবারের বসবাস। মৃতদের এক ভাইপোর স্ত্রী গত ৬ মাস ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। সোমবার তাঁকে নিয়ে একটি ট্রাক্টরে করে পরিজন ও পড়শিরা জামালপুরের রুক্মিনীতলায় এক ওঝার কাছে যান। ওই ওঝা দাবি করে, মাকু ও মঙ্গল ডাইন। তাঁদের জন্যই ওই বধূর শরীর এত খারাপ থাকছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গ্রামে ফিরে আসেন। মৃতদের আর এক ভাইপো গুরুপদ মান্ডির দাবি, “গ্রামে বিষয়টি ছড়িয়ে যাওয়ার পরে কয়েক জন মিলে কাকা ও পিসিকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই ডাইন অপবাদে পিটিয়ে মারা হয়। আমরা কয়েক জন প্রতিবাদ করলে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, “আর যাই হোক ডাইনি অপবাদে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। আমরা গত কয়েক বছরে এই অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করেছি। তাতে ফলও হয়েছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮।  

Saturday, April 28, 2018

রাজ্যের দলিত-সংখ্যালঘুরা এবার ঐক্য গড়ে রাজপথে, হুঁশিয়ারি মোদি-মমতার সরকারকে।



রাজ্যের দলিত-সংখ্যালঘুরা এবার ঐক্য গড়ে রাজপথে, হুঁশিয়ারি মোদি-মমতার সরকারকে। মিছিলের জেরে মধ্য কলকাতা জুড়ে তীব্র যানজট।

রাজ্যের দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবার যৌথভাবে রাস্তায় নামল। সমাজের পিছিয়ে পড়া এই অংশের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও বঞ্চনা ও অত্যাচারের শিকার হয়ে চলেছে মূলত এই ক্ষোভকে সামনে রেখেই তারা শনিবার শহরের রাজপথে মিছিল ও সমাবেশ করল। এজন্য বহু তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সংগঠন একত্রিত হয়ে সংবিধান বাঁচাও সমিতি নামে যৌথ মঞ্চ গঠনও করেছে। সেই মঞ্চের তরফেই এদিন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি এবং রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হল। দলিত-সংখ্যালঘুদের উপর বর্ণহিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত সরকার যদি তাদের এই বঞ্চনা চালিয়ে যায়, তাহলে আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তারা সমুচিত জবাব পাবে বলে জানিয়ে দেয় মঞ্চের নেতৃত্ব।
সমিতির তরফে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রথমে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে সমবেত হয়। তারপর তারা দুটি বড় মিছিল করে ধর্মতলা, মেয়ো রোড হয়ে জড়ো হয় রেড রোডে ডঃ বি আর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে। তাদের এই মিছিলের ফলে দুপুরের দিকে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ তল্লাটে বেশ কিছুক্ষণ যানজট হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয় পথচলতি মানুষকে। তবে রেড রোডে পৌঁছে মিছিলকারীরা রাস্তার ধারে সরে গিয়ে সমাবেশ করে। তাই আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফের চৌরঙ্গি রোড, মেয়ো রোড, রেড রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়।
এদিন সমাবেশে সমিতির তরফে সমীর দাশ, মহম্মদ কামরুজ্জামান, ফারুক আহমেদ, ডঃ নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তা দলিত নির্যাতনের আইন লঘু করার উদ্যোগ গ্রহণ নিয়ে মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁদের কথায়, সারা দেশে ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য কেন্দ্রের শাসক দল দলিত ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে বাড়তি অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। একইভাবে ভাতা বা সংরক্ষণের টোপ দিয়ে সরকারি চাকরি সহ আর্থিক উন্নয়নের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে চলেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। অথচ রাজনৈতিক হানাহানির ক্ষেত্রে সিংহভাগ বলি হচ্ছে দলিত-সংখ্যালঘুরাই। বর্ণহিন্দু নিয়ন্ত্রিত এই একতরফা সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাতে তারা এবার অঙ্গীকারবদ্ধ। আগামীদিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে এই সম্প্রদায়ের কোনও নেতাকে বসানোই তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেন নেতৃবৃন্দ।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা ও এই সময় পত্রিকা ২৯/০৪/২০১৮।

নিপীড়নের প্রতিবাদে বাঁকুড়া জেলার খাতড়া শহরে আদিবাসীদের বিশাল সমাবেশ।


খাতড়া, ২৩শে এপ্রিল— ঠ্যাঙারে বাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব। সোমবারও রাজ্যজুড়ে বিরোধী প্রার্থীদের রক্তের স্রোত বইয়ে দেওয়া হয়েছে। তবু প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই এদিন জঙ্গলমহলের খাতড়ায় আদিবাসীরা জমায়েত হয়ে রাজ্যের শাসক দলের উদ্দেশে মানুষের রক্ত নিয়ে বিজয়োল্লাস বন্ধ করার হুঙ্কার দিলেন। এ‍‌ই জমায়েত জানিয়ে দিল, পরিণাম ভাল হবে না। মানুষ এই মস্তানি সহ্য করবেন না। এক অনিবার্য সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য।
এদিন তীর, ধনুক, টাঙ্গি হাতে মিছিল করে খাতড়া এ টিম মাঠে আসেন আদিবাসীরা। মিছিল বা সমাবেশের কোনও অংশেই পুলিশের দেখা মেলেনি। এদিন প্রতি পদে প্রশাসনের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেন আদিবাসী মানুষজন। বক্তব্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে আদিবাসীদের অধিকার খর্ব করে চলেছে, তার ফিরিস্তি তাঁরা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, আদিবাসীদের উপর যে অত্যাচার চলছে, তা দেশের মানুষ জানেন না। সংবাদমাধ্যমেও তাঁদের কথা লেখে না। প্রচার করা হচ্ছে, জঙ্গলমহল হাসছে। যদি সত্যিই জঙ্গলমহল হাসত, তাহলে বৈশাখের ভরদুপুরে এত মানুষ কেন ইনসাফ চাইতে আসবেন!
দলমত নির্বিশেষে তৈরি আদিবাসী একতা মঞ্চের উদ্যোগে এদিন এই জনসভা হয়। বাঁকুড়া ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বীরভূম, বর্ধমান প্রভৃতি জেলা থেকে সাঁওতাল, কড়া, মাহালী, ভূমিজ, শবর, লোধা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা এই সমাবেশে আসেন। এঁদের হাতে ছিল পাতা সমেত শাল গাছের ডাল, তীর-ধনুক সহ চিরায়ত অস্ত্র। যে সংখ্যক মানুষ এসেছিলেন, তার অর্ধেকও মাঠে ঢুকতে পারেননি।
কেন এই সমাবেশ? এদিন বীরভুম থেকে সমাবেশে আসা রাজ্য আদিবাসী কড়া সমাজ কল্যাণ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ কড়া জানান, দিনের পর দিন আদিবাসী সমাজের মানুষদের ঠকানো হচ্ছে। সংরক্ষণের কথা বললেও আদিবাসী ছেলেমেয়েদের চাকরি কোথায়? মানুষ এসব জানেন না। এদিন রানিবাঁধের আদিবাসী কৃষক রমেন হাঁসদা, রবি হাঁসদারা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন জঙ্গলমহল হাসছে। কী রকম হাসছে? কেন্দুপাতার কাজ বন্ধ। বাইরের ব্যবসায়ীদের হাতে তাঁরা পুতুল হয়ে গিয়েছেন। কাজ নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তাঁদের সবাইকে দুটাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে এই চাল সরবরাহ করেছে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ের বোলবোম রাইস মিল এবং বালুরঘাটের এক তৃণমূল নেতার এজেন্সি। পোকা ধরা, দুর্গন্ধযুক্ত সেই চাল জঙ্গলমহলের মানুষকে খেতে হয়েছে। এখানে আজ পর্যন্ত ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া হলো না। এর পেছনে রহস্য কী?
পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে আসা গৃহবধূ সরস্বতী হেমব্রম, অনুরাধা মাণ্ডিরা জানালেন, সব জায়গায় আদিবাসী হস্টেল বন্ধ। তাঁদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। জঙ্গলমহলের অলচিকি হরফে পঠনপাঠনের একটি স্কুলেও আজ পর্যন্ত কোনও শিক্ষক দিল না রাজ্য সরকার। এঁদের সব চেয়ে বড় অভিযোগ, আদিবাসী মানুষজনের আত্মসম্মানে আঘাত করা হচ্ছে।
একাধিক ব্যক্তি জানালেন, শিল্পীভাতার প্রলোভন দেখিয়ে আদিবাসীদের শিল্পীসত্তাকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে সেখানে রাজ্যের শাসকদলের লোকজন তাঁদের নিয়ে গিয়ে নাচগান করাচ্ছে। মুখে শিল্পীভাতার কথা বললেও বহু শিল্পী এই ভাতা পাচ্ছেন না। অরণ্যের পাট্টা দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে টালবাহানা চলছে। দিনের পর দিন রাজ্য ও দেশের নানা স্থানে আদিবাসী রমণীরা ধর্ষিতা হচ্ছেন। ধর্ষণকারীর অপরাধকে লঘু করে দেখা হচ্ছে। এই চক্রান্তে জড়িত প্রশাসন, শাসক দল।
এদিন আদিবাসী সমাবেশ থেকে আওয়াজ ওঠে, কয়েকদিন আগে রানিবাঁধে অজিত মুর্মু নামে এক ব্যক্তিকে শাসক দলের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে। ভয় দেখিয়ে তাঁর পরিবারকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলানো হলো। কতদিন এই অত্যাচার সহ্য করবেন তাঁরা!
সৌজন্য - গণশক্তি, ২৪/০৪/২০১৮।

Monday, April 16, 2018

SC/ST হিংসা রোদ আইনে সংশোধন রুখতে অর্ডিন্যান্স আনার ভাবনা কেন্দ্র সরকারের।


দলিত বিক্ষোভে নাজেহাল প্রধানমন্ত্রী এ বার অর্ডিন্যান্সের পথে হাঁটার কথা ভাবছেন৷ দলিত হিংসা রোধ আইনে বদল আনার প্রতিবাদে ২ এপ্রিল দেশজুড়ে দলিত বিক্ষোভের যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে রীতিমতো শঙ্কায় নরেন্দ্র মোদী৷ এ বছরই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, তা ছাড়া ২০১৯ এর লোকসভা ভোট তো আছেই৷ সব মিলিয়ে দলিতদের এখন শান্ত করতে তৎপর মোদী সরকার৷ তাই দলিত হিংসা রোধ আইন অপরিবর্তিত রাখতে কোর্টের পথ ছেড়ে অন্য পথে হাঁটার কথাই ভাবছেন তিনি৷
গত ২০ মার্চ, ২০১৮ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী দলিত হিংসা রোধ আইনে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার বা অভিযোগ দায়ের করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়৷ এই রায় দলিত হিংসা রোধ আইনকে লঘু করে দিচ্ছে বলে গর্জে ওঠে দলিত সংগঠনগুলি৷ ২ এপ্রিলের অশান্তির পর রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র, কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনও ইঙ্গিত মেলেনি৷ সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে দুটি পথ - প্রথমত, অর্ডিন্যান্স জারি করা৷ দ্বিতীয়ত, জুলাইয়ের বাদল অধিবেশনে বিল এনে দলিত হিংসা রোধ আইন, ১৯৮৯ এ সংশোধন৷ এক আমলার কথায়, ‘অর্ডিন্যান্স আনলেও সেটিকে বিলে পরিবর্তিত করে সংসদে পাশ করাতে হবে৷ ফলে দুটি ক্ষেত্রেই একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে৷ তবে, অর্ডিন্যান্স জারি করলে তৎক্ষণাৎ ফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স জারি হলে আপাতত ক্ষোভ কমবে৷’ তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জিতে আদালতের বক্তব্য কোন দিকে যায়, তার উপর নির্ভর করবে কেন্দ্রের পথ৷

পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামে মেলা থেকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে আদিবাসী ছাত্রীকে গণধর্ষণ।


নববর্ষের রাতে আদিবাসী এক ছাত্রীকে মেলা থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে৷ ধর্ষকদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় কোনও রকমে জঙ্গল লাগোয়া একটি বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চায় ওই কিশোরী৷ সেখানে সম্ভ্রম রক্ষার জন্য একটি গামছা নিয়ে হাঁটা দেয় সে৷
এরই মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় সকলের সামনেই অভিযুক্তরা বাইকে চেপে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়৷ পুলিশ অবশ্য পুরো বিষয়টি প্রথমে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ৷ এমনকী নির্যাতিতার শরীরে লেগে থাকা রক্ত পুলিশ ধুয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান৷ পরে অবশ্য মেডিক্যাল টেস্টের জন্য নির্যাতিতাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ নির্যাতিতার বয়ানের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা রুজু করে করেছে পুলিশ৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘ওই ছাত্রী অত্যাচারের বিবরণ দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে৷ আমরা পকসো আইনে মামলা রুজু করেছি৷ মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে৷ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷’
চড়ক উপলক্ষে আউশগ্রাম থানার যাদবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেলা বসেছিল৷ রবিবার প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে মেলা দেখতে যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী৷ সেখান থেকে স্থানীয় ঝাড়গড়িয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তার৷ যদিও মেলার ভিড়ে দলছুট হয়ে পড়ে সে৷ বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর কাউকে দেখতে না পেয়ে সে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ সেই সময় চার যুবক তার কাছে গিয়ে কী হয়েছে জানতে চায়৷ সব শোনার পর ওই যুবকরা তাকে ঝাড়গড়িয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেয়৷ এর পর একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে তাকে খাবার কিনে দেয় ওই যুবকরা৷ এতে ভরসা পেয়ে ওই যুবকদের কথা মতো তাদের বাইকে ওঠে সে৷ অভিযোগ, ঝাড়গড়িয়ার পরিবর্তে ঘোষপাড়ার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়৷ কোনও রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘোষপাড়ায় পৌঁছে এক মহিলার কাছে পোশাক চায় ওই কিশোরী৷ এর পর হেঁটে আউশগ্রাম-মোড়বাঁধ রাস্তার বননবগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছয়৷ সেখানে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে কয়েক জন যুবক৷ ইতিমধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে নির্যাতিতাকে গাড়ি তুলে নিয়ে যায়৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে শেখ জাহিউদ্দিন, সাইদুল শেখ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কিছু জানতেই দিল না৷ আমাদের সামনে মেয়েটি বারবার বলছিল চার জন তাকে ধর্ষণ করেছে৷ তখনও শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল৷ অথচ পুলিশ ওকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে না গিয়ে ওয়ারিশপুর জঙ্গলের দিকে চলে যায়৷ পিছনে আমরা বাইক নিয়ে গিয়ে দেখি, আলেখনগর মোড়র কাছে রাস্তার পাশে একটি নলকূপের জল দিয়ে মেয়েটির রক্ত পরিষ্কার করানো হচ্ছে৷’ আউশগ্রাম থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাতেই নির্যাতিতাকে বননবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ এমনকী তার বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়৷ বননবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডল বলেন, ‘এক কিশোরীর মেডিক্যাল টেস্টের জন্য আউশগ্রাম থানা থেকে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন৷ সেই মতো পুলিশই তাকে নিয়ে যায়৷’
সৌজন্য - এই সময়, প্রত্যুষ চক্রবর্তী, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮।

যুবকদের লালসার শিকার আদিবাসী নাবালিকা, আউশগ্রামে চড়কের মেলায় গণধর্ষণ।


চড়কমেলার অনুষ্ঠানে এসে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে গণধর্ষণের শিকার হলেন এক আদিবাসী কিশোরী। বছর ষোলোর ওই কিশোরীকে বাইকে চাপিয়ে গভীর জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে একাধিকজন ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটে রবিবার রাতে। ধর্ষণের পর ওই নাবালিকাকে রাস্তার ধারে ফেলে পালায় ধর্ষকরা। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায় মেয়েটি থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। অভিযুক্তদের সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রামের যাদবগঞ্জ গ্রামের চড়কমেলার মাঠে প্রতিবছর গাজনের মেলা বসে। চার পাঁচদিন ধরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। বিভিন্ন জেলা এমনকী ভিন রাজ্যের আদিবাসীরা এই উৎসবে অংশ নেন। তাঁরা মেলার মাঠেই থাকেন। রোজ বিকেল থেকে সারারাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। জানা গিয়েছে, বর্ধমান থানার বড় কাশিয়ারা গ্রাম থেকে কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে যাদবগঞ্জের চড়কমেলায় গিয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী ওই আদিবাসী কিশোরী। কয়েকজন আত্মীয় ও বান্ধবীদের সঙ্গেই ছিল ছাত্রীটি। কিন্তু রবিবার বিকেলে ভিড়ের মধ্যে মেয়েটি দলছুট হয়ে যায়। কিশোরী জানায়, যাদবগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে ঝারগরিয়া গ্রামে তার আত্মীয়র বাড়ি। সঙ্গীদের খুঁজে না পেয়ে মেয়েটি কান্নাকাটি করলে কয়েকজন যুবক তার কাছে ঘটনার কথা শোনে। তারপর তাকে ঝারগরিয়ায় আত্মীয়র বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার নাম করে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যায়। রবিবার রাতে দুটি বাইকে তিনজন যুবক মিলে তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বন নবগ্রামের জঙ্গলে একটি পুকুর পাড়ে কিশোরীকে ফেলে পালায় অভিযুক্তরা। মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। কোনওরকমে সে রাস্তার কাছাকাছি আসে। সেসময় স্থানীয় কয়েকজন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটিকে দেখতে পান। তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ আউশগ্রাম থানার পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে বন নবগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। কিছুটা সুস্থ হলে রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। নির্যাতিতা থানায় অভিযোগ জানায় দুজন মিলে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। তবে তাদের নাম তার জানা নেই বলে পুলিশকে জানিয়েছে মেয়েটি।  আউশগ্রাম থানার আইসি সুজিত পতি জানিয়েছেন, নির্যাতিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বর্ধমানে পাঠানো হয়েছে। তার মুখ থেকে বর্ণনা শুনে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
সৌজন্য – সংবাদ প্রতিদিন, ধীমান রায়, ছবি: জয়ন্ত দাস, ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮।

জঙ্গলমহলে আদিবাসী ক্ষোভের মুখে শাসক দল তৃনমূল কংগ্রেস।



যে জঙ্গলমহলের আদিবাসী বিক্ষোভ এক সময়ের শাসক সিপিএমের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যে ‘জঙ্গলমহলের হাসি’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের বড় মুখ, এ বার সেখানেই বেনজির ক্ষোভের মুখে পড়তে হল বর্তমান শাসক দলকে। ঘটনার সূত্রপাত আদিবাসীদের নিয়ে তৃণমূল সাংসদের একটি মন্তব্য।
একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করে সাংসদ উমা সরেন কুর্মিদের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত বলে মন্তব্য করেন। তার জেরেই আজ সোমবার, গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আদিবাসীদের মিছিল, প্রতিবাদ চলল। পাশাপাশি পোড়ানো হল সাংসদের কুশপুতুলও।
আদিবাসীদের সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ এ দিন দাঁতন হাসপাতাল থেকে সরাইবাজার পর্যন্ত মিছিল করে। বিক্ষোভ হয় ঝাড়গ্রামেও।
আদিবাসীদের দাবি, সাংসদ সরেন তফশিলি জাতি (এসসি), তফশিলি উপজাতি (এসটি) সম্প্রদায়ের মাহাতদের একই শ্রেণিভুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আদিবাসীরা মনে করেন, সাংসদের ওই মন্তব্যটি ত্রুটিপূর্ণ। যাঁরা আদিবাসী নন, তাঁদের আদিবাসী বলা ঠিক হয়নি। এ ছাড়াও এসসি, এসটি আইনকে লঘু করে দেখানো হয়েছে।
সংগঠনের তরফে নিমাই হেমব্রম ও সূর্যকান্ত মুর্মু বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ঝাড়গ্রামের সাংসদ তাঁর বক্তব্যে আদিবাসীদের অসম্মানিত করেছেন। আমাদের আশাহত করেছেন তিনি। তারই প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"
আদিবাসীরা মনে করেছিলেন, জেনিভায় গিয়ে ঝাড়গ্রামের সাংসদ তাঁদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরবেন। কিন্তু সেই আশা ও বিশ্বাসে সাংসদ আঘাত হেনেছেন বলে দাবি আদিবাসীদের।
সংগঠনের জেলা স্তরের নেতা রবীন টুডু বলেন,"যাঁরা আদিবাসী নন, তাঁদের ‘আদিবাসী’ আখ্যা দিয়েছেন সাংসদ। ১৯৮৯ সালের এসসি, এসটি আইন তিনি লঘু করেছেন। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।"
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬/০৪/২০১৮।

Sunday, April 15, 2018

পঞ্চায়েত মানে ‘টাকার খনি’। সেই ‘টাকার খনি’ দখলের অভিপ্রায় সব দলেরই, জিতলেই মধুভাণ্ড!


পঞ্চায়েত দখলে এত হিংসা কেন? ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্ব দেখে অনেকের মনেই এখন এই প্রশ্ন। লড়াই কি শুধুই রাজনৈতিক, নাকি নেপথ্যে কোনও আর্থিক কারণও রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলির বড় অংশের মতে, পঞ্চায়েত আসলে মধুভাণ্ড। প্রায় ২৫টি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রতি বছর খরচ হয়। ফলে এমন টাকার খনিদখলের অভিপ্রায় সব দলেরই থাকে। যেখানে যারা শক্তিশালী সেখানে তারা বিনা ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত বরাবরই জিতে নিতে চেয়েছে। অতীতে সিপিএমের বিরুদ্ধে বিনা ভোটে  পঞ্চায়েত দখলের সেই অভিযোগ এখন শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত দফতরের তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পঞ্চায়েত দফতর বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৯ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। এই টাকা পুরোটাই খরচ হয়েছে রাজ্যের ৩৩৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। ৫ বছরে গড়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ১৭.৭১ কোটির কাজ করেছে। বছরে যা সাড়ে তিন কোটির বেশি। পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার কথায়,‘‘বছরে সাড়ে তিন কোটির বেশি একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে খরচ হওয়াটা বড় কথা নয়, এর মধ্যে অন্তত ২ কোটি টাকা এক জন গ্রাম প্রধান নিজের হাতে খরচ করেন। সেটাই আসল মজা।’’
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েতের মজাযাঁরা এক বার পেয়েছেন, তাঁরা কোনও অবস্থাতেই ফের ভোটে গিয়ে জিতে আসার পরীক্ষা দিতে চান না। তার চেয়ে সাত দিনের মার দাঙ্গা করে যদি পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করে দেওয়া যায় তা হলে তো কথায় নেই।
এ সব তত্ত্ব মানতে নারাজ পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কেন তাঁর দলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত দখলের অভিযোগ সব চেয়ে বেশি ? পঞ্চায়েত মন্ত্রীর জবাব, ‘‘আসলে গ্রামের মানুষ নিজেদের উন্নয়নের ভার নিজেরাই নিতে চান। দখল নয়, উন্নয়নের প্রতিযোগিতা চলছে। নীচের তলায় তৃণমূল ছাড়া আর কেউ নেই তাই মনে হতে পারে আমরাই সব করছি।’’ তা হলে পঞ্চায়েতে দূর্নীতি নেই? সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘একেবারে নেই সে কথা বলব না। তবে কোথাও কিছু হলে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত চান। তাঁর এক মন্ত্রী বলছেন বিরোধীশূন্য করলে ৫ কোটি পুরস্কার দেবেন। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে টাকার থলি ঝুলিয়ে ভোট-সন্ত্রাস চলছে।’’
পঞ্চায়েত দফতর সূত্র জানাচ্ছে, ১০০ দিনের কাজ, চতুর্দশ অর্থ কমিশন, পঞ্চায়েত সশক্তিকরণের বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকা, নানাবিধ ভাতা প্রাপকের তালিকা তৈরি, বাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও জল-রাস্তা-বিদ্যুতের কাজ তো রয়েইছে। এ সব ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত প্রধান এবং সদস্যদের ক্ষমতা প্রবল। ১০০ দিনের কাজের জব-কার্ড, বিভিন্ন ভাতার চেক বই, অন্ত্যোদয় যোজনার কার্ডও অনেক পঞ্চায়েত সদস্য নিজেদের  কাছে রেখে দেন বলে মাঝে মাঝে পঞ্চায়েত ভবনে অভিযোগ আসে। এ সব দিয়েই গ্রামের ভোট নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মনে করা হয়। ফলে আর্থিক সুবিধা বিলিয়ে রাজনৈতিক লাভ তোলার এমন পাকাপোক্ত মাধ্যম কোনও দলই হারাতে চায় না। যে যখন শাসক থাকে, তারা তো নয়ই।
সেই সূত্র ধরেই বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় দাঁড়ানো উন্নয়ন ভোটে সন্ত্রাস করেছে। বিজেপি এ বার সেই উন্নয়ন সন্ত্রাসীদের বাড়িতে নিয়ে যাবে। সেই দিন আসছে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮।

পুরুলিয়ায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত অম্বেডকরের জন্মজয়ন্তী।



ভীমরাও রামজি অম্বেডকরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় জেলায় জেলায়। ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম মুখ অম্বেডকরের মূর্তি এ দিন কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার কোথাও তাঁর জীবনী নিয়ে আলোচনা চলে। কোথাও তাঁকে স্মরণ করে গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজনও করা হয়।
পুরুলিয়ার অম্বেডকর জাগৃতি সমিতির মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে এ দিন অম্বেডকরের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।’’ অম্বেডকরের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন বাদল রাম। উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বিভাসরঞ্জন দাস, আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখপাত্র অজিত মাহাতো, সমাজসেবী নবেন্দু মাহালি, তফসিলি জাতি বাউরি কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি আনন্দময় বাউরি প্রমুখ। সমিতির পরিচালনায় এ দিন পুরুলিয়া শহরে র‍্যালি বেরিয়েছিল।
আলোচনা সভায় উঠে আসে ভারতীয় সংবিধান তৈরিতে অম্বেডকরের ভূমিকা, তাঁর জীবনযাত্রার কথা। কিন্তু, বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়ারা তাঁর সম্পর্কে কম জানেন। পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের জন্য যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন, আজও তা সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক।
এ দিন বিকেলে পুরুলিয়া শহরের মুন্সেফডাঙা শিশু উদ্যানে পুরুলিয়া জেলা তফসিলি জাতি বাউরি কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে সংবিধান রচয়িতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুরুলিয়া জেলা আদিবাসী হরিজন ওবিসি মঞ্চনামে একটি সংগঠনের জন্ম হল এ দিন। শনিবার পুরুলিয়া শহরের একটি ধর্মশালায় সংগঠনের কমিটি গঠিত হয়েছে। সংগঠনের তরফে গোপাল দাস জানান, এই সংগঠন আদিবাসী, হরিজন-সহ যে সমস্ত মানুষ অবিচারের শিকার হবেন, তাঁদের স্বার্থে কাজ করবে। সংগঠনের সমস্ত ব্লক কমিটি গড়া হলে তারপর জেলা সম্মেলনে হবে বলে জানানো হয়।
বরাবাজারের লাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা এ দিন সকালে অম্বেডকরের প্রতিকৃতি নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। প্রধান শিক্ষক শরৎ পরামানিক বলেন, ‘‘স্কুলে অম্বেডকরের জীবনী ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।’’
বান্দোয়ানে জেলায় বড় আকারে একটি অনুষ্ঠান হয়। বান্দোয়ান-পুরুলিয়া রাস্তায় বান্দোয়ানের দুর্গাশঙ্কর সভাগৃহে অনুষ্ঠানটি হয়। সান্তালি লিটারারি ফোরামের উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গুণীজনদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ফোরামের পক্ষে চাকরিসূত্রে আসানসোলের বাসিন্দা কবি অরুণকুমার সোরেন বলেন, ‘‘দুমকার বাসিন্দা লেখক সৌভেন্দ্রশেখর হাঁসদা, অভিনেত্রী ডগরমণি টুডু, গায়ক নরেন হাঁসদা, গল্পকার বিশাখা মাঝি, কাজলি সোরেন, প্রাবন্ধিক গোমস্তাপ্রসাদ সোরেন প্রমুখকে সম্মানজ্ঞাপন করা হয়। অম্বেডকরের জীবনী নিয়ে আলোচনা হয়। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাঁওতালি লেখক সাহিত্যিকদের ভিড়ে সভাগৃহ উপচে পড়েছিল। সাঁওতালি পত্রপত্রিকার স্টলে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারাও ভিড় করেছিলেন।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮।

কাঠুয়া, উন্নাও-এর পর সুরাত, দেশজোড়া বিক্ষোভে সামিল সব স্তরের মানুষ।



দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই দুই ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কাঠুয়া ও উন্নাওয়ে গণধর্ষণ নিয়ে যখন তোলপাড় দেশ, তখন তার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হল রবিবার। এ দিন রাজধানী দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, কেরল, অজমেঢ় এবং ভোপালে আজ মোমবাতি মিছিলে পা মেলান হাজারে হাজারে মানুষ। কাঠুয়ায় ৮ বছরের আসিফাকে ৮ দিন ধরে গণধর্ষন করে খুন করা হয়েছে এবং উন্নাওয়ে ১৬ বছরের একটি কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে এক বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এই দুই ঘটনাই নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতের সুরাতে ৯ বছরের একটি শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলেছে শনিবার জঞ্জালের স্তূপে।
দেশজুড়ে মহিলা ও শিশুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গোটা দেশের মানুষ সরব হয়েছেন। নট ইন মাই নেমএকটি সংগঠন এ দিন নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখায়। দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল রবিবার দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে অনশন শুরু করেন।
বলিউড তারকারাও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাগুলির তীব্র নিন্দা করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বলিউড ডিভাপ্রিয়ঙ্কা চোপড়া এবং একতা কপূর এ দিন টুইট করে তাঁদের ভক্তদের বান্দ্রার কার্টার রোডে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। একতা আজ টুইট করেছেন, ‘‘সবাই আসুন। জাতি-ধর্ম-লিঙ্গভেদে মানবিকতা এবং ন্যায্য বিচারের দাবিতে সবাই আসুন।’’
৪৯ জন প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি যেন নিজে এই পরিবারগুলির বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসেন। চিঠিতে তাঁরা প্রশাসনের তীব্র নিন্দা করে লিখেছেন, ‘‘একটি ৮ বছরের শিশুর উপর বর্বরোচিত অত্যাচার এবং খুন গোটা দেশকে আবার দেখিয়ে দিল যে আমাদের দেশ এখনও কতটা অমানবিক ও বিকৃত রুচির অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আরও এক বার অন্ধকার যুগ যেন নেমে এসেছে, যেখানে সরকার, প্রশাসন এমনকী, রাজনৈতিক দলের নেতারাও অযোগ্য এবং দূর্বল।’’
দেশজোড়া এই প্রতিবাদের মাঝে কাঠুয়ায় নিহত শিশুর মা আজ অপরাধীদের ফাঁসি চেয়েছেন। উন্নাও ধর্ষন কাণ্ডে অভিযোগকারী কিশোরীও বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেনেগার এবং তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮।

Friday, April 13, 2018

২৮ এ এপ্রিল, ২০১৮ কলকাতায় মহামিছিলের ডাক দলিতদের।


দেশ জুড়ে দলিত বিক্ষোভের আঁচ খানিকটা হলেও পড়তে শুরু করেছিল রাজ্যে৷ এ বার দাবি আদায়ে কলকাতায় একযোগে বড় আন্দোলনে নামতে চলেছে দলিতদের সংগঠনগুলি৷ ‘সংবিধান বাঁচাও কমিটি’ নামে একটি মঞ্চ গড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে৷ প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক দু’দিন আগে, ২৮ এপ্রিল মহামিছিলে মধ্য কলকাতার বড় অংশ অবরুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা৷ তফসিলি জাতি ও উপজাতি নির্যাতন-বিরোধী আইন ঘিরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় বিতর্ক বেধেছে দেশজুড়ে৷ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে দলিত বিক্ষোভে রক্তপাতও হয়েছে৷ এ রাজ্যে এখনও তেমন হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি না হলেও দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশের বিরোধিতায় দিন কয়েক আগে দু’ঘণ্টার রেল রোকোর ডাক দিয়েছিল সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ৷ এ বার তফসিলি জাতি, উপজাতি, দলিত এবং সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি যৌথ ভাবে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে ২৮ এপ্রিল৷ মঞ্চের আহ্বায়ক তথা আম্বেদকর মিশনের রাজ্য সম্পাদক সমীর দাশ জানান, ওই দিন শিয়ালদহ এবং হাওড়া থেকে দু’টি মিছিল শুরু হয়ে পৌঁছবে রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির সামনে৷ সেখানে সমাবেশ হবে৷ গবেষক ফারুক আহমেদের বক্তব্য, ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যই বলছে, দশ বছরে দলিতদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ৷ প্রতি ১৫ মিনিটে দলিতদের বিরুদ্ধে একটি অপরাধের ঘটনা ঘটছে৷ দিনে ৬ জন দলিত মহিলা ধর্ষিতা হন৷ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বঞ্চনা, বৈষম্যের ঘটনাও বাড়ছে৷ ১৮ এপ্রিলের বৈঠকে কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত হবে৷
সৌজন্য - এই সময়, ১০/০৪/২০১৮।

Thursday, April 12, 2018

১৪ ই এপ্রিল সারা দেশে অম্বেডকরের মূর্তি সাফাই করবে বিজেপি।


দলিত প্রশ্নে বিপাকে নরেন্দ্র মোদী সরকার। উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনেই ইঙ্গিত যে বিজেপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন দলিতেরা। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের আগে দলিতদের আস্থা ফেরাতে তৎপর হলেন মোদী-অমিত শাহেরা। আগামী ১৪ এপ্রিল, ভীমরাও অম্বেডকরের জন্মবার্ষিকীতে উত্তরপ্রদেশে দলিত প্রধান এলাকায় পদযাত্রা এবং অম্বেডকরের মূর্তি সাফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজেপি নেতাদের। গত চার বছরে দেশে দলিত নিগ্রহের ঘটনা, সুপ্রিম কোর্টে আইন লঘু করা, সংরক্ষণ প্রত্যাহারের সম্ভাবনা উস্কে দেওয়া-সহ একাধিক বিষয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে দলিতদের। হিন্দি বলয় জুড়ে দলিতদের ওই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে তৎপর রাহুল গাঁধীও। সঙ্ঘের উদ্বেগ, হিন্দুদের মধ্যে এভাবে বিভাজন হলে তাতে ক্ষতি বিজেপিরই। বিশেষত যেখানে মুখ খুলছেন বিজেপির দলিত নেতারাই। তাঁদের অভিযোগ, ভারত বন্‌ধের পর থেকে ভুয়ো মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে দলিত নেতাদের। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ধৃত মুজফ্‌ফরনগর জেলার ভীম সেনা প্রধান উপকার বায়রাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নেওয়া হয় আজ। জামিনের আর্জি নাকচ হয় বিএসপি নেতা কমল গৌতমের। আবার আজই অভিযোগ উঠেছে, অম্বেডকরকে নিয়ে আলোচনাচক্র করতে দেওয়ার অনুমতি শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস্টার ইনোভেশন সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
উত্তরপ্রদেশে দলিতদের আস্থা ফেরানোর কৌশল ঠিক করতে গতকালই বৈঠকে বসেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ঠিক হয়েছে, অম্বেডকরের জন্মদিন উপলক্ষে দুদিন ধরে অম্বেডকর মিশন পদযাত্রা হবে। প্রত্যেক সাংসদ ও বিধায়ক নিজেদের সংসদীয় এলাকার দলিত প্রধান অঞ্চলে ওই পদযাত্রা করবেন। দলিতদের সমস্যার কথা জানবেন এবং অম্বেডকরের মূর্তি সাফ করবেন তাঁরা। কিন্তু তাতেই কি আস্থা ফিরবে? সংশয় রয়েছে দলের অভ্যন্তরেই।
দেশে যে ভাবে দলিত বনাম তথাকথিত উচ্চ বর্ণের সংঘাত বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। তাদের আশঙ্কা, দলিতদের ডাকা ভারত বন্‌ধের দিনের মতোই অশান্তি ছড়াতে পারে অম্বেডকরের জন্মদিবসে। সে দিন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাই আগেভাগে আজ প্রতিটি রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, ২ এপ্রিল দেশের কয়েকটি অংশে সংঘর্ষ ও মূর্তি ভাঙার ঘটনা ঘটেছিল। এর পুনরাবৃত্তি রুখতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা যেন তৎপর থাকেন।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮।

আসিফা বিচার পাবেই, টুইট করে জানালেন ভি কে সিং।


কাশ্মীরে গণধর্ষিতা ও খুন হওয়া ৮ বছরের শিশু কন্যা আসিফা বিচার পাবেই, টুইট করে জানালেন প্রাত্তন সেনাপ্রধান ও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বিজেপি নেতা ভি কে সিং।

জানুয়ারি মাসের ঘটনা। পাহাড় পেরিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে নিয়ে মাইল খানেক দূরের একটা ঝিলে গিয়েছিল আট বছরের আসিফা। আর খোঁজ মেলেনি। এক সপ্তাহ পরে তার গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে আসিফার দেহ মেলে।
এ ঘটনা নিয়ে এত দিন বিক্ষোভের আঁচ সে ভাবে গোটা দেশে পৌঁছয়নি। বৃহস্পতিবার বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ টুইট করেন, ‘‘আসিফাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলাম। কিন্তু বিচার ওকে পাইয়ে দিতেই হবে।’’ বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম কেউ আসিফা-কাণ্ডে মুখ খুললেন। বরং ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিজেপির সমর্থনপ্রাপ্ত হিন্দু একতা মঞ্চকে। গত মাসেই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ (তিনি আবার সংসদে কাঠুয়ারই প্রতিনিধি) ধর্ষণে অভিযুক্তের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘যারা অপরাধ করেনি, তাদের বিচার মেলা উচিত।’’
এ দিন ভি কে সিংহের পরপরই টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। লিখেছেন — ‘এক জন অপরাধীকে কী ভাবে কেউ আড়াল করতে পারে? একটি শিশুর সঙ্গে যে নৃশংস অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যেও যদি আমরা রাজনীতি টেনে আনি, তা হলে আমাদের কী অবস্থা ভাবুন!জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আশ্বাস দিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হচ্ছে। সুবিচার হবেই।
তদন্তে জানা গিয়েছে, স্থানীয় একটি মন্দিরে বেশ কয়েক দিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল আসিফাকে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল। চার্জশিটে লেখা হয়েছে, ‘দিনের পর দিন ধরে ধর্ষণ করা হয় আসিফাকে। অত্যাচার করা হয়। আর শেষে খুন করা হয়।শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল আসিফাকে। মাথায় পাথর দিয়ে দুবার আঘাতের চিহ্নও মিলেছিল ময়নাতদন্তে। চার্জশিটে বলা হয়েছে সুরেন্দ্র বর্মা, আনন্দ দত্ত, তিলক রাজ ও খাজুরিয়া নামে চার পুলিশ অফিসারকে নিয়ে গোটা ষড়যন্ত্রটি করেছিল সঞ্জি রাম নামে এক ব্যক্তি। তদন্তে জানা গিয়েছে, খাজুরিয়া-সহ ওই পুলিশ অফিসাররাই আসিফার পরিবারকে নিয়ে তার দেহ খুঁজতে বেরিয়েছিল। এমনকি আসিফার মা-বাবা যখন থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছিল, এদেরই কেউ এফআইআর দায়ের করে। প্রমাণ লোপাট করতে আসিফার রক্ত আর কাদামাখা জামা ধুয়ে তার পর ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছিল এরাই।
জম্মু-কাশ্মীরের ভবঘুরে বকারওয়াল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত আসিফার পরিবার। এঁরা মূলত মেষপালকের কাজ করে দিন গুজরান করেন। বিক্ষুব্ধদের একাংশের দাবি, সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়কে উপত্যকা-ছাড়া করতেই এমন নৃশংস কাজ করা হয়েছিল। কাঠুয়া-কাণ্ডে বিজেপি-যোগ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি অভিযুক্তদের সমর্থনে মিছিল বেরোয়। তাতে মেহবুবার মন্ত্রিসভার দুই বিজেপি সদস্যকেও দেখা গিয়েছিল। মেহবুবা মুফতি অবশ্য বকারওয়াল সম্প্রদায়ের দাবি মেনে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছেন।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩/০৪/২০১৮।

কাশ্মীরের মন্দিরে কেয়ারটেকার আর পুলিস মিলে ছোট্ট শিশুকে ধর্ষণ ও খুন।


সবে তো আট। জীবনে এখনও অনেকটা রাস্তা পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল শিশুটির। কিন্তু তার আগেই নিষ্ঠুরভাবে তার ছোট্ট শরীরকে গিলে খেল ৬ জন মিলে। যাদের মধ্যে আবার ২ জন পুলিসও ছিল। রেয়াত করল না মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। আট বছরের শিশুকে খুন করার আগেও ধর্ষণ করা হয়েছিল। জম্মুকাশ্মীরের কাঠুয়ার একটি গ্রামের মন্দিরের ভেতর নির্মমভাবে ৬ জন মিলে ওই শিশুকে ক্রমাগত গণধর্ষণ করে চলে। ৬ জনের মধ্যে একজন শুধুমাত্র নিজের লালসার পরিতৃপ্তির জন্য মিরাট থেকে কাঠুয়াতে আসে। পুলিস এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য চার্জশিটের মাধ্যমে আদালতকে জানিয়েছে।
চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই শিশুকে অপহরণ করে একসপ্তাহ ধরে তার ওপর চলে এই যৌন নির্যাতন। এরপর তাকে গলা টিপে খুন করা হয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার মুখের ওপর বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে অভিযুক্তরা। ধর্ষণ এবং খুনের এরকম হাড়হিম করা বর্ণনা শুনে অবাক হয়ে যায় আদালতে উপস্থিত সকলে। এই ঘটনার চারমাস পর সোমবার জম্মুকাশ্মীর পুলিস আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৫ পাতার চার্জশিট গঠন করে তা পেশ করে আদালতে। পুলিস জানায়, অভিযুক্তরা পরিকল্পনা করে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার কৌশল করেছিল আট বছরের শিশুকে। কিন্তু তার আগে চলে শিশুটির ওপর অকথ্য অত্যাচার।
চার্জশিটে মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে কাঠুয়ার ‘‌দেবীস্থান’‌ (‌ছোট মন্দির)এর কেয়ারটেকার সাঞ্জি রামের নাম রয়েছে। সাঞ্জি রামকে জেরা করেই বাকি ৫ জনের নাম সামনে আসে। অভিযুক্তরা হল বিশেষ পুলিস আধিকারিক দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দর বর্মা, তাদের বন্ধু প্রবেশ কুমার ওরফে মন্নু, সাঞ্জু রামের ছেলে বিশাল জানগোত্রা এবং তার  ভাইপো। চার্জশিট অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি সাঞ্জি রামের ভাইপো বিশালকে ফোন করে মিরাট থেকে কাঠুয়াতে ফিরে আসতে বলে। বিশাল মিরাটে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। তাকে মিরাট থেকে নিজের যৌন লালসাকে সন্তষ্ট করার জন্য এখানে আসতে বলা হয়। জঙ্গলের মধ্যে যখন শিশুটিকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিস আধিকারিক দীপক খাজুরিয়ার আবার শিশুটিকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা জেগে ওঠে। খুন করার আগে পর্যন্ত তাকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর শিশুটির মাথায় দু’‌বার পাথর দিয়ে আঘাত করে এবং পরে মৃতদেহটিকে জঙ্গলের মধ্যে পুঁতে দেওয়া হয়। যদিও অভিযুক্তদের পরিকল্পনা ছিল দেহটিকে খালের জলে ফেলে দেওয়ার। কিন্তু গাড়ি না থাকায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেওয়া হয়। চার্জশিটে আরও দুই পুলিস কর্মীর নাম রয়েছে। যারা সাঞ্জি রামের থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে এই ঘটনার প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছিল।
১৭ জানুয়ারি জঙ্গল থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ জানুয়ারি জঙ্গলে ঘোড়া চরাতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আট বছরের শিশু। তদন্তকারীদের অনুমান, জঙ্গলে ঘোড়া হারিয়ে যাওয়ায় বেশ ঘাবড়ে পরে ওই শিশুটি। তখন অভিযুক্তরা তার ঘোড়া খুঁজে দেওয়ার অছিলায় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার একদিন পরই শিশুটির পরিবার মন্দিরে গিয়ে অভিযুক্ত সাঞ্জি রামকে তাঁদের নিখোঁজ মেয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু সাঞ্জি রাম জানায়, শিশুটি হয়ত তার কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে। যদিও শিশুটিকে অচৈতন্য করে মন্দিরের ভেতরেই রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরই অপহরণ ও খুন করে শিশুটিকে। সঙ্গে ছিল সাঞ্জি রামের ছেলে ও দীপক খাজুরিয়া। পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কাজ করানো হয় সাঞ্জি রামের ভাইপোকে দিয়ে। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে যে সাঞ্জি রামই ছিল তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে।
কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে কাঠগড়ায় বিজেপি নেতারা। ভিকে সিং একদিকে অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির কথা যেমন বলেছেন। তেমনই জম্মুকাশ্মীরের দুই বিজেপি নেতা অভিযুক্তদের পাশে আছেন। এমনকি অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে তারা মিছিলেও অংশ নিয়েছেন। মুফতির মন্ত্রিসভার বিদেশ মন্ত্রী চৌধুরী লাল সিং ও শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী চন্দরপ্রকাশ গঙ্গা হিন্দু একতা মঞ্চ আয়োজিত এই মিছিলে বুধবার পুরোদমে ছিলেন। দোষীদের নির্দোষ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন দুই মন্ত্রী। যা একেবারেই মানতে পারছেন না মেহবুবা মুফতি। নিজের মন্ত্রিসভার দুই দায়িত্ববান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাই রাজনাথের কাছে নালিশ ঠুকে এসেছেন। তাতে আবার বেজায় চটেছে বিজেপি নেতৃত্ব। চার্জশিট পেশের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং বৃহস্পতিবার এই নারকীয় কাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন! তাঁর বক্তব্য, ‘আসিফার কাছে মানুষ হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু ও সুবিচার পাবে।যদিও আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং একমাস আগেই অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কাঠুয়া পড়ে। জীতেন্দ্র বলেছিলেন, ‘এই ঘটনায় যারা নির্দোষ। তারা সুবিচার পাবেই।এমনকী জীতেন্দ্র সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন মেহবুবা মুফতি। যার জেরে জম্মুকাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে বিজেপির। বুধবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন মেহবুবা। যেখানে কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন মুফতি। মেহবুবা বিরক্ত বিজেপি নেতারা অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ানোয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই রাজঘাটে অনশনে বসার কথা জানিয়েছেন দিল্লি মহিলা কমিশমের প্রধান স্বাতী মালিয়াল।
সৌজন্য – আজকাল পত্রিকা, বৃহস্পতিবার ১২ এপ্রিল, ২০১৮।