Tuesday, December 12, 2017

জি ডি বিড়লা স্কুল Vs একলব্য স্কুল।



জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণ দেখে নিজের সুবিধে মতো কখনো প্রতিবাদে সোচ্চার আবার কখনো নীরব, ধর্ষণের মতন ঘৃণ্য অপরাধে এই অবস্থান নিলে সমাজ থেকে নারী ধর্ষণ রোগ কোনদিনও মুছবে না।

জি ডি বিড়লা স্কুলে সাড়ে তিন বছরের পড়ুয়ার যৌন হেনস্থার ঘটনায় রাজ্য যখন প্রতিবাদে উত্তাল, তখনই সামনে এল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-র চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই রিপোর্ট বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে শিশুদের উপর নির্যাতনের হার বেড়েছে ১১ শতাংশ। ২০১৫ সালে শিশুদের উপর নির্যাতনের নথিভুক্ত অভিযোগের সংখ্যা যেখানে ছিল ৯৪ হাজার ১৭২, সেখানে ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত ১ লক্ষ ৬ হাজার ৯৫৮টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। আর এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে পঞ্চম স্থানে।
শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চম স্থান করে নেওয়া মোটেও গর্বের বিষয় নয়, বরং চরম লজ্জারসম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল সমাজ, মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একাংশের ভুমিকা চরম হতাশাজনক। ধর্ষণের মতন ঘৃণ্য ঘটনাতেও এক শ্রেণীর প্রগতিশীল সমাজ, মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আক্রান্ত নারীর জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণের পরিচয় যাচাই করে প্রতিবাদে সামিল হন। নিজেদের সুবিধে মতন কখনো প্রতিবাদে সোচ্চার হন তো কখনো মুখে কুলুপ এঁটে নীরব থাকেন।
বর্তমানে কলকাতা মহানগরে অবস্থিত জি ডি বিড়লা স্কুলে সাড়ে তিন বছরের পড়ুয়ার যৌন হেনস্থার ঘটনায় সারা রাজ্য জুড়ে তোলপাড় ঘটনা। সমস্ত পক্ষই প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে চাইছেন। কে নেই সেই দলে? রাজনৈতিক নেতা নেত্রী থেকে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, ছাত্র সমাজ থেকে নেট দুনিয়া। আর তাতে সমান তালে যোগ্য সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আমাদের মিডিয়া।
কিন্তু কয়েক মাস আগে জঙ্গল মহলের ঝাড়গ্রাম শহরে অবস্থিত একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রীদের শিক্ষক দ্বারা যৌন হেনস্থা, এমনকি ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে বর্তমান আন্দোলনকারীরা প্রায় সকলেই চুপ করে ছিলেন।
জি ডি বিড়লা স্কুল ও একলব্য স্কুল এর ঘটনা প্রায় একেই হলেও দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বিস্তর ফারাক। আসুন ফারাকগুলি একটু দেখে নি –
১) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় FIR দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার খবর পুলিশের অন্যতম কার্যালয় লালবাজার অবধি পৌঁছেছে। লাল বাজার থেকে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে। কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকেরা ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ পত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও কোন রকম FIR দায়ের করা হয়নি।
২) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে POCSO আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে POCSO আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের তো দুরের কথা The Scheduled Castes And The Scheduled Tribes (Prevention Of Atrocities) Act, 1989 ও 2015 অনুসারেও মামলা দায়ের করা হয়নি।
৩) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ দেখানোর সম্পূর্ণ সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন স্কুল চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করে অভিভাবকদের প্রতিবাদ জানানোর গণতান্ত্রিক সুযোগ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিলেন। ঝাড়গ্রাম মহকুমা শাসকের দফতরেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল যাতে অভিভাবকেরা মহকুমা শাসককেও ডেপুটেশন জমা দিতে না পারেন। প্রায় ১ মাস আদিবাসী সংগঠনগুলিকে প্রতিবাদ সমাবেশ করার পুলিসি অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
৪) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এবং ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলার প্রায় সমস্ত মিডিয়ার দুই রকম ভুমিকা দেখতে পাওয়া গেল। কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে যেখানে পশ্চিমবাংলার প্রায় সমস্ত প্রথম সারির মিডিয়া গুরুত্ব সহকারে সংবাদ পরিবেশন করল সেখানে ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সমস্ত মিডিয়া অদ্ভুত ভাবে নীরব।
৫) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে যে আক্রান্ত শিশুটির মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে, কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোন রকম মামলায় যেখানে দায়ের করা গেল না, সেখানে তো আক্রান্ত আদিবাসী ছাত্রীদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা কে করবে?
৬) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে  পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে, কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন অদ্ভুত ভাবে নীরব। পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনও ঝাড়গ্রাম এর ঘটনার ক্ষেত্রে অদ্ভুত ভাবে নীরব।
৭) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে ও অভিভাবকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল অদ্ভুত ভাবে নীরব। বিজেপি ও সিপিম দায়সারা গোছের প্রতিবাদ পত্র ঝাড়গ্রামের মহকুমাসাসকের কাছে জমা দিয়েই কাজ সেরেছে।
৮) কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল এর ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় এর আন্দোলন পটু ছাত্ররা শিশুটির পরিবার ও অভিভাবকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে, কিন্তু ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তারাও নীরব।

আসুন আরও একবার দেখে নি ই ঝাড়গ্রামের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ে কি ঘটেছিল।
একটি বিশ্বস্ত সুত্র মারফত জানা যায় যে ঝাড়গ্রাম শহরে (ডাক + জেলা - ঝাড়গ্রাম) অবস্থিত একলব্য আবাসিক মডেল স্কুল (Ekalavya Residential Model School) এ পাঠরতা আবাসিক আদিবাসী ছাত্রীদের ওপর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত জনৈক আধিকারিক দুই শিক্ষক মহাশয়গণ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন, এমনকি লাগাতার ধর্ষণ করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকগণ এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে গত ২৮/০৭/২০১৭ তারিখ নাগাদ ১৫ জন (পনেরজন) নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকগণ স্থানীয় ঝাড়গ্রাম থানার IC র নিকট FIR এর জন্য অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন কিন্তু এখনও অভিযুক্ত আধিকারিক ও দুই শিক্ষক মহাশয়গণকে গ্রেফতার বা কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি মনে হয় যে অভিযুক্ত আধিকারিক ও দুই শিক্ষক মহাশয়গণ অতি প্রভাবশালী এবং তাদের হয়ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলের উচ্চ স্তরে যোগাযোগ আছে, তাই হয়ত স্থানীয় থানা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনোরকম আইনি পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছে স্থানীয় থানার মদতে স্কুল কতৃপক্ষ একলব্য আবাসিক মডেল স্কুল (Ekalavya Residential Model School) কে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিনত করেছিলেন নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের স্কুলের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছিল যাতে সত্যি কথা বাইরে না আসে এমনকি নির্যাতিতা ছাত্রীদের অভিভাবকদেরও ছাত্রীদের সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না ঝাড়গ্রামের SDO সাহেবকে অনেক অনুরোধ জানানোর পর গত ২৬/০৭/২০১৭ তারিখ জেলখানার বন্দির মতন আদিবাসী ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকের সাথে দেখা করার সুযোগ পায় ছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিবরণ শুনে অভিভাবকরা স্তম্ভিত, বেদনাহত ও চরম ভীত একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলে এ পাঠরতা আবাসিক আদিবাসী ছাত্রীদের ওপর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত জনৈক আধিকারিক ও দুই শিক্ষক দ্বারা মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন এমনকি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার  আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলএর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়, সমস্ত ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবী, দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী, এবং The Protection of Children from Sexual Offences Act (POCSO), 2012  এবং The Schedule Castes and the Schedule Tribes (Prevention of Atrocities) Act, 1989 The Schedule Castes and the Schedule Tribes (Prevention of Atrocities) Amendment Act, 2015 অনুসারে মামলা দায়ের করার আবেদন জানানো হয় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে
নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের মুখ থেকে নির্যাতনের যে বিবরণ অভিভাবকেরা পেয়েছিলেন তা ঝাড়গ্রাম থানার IC র নিকট পেশ করা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল বিবরণ শুনলে যে কোন কঠিন হৃদয়ের মানুষও কেঁদে ফেলবেন একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলে এ পাঠরতা নির্যাতিতা আবাসিক আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগপত্রের বিবরণ থেকে জানা যায় যে দিনের পর দিন একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলে এ পাঠরতা আবাসিক আদিবাসী ছাত্রীদের ওপর মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের একলব্য স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে নাচ করানো হয়েছে এই সমস্ত বিষয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকেরা যাতে কিছু জানতে না পারেন তাই কোনদিনও ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের সাথে একাকী দেখা করতে পারত না
নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের জানিয়েছে যে একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলের জনৈক ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আদিবাসী ছাত্রীদের কাছে পিতৃ তুল্য হওয়া সত্ত্বেও এমন অসভ্য আচরন করেন যা অবর্ণনীয় একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলের জনৈক ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে স্পর্শ করে যৌন হেনস্থা করে আসছেন, যা আদিবাসী ছাত্রীরা ভয়ে লজ্জায় তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রকাশ করতে পারেনি ঐ আধিকারিক আদিবাসী ছাত্রীদের বগলদাবা করে স্তন চেপে ধরতেন বলে অভিযোগ
আদিবাসী ছাত্রীদের ওপর একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলের জনৈক ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের যৌন হেনস্থার যোগ্য সঙ্গী ছিলেন একলব্য স্কুলের দুই শিক্ষক এই দুই শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় অপমান করে এক শিক্ষক শরীর শিক্ষার নাম করে আদিবাসী ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গে হাত দেন এবং অশীল ভাষায় গালাগালি দেন এমনকি আদিবাসী ছাত্রীদের বাবা-মা তুলে নোংরা ভাষা প্রয়োগ করেন একলব্য স্কুলের আর এক শিক্ষক আদিবাসী ছাত্রীদের বিশেষ ভাবে শিক্ষা দেবার নাম করে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে স্কুল ও হস্টেল থেকে তাড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে একাধিক বার একাধিক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ
এই সমস্ত মর্মান্তিক ঘটনা আদিবাসী ছাত্রীরা বার বার তাদের প্রধান শিক্ষক বা Teacher-in-Charge  কে বার বার জানিয়েছে, কিন্তু প্রধান শিক্ষক বা Teacher-in-Charge রহস্যজনক ভাবে নীরব থেকেছেন, প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা করেননি এই অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীরা ঝাড়গ্রামের SDO সাহেবকে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় গত ২৫/০৭/২০১৭ তারিখে সদর দরজা দিয়ে আদিবাসী ছাত্রীদের আসতে না দেওয়ায় নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীরা একলব্য স্কুলের হস্টেল এর পাঁচিল টপকে ঝাড়গ্রাম SDO অফিস এর দিকে রওনা হয়ে শহরের পাঁচ মাথা মোড়ের কাছে চলে আসে একলব্য স্কুলের শিক্ষকেরা বিষয়টি আন্দাজ করে আদিবাসী ছাত্রীদের পিছু ধাওয়া করে পাঁচ মাথা মোড়ের কাছে ধরে ফেলে ও জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে একলব্য স্কুলে ফেরত নিয়ে আসে এই সমস্ত ঘটনা একলব্য আবাসিক মডেল স্কুল (Ekalavya Residential Model School) কতৃপক্ষ নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের পরিবারকে জানায়নি বিভিন্ন সুত্র মারফত আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকরা ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে পরদিন ২৬/০৭/২০১৭ তারিখে নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের সাথে দেখা করতে একলব্য আবাসিক মডেল স্কুলে গেলে তাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করা হয় এবং তাড়িয়ে দেওয়া হয় অভিভাবকেরা ঝাড়গ্রাম এর SDO-র সাথে দেখা করে অনুনয় বিনয় করলে SDO সাহেব একটি গাড়ি করে দেন সেই গাড়িতে চেপে অভিভাবকেরা একলব্য স্কুলে গেলে সেখানে তাদের মেয়েদের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়, তবে জেলখানার বন্দি কয়েদির মতন গ্রিলের ওপর প্রান্ত থেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে একলব্য স্কুলের নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীরা তাদের ওপর জনৈক আধিকারিক ও দুই শিক্ষক দ্বারা মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন এমনকি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার কথা জানান স্তম্ভিত অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের একলব্য স্কুলের হস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেও স্কুল কতৃপক্ষ অস্বীকার করে বলে অভিযোগ
তার পরদিন ২৭/০৭/২০১৭ একলব্য আবাসিক মডেল স্কুল (Ekalavya Residential Model School) এ পাঠরতা আবাসিক নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের বাড়ি ফিরিয়ে নেবার চেষ্টায় কখনও একলব্য স্কুল, কখনও ঝাড়গ্রাম থানা, কখনও ঝাড়গ্রাম মহকুমা শাসকের অফিসে প্রার্থনা, নিবেদন, অনুনয়, বিনয়, ধর্না করে কেটে যায়, কিন্তু কোন পক্ষ কোনোরকম সহযোগিতা করে না, আর নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীরাও বাড়ি যেতে পারেনি বাধ্য হয়ে তার পরদিন গত ২৮/০৭/২০১৭ তারিখ ১৫ জন (পনেরজন) নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের অভিভাবকগণ ঝাড়গ্রাম থানার IC র নিকট FIR দায়ের করার জন্য লিখিত অভিযোগ পত্র জমা দেন কিন্তু নির্যাতিতা আদিবাসী ছাত্রীদের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি দেবার কোন প্রয়াস পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ ঝাড়গ্রাম বাসির চোখে পড়ল না
এর পর প্রায় দেড় মাস পর ০৬/০৯/২০১৭ পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি পাবার পর প্রায় লক্ষাধিক আদিবাসী মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ সংগঠিত করে আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল কিন্তু প্রশাসন সংবেদনশীল হন নি কোন অভিযুক্ত কে গ্রেফতার করা তো দুরের কথা, সামান্য জিগেসাবাদ টুকু করা হয়নি
পুনরায় ২৮/১১/২০১৭ আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলপশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার জেলা শাসক দফতরের সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও জেলা শাসকদের মারফত খোদ পশ্চিমবাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দাবিপত্র জমা দেন
কিন্তু এখনো ঝাড়গ্রাম শহরের একলব্য আবাসিক আদর্শ বিদ্যালয়ের নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রীদের ওপর নারকীয় মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন, এমনকি লাগাতার ধর্ষণ করে আসছেন বলে অভিযোগ যে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ও দুই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি পুলিশ প্রশাসন কোন রকম আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না, আর পশ্চিমবাংলার প্রতিবাদী আন্দোলন মুখী জনতার একাংশ, রাজনৈতিক দল ও মিডিয়ার একাংশ নীরব রইলেন

এই দুমুখি অবস্থান নিয়ে কি পশ্চিমবঙ্গের মাটি থেকে ধর্ষণ নামক ঘৃণ্য রোগটিকে নির্মূল করা যাবে??? 

No comments:

Post a Comment