কালনা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭।
নৈশ বৈঠকের পরে এ বার প্রত্যন্ত
এলাকায় চাটাই, মাদুরে পেতে বসে সাধারণ মানুষের সমস্যা শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব
বর্ধমান জেলা প্রশাসন। শনিবার ‘জনতার দরবারে’ নামে এই বৈঠক শুরু হল কালনা ২ ব্লকের
পিন্ডিরা পঞ্চায়েতের কানিবামনি এলাকায়। যদিও পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ধরনের বৈঠককে ‘ভাঁওতা’
বলে দাবি করেছে বিজেপি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাধারণ মানুষের জন্য অল্প মূল্যে
রেশনের চাল-সহ বহু সরকারি প্রকল্প রয়েছে। গ্রামের গরিব পরিবারের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
কৃষি-সহ নানা বিষয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ, অনেকে না জানার ফলে সেই সুবিধাগুলি
নিতে পারেন না। গ্রামের নানা দাবি-দাওয়াও সব সময় প্রশাসনের কাছে পৌঁছয় না। এ সবের জন্যই
গ্রামে গিয়ে এমন বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানায়, কালনা মহকুমায়
পিন্ডিরার পরে এমন বৈঠক হবে বৈদ্যপুর, বড়ধামাস, আনুখাল, বাঘনাপাড়া, সুলতানপুর, কাঁকুরিয়া
পঞ্চায়েত এলাকায়। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিটি বৈঠকে থাকবেন জেলা থেকে ব্লক,
প্রশাসনের নানা স্তরের আধিকারিকেরা। বৈঠকে উঠে আসা নানা অভিযোগ ও দাবিকে নিষ্পত্তির
চেষ্টা হবে সেখানেই। ২ জানুয়ারি, ২০১৮ মাটি উৎসব উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জেলায় আসার কথা। তার পরে জনতার দরবার বসবে কাটোয়া মহকুমায়।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের
উদ্যোগে কাটোয়া ১, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা, রায়না ২ এবং খণ্ডঘোষে রাত-বৈঠক
করে বাসিন্দাদের কথা শোনা হয়েছে। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘ওই সব বৈঠকে অজস্র
সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কালেখাঁতলায় মানুষের বেশ কিছু রাস্তার দাবি ছিল। দ্রুত সেই
কাজ শুরু হবে। প্রশাসনকে আরও মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাটাই পেতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।’’
এ দিন বিকেলে কানিবামনি গ্রামে
গিয়ে দেখা যায়, মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া, জেলা সভাধিপতি দেবুবাবু-সহ প্রশাসনের
কর্তারা চাটাইয়ে বসে কথা বলছেন বাসিন্দাদের সঙ্গে। গ্রামের রাস্তা, পুকুরের ঘাট, আদিবাসী
লোকশিল্পীদের সরকারি কার্ডের দাবি উঠে আসে বৈঠকে। মহকুমাশাসক তফসিলি জাতি-উপজাতি শংসাপত্র
কার নেই জানতে চাইলে অনেকে হাত তোলেন। এ জন্য এলাকায় শিবির করা হবে বলে জানান তিনি।
রেশন কার্ড নেই বলেও জানান কয়েক জন। খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা প্রয়োজনে সে জন্যও গ্রামে
শিবির করার আশ্বাস দেন। গ্রামের বাসিন্দা রাখী সর্দার, সন্ধ্যা টুডুরা বলেন, ‘‘রাস্তা
খারাপ, নলকূপের সমস্যার কথা জানিয়েছি বৈঠকে।’’ নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথা তাঁদের
জানান প্রশাসনের কর্তারাও।
বিজেপি অবশ্য এই ধরনের বৈঠককে
শাসকদলের ভাঁওতা বলে দাবি করেছে। দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের কথায়,
‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে-গ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে। সে সব ধামাচাপা
দিতে বৈঠকের নামে ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা,
২৪/১২/২০১৭।
No comments:
Post a Comment