Thursday, December 21, 2017

ক্রিকেটার যুবরাজ সিং এর পাশে দাড়িয়ে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় নিজের লড়াইয়ের কাহিনি শুনিয়ে এল জয়পুর কন্যাশ্রী ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন নবম শ্রেণীর ছাত্রী শীলা বাগদি।

পুরুলিয়া, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭।

এক বছর আগে প্রথম পুরুলিয়া শহরে এসেছিল শীলাজয়পুরের খেদাটাঁড় গ্রাম থেকে জেলা সদরের দূরত্বটা বেশি নয়কিন্তু সেটুকু পার করতেই ১৩ বছর কাবার হয়ে গিয়েছিলসেই মেয়ে দিন আগে ঘুরে এল কলম্বোক্রিকেটার যুবরাজ সিংহের পাশে দাঁড়িয়ে দেশ-বিদেশের মানুষকে তার লড়াইয়ের গল্প শোনাল শীলা বাগদিগতবার কন্যাশ্রী কাপ ফুটবলে ১৮টি গোল করে সবার নজর কেড়েছিল জয়পুর আরবিবি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রীটিচলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল ইউনিসেফ-এর যৌথ উদ্যোগে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রচারে একটি অনুষ্ঠান হয়সেখানে সে ছিল দেশের অন্যতম প্রতিনিধিইউনিসেফ-এর অ্যাডোলেসেন্ট ইন্টারভেনশন কর্মসূচির পুরুলিয়ার নোডাল অফিসার অনিরুদ্ধ রায় বলেন, ‘‘আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে অনূর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হবেতারই প্রচার কর্মসূচি ছিল কলম্বোয়দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর ভারত থেকে প্রতিনিধিরা গিয়ে তাদের লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছে সেখানেভারত থেকে গিয়েছিল শীলা আর ঝাড়খণ্ডের এক কিশোরী।’’
শীলা বাগদির বাবা মতিলাল বাগদি ঝা়ড়খণ্ডের একটি মেসে রাঁধুনির কাজ করেনএক জনের আয়ে জনের সংসার চলে নামা বড়কি বাগদিকেও দিনমজুরি করতে হয়দুপুরে স্কুল আর বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে এক্কাদোক্কা, কুমির ডাঙা খেলে দিন কাটছিল শীলারতার মধ্যেই জয়পুরে হয় জঙ্গলমহল কাপ প্রতিযোগিতাশীলা তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়েসালটা ২০১৩মাঠে মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখে ভাবনার দুনিয়াটাই বদলে যায় কিশোরীটিরতখনও কন্যাশ্রী ফুটবলের নাম শোনেননি কেউবান্ধবী পিঙ্কি বাগদি, মমতা বাগদি, প্রিয়া বাগদিদের সঙ্গে শলা করে শীলা যায় জগন্নাথ বাগদির কাছেজগন্নাথ গ্রামের ছেলেদের ফুটবল শেখানশখেইছোটছোট মেয়েদের আগ্রহ দেখে তিনিই ফুটবলের বন্দোবস্ত করে দেনশুরু হয় প্রশিক্ষণবছর পঁয়ত্রিশের জগন্নাথ বলেন, ‘‘মেয়েরা মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করছে, ব্যাপারটা সেই সময়ে অনেকেই ভাল চোখে দেখতেন নাকিন্তু চোখকান বুঁজে ওরা ফুটবলে ডুবেছিল।’’ অবশ্য পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জয়পুর থানার পুলিশতৈরি হয়খেদাটাঁড় মহিলা ফুটবল ক্লাব’।
তারপর আসে কন্যাশ্রী ফুটবল কাপগত বছর পুরুলিয়ায় সেই প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয় জয়পুর কন্যাশ্রী ক্লাবচ্যাম্পিয়ন দলের ক্যাপ্টেন শীলা নিজে পায় প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের সম্মানজেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘এটা কন্যাশ্রী কাপের সাফল্য বলতে পারেনএকেবারে গল্পের মতএই কাপ না থাকলে তো শীলা নজরেই পড়ত না এখন দেশের মুখ।’’
যুবরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন ? শীলা বলে, ‘‘আমি তো এতদিন ছবিতেই দেখেছি ওঁকেপ্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমার সামনে সেই মানুষটাই দাঁড়িয়ে আছেনকিন্তু উনি আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেনবাড়ির কথা জিজ্ঞেস করেছেন।’’
মেয়ের পাসপোর্ট আর ভিসা করাতে প্রথম কলকাতায় পা দেন শীলার বাবা মতিলালবাবুতিনি বলেন, ‘‘আমি মেয়েটাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাব সেই সামর্থ্য নেই- আমাকে কলকাতা ঘুরিয়ে আনলওই দিনটায় চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রশান্ত পাল, ২০/১২/২০১৭।

No comments:

Post a Comment