লোহারদাগা, ঝাড়খণ্ড, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭।
স্বাধীন দেশে সাত দশক ওদের গ্রাম ছিল অন্ধকারেই ঢাকা। অবশেষে এই প্রথম আদিম
জনজাতি প্রধান গ্রাম পেশরারতে এল বিদ্যুতের আলো। ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা জেলার
প্রত্যন্ত এই গ্রামে গরিবগুর্বো আদিম জনজাতিদের বাস। পেশরার গ্রাম থেকে শহরে
যাওয়ার ঠিক মতো রাস্তাও ছিল না। লোহারদাগা শহরে যেতে হলে ৩০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে
হতো। একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে বেশির ভাগ সময়েই তালা ঝুলত। জঙ্গল ঘেরা
এই গ্রামটি হয়ে উঠেছিল মাওবাদীদের গড়। মাওবাদী নেতা নকুল যাদবের এই গড়ে
লোহারদাগার এসপি অজয় কুমার সিংহ খুন হয়েছেন কয়েক বছর আগে। মাওবাদীরা এখন অবশ্য
অনেকটাই নিষ্প্রভ। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে লোহারদাগা প্রশাসন। লোহারদাগার
ডিসি বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘পেশরার গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতে আলো
নিয়ে আসা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। পেশরার পুলিশ আউটপোস্ট সংলগ্ন সমস্ত বাড়িতে বিদ্যুৎ
পৌঁছে গিয়েছে। দ্রুত কাজ চলছে। আশা করি মাসখানেকের মধ্যে সব বাড়িতেই আলো চলে
আসবে।’’
গ্রামে বিদ্যুতের আলো আসায় উৎসবে মেতেছে গোটা গ্রাম। খুশিতে মাদলের তালে তালে
নাচ গান করলেন গ্রামের যুবক যুবতীরা। এরকমই এক স্থানীয় কিশোর অলোক মুণ্ডা বলেন, ‘‘লোহারদাগায় মামার বাড়িতে আলো আছে। বছরে এক বার মামার
বাড়িতে যাই। রাতে মামারবাড়িতে আলো জ্বলা দেখে খুব ভাল লাগত। এখন আমার বাড়িতেও
আলো জ্বলবে। খুব ভাল লাগছে।’’ আর এক স্থানীয় যুবক অর্জুন
মাহাতো বলেন, ‘‘এই আলো এক বছর আগে এলে কত ভাল হতো। গত বছর
আমার দাদা মারা গেল সাপের কামড়ে। ঘরে সাপ ঢুকেছিল। অন্ধকারে বুঝতে পারিনি।
বাড়িতে আলো থাকলে সাপটা হয়তো দেখতে পেতাম। এই ভাবে দাদাকে সাপের কামড়ে মরতে হতো
না।’’
যদিও এই আলো আসার উৎসবের মধ্যেই কিছু ক্ষণের জন্য তাল কেটে গেল। লোহারদাগার
সাংসদ সুদর্শন ভগত একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে বালবের আলো জ্বালিয়ে উদ্বোধনের কিছু
ক্ষণের মধ্যেই লোডশেডিং হয়ে গেল। অবশ্য আলো ফিরে এল অল্প ক্ষণ পরেই। আশঙ্কা, আলো এলো ঠিকই কিন্তু ঝাড়খণ্ডের অন্য গ্রামগুলোতে যেমন
মাঝেমধ্যেই টানা চার পাঁচদিন লোডশেডিং চলে, সে রকমই হবে নাতো
পেশরারেও? আজকের খুশির দিনে এসব নিরাশজনক কথা ভাবছেন না
গ্রামবাসীরা। সন্ধ্যায় গ্রামের রাস্তায় আলো জ্বলবে। বিদ্যুৎয়ের আলোতে পড়াশোনা
করবে ছেলেমেয়েরা। সেই খুশিতেই মাতোয়ারা গোটা গ্রাম।
সৌজন্য- আনন্দবাজার পত্রিকা, আর্যভট্ট খান, ০৮/০৯/২০১৭।
No comments:
Post a Comment