সিউড়ি, ২০ ও ২১
ডিসেম্বর, ২০১৭।
যাত্রা দেখতে যাওয়া এক
আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল বীরভূমের তাপাইপুরে। মঙ্গলবার বিকেলে সিউড়ি
থানায় এই মর্মেই অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা। সাঁইথিয়ার গ্রাম থেকে পরিজন ও
পড়শিদের সঙ্গে সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুরে যাত্রা দেখতে এসেছিলেন বছর বাইশের ওই
নির্যাতিতা। অভিযোগ, সেখান থেকেই তাঁর মুখ, চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে
গিয়ে গণধর্ষণ করে জনা দশেক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার গভীর রাতে। অপরাধীদের
মধ্যে চেনা এক আদিবাসী যুবক রয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নির্যাতিতা।
সিউড়ি থানা অভিযোগ
পাওয়ার পরেই জেলা হাসপাতালে নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েছে। তবে মঙ্গলবার
সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার
বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।
অপরাধীরা ধরা পড়বেই।’’
নির্যাতিতার
বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে,
বছর তিনেক আগে সাঁইথিয়ার কুলতোড় আদিবাসী পাড়ায় এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়
তাঁর। শুক্রবার সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুর গ্রামে একটি ছোট মেলা চলছিল। ছিল
আদিবাসীদের যাত্রার আসর। সাঁইথিয়ার গ্রাম থেকে স্বামী,
শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্য ও পড়শিদের সঙ্গে ট্রাক্টর ভাড়া করে সেই অনুষ্ঠান
দেখতে এসেছিলেন ওই বধূ। নির্যাতিতার কথায়, “অনুষ্ঠান চলাকালীন
পড়শি দুই মহিলার কথায় আসর ছেড়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গিয়েছিলাম। আলো,
আঁধারির মাঝে হঠাৎ বেশ কয়েক জন যুবক এসে জোটে।” তাঁর অভিযোগ,
“আমার দুই সঙ্গী তখন ওখানেই ছিল। কিছু বোঝার আগেই ছেলেগুলো আমার মুখ-চোখে কাপড়
বেঁধে বেশ খানিকটা দূরে ফাঁকা জায়াগায় নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে। তখনই এক যুবককে
চিনতে পারি।”
পরিজনেরা জানিয়েছেন,
ওই অত্যাচারের পরে লজ্জায়, অপমানে-যন্ত্রণায়
কুঁকড়ে গিয়েছিলেন ওই বধূ। মঙ্গলবার তিনি যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি,
সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে নির্যাতিতার মুখে-চোখে একই রকম আতঙ্ক ও
যন্ত্রণার ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। কী ভাবে উদ্ধার হলেন নির্যাতিতা ?
এত দেরি করে কেন অভিযোগ জানালেন? নির্যাতিতার ভাসুর
জানাচ্ছেন, যাত্রার আসরে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বসার ব্যবস্থা
ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে কখন যে ভাইয়ের স্ত্রী বাইরে
এসেছে জানতামও না। রাত একটার পরে আমি আসর ছেড়ে ট্রাক্টরটা দেখতে বাইরে এসেছিলাম।
তখনই দেখি, ভাড়া করা ট্রাক্টরটার কাছে বসে সমানে কেঁদে চলেছে
বৌমা। এত রাতে একা কেন, কী হয়েছে, জিজ্ঞেস করায় শুধু
বলছিল, আমাকে ছেলেগুলো টেনে নিয়ে গিয়েছিল।’’
কিন্তু, অত্যাচার যে হয়েছে লজ্জায় সেটা জানাতে পারেননি ওই
বধূ। বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়েও ওই বধূ রাতের ঘটনা খুলে বলেননি বলে পরিজনদের দাবি।
বাপের বাড়ি, মহম্মদবাজারে গিয়ে ওই বধূ সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে
জানান। নির্যাতিতার ভাসুরের কথায়, ‘‘অত্যাচারের কথা শুনে
সকলের মাথা রাগে আগুন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, অভিযুক্তকে মারধর করে
আইন হাতে নিতে চাইনি।’’
নির্যাতিতার দাদা
জানিয়েছেন, রবিবার বোন সমস্তটা বলার পরে মহম্মদবাজার থানায়
অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মহম্মদবাজার থানা পরামর্শ দেয়,
ঘটনাস্থল যখন সিউড়ি থানা, তখন ওখানে অভিযোগ করাই
ভাল। তারপরই সিউড়ি এসে অভিযোগ করেন নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার সন্দেহ,
পড়শি দুই মহিলার সঙ্গে হয়তো যোগসাজস ছিল অভিযুক্তদের। সেই সম্ভাবনা খতিয়ে
দেখছে পুলিশ। খোঁজ চলছে অভিযুক্তদেরও।
গণধর্ষণের ঘটনায় মূল
অভিযুক্ত নাবালক। শুক্রবার সিউড়ির তাপাইপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার
হওয়ার পর এ কথা জানায় পুলিশ। উল্লেখ্য, গত ১৯/১২/২০১৭ (মঙ্গলবার)
সিউড়ি থানায় বছর বাইশের এক আদিবাসী বধূ
অভিযোগ জানান, সাঁইথিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পরিজন,
পড়শিদের সঙ্গে ট্রাক্টরে চেপে শুক্রবার তাপাইপুরে যাত্রা ও মেলা দেখতে
এসেছিলেন। রাত ১২টা নাগাদ তাঁকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায় দু’জন পরিচিত। অভিযোগ,
তখনই জনাদশেক যুবক তাঁকে চোখমুখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। চোখ বাঁধার
আগে আধা-অন্ধকারে তিনি এক জনকে চিনতে পেরেছিলেন।
গত ২০/১২/২০১৭ (বুধবার)
রাতেই সাঁইথিয়ার কুলতোড় গ্রাম থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তার পরই জানা যায়
ধৃতের বয়স ১৬। বুধবার তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানো হয়। জামিন না-মঞ্জুর করে অভিযুক্তকে বহরমপুর
হোমে পাঠান প্রিন্সিপ্যাল ম্যাজিষ্ট্রেট অলিভা রায়।
বোর্ডের সরকারি
আইনজীবী বিকাশ পৈতণ্ডী জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে
অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি ধৃতকে ফের হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা,
২০ ও ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭।
No comments:
Post a Comment