সামনে ভোট, গ্রাম উন্নয়নে জোর মমতার।
৫ ডিসেম্বর, ২০১৭।
পাখির চোখ যে আপাতত পঞ্চায়েত ভোটই, সোমবার
নবান্নে পর্যবেক্ষণ বৈঠকে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আবার জানিয়ে দেন, রাজ্যের
পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে সরকার ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। ‘‘১৫
ডিসেম্বরের পরেও পরিকল্পনা খাতের যে-টাকা বিভিন্ন দফতরের কাছে রয়ে যাবে, সরকার
তা ফেরত নিয়ে নেবে। ওই টাকার ২৫% গ্রামীণ রাস্তা ও পানীয় জল সরবরাহে খরচ করা হবে,’’ নবান্ন
সভাঘরে সব দফতরের মন্ত্রী, সচিব ও আধিকারিকদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ বৈঠকের পরে বলেন মমতা। গ্রামের এই উন্নয়ন
কর্মসূচির মধ্যে সড়ক থেকে পানীয় জল থেকে স্বাস্থ্য সবই যে পড়বে, তা
স্পষ্ট করে দেন মমতা।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। মূলত সে-দিকে
তাকিয়েই মুখ্যমন্ত্রী গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে চাইছেন
বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। রাস্তা ও জল সরবরাহের বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করবে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উন্নয়নে।’’ তিনি
জানান, সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৯০০ কোটি
দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। মমতা বলেন, ‘‘২০১৬-য় পরিকল্পনা খাতে আমাদের খরচ ছিল ৩৬
হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে।’’ পরিকল্পনা
করে কাজ করলে যে সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকা যায়, এ কথা অনেক বারই শোনা গিয়েছে মমতার মুখে।
এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ, দশ, পনেরো ও কুড়ি বছরের পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছি আমরা।’’ অনেক
ক্ষেত্রে কেন্দ্র টাকা আটকে রাখলেও রাজ্য সরকার যে নিজের কোষাগারের টাকা খরচ করে
উন্নয়ন চালু রেখেছে, সেটা আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এ বছরের
২৫ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে আমাদের বকেয়া রয়েছে ১৩ হাজার ৭১৪ কোটি ৩২ লক্ষ
টাকা। ১০০ দিনের কাজে ১৪৭০ কোটি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮৮৭
কোটি, স্বচ্ছ ভারত মিশনে ৭০০ কোটি, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন খাতে ২৩৩০ কোটি, শিক্ষকদের
বেতন বাবদ ২০০০ কোটি, গ্রামীণ জল পরিষেবায় ৪০০ কোটি, সকলের জন্য ঘর প্রকল্পে ৪৫৯ কোটি, ছিটমহল
হস্তান্তর বাবদ ৫৯০ কোটি এবং রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় ১১৭ কোটি টাকা পড়ে
রয়েছে কেন্দ্রের ঘরে। তবে উন্নয়নের কাজ আশানুরূপ না-হওয়ায় কয়েকটি দফতরের মন্ত্রী ও
সচিবেরা মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষের মুখে পড়েন। সেই তালিকায় রয়েছে দমকল, কৃষি
বিপণন, পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মৎস্য, সুন্দরবন উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষা। এই সব দফতর বরাদ্দ টাকার অর্ধেকও খরচ করতে
পারেনি বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা, ০৫/১২/২০১৭।
No comments:
Post a Comment