Thursday, December 28, 2017

আদিবাসী পত্রিকা Baha Magazine ।


আদিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের উদ্যোগ কেন্দ্রীয় সরকার ও ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির।


নয়াদিল্লি| ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭।

আদিবাসী বা ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে জাতীয় স্তরে অনেক রকমের সমীক্ষা হয়।  কিন্তু তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় না। এই সব জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের সমীক্ষা বা গবেষণালব্ধ তথ্য মেলে না সরকারি বেসরকারি কোনও স্তরেই। গত নভেম্বর মাসে ভুবনেশ্বরে ন্যাশনাল কনফারেন্স: ট্রাইবাল মেন্টাল হেলথচলাকালীন কেন্দ্রীয় আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জুয়েল ওরাঁও ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা বলেন। সেই মতো দিল্লিতে গত ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির সদস্যদের বৈঠকে সোসাইটির পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বর্তমান মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি লিখিত রিপোর্ট দেওয়া  হয়। আলোচনায় উঠে আসে অবহেলা ও বঞ্চনার কারণে  আদিবাসী মানুষজনের অবসাদ জনিত সমস্যার বিষয়গুলিও।
ভারতেই রয়েছে আদিবাসীদের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যা। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মানসিক সাস্থ্যের বিষয়টি ভীষণ ভাবে অবহেলিত। মন্ত্রীর কাছে সোসাইটির পক্ষ থেকে ভারতের আদিবাসী সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গবেষণার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। টাস্ক ফোর্সের দায়িত্বে থাকবেন সোসাইটির সদস্যরা এবং আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রকের আধিকারিকরা। টাস্ক ফোর্সের কাজের খরচের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। সোসাইটির সেক্রেটারি ডাঃ গৌতম সাহা বলেন, আদিবাসী সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সমগ্র দেশের ক্রমোন্নতি। সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির দেওয়া  প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি এ বিষয়ে সমস্ত রকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। এবং এই বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকেও সার্কুলার পাঠানো হবে বলে জানান।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮/১২/২০১৭।

পুরুলিয়া জেলার ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে উৎসব।


পুরুলিয়া| ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭।

শীত পড়লেই বামনিয়া ময়দান যেন শুনতে পায় ধামসা-মাদলের বোল। মনে হয়, ছৌশিল্পীর পায়ের ধাক্কায় যেন ধুলো উড়ছে। কানে ভেসে ঝুমুলিয়ার গলা। বছরের পর বছর ধরে এই হাড় কাঁপানো রাতেই আলোর নীচে ঝালদা ২ ব্লকের এই মাঠেই জমে ওঠে ছৌনাচের আসর। আজ বৃহস্পতিবার (২৮/১২/২০১৭) শেষ হচ্ছে, সাত দিনের এই উৎসব।
পুরুলিয়ার ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে এই শিল্পের সংস্কারের লক্ষ্যেই ছবছর আগে এই উৎসবের পথচলা শুরু। লোকশিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এসেছিল সেই কাজে। সংস্থার তরফে উৎপল দাস বলছেন, ‘‘২০০৫ সালে জেলার ছৌ দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে গিয়ে দেখি তাঁদের সংখ্যা একেবারে তলানিতে। যে কটি দলের নাম রয়েছে, তারাই শুধু অনুষ্ঠানের বায়না পায়, বাকিদের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় এনে লোকশিল্পের এই ধারার সংস্কারের ভাবনার সেই সূত্রপাত।’’
শিল্পী বাঁচলে, তবেই শিল্প বাঁচবে এই আপ্তবাক্যকে সামনে রেখে বছর ছয়েক ধরে তাঁরা শুরু করেছেন এই উৎসবের। উৎপলবাবু জানাচ্ছেন, এক একটি পালা করে শিল্পীরা একশো-দেড়শো টাকার বেশি পেতেন না। ফলে রক্তের টানে নাচলেও তাতে পেশাদারিত্বের ছাপ ছিল না। সে কারণে শিল্পীদের দক্ষতা বাড়াতে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছেন তাঁরা।
জেলার লোকসংস্কৃতি গবেষক সুনীল মাহাতো বলেন, ‘‘আগে দেখতাম জেলার বিভিন্ন জায়গার ছৌ ও ঝুমুর শিল্পীরা গুরুর কাছে শিক্ষা নিয়ে মঞ্চে নামতেন। গুটি কয়েক দল ছাড়া এখন সে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে কজন আর শেখে ? অনেকে তো পেটের টানে ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, যাঁরা এখনও চর্চা করছেন, তাঁদের কারও কারও সেই নিষ্ঠা নেই। হয়তো পৌরাণিক পালা চলছে, তার মধ্যে অন্য প্রসঙ্গের ঝুমুর গান ঢুকিয়ে জোলো করে দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে জেলার অনামী দলগুলি কোনও বায়নাই পাচ্ছিল না।
এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন দলের শিল্পীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি কর্মশালা করেছে। সেখানে তাঁদের বোঝানো কী ধরনের রং ও পোশাক ব্যবহার করা উচিত তা বোঝানো হচ্ছে। পালার উপস্থাপনেও সংস্কার যে প্রয়োজন, তাও জানানো হচ্ছে। উৎসবের উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন, ‘‘প্রথম দিকে, জেলায় ছৌ দলের সংখ্যা ছিল কমবেশি ১২৫। এখন সেই দলের সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। শিল্পীরা রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্প থেকে ভাতা, অনুষ্ঠানের ডাক পাচ্ছেন। রাজ্যের বাইরে থেকেও ডাক আসছে। বেড়েছে শিল্পীদের পারিশ্রমিকও। এই বদলের স্বপ্ন নিয়েই তাঁরা পথচলা শুরু করেছিলেন।
বান্দোয়ানের ছৌ শিল্পী শম্ভুনাথ কর্মকারও বলছেন, ‘‘এই উৎসব আমাদের জীবনধারা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। আমরা এখন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। বান্দোয়ানের আশপাড়ায় আমরা ছৌয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছি। যেখানে ছোটরা শিখছে।’’ আর এক শিল্পী বীণাধর কর্মকার জানান, এখন তাঁরা নতুন নতুন পালা করছেন। বাঘমুণ্ডির শিল্পী রথু কুইরী বলেন, ‘‘আমাদের দলের নাম ছিল না। কিন্তু এখন আমরাও বাইরের রাজ্যে নাচতে যাচ্ছি।’’
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘শিল্পীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গী এই বদলে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রশান্ত পাল, ২৮/১২/২০১৭।

আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী কমান্ডার ভীম সরেন।


মেদিনীপুর| ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ ও ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার অনুরাঞ্জন কিসপোত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী কমান্ডার ভীম সরেন। খুন-ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ-সহ ১১টি নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা ভীম সরেন ওরফে কার্তিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদড়ার চিলগোড়ার বাসিন্দা ভীম ঝাড়খণ্ডের গোরাবান্দার এরিয়া কমান্ডার ছিল। গত মঙ্গলবার (২৬/১২/২০১৭) সন্ধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে আসে ভীম। দফতরে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার অনুরাঞ্জন কিসপোত্তা। ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে।
জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ভীম আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল। দুই জেলার পুলিশই ওর আত্মসমর্পণ নিচ্ছি।ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার অনুরাঞ্জন কিসপোত্তাও বলেন, “ভীম আত্মসমর্পণ করল। এটা ভাল দিক।পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পরে ভীমের বক্তব্য, “এতদিন ভুল পথে পরিচালিত হয়েছি। এখন অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৯ সাল থেকে মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভীম। মাওবাদী নেতা বিকাশ, আকাশের কাছে সে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়। শুরুতে জনসাধারণের কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে মাওবাদীদের দলে নাম লেখায়। তার নামে ১১টি নাশকতার মামলা ঝুলছে। এরমধ্যে ৯টি পূর্ব সিংভূম জেলার। বাকি ২টি ঝাড়গ্রাম জেলার। ইউএপিএ ধারাতেও তার নামে মামলা রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ভীম আত্মসমর্পণ করায় ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ঝাড়গ্রামের সীমানাবর্তী এলাকার নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত হয়ে গেল।এ দিন সন্ধ্যায় থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে আসে ভীম। পরে ওই রাইফেল পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এর আগেও একে একে আত্মসমর্পণ করেছে অনেক মাওবাদী নেতা। পুলিশের এক সূত্রে খবর, ভীম পুলিশের লিঙ্কম্যানদের যেমন খুন করেছে, তেমনই পুলিশ ক্যাম্পে হামলাও করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে খুঁজছিল পুলিশ। মাস কয়েক আগেও ঝাড়খণ্ডে নাশকতা করেছে সে। এ দিন কয়েক রাউন্ড গুলিও জমা দেয় ভীম। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘পুনর্বাসন প্যাকেজেযা রয়েছে তার সবই পাবে এই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী। স্থায়ী আমানত, এককালীন অনুদান যেমন পাবে, তেমনই প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য পাবে সে। দুই জেলার পুলিশ আলোচনা করে পদক্ষেপ করবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক পুলিশকর্তা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, মাওবাদীরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুক। ভীম তাই চেয়েছে। ও আবেদন করে বলেছে, আমি ভাল হতে চাই। এ বার ভাল ভাবেই থাকব।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭/১২/২০১৭।

প্রধান শিক্ষক ও গ্রামবাসীদের সাহায্যে ভোল বদল গড়বেতার কুইলিবাদ গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটির।

প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে আর গ্রামবাসীদের সাহায্যে ভোল বদলেছে আদিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার কুইলিবাদ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলটির।
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর। ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭।

জঙ্গলের ধারে এই স্কুল দশ বছর আগেও ছিল আর পাঁচটা প্রাথমিক স্কুলের মতোই। ঝাঁ চকচকে স্কুল গড়ার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে আর গ্রামবাসীদের সাহায্যে ভোল বদলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার কুইলিবাদ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলটির।
অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলেই যেখানে নড়বড়ে বেঞ্চে ব্ল্যাকবোর্ডের আবছা লেখা কষ্ট করে পড়তে হয় পড়ুয়াদের। সেখানে বাঁকুড়া সীমানা ঘেঁষা ধাদিকা পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম কুইলিবাদের স্কুলে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে হচ্ছে পড়াশোনা। বিল্ডিং অ্যাজ লার্নিং এইডহিসেবে গড়ে উঠেছে স্কুল ভবন। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ক্লাসে-ক্লাসে সিসি ক্যামেরা। এখানেই শেষ নয়, মিড-ডে মিলের জন্য তকতকে রান্নাঘর, ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা শৌচাগার আছে সবই। স্বীকৃতি হিসেবে ইতিমধ্যে মিলেছে নির্মল বিদ্যালয়এবং শিশুমিত্রপুরস্কারও।
স্কুলের এত কিছু যে বার্ষিক অনুদানের টাকা দিয়ে করা সম্ভব নয়, সেটা ২০০৭ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরই বুঝে যান সন্দীপকুমার খাঁ। তাই গ্রামের বন কমিটির দ্বারস্থ হন তিনি। তাঁদের বোঝান, ছেলেমেয়েদের ভাল শিক্ষার জন্য উন্নত পরিকাঠামো প্রয়োজন। বাসিন্দারা সাহায্য করলেই তা সম্ভব। প্রধান শিক্ষকের আবেদনে সাড়া দেন গ্রামবাসীরাও। স্কুলের সামনের রাস্তা মেরামত, চাঁদা তুলে ক্লাসঘর রং করানোর কাজ করেন স্থানীয়রাই। প্রোজেক্টরে ছবি দেখিয়ে পড়ালে খুদেরা তাড়াতাড়ি শিখবে, বলেছিলেন শিক্ষকেরা। গ্রামবাসীরা সে ব্যবস্থাও করেছেন। স্কুলের জন্য নিজেরাই পাঁচটি সিসি ক্যামেরা কিনেছেন তিন শিক্ষক ও এক পার্শ্বশিক্ষক। স্কুল চত্বরের এক দিকে যে বাগান রয়েছে, তা পরিচর্যা করে পড়ুয়ারাই। ভেষজ উদ্যান, ফুলের বাগানের পাশাপাশি পালং, মুলো-সহ নানা শীতকালীন আনাজও ফলিয়েছে তারা। মিড-ডে মিলে সে সব কাজে লাগে, জানান শিক্ষকেরা।
প্রধান শিক্ষক সন্দীপবাবু জানান, ৮৪ জন ছাত্রছাত্রীর অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। কিন্তু স্কুলের উন্নয়নে গ্রামবাসীকে সামিল করতে কোনও বেগ পেতে হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় গরাই, চৈতন মান্ডিরা আবার বলেন, ‘‘গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষকেরা এত ভাবেন। আমরা সাধ্যমতো পাশে থাকি।’’
তবে সমস্যাও রয়েছে। শিক্ষকেরা জানান, স্কুল ভবনের ছাদ টিনের চালের হওয়ায় গরমে ও বর্ষায় অসুবিধা হয়। বছর তিনেক আগে আলাদা ভবনে আপার প্রাইমারি বিভাগ চালু হলেও রয়েছেন মোটে এক জন অতিথি শিক্ষক। এলাকার তিন স্নাতক যুবক-যুবতী সেখানে পড়ান, যাঁদের সামান্য কিছু বেতনের ব্যবস্থা চাঁদা তুলে করেন অভিভাবকেরাই।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, জয়দীপ চক্রবর্তী, ২৮/১২/২০১৭।

বাঁকুড়া জেলায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM) এর দলীয় মিটিং।

গত ২৬ শে ডিসেম্বর, বাঁকুড়া জেলায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM) এর দলীয় মিটিং। উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM)-র রাজ্য সভাপতি মানতান পরেশ মারান্ডি মহাশয়, যুব নেতা বিপ্লব মারান্ডি মহাশয়, ও আরও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা। মিটিং এ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM) কে আরও শক্তিশালী ও আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

Wednesday, December 27, 2017

প্রথমে প্রেমিক, তারপর উদ্ধারকারীদের হাতে ধর্ষণের স্বীকার হলেন ছত্তিসগড়ের তরুণী।

বিধবা তরুণীকে প্রথমে ধর্ষণ করল প্রেমিক, তার পর ‘উদ্ধারকারীরা! এ কোন দেশে বাস করছি আমরা ?
রায়পুর, ছত্তিসগড়| ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭।

প্রেমিকের উপর ভরসা করে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সে ভরসার দাম যে এ ভাবে মেটাতে হবে তা ভাবতেও পারেননি বছর চব্বিশের তরুণী। প্রথমে সেই ‘প্রেমিকএর কাছে ধর্ষণ। তার পর তিন ‘উদ্ধারকারীর কাছে গণধর্ষণের শিকার হতে হল তাঁকে। পুলিশের কাছে বয়ানে এমন অভিযোগই করেছেন ওই তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত চার জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের ঘটনা।
ঘটনার তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, বিধবা ওই তরুণী রায়পুরের একটি স্থানীয় হোটেল কাজ করেন। সুরেশ সাহু নামে বছর চব্বিশের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পুলিশের কাছে বয়ানে ওই তরুণী দাবি করেন, গত শনিবার সুরেশ তাঁকে কাপা এলাকার একটি রেল ইয়ার্ডে দেখা করতে বলেন। এর পর সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই তরুণীর চিৎকারে ঘটনাস্থলে আসেন তিন যুবক। ওই তিন জনের কাছে সাহায্য চান নিগৃহীতা। তরুণীর দাবি, এর পরেই সুরেশকে হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু তাঁকে উদ্ধারের পরিবর্তে গণধর্ষণ করে ওই তিন জন। ওই তরুণীর আরও দাবি, ঘটনার কথা জানালে তার ফল ভাল হবে না বলে রীতিমতো হুমকিও দেয় ওই তিন জন।
ঘটনার পরের দিন পঁডরি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সুরেশ সাহু, হরীশ চন্দ্রশেখর, ত্রিনাথ মহানন্দ ও বিনয় যাদব নামে চার যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই চার জনেরই বয়স চব্বিশ-পঁচিশের মধ্যে। চার জনের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮/১২/২০১৭।

একবার গাছ লাগালে তিন মরসুম ফল দেয় কলা গাছ।

সৌজন্য - সংবাদ প্রতিদিন, ২৮/১২/২০১৭।

Monday, December 25, 2017

ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের পথে ঃ- (প্রথম ভাগ)

আদিবাসীদের এক ঐতিহাসিক আন্দোলন ঝাড়খণ্ড আন্দোলন। ঝাড়খণ্ড আন্দোলন শুধুমাত্র এক পৃথক রাজ্য নির্মাণের আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন আদিবাসীদের আত্মপরিচিতির আন্দোলন, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলা ভাষায় এই আন্দোলন নিয়ে লেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু আদিবাসীদের আত্মসন্মান, আত্মমর্যাদা, অধিকার বিষয়ে সচেতন হতে ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ইতিহাস জানা খুবেই গুরুত্বপূর্ণ। একটা জিনিস অনুভব করেছি যে সমস্ত আদিবাসী জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বাস করেন না, তির ধনুক এর সাথে পরিচিত নন, আদিবাসী সামাজিক স্বশাসন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত নন, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্ক ওয়াকিবহাল নন, সেই সমস্ত আদিবাসী অনেকাংশেই নিজেদের আদিবাসীত্ব হারিয়ে ফেলেছেন।  
তাই নিজের সাধ্য মত ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ইতিহাস লেখার চেষ্টা করছি। সমস্ত তথ্য বিভিন্ন সুত্র থেকে সংগৃহীত।  

ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের পথে ঃ- (প্রথম ভাগ)
প্রদীপ কুমার হাঁসদা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিমবঙ্গ।

উনবিংশ শতাব্দীতে ছোটনাগপুর অঞ্চল কিংবদন্তী আদিবাসী মহাপুরুষ বিরসা মুন্ডার আবির্ভাব দেখেছিলেন। বিরসা মুন্ডা ডাক দিয়েছিলেন আবোয়াহ দিশম আবোয়াহ রাজ (আমাদের দেশ, আমাদের রাজ)। পূর্বপুরুষদের জমির ওপর আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন। বিরসা মুন্ডা বলেছিলেন, নিজেদের জমির ওপর আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে এই দেশ সোনার দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। বিরসা মুন্ডার বিদ্রোহের ফলাফল হিসেবে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত করেছিল ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯০৮ (Chotonagpur Tenancy Act, 1908)
বিরসা মুন্ডার বিদ্রোহের পরেও আদিবাসীরা তাদের অধিকারের লড়াই জারি রেখেছিলেন। রাঁচি অঞ্চলে আদিবাসীরা গড়ে তুলেছিলেন টানা ভগত আন্দোলন, সাঁওতাল পরগনায় সাফা হড় আন্দোলন, পালামু তে ফেটাল সিং আন্দোলন, সিংভুমে হরি বাবা আন্দোলন, মানভুমে ভুমিজ আন্দোলন, প্রভৃতি।
তৎকালীন সময়ে গান্ধী অনুগামী কংগ্রেসি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ঠক্কর বাপা তার অনুগামীদের নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করে চলছিলেন। টানা ভগত আন্দোলনকারীরা ঠক্কর বাপা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গান্ধীজীর অনুগামী হন ও গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন।
অপরদিকে আদিবাসীদের হিন্দু ধর্মের প্রভাবমুক্ত করার জন্য খৃষ্টান মিশনারিরা আদিবাসীদের শিক্ষিত ও রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। খৃষ্টান মিশনারিদের চেষ্টার সফল রুপায়ন হলেন জয়পাল সিং মুন্ডা ও আদিবাসীদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল ঝাড়খণ্ড পার্টি। আদিবাসীদের অধিকার আদায় ও সংগ্রামে জয়পাল সিং মুন্ডা ও ঝাড়খণ্ড পার্টি চিরকাল আদিবাসীদের মধ্যে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। খৃষ্টান মিশনারিদের চেষ্টার ফলে আদিবাসী সমাজের একটা অংশ আধুনিক ইউরোপিয়ান শিক্ষায় শিক্ষিত হতে থাকেন, যদিও এর বেশিরভাগ খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত আদিবাসী জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত আদিবাসীরা নিজ সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য সংগঠিত হতে থাকেন। উনবিংশ শতাব্দীর বিশ, তিরিশ ও চল্লিশ এর দশকে শিক্ষিত আদিবাসীরা অনেকগুলি আদিবাসী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।
১৯১০ সালে মিশনারি শিক্ষায় শিক্ষিত জে বারথোলমেন (J. Bartholmen) প্রথম একটি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। জে বারথোলমেন চাইবাসার একজন অনাথ, হাজারীবাগের সেন্ট কলমবাস কলেজ এর ছাত্র ছিলেন। জে বারথোলমেন একজন ভাল ছাত্র ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তাঁকে একজন খৃষ্টান মিশনারি মানুষ করেছিলেন, তাই হয়ত জে বারথোলমেনের ভেতর সবসময় এক পরোপকারী আত্মা কাজ করত। যখনেই কাওকে বিপদে পড়তে দেখতেন, সাহায্য করতে ছুটে যেতেন। জে বারথোলমেন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খৃষ্টান আদিবাসী ছাত্রদের সংগঠিত করতেন, সভা, সমিতি আয়োজন করতেন ও খৃষ্টান আদিবাসী ছাত্রদের সম্মেলন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখতেন। জে বারথোলমেন খৃষ্টান ছাত্রদের সম্মেলন এ যোগদান করতে শ্রীরামপুর ও ঢাকা শহরে এসেছিলেন। ১৯১২ সালে ঢাকা শহরের এক সম্মেলন থেকে ফিরে গিয়ে জে বারথোলমেন ঢাকা ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। জে বারথোলমেন দুঃস্থ খৃষ্টান আদিবাসী ছাত্রদের সাহায্য করতে একটি তহবিল গড়ে তোলেন। কয়েক জন জার্মান মিশনারি দুঃস্থ খৃষ্টান আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করতে নিয়মিত চাঁদা দিতে রাজিও হয়ে যান। সেন্ট পল শিক্ষায়াতনে এক নাটক অনুষ্ঠিত হয় এবং ভাল অর্থ সংগৃহীত হয়। এই ঘটনায় উৎসাহিত হয়ে জে বারথোলমেন রাঁচি তে এঞ্জেলিকান ও লুথেরান ছাত্রদের এক সম্মেলন আয়োজন করেন ও রাঁচিতে ঢাকা ছাত্র ইউনিয়ন এর শাখা স্থাপন করা হয় এবং পিটার হেওয়ার্ড কে দায়িত্ব দেন। ১৯১৫ সালে জে বারথোলমেন স্নাতক সম্পূর্ণ করেন এবং সেন্ট পল হাই স্কুল, রাঁচিতে শিক্ষক পদে যোগদান করেন। জে বারথোলমেন চিরজীবন আদিবাসীদের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করে গিয়েছেন কিন্তু বিভিন্ন কারনে আদিবাসীদের শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু জে বারথোলমেনের গড়ে দেওয়া ভিতে পরবর্তীকালে আদিবাসীরা আরও সংগঠিত হন এবং ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ভিত তৈরি হয়।
জে বারথোলমেন এর পরবর্তীকালে ১৯১৩ সালে গড়ে ওঠে ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (Chotonagpur Unnati Samaj)। ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ এর নেতৃত্বে ছিলেন থিওবেল ওঁরাও, রায় সাহেব বন্দি রাম ওঁরাও, রেভারেন্ড জয়েল লাকড়া, পল দয়াল। রেভারেন্ড জয়েল ওঁরাও এর নেতৃত্বে ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের সামনে ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (CUS)  আদিবাসীদের দাবী দাওয়া পেশ করে ও আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবী করে। পরবর্তীকালে ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (CUS) সংগঠনের ভেতর খৃষ্টান ও অ-খৃষ্টান আদিবাসীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয় এবং ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (CUS) ভেঙ্গে অ-খৃষ্টান আদিবাসীরা পৃথক সংগঠন ‘কিষান সভা’ তৈরি হয়।
এঞ্জেলিকান ও লুথেরান খৃষ্টান আদিবাসীরা ঢাকা ছাত্র ইউনিয়ন (Dacca Students Union) ও ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (Chotonagpur Unnati Samaj) এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তাই রোমান ক্যাথলিক আদিবাসীরাও নিজেদের সংগঠন গড়ে তুলতে চাইলেন। রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টান আদিবাসীরা গড়ে তুললেন ছোটনাগপুর ক্যাথলিক সভা (Chotonagpur Catholic Sabha)। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে ছোটনাগপুর ক্যাথলিক সভা (Chotonagpur Catholic Sabha) দুই জন প্রার্থী দাড় করায় এবং ‘ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (CUS)’ ও ‘কিষান সভা (KS) কে পরাজিত করে দুই জন আদিবাসী প্রার্থীকে জিতিয়ে আনে। ছোটনাগপুর ক্যাথলিক সভা (CCS)-র নেতা নির্বাচিত হন ইগনেস বেক। পরবর্তীকালে ইগনেস বেক এর নেতৃত্বে ছোটনাগপুর ক্যাথলিক সভা (CCS) রাঁচি পৌরসভা নির্বাচনেও বিপুল জয় লাভ করে।
১৯৩৮ সালে আদিবাসীদের কয়েকটি সংগঠনের মিলিত প্রয়াসে এই সময়ের সব থেকে প্রভাবশালী আদিবাসী সংগঠন ‘আদিবাসী মহাসভা’ গড়ে ওঠে। টানা ভগত অনুগামী ও কংগ্রেসি অনুগামী আদিবাসী ছাড়া প্রায় সমস্ত আদিবাসী নেতা, কর্মী ও সংগঠন আদিবাসী মহাসভায় মিশে যায়। ৩১ শে মে, ১৯৩৮ সালে হিন্দপিরি, রাঁচিতে প্রথম আদিবাসী মহাসম্মেলন এ ছোটনাগপুর ক্যাথলিক সভা (CCS), ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (CUS), ‘কিষান সভা (KS)’, মুন্ডা সমাজ (MS), প্রমুখ আদিবাসী সংগঠন মিশে গিয়ে উদ্ভব হয় ‘আদিবাসী মহাসভা’-র। প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি এই আদিবাসী মহাসম্মেলনে যোগ দেন। সভাপতি নির্বাচিত হন থিওডর সুরিন, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন রায় সাহেব বন্দি রাম ওঁরাও এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন পল দয়াল। ২১ জন সদস্যকে নিয়ে কার্যকরী সমিতি গঠন করা হয়। প্রধান দাবী হিসেবে ছোটনাগপুর কে পৃথক অঞ্চল করার দাবী করা হয়। ১৯৩৮ সালের অক্টোবর মাসে রাঁচি শহরের জয়করণ তামলি নামে এক সদস্যের বাড়ীতে আদিবাসী মহাসভার অফিস খোলা হয় এবং ‘আদিবাসী’ নামে হিন্দি ভাষায় এক পাক্ষিক সংবাদপত্র প্রকাশ শুরু হয়।
..................ক্রমশ (পরবর্তী ভাগ আগামী সময়ে)। 

Sunday, December 24, 2017

এভারেস্ট জয়ী প্রথম আদিবাসী মহিলা বিনীতা সরেন।

গত ২৬ শে মে ২০১২, প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট (৮৮৪৮ মিটার) এর চুড়ায় ভারতীয় পতাকা উড়িয়ে দিলেন ২৫ বছর বয়সী বিনীতা সরেনসঙ্গে ছিলেন মেঘলাল মাহাত ও রাজেন্দ্র সিং। রাজেন্দ্র সিং অবশ্য ২ ঘণ্টা আগে এভারেস্ট এর চুড়োয় পৌঁছেছিলেন।
বিনীতা সরেন ও মেঘলাল মাহত ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সরাইকেলা-খোরসোয়া জেলার রাজনগর ব্লকের পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা। রাজেন্দ্র সিং বিখ্যাত মহিলা পর্বতারোহী বছেন্দ্রি পাল সিং এর ভাই।
১২ ই জুন জামশেদপুর শহরে বিনীতা সরেন, মেঘলাল মাহাত ও রাজেন্দ্র সিং ট্রেনে করে ফিরে এলে স্থানীয় মানুষ ও আদিবাসী সম্প্রদায় ধামসা মাদল বাজিয়ে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। জামশেদপুর স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিধায়ক ও তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুধীর মাহাত।

এই পর্বতারোহী অভিযানের সমস্ত খরচ Corporate Responsibility Scheme অনুসারে টাটা স্টিল কোম্পানি বহন করেছে। এর জন্য টাটা স্টিল কোম্পানি মোট ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল।

মাহাত (কুড়মি) সম্প্রদায়কে Scheule Tribe (ST) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ে চিঠি দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।


২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ ও ১৮ ই মে, ২০১৭, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও
পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর কল্যাণ দফতর, পৃথক পৃথক ভাবে চিঠি লিখে মাহাত (কুড়মি) সম্প্রদায়কে Scheule Tribe (ST)  তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ে কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রক কে অনুরোধ জানিয়েছে।

১ লা জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে খোরসোয়া অঞ্চলে ৭,০০০ আদিবাসীর হত্যা – স্বাধীন ভারতের জালিয়ালানবাগ।


১ লা জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন উড়িষ্যা রাজ্যের খোরসোয়া অঞ্চলে ৭,০০০ আদিবাসীর হত্যা – স্বাধীন ভারতের জালিয়ালানবাগ

১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের মাত্র চার মাসের মধ্যে ঘটে যায় ১ লা জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন উড়িষ্যা রাজ্যের খোরসোয়া অঞ্চলে ৭,০০০ আদিবাসীর হত্যা। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ারের হাতে জালিয়ালানবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে, যেখানে সরকারি মতে ৩৭৯ মৃত ও ১,২০০ মানুষ আহত, বেসরকারি মতে প্রায় ১,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু খোরসোয়ার হত্যাকাণ্ডে সরকারি মতে ৩৫ জন আদিবাসীর মারা যাবার কথা স্বীকার করা হয়, বেসরকারি মতে প্রায় ৭,০০০ আদিবাসীর মারা যাবার কথা শোনা যায়। সেই দিন খোরসোয়া বাজারে প্রায় ৫০,০০০ এর মতন আদিবাসীর জমায়েত হয়েছিল। সেই জমায়েতের ওপর নির্বিচারে মেশিনগান থেকে গুলি চালিয়েছিল উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশের ভারতীয় সেপাইরা।
ঘটনা ঘটার প্রায় ৫৫ বছর পরেও বেঁচেছিলেন সেইদিনে আহত হওয়া দুই আদিবাসী – সাধুচরন বিরুয়া ও দশরথ মাঝি। তাদের মুখ থেকে খোরসোয়া হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
তৎকালীন সময়ে খোরসোয়া ও সরাইকেলা দুটি Princely State তথা পৃথক রাজ্য ছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত হবার সিধান্ত নেয়। কিন্তু এই দুটি রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তথা আদিবাসী জনগণ পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যে সামিল হতে চেয়েছিলেন। আদিবাসীদের এই দাবীকে সমর্থন জানিয়েছিল আদিবাসীদের প্রভাবশালী সংগঠন “আদিবাসী মহাসভা”, আদিবাসী নেতা মারাং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডা, খোরসোয়ার রাজপরিবার, রাজা রামচন্দ্র সিং দেও, রাজকুমার প্রদীপ চন্দ্র সিং দেও ও রাজকুমার ভুপেন্দ্র নারায়ণ সিং দেও কিন্তু তৎকালীন কেন্দ্র সরকার খোরসোয়া ও সরাইকেল রাজ্য দুটির উড়িষ্যা রাজ্যেই বিলীন হবার জন্য চাপ দিয়েছিল।
১ লা জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে এই বিলীন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত। এই বিলীন প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে ও খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটির আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যে সামিল করার দাবীতে ১ লা জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে খোরসোয়া বাজারে এক বিরাট জমায়েতের ডাক দিয়েছিল আদিবাসী মহাসভা। প্রধান বক্তা হিসেবে হাজির থাকার কথা ছিল আদিবাসী মহাসভার সভাপতি মারং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডার। কিন্তু পুলিশ জয়পাল সিং মুন্ডাকে জনসভায় আসতে দেয়নি। জনসভায় প্রায় ৫০,০০০ আদিবাসী জমায়েত হন এবং খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটির আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যে সামিল করার দাবী জানাতে থাকেন। আদিবাসীরা তাদের চিরাচরিত অস্ত্রশস্ত্র তির-ধনুক নিয়ে সামিল হয়েছিলেন। আদিবাসীরা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তথা জামশেদপুর, সিমদেগা, খুঁটি, তামাড়, চাইবাসা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জমায়েত হয়েছিলেন। প্রচুর আদিবাসী মহিলা, শিশু ও বয়স্করাও এই জমায়েতে সামিল হয়েছিলেন। সেই দিন সাপ্তাহিক হাট উপলখ্যে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও আদিবাসীরাও উপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল। অনেক আদিবাসী সেই সময় খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটির উড়িষ্যা রাজ্যে বিলীন ও তার প্রতিবাদে আদিবাসী মহাসভার আন্দোলনের বিষয়টি জানতেন না। সেই সময় মারাং গমকে জয়পাল সিং মুন্ডা আদিবাসীদের মধ্যে বিশাল জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁকে শুধু এক ঝলক দেখবার জন্য অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন।
তৎকালীন উড়িষ্যা সরকার চরম অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছিল। তাঁরা যে করেই হোক আদিবাসী মহাসভার জমায়েতকে বানচাল করার সিধান্ত নিয়েছিল। সেই মত খোরসোয়া বাজারকে উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ দিয়ে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়েছিল।
আদিবাসী মহাসভার জমায়েতে মারাং গমকে জয়পাল সিং পৌঁছতে পারেননি। তাই আদিবাসী মহাসভার স্থানীয় নেতারাই জমায়েতের হাল ধরেন। জমায়েত থেকে আদিবাসী মহাসভার এক প্রতিনিধিদল খোরসোয়া রাজবাড়িতে গিয়ে রাজার সামনে দাবিপত্র পেশ করেন। খোরসোয়া রাজা আদিবাসীদের কথা শোনেন ও জানান যে তিনি অসহায়, তার হাতে কিছু নেই। বিলীন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর বর্তমানে ক্ষমতা উড়িষ্যা সরকারের কাছে। আদিবাসী মহাসভার প্রতিনিধিদল ফিরে গিয়ে জমায়েতে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জেনে আদিবাসী জনতার মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত আদিবাসীদের দেখে ঘাবড়ে গিয়ে উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ মেশিনগান থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। অপ্রস্তুত আদিবাসীরা কোনোরকম প্রতিরোধ করতে পারেননি বা পালাতে পারেননি। অসহায়ের মতন আদিবাসীরা উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশের মেশিনগানের গুলিতে খুন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকেন। দশরথ মাঝি সেই সময় জামশেদপুরে শ্রমিকের কাজ করতেন। খোরসোয়া বাজারে জয়পাল সিং মুন্ডার উপস্থিত থাকার কথা শুনে আদিবাসী মহাসভার জমায়েতে যাবার কথা ঠিক করেন। সেই দিন দশরথ মাঝি গুলি বিদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু মৃত হবার ভান করে মাটিতে পড়ে থেকে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। ৫৫ বছর পর ২০০৩ সালে দশরথ মাঝির শরীর থেকে উড়িষ্যা পুলিশের গুলি বের হয়।
উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশের গুলি চালানো বন্ধ হলে দেখা যায় সারা মাঠ রক্তে লাল হয়ে গেছে, চারিদিকে আদিবাসীদের মৃতদেহের পাহাড়। খোরসোয়া বাজারের পাশে এক কুয়ো ছিল। উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ আদিবাসীদের মৃতদেহগুলি সেই কুয়োয় ফেলতে শুরু করেসেই সময় অনেক আদিবাসীই আহত হয়েও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ আহত আদিবাসীদের হাসপাতালে নিয়ে যাবার বদলে কুয়োতে ফেলতে শুরু করে। কুয়োটা যখন আদিবাসীদের মৃতদেহে ভরে গেল, তখন বাকি আহত ও নিহত আদিবাসীদের দেহগুলি উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে যায়, সেখানে কিছু দেহ মাটিতে পুতে দেওয়া হয়, কিছু মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাকি আদিবাসীদের দেহ জঙ্গলেই জীবজন্তুদের খাওয়ার জন্য ফেলে আসা হয়। সেই সময় শীতকাল, অনেক আহত আদিবাসী শীতেই মারা যায়।
তৎকালীন বিহার সরকার ঘটনার খবর পেয়ে মেডিক্যাল টিম পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উড়িষ্যা সরকার নীরব থেকে সেই প্রস্তাব খারিজ করে। নিজেদের উদ্যোগে চাইবাসা ও জামশেদপুর থেকে কিছু ডাক্তার খোরসোয়া বাজারে পৌঁছে আদিবাসীদের চিকিৎসা শুরু করেন।
৩ রা জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি স্টেটসম্যান সংবাদপত্রে ঘটনার খবর প্রকাশ হয়, সেখানে উড়িষ্যা সরকার মাত্র ৩৫ জন আদিবাসীর মারা যাবার কথা স্বীকার করেছিল। ঘটনার কথা প্রকাশ হতে খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটির উড়িষ্যা রাজ্যে বিলীন হওয়া স্তগিত রাখা হয়। ১৮ মে, ১৯৪৮ সালে খোরসোয়া ও সরাইকেলা রাজ্য দুটি বিহার রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়। মৃত ও আহত আদিবাসীদের জন্য জয়পাল সিং একটা রিলিফ ফান্ড গঠন করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে পরবর্তীকালে প্রাত্তন সাংসদ ও রাজা পি কে দেব এক বই লিখেছিলেন Memoir Of A Bygone Era
পরবর্তীকালে ২০১০ সালে খোরসোয়া বাজারে এক শহীদ স্মারক গড়ে তোলা হয়। প্রতি বছর ১ লা জানুয়ারি আদিবাসী মানুষেরা সেখানে জমায়েত হয়ে খুন হয়ে যাওয়া আদিবাসীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তথ্যসুত্র –
1.      Unsung Heroes of Jharkhand Movement by A.K. Sinha.
2.      The Telegraph, 30.12.2010.
3.      The Telegraph, 02.01.2006.
https://www.telegraphindia.com/1160102/jsp/jharkhand/story_61654.jsp