ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে (২০১৮) আদিবাসী নেতা
নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা ও আদিবাসী রাজনৈতিক দল ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ
ত্রিপুরা (Indigeneous Peoples Front of Tripura
-IPFT)এর সাফল্য।
দেশের আর সর্বত্র বিজেপি যে হিন্দু তাস খেলে বা
ভারতীয়ত্বের জিগির তোলে, ত্রিপুরায় তারা সে
ভাবে তা তোলেনি। আর তুললেও অত্যন্ত নিচু পর্দায় রেখেছে। এর কারণ কী? বিভিন্ন মহলে কথা বলে এর বিভিন্ন কারণ উঠে আসছে।
এ বারের ত্রিপুরা জয়ের জন্য বিজেপির পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ
আলাদা। হিন্দু-মুসলমান অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ এখানে নেই। বিজেপি জানত, আদিবাসী এলাকাই হল সিপিএমের সবথেকে শক্তিশালী ভিত।
অতএব, প্রথম আঘাত হানতে
হবে সেখানেই। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের মধ্যে আদিবাসী তথা তফসিলি
উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ২০টি আসন। আরও ১০টি আসন রয়েছে তফসিলি জাতির জন্য। আদিবাসী
এলাকা দখলের জন্য সহযোগী হিসেবে বিজেপির প্রয়োজন ছিল এমন কোনও দলকে যারা কার্যকরী
ভাবে সিপিএমকে টক্কর দিতে পারবে। ১৯৯৭ সালে গঠিত হয়েছিল আদিবাসীদের নিজস্ব
রাজনৈতিক দল ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি)। পরে ২০০৭-এ সেটির পুনরুজ্জীবন ঘটান নরেন্দ্র
চন্দ্র দেববর্মা, যিনি ‘এন সি’ নামেও পরিচিত। আদিবাসীদের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট প্রভাবও রয়েছে।
সেই আইপিএফটি-কে নিয়ে বিজেপি আদিবাসী এলাকা দখলে ঘুঁটি সাজায়। আর্থিক ও সাংগঠনিক
সহায়তা দিয়ে বিজেপি এই সংগঠনকে নিয়ে যায় একেবারে বুথস্তর পর্যন্ত। কারণ বিজেপি
জানত, স্বশাসিত জেলা
পরিষদ (অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল) এলাকায় সিপিএমের সংগঠন অত্যন্ত পোক্ত।
তিন-তিন বার এডিসি-র নির্বাচনে সব ক’টি আসনই দখল করেছে সিপিএম।
আদিবাসীদের তোলা পৃথক ‘টিপরাল্যান্ড’-এর দাবি না মানলেও বিজেপি তাদের বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিও
দিয়েছে। বিজেপির এই পরিকল্পনা যে অত্যন্ত সফল হয়েছে তার প্রমাণ, এ বার যে ন’টি আসনে আইপিএফটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, তার মধ্যে আটটি আসনেই তারা জয়ী হয়েছে। সিপিএম তাদের
কোনও ভাবেই আটকাতে পারেনি। নিজেদের শক্ত ঘাঁটি, আদিবাসী এলাকাতেই এ ভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে
পারছেন না সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, পাহাড়ে আদিবাসী এলাকায় সংগঠন যে একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে
যাচ্ছে তা এলাকার নেতা-কর্মীরা বুঝতে পারলেন না কেন? কেন বুথস্তর থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে খবর পৌঁছল না
যে, বড় রকমের ওলট-পালট
হয়ে যাচ্ছে? বস্তুত, সিপিএম নেতাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, তাঁদের দলীয় সংগঠন এতটাই পোক্ত যে সেখানে কেউ ছুঁচও
ফোটাতে পারবে না!
যদিও একেবারে কেউই এ কথা বোঝেননি তা নয়। যেমন, নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে আদিবাসীদের জন্য
সংরক্ষিত সিমনা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রণব দেববর্মা বলেছিলেন,
‘‘আদিবাসীদের বোঝানোটা খুব কঠিন। কারণ, পৃথক রাজ্যের দাবিটা তাঁদের কাছে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ বিষয়। তাঁদের খুব সাবধানে বোঝাতে হচ্ছে কেন আলাদা
রাজ্য পেলেও ভাল হবে না। আর তা কী করেই বা সম্ভব? আমাদের কাজটা এ বার খুব কঠিন।’’
আর সেখানেই আইপিএফটি প্রার্থী বৃষকেতু দেববর্মা আঙুল
তুলে রাস্তা দেখিয়ে বলেছিলেন, রাস্তার হাল দেখুন। স্বাস্থ্যের হাল দেখুন, শিল্প খুঁজতে দূরবীন লাগবে! এর নাম উন্নয়ন?’’
তিনি না হয় বিরোধী প্রার্থী। এমন অভিযোগ
তুলতেই পারেন। কিন্তু বিভিন্ন আদিবাসী এলাকায় এই প্রশ্ন ছিল সাধারণ মানুষেরও। এই
প্রশ্ন সিপিএম নেতৃত্বের কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি, এটা মেনে নিলে বুঝতে হয়, সিপিএমের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ স্বীকার করে নিলেন,
‘‘সংরক্ষিত আসনগুলিতে ফল অত্যন্ত খারাপ
হয়েছে। মেজর সেটব্যাক। আমাদের এর কারণ গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।’’
অথচ ত্রিপুরার ইতিহাস বলছে, আদিবাসী এলাকায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের বড় সাথী ছিলেন
এখানকার আদিবাসী মানুষেরা। তাঁরা না থাকলে বামপন্থী আন্দোলন ত্রিপুরায় দানা বাঁধতে
পারত না। এর সব থেকে বড় প্রমাণ দশরথ দেব। তাঁকে বলা হত আদিবাসীদের ‘মুকুটহীন সম্রাট’। ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে আদিবাসীদের
জন্য সম্পূর্ণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এর ফলে ধীরে ধীরে আর এক ধরনের
সমস্যা তৈরি হয়। আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক মিহির দেব
বলছেন, ‘‘ওই সংরক্ষণের ফলে আদিবাসীদের
মধ্যে এক মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্ম হয়। তাদের একাংশ পড়াশোনা করে, চাকরিও পায়। সেটা ভাল দিক। কিন্তু আর যারা সে সুযোগ
পায়নি তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যেটাকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা বলা চলে।’’
এরই পাশাপাশি মিহিরবাবু বলেন,
‘‘বামফ্রন্ট সরকার আদিবাসীদের জন্য প্রচুর
কিছু করেওছে। যেমন, মধ্যবিত্ত
বাঙালিদের জন্যও করেছে। কিন্তু কোথাও একটা বিশ্বাসঘাতকতাও লুকিয়ে রয়েছে। হয়তো
যাদের দেখে সিপিএম-মুখ মনে হয়েছে, তাদের হাতটা আসলে বিজেপি। এটা ধরতে পারাটা দরকার ছিল।’’
ইতিহাসবিদরা বলছেন, এই ত্রিপুরার পাহাড়েই এক সময় তীব্র জনশিক্ষা আন্দোলন
হয়েছে। আদিবাসীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার দাবিতে সেই আন্দোলনে অগ্রণী ছিলেন দশরথ দেব, হেমন্ত দেববর্মা, বিদ্যা দেববর্মা, সুধন্য দেববর্মা-সহ অনেকেই। সেই আন্দোলন দমন করতে নামাতে হয়
সেনাবাহিনী। সেই পাহাড়েই এখন প্রায় সাড়ে চারশো স্কুল হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসও তো
পাল্টে যায়। পাল্টাতে থাকে। পরিস্থিতি আর প্রয়োজনভিত্তিক ইতিহাস ভারতীয় রাজনীতির
প্রয়োজনে বহু বারই পরিবর্তিত হয়েছে। হচ্ছেও।
নির্বাচনে সাফল্য পাবার পর নতুন করে পৃথক রাজ্যের
দাবি তুলল বিজেপির নির্বাচনী সহযোগী ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আইপিএফটি)। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ব্যাপারে অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের
কমিটি গঠন করতে হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে সেই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা
দিতে হবে। আইপিএফটি-র সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা সোজাসুজিই এই দাবির কথা
জানালেন। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচনী প্রচার পর্বে বিজেপি আগাগোড়া
বলে গিয়েছে, তারা রাজ্য ভাগের
বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে দলীয় নেতৃত্ব প্রচারে
কখনও আদিবাসীদের এই দাবিকে মান্যতা দেননি।
বিদায়ী শাসক দল সিপিএম বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে, বিজেপি রাজ্যভাগে মদত দিচ্ছে। আইপিএফটি-র মতো
বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সঙ্গে জোট করে তারা রাজ্য ভাগের চক্রান্ত করছে। এর ফলে
বাঙালিদের সঙ্গে আদিবাসীদের বিরোধ বাঁধবে।
আইপিএফটি-র নেতা নরেন্দ্র চন্দ্র (এন সি) দেববর্মা বলছেন,
‘‘নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে কিছু
বাধ্যবাধকতা ছিল। জোটের শর্ত মেনেই এই দাবি প্রচারে তোলা হয়নি।’’ পাশাপাশি, তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০০৯ থেকে আমরা দাবি তুলি, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী এখানে স্বশাসিত জেলা
পরিষদ গঠন করা হলেও আদিবাসীরা তাদের আর্থ-সামাজিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি থেকে এখনও ৯০ শতাংশ বঞ্চিত থেকে
গিয়েছে। সে জন্যই তাদের হাতে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা অর্পণের প্রয়োজন। তা
করতে গেলে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ক্ষমতাও অর্পণ করতে হবে। এই অর্পণ তখনই সম্ভব যখন
পূর্ণাঙ্গ এক ভৌগোলিক এলাকাতে ওই জনসমষ্টির জন্য পূর্ণাঙ্গ একটা রাজ্য করে দেওয়া
হয়।’’ এন সি দেববর্মার
সাফ কথা: ‘‘ষষ্ঠ তফসিল এলাকার
থেকে উন্নীত করে ‘টিপ্রাল্যান্ড’ হোক— এই দাবি আমরা করছি।’’ এন সি দেববর্মার দাবি, এ কথা তাদের জোটসঙ্গী বিজেপিও তাদের এই দাবীর কথা জানতেন।
যদিও ত্রিপুরার ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সুনীল দেওধর স্পষ্ট করে বলেছেন,
‘‘উনি যদি আলাদা রাজ্যের দাবি করেন করবেন।
কিন্তু আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, যে ইচ্ছা আছে তা হল ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’। আমরা এই দাবির সঙ্গে সহমত নই।’’ তবে, এরই পাশাপাশি সুনীল বলেন, ‘‘আমি এটা খতিয়ে দেখব যে আলাদা রাজ্য চাওয়ার কারণটা কী? আসলে, সিপিএম ২৫ বছর ধরে এখানে ছিল। তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে
তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রেখেছিল। আমরা আদিবাসীদের সম্মান রক্ষা করব।’’ আগরতলা শহরের কর্নেল চৌমোহনীর কাছে নিজের বাড়িতে
বসে এন সি দেববর্মা বললেন, ‘‘এই দাবি
নির্বাচনোত্তর নয়। হঠাৎ করেও আমরা এই দাবি তুলিনি। ২০০৯ সাল থেকেই লাগাতার এই
দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি।’’ আইপিএফটি প্রধান অবশ্য অকপটেই বলেছেন, নির্বাচনের আগে সোচ্চারে পৃথক রাজ্যের দাবি না তোলাটা
একটা ‘স্ট্র্যাটেজি’ ছিল। এত দিন বামফ্রন্ট দাবি করে এসেছে, ত্রিপুরায় বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে একটা
সৌহার্দ্যের সম্পর্ক আছে। তাদের নিজেদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। টাকারজলা সংরক্ষিত
কেন্দ্রে এ বার সিপিএম প্রার্থীর থেকে ১২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী এন সি
দেববর্মা বলছেন, ‘‘বাঙালি-আদিবাসী আগে
যেমন পাশাপাশি ছিল, এখনও তেমনই থাকবে।
এর সঙ্গে আলাদা রাজ্য গঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। এ সব কথা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
ভাবে বলা হচ্ছে।’’
এই নির্বাচনে ন’টি আসনে প্রার্থী দিয়ে আটটিতেই জয়লাভ করেছে আইপিএফটি।
রাজ্যের আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত যে ১৯টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট জয়ী হয়েছে ১৭টিতেই। এ
ছাড়া পশ্চিম ত্রিপুরার চড়িলাম (সংরক্ষিত) আসনের সিপিএম প্রার্থী রমেন্দ্র নারায়ণ
দেববর্মার মৃত্যু হওয়ায় ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এই সাফল্যের জন্যই
সুর আরও একটু চড়িয়ে এন সি দেববর্মা দাবি করেছেন, আদিবাসীদের মধ্য থেকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।
রাজ্যের আদিবাসী তথা তপসিলি উপজাতি সংরক্ষিত ২০টি
আসনের মধ্যে ১৯টি ছিল যাদের দখলে, সেই বামেদের ঝুলিতে এ বার মাত্র দুই! আর বিজেপি-আইপিএফটি
জোট জিতে নিয়েছে ১৭টি আসন। তার মধ্যে আইপিএফটি ৯টি আসনে লড়়ে ৮টিতেই জয়ী! আদিবাসী
এলাকার স্বশাসিত জেলা পরিষদের (এডিসি) ২৮টি আসনই যাদের হাতে, সেই বামেরা এমন বিপর্যয়ে স্বভাবতই বিহ্বল। আবার জিতেও
খুব স্বস্তিতে নেই বিজেপি। কারণ, আইপিএফটি সভাপতি এন সি দেববর্মা টাকারজলায় রাজ্যের মধ্যে
সর্বোচ্চ ব্যবধানে (১২,৬৫২) জিতে জানিয়ে
দিয়েছেন, পৃথক
তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে! ভোটের আগেও এই মর্মেই তাঁদের
প্রচার ছিল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিজেপি-র সরকার চালানোর সঙ্কট নেই ঠিকই।
কিন্তু বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো রাজ্য ভাগের দাবি সামাল দিতে হবে তাদের!
আদিবাসী নেতা এন সি ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
‘‘সরকারে যোগ দেওয়ার সঙ্গে আন্দোলন বন্ধ
করার তো কোনও সম্পর্ক নেই! বিজেপি হাইকম্যান্ডের দুই প্রতিনিধি কাল এলে তাঁদের
কাছে আমাদের প্রস্তাব জানিয়ে দেব। প্রথমত, পৃথক রাজ্যের দাবি বিবেচনা করতে কেন্দ্রের উচ্চ
ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি দ্রুত গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের বহু রাজ্যের প্রথা মেনে আদিবাসী
জনগোষ্ঠী থেকেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।’’
পৃথক রাজ্য নিয়ে এখনকার টানাপড়়েনের সঙ্গে অনেকে
বাংলায় গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত পরিস্থিতির মিল পাচ্ছেন। সেখানে পরিবর্তনের সময়ে
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে পাশে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিমল
গুরুঙ্গেরা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হুঙ্কার শুরু করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের
সংঘাত বাধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য তাঁর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশলে গুরুঙ্গদের
কোণঠাসা করে মোর্চার মধ্যে থেকে বিনয় তামাঙ্গদের কাছে টেনেছেন। ত্রিপুরায়
বিজেপি-কেও কৌশলেই আইপিএফটি-র মোকাবিলা করতে হবে।
বিজেপি-র পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধরের বক্তব্য,
‘‘আলাদা রাজ্যের দাবি মানব, আমরা কখনও বলিনি। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলবে।’’ তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত
চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখানে একটা
কথা আছে, কামান চাইলে বন্দুক
মিলবে! আইপিএফটি এ সব করে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ আদায় করতে চাইছে।’’
বাঙালি ও আদিবাসী মিলিয়ে লাখখানেক নতুন ভোটারদের
সমর্থন যে তাঁরা পাননি, বুঝতে পারছেন
সিপিএম নেতৃত্ব। আদিবাসী যুবকদের হাতে স্মার্টফোন রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতি অনেক
বছরের চেষ্টায় অর্জন করা গিয়েছিল। সেই স্মার্টফোনেই ‘চলো পাল্টাই’য়ের স্রোত ঢুকে কখন যে পৃথক রাজ্যের আবেগে মগজ ধোলাই হয়ে
গিয়েছে, তা-ও সুব্রতবাবুরা
টের পাননি!
কৃতজ্ঞতা স্বীকার – আনন্দবাজার পত্রিকা।
No comments:
Post a Comment