রাসায়নিক সারের বিষবর্জিত সব্জি পাওয়ার জন্য
হাপিত্যেশের অন্ত নেই শহুরে জনতার৷ এরকম একটা সময় যেন মুশকিল আসানের মুখ হয়ে সামনে
এলেন কিরিন হাঁসদা৷ পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের সিজা গ্রামের অশিক্ষিত
এই গৃহবধূ জৈব প্রযুক্তির ফসল উৎপাদনে সাফল্যের জন্য এ বার কৃষিরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন৷
কোনও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই গ্রামের ৪০ জন মহিলাকে নিয়ে তিনি নানা ধরনের সব্জি
চাষ করছেন৷ প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে কৃষি দফতর। রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক
কৃষ্ণেন্দু হাইত বলেন, ‘কৃষি দফতরের ‘আত্মা’ প্রকল্পে প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি গ্রামকে
জৈব প্রযুক্তির চাষের মাধ্যমে আদর্শ গ্রাম গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল দুবছর আগে৷ সেই
লক্ষ্যে আমরা যখন সিজা গ্রামে আসি, তখন দেখতে পাই, গ্রামের একটুকরো জমিতে খুব ভালো
হলুদ চাষ করেছেন কেউ৷ খোঁজ নিতে কিরিনের কথা জানতে পারি৷ বাড়ির জৈব সার দিয়ে হলুদ লাগিয়েছিলেন
কিরিন৷ বুঝতে পারি জৈব প্রযুক্তির শিক্ষা থাকলে মহিলা আরও বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন৷
এর পরই কিরিনের নেতৃত্বে ৪০ জন মহিলাকে নিয়ে শুরু হয় আদর্শ গ্রাম গড়ার কাজ৷’ কৃষি দফতরের
এই আদর্শ গ্রাম প্রকল্পে জৈব প্রযুক্তিতে চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়৷ এখানে কৃষিই মানুষের
অন্যতম জীবিকায় পরিণত হয়৷ কিরিনের নেতৃত্বে সিজা গ্রামে হয়েছে উচ্চ ফলনশীল পেঁপে, ফুলকপি,
বাঁধাকপি, টম্যাটো, মাশরুম৷ এখন গোটা গ্রাম জুড়ে চলছে গ্রীষ্মকালীন আনাজ চাষ৷ কিরিন
বলেন, ‘বাবুদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, ওঁদের কথা শুনলে লাভ হবে৷ তাই প্রথমে গ্রামের
২০ জন মহিলা মিলে গড়ে তুলি মাদার টেরিজা স্বনির্ভর কৃষক দল৷ পরে জয় ভারত নামে আরও একটি
দল গড়া হয়৷’ প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি না পেরনো কিরিনের ঘরে রয়েছে তাঁর দুই স্কুলপড়ুয়া
মেয়ে ও স্বামী হরিপদ হাঁসদা৷ হরিপদ বলেন, ‘স্ত্রীর আগ্রহ দেখে আমি আর বাধা দিইনি৷ বাঁকুড়ার
ছাতনায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে ওঁরা৷ গোটা গ্রাম ওঁর থেকে শিখছে৷’ মালতী সোরেন, পানমণি
সোরেনরা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আগে কোনও ফসলই রাসায়নিক সার ছাড়া চাষ হত না৷ মানুষের
ধারণা ছিল, সার ও কীটনাশক না দিলে ফসল হয় না৷ এখন জৈব সার ও ভেষজ ওষুধ দিয়ে আগের চেয়ে
বেশি ফসল পাচ্ছি৷ কিরিনের নেতৃত্বেই এই সাফল্য৷’ কিরিন বলেন, ‘যে কেউ আমাদের চাষের
কাজ দেখতে পারেন৷ পরামর্শ নিতে পারেন৷ রাসায়নিকের ফসল নয়, জৈব প্রযুক্তির ফসলে বাজার
ছেয়ে যাক, এটাই চাই৷
সৌজন্য – এইসময়, ১৯/০৩/২০১৮।
No comments:
Post a Comment